কবরের সুওয়াল জাওয়াব, রুহ ইল্লিয়্যিন-সিজ্জীন
প্রশ্নঃ ১৯৯১৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, জনাব মুফতি সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি, আমরা জানি একজন মানুষ যদি মারা যায় তখন তার রুহ মমিন হলে ইল্লিয়্যিনে আর কাফের বা ফাসিক হলে সিজ্জীনে যায়। এখন আমার প্রশ্ন হল সুওয়াল জাওয়াবের সময় তার রুহ কি আবারও তার দেহের সাথে সংযুক্ত করা হয় কি না? যদি তার রুহ ফিরিয়ে দেওয়া হয় তাহলে সংযুক্ত কতক্ষণ পর্যন্ত থাকে?আর কোন ব্যক্তি যদি তার জন্য মৃত্যুর অনেকদিন পর তার কবর জিয়ারত করে তখন সে তা বুঝতে পারে কিনা যে অমুকে আমার কবর জেয়ারত করছে, অমুকে আমার জন্য সওয়াব পাঠাচ্ছে?যদি বুঝতে পারে তাহলে কি রুহ ওই সময়ে তার দেহে থাকে? নাকি অন্য ভাবে বুঝতে পারে বিষয়টা বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করলে অনেক উপকৃত হব। ধন্যবাদ
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে, তার দেহের সাথে রূহের সম্পর্ক একেবারে ছিন্ন হয়ে যায় না। সাময়িকভাবে ছিন্ন হলেও পুনরায় সংযোগ স্থাপন করে দেয়া হয়। কিন্তু সেই সংযোগ পার্থিব সংযোগের মতো নয়। যেমনভাবে জীবন্ত অবস্থায় পৃথিবীর সম্পর্কগুলো প্রতিষ্ঠিত থাকে। কিন্তু এমনভাবে করে দেয়া হয়, যেন দেহটির সাথে রূহের বিশেষ সম্পর্ক বজায় থাকে। যার ফলে মৃত ব্যক্তি আজাব ও নেয়ামত অনুভব করতে পারে।
ইসলামের সহিহ আকিদা হলো, কেউ মারা গেলে আল্লাহ তায়ালা তার দেহের কোনো অঙ্গে বিশেষভাবে প্রাণ সঞ্চারিত করে দেন। এতে সে অনুভূতিশক্তি ফিরে পায়। এটা অপরিহার্য নয় যে, রূহটিকে পুরোপুরিভাবে দেহে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
ঈমানদারদের রুহ থাকে ইল্লিয়্যিনে, আর কাফিরের রুহ থাকে সিজ্জিনে। এ দু’টো জগতের অবস্থান সম্পর্কে আল্লাহই ভালো জানেন। তবে, যে কোনো সময় মৃত ব্যক্তির জন্য মাগফেরাতের দোয়া করলে সঙ্গে সঙ্গে তা মৃতের রুহে পৌছে দেওয়া হয়। নফল নেক কাজের সওয়াবও পৌঁছে দেওয়া হয়। বিশেষত দান-সদকার। দুনিয়ায় করে যাওয়া তার সদকায়ে জারিয়া. দীনি ইলম প্রসারের ব্যবস্থা এবং সন্তানের নেক দোয়া মৃত্যুর পরও সবসময় তার রুহে পৌঁছুতে থাকে।
যেকোনো সময় মৃতের কবর জিয়ারত করলে, তাকে সালাম ও দোয়া জানালে তৎক্ষণাত আল্লাহ তায়ালা ঐ মৃত ব্যক্তির রুহ কবরে ফিরিয়ে দেন। আর সে সালামের জবাব দেয়। পরিচিত হয়ে থাকলে জিয়ারতকারীকে চিনে।
বৃহস্পতিবারের যে কথাটি প্রশ্নে এসেছে এর তাৎপর্য হলো, প্রতি বৃহস্পতিবার তথা জুমা পূর্ব রাতে কবরবাসীরা যে কোনো জিয়ারতকারীর অপেক্ষায় থাকে। কেউ যদি জিয়ারতে যায় কিংবা ঘরে বসেই সওয়াব পাঠায় তাহলে পুরা কবরবাসী আনন্দিত হয়। এমনও আছে কোনো মানুষ ঘনঘন যদি নিজ পিতা-মাতা বা আত্মীয়ের কবর জিয়ারতে যায়, তাহলে সঙ্গের কবরবাসীরা তার বাবা-মা বা আত্মীয়ের রুহকে জিজ্ঞেস করে আজ কি তোমার ছেলে, নাতি, ভাই, ভাতিজা বা আত্মীয়টি আসবে না, বা এখনও আসছেনা কেন? কিংবা এ বৃহস্পতিবার এলো না কেন? তাহলে তো আমরাও তার দোয়ার বরকতে কবরে অনেক শান্তি পেতাম।
এভাবে জুমার রাত দিন ২৪ ঘন্টার মধ্যে কিংবা সারা সপ্তাহ যখনই কেউ কবর জিয়ারত করে, দোয়া দুরুদ পড়ে আর সব ঈমানদার নারী-পুরুষের জন্য দোয়া করে তখন সবার মধ্যেই আনন্দের সাড়া পরে যায়।
এক হাদীসে আছে, মৃত ব্যক্তিরা সমুদ্রে হাবুডুবু খাওয়া মানুষের মত, যে একটা অবলম্বনের জন্য হা-হুতাশ করতে থাকে। যদি কোনো ডিঙ্গি বা কাঠের টুকরা পায় অথবা কোনো উদ্ধারকারী তাকে জাহাজে উঠায় তখন তার যেমন আনন্দ লাগে, মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়াকারী, জিয়ারতকারী, সওয়াব রেসানীকারী লোকটিকে মৃতের তেমনই প্রিয় ও কাঙ্খিত বলে মনে হয়।
এসব বর্ণনার আয়াত ও হাদীস উত্তরে উল্লেখ করা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে আরো জানতে চাইলে ৭ শতাব্দি আগের মনীষী, মুসলিম উম্মাহর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম আল জাওজিয়্যা রচিত ‘কিতাবুর রুহ’ অধ্যয়ন করা যেতে পারে।
والله اعلم بالصواب
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন