প্রশ্নঃ ১৯৪১৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, কোরআন তেলাওয়াতের সময় আয়াতের শেষে থামার নিয়ম গুলো একটু বিস্তারিত জানতে চাইছি।আমি এই প্রথম সবেমাত্র কোরআন পড়তে শিখেছি।আয়াত শেষে থামার বিষয়ে আমার একটু অসুবিধা হচ্ছে।আমি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে বলছি।
১৮ জুন, ২০২২
ওয়েস্ট বেঙ্গল ৭১৩১৩০
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
আয়াতের শেষে বা কোন চিহ্নের জায়গায় থেমে যাওয়া অথবা নিঃশ্বাস শেষ হয়ে গেলে যেখানে থামতে হয় সেই পদ্ধতিকে ওয়াক্বফ বলে। ওয়াক্বফ আরবি শব্দ যার অর্থ হলো তেলাওয়াতে থামা বা বিরতি গ্রহণ করা।কুরআনুল কারীমে আয়াতের শেষে কিছু সুনির্দিষ্ট চিহ্ন রয়েছে যেগুলো আমাদের আয়াতের শেষে থামা বা না থামার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়ে থাকে।
কোথায় ওয়াক্বফ করব
() এটা আয়াত চিহ্নঃ যেখানে আয়াত শেষ হয়, সেখানে গোলাকৃতি এ ধরনের চিহ্ন বসানো হয়। একে "ওয়াক্বফে তাম" বলে। এ ওয়াক্বফের স্থানে অবশ্যই থামতে হবে, নতুবা অর্থের বিকৃতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এ চিহ্নের উপর যদি অন্য কোন রকমের আর একটি চিহ্ন থাকে যেমনঃ তবে এ চিহ্ন অনুযায়ী আমল করতে হবে।
(ﻣ) এটা ওয়াক্বফে লাযেম চিহ্নঃ এ ধরণের চিহ্নিত স্থানে ওয়াক্বফ না করলে বিপরীত অর্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এরকম চিহ্নিত স্থানে অবশ্যই
থামতে হবে।
(ط) এটা ওয়াক্বফে মুত্বলাকের চিহ্নঃ এ রকম চিহ্নিত স্থানে ওয়াক্বফ করা না করা উভয়ই জায়েজ, তবে
ওয়াক্বফ করা ভাল।
টা ওয়াক্বফে মুজাওয়াযের চিহ্নঃ এ রকম স্থানে ওয়াক্বফ করা না করা উভয় জায়েজ। তবে ওয়াক্বফ না করা উত্তম।
(ص) এটা ওয়াক্বফে মুরাখখাছ এর চিহ্নঃ এ রকম চিহ্নিত স্থানে ওয়াক্বফ না করে মিলিয়ে পড়া জরুরী।
কিন্তু নিঃশ্বাস শেষ হয়ে গেলে ওয়াক্বফ করার অনুমতি আছে।
(قف ) এটা ওয়াক্বফে আমর চিহ্নঃ এ রকম চিহ্নিত স্থানে ওয়াক্বফ করার নির্দেশ করে।
(ق) এটা কীলা আলাইহি ওয়াক্বফ এর সংক্ষেপঃ এ রকম চিহ্নিত স্থানে ওয়াক্বফ করা উচিত নয়।
(لا) এটা লা-ওয়াক্বফা আলাইহি এর চিহ্নঃ এ রকম চিহ্নিত স্থানে ওয়াক্বফ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
(صل) এটা ক্বাদ ইউছালু ওয়াক্বফের চিহ্নঃ এ রকম স্থানে ওয়াক্বফ না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
(ﺼﻠﮯ) এটা ওয়াছলে আওলা এর চিহ্নঃ এ রকম
চিহ্নিত স্থানে মিলিয়ে পড়া ভাল। তবে ওয়াক্বফ্ করলে অসুবিধা হয় না।
(سكته) এটা সাকতার চিহ্নঃ এ রকম চিহ্নিত স্থানে স্বর ভঙ্গ করতে হয়, নিঃশ্বাস ভঙ্গ করতে হয় না।
(وقفة) এটা লম্বা সাকতার আলামতঃ এ রকম চিহ্নিত স্থানে সাকতার মত এমন ভাবে পাঠ করবে যেন ওয়াক্বফের অধিক নিকটবর্তী হয়। কিন্তু নিঃশ্বাস ছাড়বেনা।
(...) এটা মুয়া'নাকার চিহ্নঃ এ রকম চিহ্ন শব্দ বা বাক্যের ডানে ও বামে দুই পার্শ্বে আসে, পড়ার সময় প্রথম জায়গায় ওয়াক্বফ করলে দ্বিতীয় জায়গায় মিলিয়ে পড়তে হয়। অথবা দ্বিতীয় জায়গায় ওয়াক্বফ করলে প্রথম স্থানে মিলিয়ে পড়তে হয়।
মনে রাখতে হবে, لا যদি আয়াতের মাঝে হয় থাহলে থামা যাবেনা কিন্তু আয়াতের শেষে لا হলে থামা যাবে।আয়াতের শেষে যে ع থাকে সেটা ওয়াক্বফের চিহ্ন নয় বরং রুকুর চিহ্ন।
কিভাবে ওয়াক্বফ করব
ওয়াক্বফ করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে শেষ অক্ষরে কি চিহ্ন আছে। যদি-
(১) ওয়াক্বফের হরফে এক যবর ( َ ), এক যের ( ِ ), এক পেশ ( ُ ),দুই যের ( ٍ ),দুই পেশ ( ٌ ),খাড়া যের ( ٖ ) ও উল্টো পেশ ( ٗ ) থাকলে সেই হরফকে সাকিন ( ْ ) দিয়ে পড়তে হয়।যেমনঃ
এক যবর ( َ ) خَلَقْ مِنۡ شَرِّ مَا خَلَقَ
এক যের ( ِ ) الۡفَلَقْ قُلۡ اَعُوۡذُ بِرَبِّ الۡفَلَقِ
এক পেশ ( ُ ) الصَّمَدْ اَللّٰہُ الصَّمَدُ
দুই যের ( ٍ ) شَہۡرْ لَیۡلَۃُ الۡقَدۡرِ ۬ۙ خَیۡرٌ مِّنۡ اَلۡفِ شَہۡرٍ
দুই পেশ ( ٌ ) اَحَدْ قُلۡ ہُوَ اللّٰہُ اَحَدٌ
খাড়া যের ( ٖ ) رَبِّهْ رَبِّهٖ
উল্টো পেশ ( ٗ ) رَبُّهْ رَبُّهٗ
(২) ওয়াক্বফের হরফে দুই যবর( ً ) থাকলে এক যবর( َ ) পড়তে হবে,এক্ষেত্রে এক আলিফ পরিমাণ টেনে পড়তে হবে।যেমনঃ
দুই যবর( ً ) اَفۡوَاجَا وَرَاَیۡتَ النَّاسَ یَدۡخُلُوۡنَ فِیۡ دِیۡنِ اللّٰہِ اَفۡوَاجًا
(৩) ওয়াক্বফের হরফে খাড়া যবর( ٰ ) থাকলে এক আলিফ পরিমাণ টেনে খাড়া যবরই পড়তে হবে।যেমনঃ
খাড়া যবর( ٰ ) طَغَىٰ اذْهَبْ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَىٰ
(৪) ওয়াক্বফের হরফে যদি সাকিন ( ْ ) থাকে তাহলে সাকিনই পড়তে হবে।যেমনঃ
সাকিন ( ْ ) كُوِّرَتْ إِذَا الشَّمْسُ كُوِّرَتْ
(৫) গোল তা ( ة ) এর উপর ওয়াক্বফ করলে এটিকে হা ( ه ) পড়তে হবে।যেমনঃ
গোল তা ( ة ) الرَّادِفَه يَوْمَ تَرْجُفُ الرَّاجِفَةُ - تَتْبَعُهَا الرَّادِفَةُ
তা ( ة ) এর উপর এক যবর ( َ ), এক যের ( ِ ), এক পেশ ( ُ ),দুই যবর( ً ),দুই যের ( ٍ ),দুই পেশ ( ٌ ) থাকলেও ওয়াক্বফের সময় সাকিনই পড়তে হবে।
(৬) ওয়াক্বফের হরফে তাশদীদ ( ّ ) হলে সাকিন পড়তে হবে।যেমনঃ
তাশদীদ ( ّ ) الْمَفَرّ يَقُولُ الْإِنسَانُ يَوْمَئِذٍ أَيْنَ الْمَفَرُّ
তাশদীদে দুই যবর( ً ) হলে ওয়াক্বফের সময় মনে মনে খাড়া যবর( ٰ ) ধরে পড়তে হবে।
(৭) লীনের হরফে ওয়াক্বফ করলে এক আলিফ টেনে পড়তে হবে।
(৮) এক আলিফ মাদ্দ থাকলে আয়াতের শেষে তিন আলিফ মাদ্দ পড়তে হয়।
(৯) শব্দের শেষে ক্বলকলাহর হরফ থাকলে ওয়াক্বফ করলে সাকিন করে সামান্য থাক্কা দিয়ে পড়তে হবে।
والله اعلم بالصواب
মোহাম্মদ আমীর হোসাইন, মুফতি ও মুহাদ্দীস,
শাইখ আবু সাঈদ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, মোহাম্মাদপুর।
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
আল কুরআনুল কারীম
৪
হাদীস ও সুন্নাহ
৬
তাসাউফ-আত্মশুদ্ধি । ইসলাহী পরামর্শ
৩
শরীআত সম্পর্কিত
১৪
ফিতনাসমুহ; বিবরণ - করণীয়
২
আখিরাত - মৃত্যুর পরে
৩
ঈমান বিধ্বংসী কথা ও কাজ
৬
ফিরাকে বাতিলা - ভ্রান্ত দল ও মত
২
পবিত্রতা অর্জন
৮
নামাযের অধ্যায়
১৯
যাকাত - সদাকাহ
৫
রোযার অধ্যায়
৬
হজ্ব - ওমরাহ
২
কাফন দাফন - জানাযা
৫
কসম - মান্নত
১
কুরবানী - যবেহ - আকীকা
৪
বিবাহ শাদী
৮
মীরাছ-উত্তরাধিকার
২
লেনদেন - ব্যবসা - চাকুরী
৯
আধুনিক মাসায়েল
৬
দন্ড বিধি
২
দাওয়াত ও জিহাদ
৩
ইতিহাস ও ঐতিহ্য
৬
সীরাতুন নবী সাঃ । নবীজীর জীবনচরিত
৩
সাহাবা ও তাবেঈন
৩
ফাযায়েল ও মানাকেব
৩
কিতাব - পত্রিকা ও লেখক
৩
পরিবার - সামাজিকতা
৭
মহিলা অঙ্গন
২
আখলাক-চরিত্র
২
আদব- শিষ্টাচার
১২
রোগ-ব্যধি। চিকিৎসা
২
দোয়া - জিকির
২
নাম। শব্দ জ্ঞান
৩
নির্বাচিত
২
সাম্প্রতিক
১
বিবিধ মাসআলা
১