আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ২১১৭২. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম। আলহামদুলিল্লাহ। আমি ইসলাম যেভাবে বলেছে সেভাবে আব্বু আম্মুর সাথে ভালো ব্যবহারের চেষ্টা করি।কিন্তু অনেক সময় #খুব সামান্য রাগতস্বরে-বিরক্তিস্বরে কথা বলা হয়ে যায়। খুবই অল্প রাগ বা বিরক্তি প্রকাশ পায়। যেটা সাধারন ভাবে বোঝা যায় না বা গেলেও কষ্ট পাওয়ার কথা না(আমার দেখা মতে)। তেমন ই খুব সামান্য জোরে কথা বলা হয়ে যায়। আবার বেশিও না,খুবই অল্প কথায়।এমন ভুল হয়; যেমনঃ "না", "এইটা হচ্ছেনা", "তো", "দেও" ইত্যাদি। এখন, পিতা মাতার কথায় বিরক্তি প্রকাশ, রাগ বা উচ্চ স্বরে কথা বলা মোটেও যাবে না। #হয়ত তারা কষ্ট না পেলেও আমার গুনাহ হবে।কিন্তু, সমস্যা হচ্ছে,,উপরে উল্লিখিত অমন সামান্য বিরক্তি,রাগ বা উচ্চসরে কিছু কথা আমি ভুল বশত বলে ফেলেছি। আম্মুর কাছে আলহামদুলিল্লাহ, আমি ক্ষমা চাই। কিন্তু আব্বুর কাছে আমি ক্ষমা চাইতেই পারছিনা, কেমন তীব্র লজ্জাবোধ আমায় ঘিরে ফেলে আবার কেন পারিনা তাও বুঝি না। গত কয়েকদিন ধরে এর জন্য আমার অন্যান্য অনেক ইবাদতে গাফেল হয়ে গেছি। সবসময় অস্থিরতা কাজ করে। যখনই সিদ্ধান্ত নি যে, এবার বলবোই; আব্বুর কাছে গেলেই আবার সব উলটা-পাল্টা হয়ে যায়। আমার পরিবারে দ্বীন চর্চা তো দূরে থাক কেউ নামাজ পড়াই বা আবার কেউ ঠিক মতো না। তো যেইবারই আমি ঠিক করি যে পরিবারে তা'লীম বা নাসীহা করবো, তখন এমন কিছু খারাপ ব্যবহার করে ফেলি ফলে আব্বুর কাছে ক্ষমা চাইতে ওমন হয় এবং আমি ইবাদতে গাফেল হয়ে পড়ি ও ঈমান দুর্বল হয়ে যায়। তবে আলহামদুলিল্লাহ, আগে আব্বুর কাছে ক্ষমা চেয়েছি। বহুত সংগ্রাম করে। কিন্তু, আগের ক্ষমা চাওয়ার কারন হিসেবে তাদের সাথে যে খারাপ আচরন ছিল তা উপরে উল্লিখিত খারাপ আচরনের তুলনায় অনেক জঘন্য ছিল। এবং, খুন হতাশায় ভুগতেছি। পারতেছি না আব্বুর কাছে ক্ষমা চাইতে আবার আল্লাহর সাথেও দুরত্ব বাড়ছে। পাশাপাশি, আব্বু-ভাইয়া কে নাসিহাত করার সময় ও খুব অল্প হয়ত হাতে পাব। কারন, আব্বু নতুন ব্যবসা শুরু করছে,। ভাইয়া চাকরীর জন্য অন্য কোথাও যেতে পারে। সব মিলায়ে, আসলে দোষ অবশ্যই আমার। কিন্তু যেহেতু খুবই সামান্য বিরক্তি-রাগ-উচ্চস্বরে কথা বলেছি। এতে আব্বু হয়ত কষ্ট পায়নি(আমি নিশ্চিত না, তবে ক্যামন যেন এই ই মনে হয়)। #তবে একদিন ❝তো❞ এমন কথা একবার এই খুব সামান্য উচ্চস্বর থেকে একটু বেশি হয়েছিল। আসলে তেমন উচ্চ না স্বাভাবিক ভাবে মানুষ যেমন একটু জোরে বলে তেমন(কাওকে চিল্লায় ডাকা বা রাগ করে কিছু বলার মতো না, ধরুন দুইজন কথা বলতেছি,কেও একটু জোরে "তো?" এমন বললো)। এখন আমি কি করব? এইটুক কি আল্লাহর কাছে তাওবা করে শুধু আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে হবে?★বিদ্রঃ আমার আশে পাশে কোন আলেম নাই। থাকলেও খোজ পায় নি। তাই আপনাদের কাছে জিজ্ঞাসা।

৯ আগস্ট, ২০২২
ফুলতলা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم





আব্বু আম্মু কষ্ট পান এবং তাদের সাথে বেয়াদবীমূলক কোনো আচরণ-উচ্চারণ হয় সেগুলো সবই নিষেধ। কুরআনা অমাদেররে সেউ শিক্ষাই দেয়।

সূরা বনী ইসরাইলের 23 নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- পিতামাতার কোনো একজন কিংবা উভয়ে যদি তোমার কাছে বার্ধক্যে উপনীত হয় তবে তাদেরকে (উফ) পর্যন্ত বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিয়ো না; বরং তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বলো।-সূরা বনী ইসরাইল : ২৩

আয়াতের সংক্ষিপ্ত তাফসীর

ইমাম ইবনে জারীর তবারী রাহ. উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, পিতামাতা উভয় থেকে কিংবা কোনো একজন থেকে কষ্টদায়ক কোনো কিছু দেখলে বিরক্ত হয়ে উফ বলো না।-তাফসীরে তবারী ৮/৫৯

অর্থাৎ আলোচ্য আয়াতে পিতামাতা বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের কোনো আচরণে কষ্ট পেয়ে সন্তানের জন্য উফ বলতে এবং বিরক্তি প্রকাশমূলক কোনো আচরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এখানে সন্তানকে উফ বলতে নিষেধ করা হয়েছে। আর উফ শব্দ বলে এমন আচরণ বোঝানো হয়েছে, যদ্দারা বিরক্তি প্রকাশ পায়। তাফসীরবিদগণ বলেন, এক্ষেত্রে পিতামাতার কথায় বা কাজে বিরক্ত হয়ে তাদেরকে শুনিয়ে দীর্ঘ শ্বাস নেয়াও এই নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত।-তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ৫/৪৬৬

হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, পীড়াদানের ক্ষেত্রে উফ বলার চেয়ে যদি আরো হালকা কোনো শব্দ থাকত তবে তাও উল্লেখ করা হত। (অর্থাৎ উফ শব্দটি তৎকালীন আরবে সর্বনিম্ন স্তরের পীড়াদায়ক শব্দ বলে বিবেচিত হত।)-আলজামিউ লি আহকামিল কুরআন ১০/১৫৯

মোটকথা সন্তানের যে কথা বা কাজে পিতা-মাতা উভয়ে কিংবা কোনো একজন সামান্যতমও কষ্ট পান, সে কথা বা কাজ উক্ত আয়াতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

والله اعلم بالصواب

মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন