মুনকিরীনে হাদিস: প্রতারিত হবে না
প্রশ্নঃ ১৮৫১৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ,মুহতারাম,আমি একজন তালিবে ইলম।আমি কিছু দিন যাবত একটা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। সমস্যাটি হলোঃএকজন আহলে কুরআন মতবাদে অনুসারি মানুষ আমাকে বুখারী শরীফের একাদিক হাদীস দেখেয়েছেন যে গুলো বাহ্যিক ভাবে কুরআনের আয়াতের বিপরীত মনে হচ্ছে।বাংলা,উর্দূ বুখারীর কোন শরাহতে এই সম্পর্কে কোন জবাব আমি পাই নাই।অর্থাৎ আমি বাহ্যিক ভাবে হাদীস কুরআনের আয়াতের বিরোধী মনে হলে তার সঠিক ব্যাখা কি হবে যার মাধ্যমে একজন আকলে সালীম ব্যাক্তি উপলদ্ধি করতে পারে যে আয়াত ও হাদীসের মধ্যে কোন সাংঘর্ষিক নয়।আর এই বিষয়টিকে প্রধান্য করে লিখিত কোন হাদীসের শরাহ সম্পর্কে আবগত হতে পারি না।মেহেরবানী করে যদি সম্ভব হয় আরবীতে কিংবা উর্দূতে এরকম যদি করো কুতুবে সিত্তার হাদীসের শরাহ থাকে তাহলে আমাকে নাম জানানোর মাধ্যমে অবগত করলে অনেক উপকৃত হব। জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।মুহতারাম উদাহরণ হিসাবে নিচের লিংকের আহলে কুরআনের প্রায় ৭ মিনিটির ভিডিও তার জবাব কি হবে?,
২ মে, ২০২৪
ঢাকা
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
মুহতারাম, লিংকে যার আলোচনা শুনলাম সে নিঃসন্দেহে মুনকিরে হাদীস তথা আল্লাহর রাসুলের হাদীসের অস্বীকারকারী। যার বাংলা আরবী কোন উচ্চারণই শুদ্ধ নয়। ওই বেটা কুরআন হাদিসের শাব্দিক অনুবাদ দেখে ওর মর্ম না বুঝেই বুখারীর হাদিসকে গাঁজাখুরি সহিহ হাদিস বলার ধৃষ্টতা দেখিয়ে যাচ্ছে। নাউজুবিল্লাহ মিন যালিকী। এসব মূর্খ লোকদের অযাচিত আপত্তি নিয়ে বিস্তারিত লিখা র সময় ও রুচি কোনটাই নেই।
অত্যন্ত সুকৌশলে গোপনে গোপনে আমাদের সমাজটাকে ব্যাপকভাবে গ্রাস করছে ‘আহলে কুরআন’ নামক ঈমান বিদ্ধংসী এই নতুন ফিতনা। আসলে নতুন নয়, বরং পুরাতন ফিতনার নতুন রূপ। এরা আসলে নিজেদেরকে আহলে কুরআন দাবী করলেও প্রকৃতপক্ষে এরা মুনকিরীনে হাদিস, অর্থাৎ হাদিস অস্বীকারকারী।
এদের গুরু হলো পাকিস্তানের মুহাম্মদ শেখ নামের এক আহলে কুরআন নামধারী ব্যাক্তি, যে প্রকাশ্যে হাদীস অস্বীকার করে বেড়ায়।
দেখুনঃ
https://youtu.be/uIgTtozLQAg
https://youtu.be/yaj1J3kvQeQ
https://youtu.be/rMSzgL3Ee54
আপনার জন্য কিছু করণীয়ঃ
১- এদের অযাচিত ও অবান্তর প্রশ্নের জবাব বুখারী - মুসলীম শরীফের শরাহ তে নয়, বরং ইনকারে হাদীস নিয়ে রচিত আরবী-উরদু কিতাবাদিতে দেখুন। সেটা বেশী মুফীদ হবে আপনার জন্য। হাদীস শরীফের শরাহ সমূহে বিস্তারিত জবাব পাবেন না।
আর ইসতিশরাক ও ইনকারে হাদীসের ফিতনা আরম্ভ হওয়ার পর তার মোকাবেলায় উলামায়ে কেরাম বিভিন্ন ভাষায় এত কিতাবাদি ও প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা করেছেন যে, এ বিষয়ে আলাদা একটি গ্রন্থাগার প্রস্ত্তত হয়ে গেছে। এখানে আমি কয়েকটিমাত্র গুরুত্বপূর্ণ কিতাব ও প্রবন্ধের নাম উল্লেখ করছিঃ
حجية الحديث ومكانة السنة বিষয়ে লিখিত কিতাবাদি এবং এ বিষয়ে মুনকিরীনে হাদীস সৃষ্ট বিভিন্নসন্দেহ ও সংশয়ের খন্ডনে রচিত কিতাবসমূহ পাঠ করা যায়। যেমন-
১. ড. মুস্তফা সিবায়ী রাহ.-এর
السنة ومكانتها في التشريع الإسلامي
২. ড. আবদুর রাযযাক হামযা (১৩০৮-১৩৯২ হি.)-এর
ظلمات أبي رية أمام أضواء السنة المحمدية
৩. শায়খ আবদুর রহমান ইবনে ইয়াহইয়া আলমুয়াল্লিমী (১৩১৩-১৩৮৬ হি.) লিখিত
الأنوار الكاشفة لما في كتاب أضواء على السنة من الزلل والتضليل والمجازفة
৪. শায়খ আবদুল গনী আবদুল খালেক (১৩২৬-১৪০৩ হি.)-এর ‘হুজ্জিয়াতুস সুন্নাহ’।
৫. মাওলানা হাবীবুর রহমান আজমী (১৩১৯-১৪১২ হি.)-এর
نصرة الحديث في الرد على منكري الحديث
(মূল উর্দু ভাষায় রচিত, আরবী অনুবাদ করেছেন মাসউদ আহমদ আজমী)
৬. ড. মুহাম্মাদ আবু শাহবাহ-এর
دفاع عن السنة এবং এ জাতীয় আরো অনেক কিতাব।
এছাড়াও হাদীসের প্রামাণিকতা ও ইতিহাস নিয়ে দেখুনঃ
১. ابتداء التدوين في صدر الإسلام
মুহাম্মাদ আব্দুল হাই কাত্তানী রাহ. (১৩০৩-১৩৮২ হি.)
২. ‘আলহাদীস ওয়াল মুহাদ্দিসূন’, শায়খ মুহাম্মাদ মুহাম্মাদ আবু যাহু (১৩২৭-১৪০৩ হিজরী)
৩. ‘আসসুন্নাহ কাবলাত তাদবীন’, মুহাম্মাদ আজাজ আলখাতীব
৪. صحائف الصحابة رضي الله عنهم وتدوين السنة المشرفة
আহমদ আবদুর রহমান আসসুইয়ান
৫. دلائل التوثيق المبكر للسنة والحديث
ইমতেয়াজ আহমদ, করাচী ইসলামী ইউনিভার্সিটি, পাকিস্তান।
৬. ‘আলওসাইকুস সিয়াসিয়্যাহ’, ড. মুহাম্মদ হামীদুল্লাহ (১৩২৬-১৪২৩ হি.)
৭. ‘রাসূলে আকরাম কী সিয়াসী যিন্দেগী’, ড. মুহাম্মদ হামীদুল্লাহ
৮. ‘আসসুন্নাহ ফী আসরিন নবুওয়াহ’, শায়খ আল আহমদী আব্দুল ফাত্তাহ খলীল এবং তাঁরআরেকটি কিতাব ‘আসসুন্নাহ বা’দা আসরিন নুবুওয়াহ’
৯. معرفة النسخ والصحف الحديثية
শায়খ বকর ইবনে আব্দুল্লাহ আবু যায়েদ
১০. ‘তাদবীনে হাদীস’ (মূল উর্দূ) মাওলানা মানাযির আহসান গিলানী (১৩১০-১৩৭৬ হি.)
এর আরবী অনুবাদ করেছেন ড. আব্দুর রাযযাক ইস্কান্দার। এতে নববী যুগ থেকে খলীফায়েরাশেদ আলী রা.-এর যুগ পর্যন্ত হেফাজত হাদীসের ইতিহাস সন্নিবেশিত হয়েছে।
১১. دراسات في الحديث النبوي وتاريخ تدوينه
ড. মুহাম্মদ মুস্তফা আ’জমী। এটি হাদীস সংকলনের ইতিহাস সংক্রান্ত একটি প্রামাণ্য ওতথ্যবহুল গ্রন্থ।
الإمام ابن ماجه وكتابه السنن
বা
ما تمس إليه الحاجة لمن يطالع سنن ابن ماجه
(এক কিতাবের দুই নাম) এবং ‘ইবনে মাজাহ আওর ইলমে হাদীস’, মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুররশীদ নু’মানী রহ. এই কিতাব দুটি হাদীস ও ফিকহ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের পাশাপাশিসাহাবা, তাবেয়ীন ও তাবে-তাবেঈনের যুগে হাদীসের ইতিহাস, হাদীস শাস্ত্রে তাঁদের মানহাজও পরবর্তী যুগের তুলনামূলক বিশ্লেষণ ইত্যাদি বিষয়ে সারগর্ভ ও নির্ভরযোগ্য স্বতন্ত্র কিতাবেরমর্যাদা রাখে।
১৩. লাহোর থেকে প্রকাশিত মাসিক উর্দূ পত্রিকা ‘মাহনামা মুহাদ্দিস’-এর ‘ইনকারে হাদীস’বিষয়ক সংখ্যা। এতে হাদীস অস্বীকারের ফেতনা, হাদীসের হেফাজত ও সংকলনের ইতিহাসসম্পর্কে প্রবন্ধ-নিবন্ধ ছাড়াও উপমহাদেশে ইনকারে হাদীসের ফিতনার প্রেক্ষাপটে এ সংক্রান্তযত গ্রন্থ, লিটারেচার ও গবেষণাপত্র লেখা হয়েছে তার তালিকা ও নির্ঘণ্ট পেশ করা হয়েছে।
২- আল কাউসারে উস্তাযুল আসাতিযা শাঈখুল ইসলাম হযরত আবদুল মালিক সাহেব হুজুরের এ বিষয়ক প্রবন্ধ খেয়াল করে পড়ুনঃ
‘নব্য আহলে কুরআনের’ মূল অপরাধ রাসূল অবমাননা' - https://www.alkawsar.com/bn/article/2719/
এছাড়া দেখুনঃ
https://youtu.be/0Ct0qcbU19E
https://youtu.be/f-7bi9-GiR0
https://ahlehaqmedia.com/2946-2/
https://ahlehaqmedia.com/419-2/
৩- এব্যাপারে মাহিরে ফন্ন কোন উস্তাযের নেগরানীতে পর্যায়ক্রমে মুতালাআ জারি রাখতে পারেন। এতে ফায়দা হবে।
উল্লেখ্য, ৭ মিনিটির ভিডিওর জবাবঃ
মাসিক আল কাউসার থেকেঃ
রোযার প্রতিদান আল্লাহ রাববুল আলামীন নিজেই দিবেন এবং বিনা হিসাবে দিবেনঃ
প্রত্যেক নেক আমলের নির্ধারিত সওয়াব ও প্রতিদান রয়েছে, যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমলকারীকে পুরস্কৃত করবেন। কিন্তু রোযার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ রোযার বিষয়ে আছে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে এক অনন্য ঘোষণা।
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
كل عمل ابن آدم يضاعف الحسنة بعشر أمثالها إلى سبعمائة ضعف، قال الله تعالى : الا الصوم فإنه لى وانا أجزى به يدع شهوته وطعامه من أجلى.
মানুষের প্রত্যেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হয়। একটি নেকীর সওয়াব দশ গুণ থেকে সাতাশ গুণ পর্যন্ত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, কিন্তু রোযা আলাদা। কেননা তা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর বিনিময় প্রদান করব। বান্দা একমাত্র আমার জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পানাহার পরিত্যাগ করেছে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৫১ (১৬৪); মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৯৭১৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৮৯৮৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৬৩৮
অন্য বর্ণনায় আছে-
عن أبى هريرة رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : قال الله : يترك طعامه وشرابه وشهوته من أجلى، الصيام لى وانا اجزى به، والحسنة بعشر امثالها.
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন, বান্দা একমাত্র আমার জন্য তার পানাহার ও কামাচার বর্জন করে, রোযা আমার জন্যই, আমি নিজেই তার পুরস্কার দিব আর (অন্যান্য) নেক আমলের বিনিময় হচ্ছে তার দশগুণ।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৮৯৪; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৯৯৯৯; মুয়াত্তা মালেক ১/৩১০
রোযা বিষয়ে-অন্য বর্ণনায়-আললাহ তাআলা বলেন, ‘‘প্রত্যেক ইবাদতই ইবাদতকারী ব্যক্তির জন্য, পক্ষান্তরে রোযা আমার জন্য। আমি নিজেই এর প্রতিদান দিব। (সহীহ বুখারী হাদীস-১৯০৪)
এ কথার তাৎপর্য হল, যদিও প্রকৃতপক্ষে সকল ইবাদতই আল্লাহর জন্য, তার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যেই হয়ে থাকে। তবুও রোযা ও অন্যান্য ইবাদতের মধ্যে একটি বিশেষ পার্থক্য রয়েছে। তা হল-অন্যান্য সকল ইবাদতের কাঠামোগত ক্রিয়াকলাপ, আকার-আকৃতি ও নিয়ম পদ্ধতি এমন যে, তাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য ছাড়াও ইবাদতকারীর নফসের স্বাদ গ্রহণের সুযোগ বিদ্যমান থাকে। মুখে প্রকাশ না করলেও অনেক সময় তার অন্তরে রিয়া তথা লোক দেখানো ভাব সৃষ্টি হতে পারে। তার অনুভূতির অন্তরালে এ ধরনের ভাব লুকিয়ে থাকে। তা সে অনুভব করতে না পারলেও তার ভিতরে অবচেতনভাবে বিদ্যমান থাকে। ফলে সেখানে নফসের প্রভাব এসে যায়। পক্ষান্তরে রোযা এমন এক পদ্ধতিগত ইবাদত, তার-আকার-আকৃতি এরূপ যে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য ব্যতীত ইবাদতকারীর নফসের স্বাদ গ্রহণের বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। রোযাদার ব্যক্তি নিজ মুখে রোযার বিষয়টি প্রকাশ না করলে সাধারণত তা আলেমুল গায়েব আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কারো নিকট প্রকাশিত হওয়ার মত নয়। তাই রোযার ক্ষেত্রে মাওলার সন্তুষ্টির বিষয়টি একনিষ্ঠভাবে প্রতিভাত হয়। একারণেই রোযা ও অন্যান্য ইবাদতের মাঝে এরূপ বিস্তর ব্যবধান।
রোযার এত বড় ফযীলতের কারণ এটাও হতে পারে যে, রোযা ধৈর্য্যের ফলস্বরূপ। আর ধৈর্য্যধারণকারীদের জন্য আল্লাহ তাআলার সুসংবাদ হল-
إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ
ধৈর্য্যধারণকারীগণই অগণিত সওয়াবের অধিকারী হবে।-সূরা যুমার (৩৯) : ১০
সব মাখলুকের স্রষ্টা, বিশ্বজাহানের প্রতিপালক, আল্লাহ তাআলা নিজেই যখন এর পুরস্কার দিবেন, তখন কী পরিমাণ দিবেন? ইমাম আওযায়ী রাহ. এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন- আল্লাহ যে রোযাদারকে প্রতিদান দিবেন, তা মাপা হবে না, ওজন করা হবে না অর্থাৎ বিনা হিসাবেই দিবেন।
লিঙ্কঃ (https://www.alkawsar.com/bn/article/642/)
আরো পড়ুনঃ
‘রোজা আমারই জন্য’ কথাটির ব্যাখ্যা
হযরত আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত হয়েছে- তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন : আদম সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের বিনিময় দশগুণ হতে সাত শত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু আল্লাহতায়ালা বলেছেন : রোজা এই নিয়মের ব্যতিক্রম। কেননা, রোজা আমারই জন্য। অতএব, আমিই এর প্রতিফল দেব। রোজা পালনে আমার বান্দাহ আমারই সন্তোষ বিধানের জন্য স্বীয় ইচ্ছা-আকাক্সক্ষা, কামনা-বাসনা এবং নিজের পানাহার পরিত্যাগ করে থাকে। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)।
এই হাদীসে উল্লিখিত আল্লাহপাকের বাণী : ‘রোজা আমারই জন্য এবং আমিই এর বিনিময় দেব’ কথাটির অন্তর্নিহিত অর্থ ও মর্ম এভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ:) বলেছেন : এই বাক্যের একটি অর্থ এই যে, এই রোজা একান্তভাবে আল্লাহর জন্য রাখা হয়েছে। এতে অন্য কেউই আল্লাহর সঙ্গে শরীক নেই এবং রোজা রেখে রোজাদার আল্লাহ ছাড়া আর কারোও ইবাদত করেনি। আর অন্য কারো সন্তুষ্টি লাভও তার কাম্য নয়। আর কারোও নিকট হতে সে এর প্রতিফল পেতে চায়নি। কেননা, অন্যান্য যে সকল ইবাদত দ্বারা মহান আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, তদ্রুপ উপসনা মুশরিকরাও তাদের উপাস্যদের জন্য করে থাকে। কিন্তু রোজা সেরূপ নয়।
কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই রোজা রাখা হয়েছে কিনা, পানহারও স্ত্রী সঙ্গগ পরিহার কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে হয়েছে কিনা, আর আল্লাহর বিধান মতো রোজা রাখা হয়েছে কিনা, তা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানতে পারে না। আর পারে না বলেই আল্লাহপাক বলেছেন : রোজা আমারই জন্য এবং আমিই এর বিনিময় আমার ইচ্ছামত প্রদান করব। তাছাড়া অন্য সকল ইবাদতে কৃত্রিমতা, ছলনা, রিয়াকারী বা লোক দেখানো মনোবৃত্তি থাকা সম্ভব। কিন্তু রোজার বেলায় এসব আবিলতার কোনোই অবকাশ নেই। তাই রোজা একমাত্র আল্লাহরই জন্য। আর আল্লামা তায়্যিবী (রহ:) বলেছেন যে, রোজা আমারই জন্য কথাটিতে রোজার মর্যাদা ও বিশেষত্বকে প্রকাশ করা হয়েছে। এই মর্যাদা ও বিশেষত্বের দুটি কারণ সহজেই অনুধাবন করা যায়। প্রথম কারণ হলো এই যে, রোজার বাস্তবতা একটি গোপনীয় ব্যাপার মাত্র। যার জন্য ইহা একান্তভাবে আল্লাহর জন্যই হয়ে থাকে। অন্যান্য ইবাদত যেমন- নামায, হজ, যাকাত সেরূপ নয়। এগুলোর দৃশ্যমান অস্তিত্ব আছে। আল্লাহপাকের বাণী রোজা আমারই জন্য এবং আমিই এর বিনিময় প্রদান করব-এর মাঝে সেই বিশেষত্বের প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে। তাছাড়া রোজা হলো পানাহার। স্ত্রী সঙ্গম ইত্যাদি হতে বিরত থাকা। এর পাশ্চাতে অন্তর্নিহিত থাকে কেবলমাত্র নিয়্যত। আর নিয়্যত হলো একটি মানসিক অবস্থা বা মানসিকতা যা বাহির থেকে কেউ দেখতে পায় না বা উপলব্ধি করতে পারে না। এ জন্য কেউ যদি মুখে বলে যে, আমি রোজাদার প্রকৃতপক্ষে সে রোজাদার কিনা, কিংবা তার নিয়্যত সহীহ কিনা, তা নিঃসন্দেহে, অকাট্যভাবে ও অনস্বীকার্যরূপে কেউই ধরতে বা বুঝতে বা দেখতে পারে না। এ সকল অবস্থা নিঃসন্দেহে দেখতে, বুঝতে ও জানতে, পারেন একমাত্র আল্লাহ। আর এ জ্যই তিনি ঘোষণা করেছেন- রোজা আমারই জন্য এবং আমিই এর বিনিময় প্রদান করব। বস্তুত, রোজার যথাযথ প্রতিফল দেয়া আল্লাহ ছাড়া আর কারোও পক্ষে সম্ভব নয়।
আর দ্বিতীয় কারণ এই যে, রোজায় যা আছে তাহলো প্রবৃত্তি দমন, দৈহিক অবক্ষয়তাও কৃচ্ছ সাধন। এর জন্য প্রয়োজন হলো ক্ষুৎ পিপাসায় অপরিসীম ধৈর্যধারণ করা। কিন্তু অন্যান্য ইবাদত যেমন নামাজ, হজ ও যাকাত আদায়ে থাকে দৈহিক ব্যস্ততা ও অর্থ ব্যয় করা। ফলে এই দুই ধরনের ইবাদতের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য বিদ্যমান। এ জন্য নিছক পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগ পরিহার করাকেই রোজা বলা যায় না। বরং রোজার জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো নিয়্যতকে আল্লাহর জন্য খালেস করা। একনিষ্ঠাতা, আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের প্রত্যাশায় সকল প্রকার কৃত্রিমতা পরিহার করা। যেখানে থাকবে না কোনো রিয়াকারী বা লোক দেখানো মনোবৃত্তি ও যশ-মান-গৌরব লাভের কুটিল পরশ। একজন খাঁটি রোজাদারের সাধনার ফলও ধারাকে আল্লাহপাক এ জন্যই এই বলে অভিনন্দিত করেছেন যে, রোজা আমারই জন্য এবং আমিই তার বিনিময় প্রদান করব। আল্লাহপাক এভাবে রোজা আদায় করার তাওফিকে রাফীক আমাদের দান করুন। আমিন! আমীন!!
والله اعلم بالصواب
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
৯০২১৪
রজব শব্দটি মুনসারিফ নাকি গায়রে মুনসারিফ?
২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
৮P৩C+GV৭

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার
৬৭১৯০
'লাল বাতি জ্বলা অবস্থায় নামাজ পড়া নিষেধ' এভাবে লেখা কি ঠিক হবে
১১ জুলাই, ২০২৪
কক্সবাজার

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী সিরাজুল ইসলাম
৩৯৯৪৫
বদনজর থেকে বাঁচতে সোনা রুপার পানির ব্যবহার
৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
ঢাকা

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে