আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

খাবার খাওয়ার সময় কথা বলার বিধান কি?

প্রশ্নঃ ১৭৯২৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, খাবার খাওয়ার সময় কথাবলা জায় নাকি জায় না?

২৪ এপ্রিল, ২০২২
বরপা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই! রাসূলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবাগণ খাবার খাওয়ার সময় একেবারে চুপ থাকতেন না, বরং মাঝেমধ্যে উপকারী কথা বলতেন, যা একাধিক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং খাওয়ার সময় ভালো ও প্রয়োজনীয় কথা বলা মুস্তাহাব, এবং অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা কিংবা হাসি-ঠাট্টা পরিহার করা উত্তম।

ইমাম নববী (রহ) সহীহ মুসলিমের শরাতে লিখেছেন: "রাসূলুল্লাহ ﷺ এর খাবারের সময় কথা বলার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, এই সময় কথা বলা মুস্তাহাব।"

অন্যদিকে, খাবার খাওয়ার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে নীরবতা বজায় রাখা মাকরূহ, কেননা এতে অগ্নিপূজকদের (মাজুসী) সাথে সাদৃশ্যতা প্রকাশ পায়।

অগ্নিপূজকদের সাথে সাদৃশ্য হওয়ার কারণ হচ্ছে: মাজুসী/অগ্নিপূজকরা আগুনকে পবিত্র মনে করত এবং তাদের ধর্মীয় রীতিতে নিরবতা ছিল একধরনের আধ্যাত্মিকতা বা ধ্যানের অংশ। ঐতিহাসিকভাবে জানা যায়, তারা উপাসনা কিংবা আহারের সময় ইচ্ছাকৃতভাবে নীরব থাকত, যা তাদের ধর্মীয় আচরণ ছিল।

তবে কেউ যদি এ সময় চুপ থাকাকে সুন্নাত বা জরুরী মনে না করে, বরং স্বাভাবিকভাবে চুপ থাকে, তাহলে এতে কোন সমস্যা নেই।

হাদীস শরীফে এসেছে-

এক.

أَخْبَرَنَا سُوَيْدُ بْنُ نَصْرٍ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْمُبَارَكِ، أَخْبَرَنَا أَبُو حَيَّانَ التَّيْمِيُّ، عَنْ أَبِي زُرْعَةَ بْنِ عَمْرِو بْنِ جَرِيرٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ أُتِيَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِلَحْمٍ فَرُفِعَ إِلَيْهِ الذِّرَاعُ فَأَكَلَهُ وَكَانَتْ تُعْجِبُهُ فَنَهَسَ مِنْهَا نَهْسَةً ثُمَّ قَالَ " أَنَا سَيِّدُ النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ هَلْ تَدْرُونَ لِمَ ذَاكَ يَجْمَعُ اللَّهُ النَّاسَ الأَوَّلِينَ وَالآخِرِينَ فِي صَعِيدٍ وَاحِدٍ فَيُسْمِعُهُمُ الدَّاعِي وَيَنْفُذُهُمُ الْبَصَرُ وَتَدْنُو الشَّمْسُ مِنْهُمْ فَيَبْلُغُ النَّاسُ مِنَ الْغَمِّ وَالْكَرْبِ مَا لاَ يُطِيقُونَ وَلاَ يَحْتَمِلُونَ فَيَقُولُ النَّاسُ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ أَلاَ تَرَوْنَ مَا قَدْ بَلَغَكُمْ أَلاَ تَنْظُرُونَ مَنْ يَشْفَعُ لَكُمْ إِلَى رَبِّكُمْ فَيَقُولُ النَّاسُ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَلَيْكُمْ بِآدَمَ
ثم ذكر حديث الشفاعة الطويل

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, কোন এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে গোশত আনা হলো। তারপর তাকে সামনের একটি রান উঠিয়ে দেয়া হলো। তিনি তা খুবই পছন্দ করতেন- আর তিনি তা দাঁত দিয়ে ছিড়ে ছিড়ে খেতে থাকলেন। তারপর তিনি বললেনঃ কিয়ামাত দিবসে আমিই হবো সকল মানুষের নেতা। তোমরা কি জান এর কারণ কি? আল্লাহ তা'আলা সেদিন পূর্বেকার ও পরের সকল মানুষকে এক জায়গায় সমবেত করবেন।

একজনের আওয়াজই সবার কাছে পৌছে যাবে এবং সবাই একজনের দৃষ্টিসীমার মধ্যে থাকবে। সূর্য তাদের খুব নিকটে এসে যাবে। মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগ ও সামর্থ্যের অতীত দুর্ভাবনায় পড়ে যাবে এবং ধৈর্যহারা হয়ে পড়বে। তারা পরস্পরকে বলবে, তোমরা কি এ দুঃসহ বিপদ দেখতে পাচ্ছ না? তোমাদের প্রভুর নিকট তোমাদের জন্য সুপারিশ করতে পারে এরূপ কাউকে খুঁজে দেখছ না কেন? লোকেরা একে অপরকে বলবে, তোমাদের উচিত আদম (আঃ)-এর কাছে যাওয়া। (অতঃপর শাফায়াত সংক্রান্ত লম্বা হাদীস উল্লেখ করেন।) (তিরমিজি ২৪৩৪)

দুই.

حدثنا علي بن عبد الله، أخبرنا سفيان، قال الوليد بن كثير: أخبرني أنه سمع وهب بن كيسان، أنه سمع عمر بن أبي سلمة، يقول: كنت غلاما في حجر رسول الله صلى الله عليه وسلم، وكانت يدي تطيش في الصحفة، فقال لي رسول الله صلى الله عليه وسلم: «يا غلام، سم الله، وكل بيمينك، وكل مما يليك» فما زالت تلك طعمتي بعد

হযরত উমর ইবনে আবু সালামা (রাযি) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ছোট ছেলে হিসাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) –এর তত্ত্বাবধানে ছিলাম। খাবার বাসনে আমার হাত ছুটাছুটি করতো। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বললেন, হে বৎস! বিসমিল্লাহ বলে ডান হাতে আহার কর এবং তোমার কাছের থেকে খাও। এরপর থেকে আমি সব সময় এ পদ্ধতিতেই আহার করতাম। যার যার কাছ থেকে আহার করা। সহীহ বুখারী, হাদীস নং: ৫৩৭৬

তিন.

عن جابر بن عبد الله، أن النبي صلى الله عليه وسلم سأل أهله الأدم فقالوا ما عندنا إلا خل . فدعا به فجعل يأكل به ويقول " نعم الأدم الخل نعم الأدم الخل

জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) তাঁর পরিবারের লোকদের কাছে সালুন চাইলে তারা বললো, সিরকা ছাড়া আমাদের কাছে অন্য কিছু নেই। তখন তিনি তাই আনতে বললেন এবং খেতে খেতে বললেনঃ সিরকা কতই ভাল তরকারী, সিরকা কতই উত্তম তরকারি! সহীহ মুসলিম, হাদীস নং: ২০৫২-১

قال النووي: " وَفِيهِ اِسْتِحْبَاب الْحَدِيث عَلَى الْأَكْل تَأْنِيسًا لِلْآكِلِينَ". انتهى من "شرح صحيح مسلم"(14/7)

الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (6 / 340):
"ويكره السكوت حالة الأكل؛ لأنه تشبه بالمجوس، و يتكلم بالمعروف".

الفتاوى الهندية (5 / 345):
"يكره السكوت حالة الأكل؛ لأنه تشبه بالمجوس، كذا في السراجية. ولايسكت على الطعام ولكن يتكلم بالمعروف وحكايات الصالحين، كذا في الغرائب"

والله اعلم بالصواب

আরিফুর রহমান মুফতী, ফাতাওয়া বিভাগ, মুসলিম বাংলা গবেষক, হাদীস বিভাগ, মুসলিম বাংলা

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর