আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১৮৮৫৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, সূত্রঃhttps://play.google.com/store/apps/details?id=com.tos.namajtimeপ্রশ্নঃ১৫৯৫৯. নিম্নে হাদিসটি ব্যাখ্যা জানতে চাচ্ছি,এখানে ঝাড়ফুঁক না নেওয়ার বিষয় বলা হয়েছে? এটাতে কী বুঝানো হয়েছে?৩৪৩৩. (আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ) আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রাখবে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট।৬০২৮। ইসহাক (রাহঃ) ... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ আমার উম্মতের মধ্য থেকে সত্তর হাজার লোক বিনা হিসেবেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা হবে এমন লোক- যারা ঝাড়ফুঁকের শরণাপন্ন হয় না, কুযাত্রা মানে না এবং নিজেদের প্রতিপালকের উপরই ভরসা রাখে।—সহীহ বুখারী, ইফা নং ৬০২৮তাহকীক: তাহকীক নিষ্প্রয়োজনবিঃদ্রঃ এ একই প্রশ্ন করেছিলাম কিন্তু সঠিক উত্তর পাই নেই কেননা রোজার প্রশ্ন-উত্তরের কারনে। আশা করছি এবার উত্তর পাব।,

২৯ মে, ২০২২

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم





হাদীসটির মুলপাঠঃ
حدثني إسحاق، حدثنا روح بن عبادة، حدثنا شعبة، قال سمعت حصين بن عبد الرحمن، قال كنت قاعدا عند سعيد بن جبير فقال عن ابن عباس أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال " يدخل الجنة من أمتي سبعون ألفا بغير حساب، هم الذين لا يسترقون، ولا يتطيرون، وعلى ربهم يتوكلون ".

ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ আমার উম্মতের মধ্য থেকে সত্তর হাজার লোক বিনা হিসেবেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা হবে এমন লোক- যারা ঝাড়ফুঁকের শরণাপন্ন হয় না, কুযাত্রা মানে না এবং নিজেদের প্রতিপালকের উপরই ভরসা রাখে। (সহীহ বুখারী, ইফা নং ৬০২৮)

ঝাড়ফুঁক না নেওয়ার ব্যাখ্যাঃ

আলোচ্য হাদীসে বলা হয়েছে, তিনটি গুণ থাকলে বিনা হিসাবে জান্নাত লাভ হবে।
তন্মধ্যে বিনা হিসাবে জান্নাত লাভকারীদের প্রথম গুণ বলা হয়েছে- তারা ঝাড়ফুঁক করে না এবং অন্যকে দিয়ে ঝাড়ফুঁক করায়ও না।
ঝাড়ফুঁক করার অর্থ কোনওকিছু পড়ে অসুস্থ ব্যক্তির উপর দম করা, যেমন সূরা ফাতিহা পড়ে দম করা, সূরা নাস ও ফালাক পড়ে দম করা কিংবা হাদীছে বর্ণিত বিভিন্ন দু’আ পড়ে দম করা। একে 'রুকয়া' (رقية) বলে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে রুকয়া করেছেন এবং করার অনুমতিও দিয়েছেন। সাহাবায়ে কিরাম থেকেও তা করার কথা বর্ণিত আছে। এ হাদীছে দেখা যাচ্ছে যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে তারা এটা করে না। তার মানে এটা করা বিনা হিসাবে জান্নাতে যাওয়ার পক্ষে বাধা। প্রশ্ন ওঠে, যে কাজ বিনা হিসাবে জান্নাতে যাওয়ার পক্ষে বাধা হয় তা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে এবং সাহাবায়ে কিরাম কিভাবে করতেন? কিংবা প্রশ্নটি এভাবেও করা যায় যে কাজ তিনি নিজে এবং সাহাবায়ে কিরাম করতেন তা জান্নাতে যাওয়ার পক্ষে বাধা হয় কিভাবে?

‘উলামায়ে কিরাম এর বিভিন্ন উত্তর দিয়েছেন। সারকথা হল, রুকয়া তিন প্রকার।

ক. জাহিলী যুগের প্রচলিত রুকয়া। তখন এমনসব মন্ত্র পড়ে ঝাড়ফুঁক করা হত, যার অর্থ বোধগম্য ছিল না। এরূপ ঝাড়ফুঁক জায়েয নয়। কেননা হতে পারে তা শিরকী কথা। অথবা এমন কথা, পরিণামে যা শিরকীর দিকে গড়ায়।

খ. আল্লাহর কালাম বা আল্লাহর নাম দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা। এটা নিঃসন্দেহে জায়েয।বরং যে ঝাড়ফুঁক নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে, তা করা মুস্তাহাব।

গ. যে ঝাড়ফুঁক ফিরিশতা, ওলী-বুযুর্গ, 'আরশ প্রভৃতি মর্যাদাপূর্ণ মাখলুকের নামে করা হয়, এমনিতে তা করা নাজায়েয নয় বটে, তবে এর থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়। কেননা এতে শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এ হাদীছে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশকারীদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে যে ঝাড়ফুঁক না করার কথা বর্ণিত হয়েছে, তা দ্বারা প্রথম ও শেষ প্রকারের ঝাড়ফুঁক বোঝানো হয়েছে,দ্বিতীয় প্রকারের ঝাড়ফুঁক নয়।
এমনও হতে পারে যে, সর্বপ্রকার রুকয়াই এর অন্তর্ভুক্ত। সে ক্ষেত্রে বলা হবে এটা সর্বোচ্চ স্তরের তাওয়াক্কুলের বিষয়, যাদের অন্তরে আল্লাহর প্রতি এমন গভীর আস্থা আছে যে, আসবাব-উপকরণ গ্রহণ করা না করা উভয়ই তাদের পক্ষে সমান। অসুস্থ অবস্থায় যদি কোনও চিকিৎসা গ্রহণ না করে, তারপর দেখা যায় রোগ আরও বেড়ে গেছে, তখনও তাদের আস্থায় কোনও চিড় ধরে না। তারা মনে করে না যে, চিকিৎসা গ্রহণ করলে এ অবস্থা হত না, তার রোগ ভালো হয়ে যেত। মোটকথা আল্লাহ যখন যে হালে রাখেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকে, কোনওরকম অভিযোগ-আপত্তিমূলক কথা মুখে তো উচ্চারণ করেই না, মনেও আসে না। হাদীছে এ শ্রেণির আওলিয়ার কথাই বলা হয়েছে।
বলাবাহুল্য, আম্বিয়া আলাইহিমুস-সালাম-এর তাওয়াক্কুল ছিল সর্বোচ্চ স্তরের। অধিকাংশ সাহাবায়ে কিরামের তাওয়াক্কুলও উচ্চ পর্যায়েরই ছিল। তা সত্ত্বেও যে তারা রুকয়া করেছেন, তা তাদের তাওয়াক্কুলের পরিপন্থি নয়। কেননা রুকয়া না করা অবস্থায় তাঁদের মনের যে হাল থাকত, রুকয়া করা অবস্থায়ও সেই একই হাল বিরাজ করত। আসবাব অবলম্বন করা না করায় তাঁদের তাওয়াক্কুলে কোনও প্রভেদ হত না। বরং তাঁদের রুকয়া বা আসবার অবলম্বন করা ছিল আল্লাহর প্রতি অধিকতর সমর্পিত থাকার আলামত। তা এভাবে যে, রোগ দিয়েছেন আল্লাহ। চিকিৎসার ব্যবস্থাও দিয়েছেন তিনিই। কাজেই অসুস্থ অবস্থায় ওষুধ খাওয়া বা রুকয়া করার দ্বারা প্রকারান্তরে তাঁর দিকে রুজু করাই হয়। এটাও নিজেকে তাঁর হাতে ছেড়ে দেওয়ার এক পন্থা। ওষুধে কী হবে না হবে সেটা কোনও কথা নয়। ওষুধ তাঁর দান। তাঁর দান গ্রহণ করাতেই বান্দার বন্দেগী। তাই দেখা যায় সমস্ত নবী-রাসূল আসবাব-উপকরণ গ্রহণ করেছেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে রুকয়া করেছেন এবং তাঁর সুন্নতের অনুসরণে সাহাবায়ে কিরামও তা করেছেন। আমাদেরও কর্তব্য তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করা।
তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করার ভেতরই আমাদের দীন ও ঈমানের নিরাপত্তা। আমাদের তাওয়াক্কুল তাঁদের পর্যায়ে না হলেও এ দৃষ্টিকোণ থেকে আসবাব-উপকরণ গ্রহণ করা নিরাপদ যে, তা গ্রহণ না করলে আমাদের তাওয়াক্কুল ঝুঁকিতে পড়ে যেতে পারে। ঈমানের দুর্বলতার কারণে হয়তো বলে বসব- যথাসময়ে ওষুধ খেলে আমার এ অবস্থা হত না অথবা অমুক উপায় অবলম্বন করলে আমার এ দশা ঘটত না। সর্বাবস্থায় আল্লাহর ফয়সালা খুশিমনে মেনে নেওয়ার মত দৃঢ় ঈমান না থাকা অবস্থায় আসবাব-উপকরণ পরিত্যাগ করা কিছুতেই উচিত নয়। কেননা সে ক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিস্থিতি ঈমানের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। তবে ঝাড়ফুঁক ও তাবিজ-কবজ গ্রহণকালে অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে যেন তা নাজায়েয কিসিমের রুকয়া না হয়। যদি কুরআনের আয়াত, আল্লাহর নাম বা হাদীছের দু'আ দ্বারা রুকয়া করা হয়, তবে তা আলোচ্য হাদীছের পরিপন্থি হবে না এবং তা বিনা হিসাবে জান্নাত লাভের পক্ষেও বাধা হবে না ইনশাআল্লাহ।

( শাইখুল হাদীস আল্লামা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম দাঃ রচিত 'রিয়াযুস সালিহীন' এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ থেকে সংগৃহীত ও কিছুটা সংযোজিত )

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯৩২৮৩

বছরের শুরু শেষ নেসাব ঠিক ছিলো, মাঝে যে সম্পদ বেড়েছে তার যাকাতের জন্য বৎসর পূর্ণ হতে হবে?


৫ মার্চ, ২০২৫

Mahini

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৯০৪৯৮

ইমামের সাথে একজন /দুইজন মুকতাদী কিভাবে দাড়াবে?


২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

Bethua

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৮৭৩৫১

আল্লাহ কেন অমুসলিমদেরকে এমন অনেক বিষয় দান করেন যা অনেক সময় মুসলিমরা পায়না?


২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

বগুড়া

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

৮৩৬৫৯

কোন নামাজে কোন সূরা


৪ জানুয়ারী, ২০২৫

চাঁদপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শফিকুল ইসলাম হাটহাজারী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy