ইকামতে কখন দাঁড়াবে
প্রশ্নঃ ১৭১৬. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, কোনো কোনো মসজিদে দেখা যায় ইমাম-মুসল্লিগণ ইকামত শুরু হওয়ার সময় বসে থাকে। মুআযযিন যখন ‘হাইয়া আলাস সালাহ’ বলে তখন দাঁড়ায়। তারা বলে ইকামতের সময় এরূপ করা সকলের জন্য মুস্তাহাব। অতএব আমার জানার বিষয় হল, এ কথা কতটুকু সঠিক? জানালে উপকৃত হব।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রশ্নোক্ত আমলটি সহীহ নয়। একাধিক হাদীসে ইকামতের শুরুতেই ইমাম-মুক্তাদী সকলে দাঁড়িয়ে যাওয়া এবং কাতার সোজা করার কথা বর্ণিত আছে। তবে ইমাম নামাযের জন্য না দাঁড়ানো পর্যন্ত মুসল্লিগণ দাঁড়াবে না। ইমামের আগেই মুসল্লিদের দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকা মাকরূহ।
হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হুজরা থেকে) বের হওয়ার আগে বেলাল রা. ইকামত বলতেন না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন আসতে দেখতেন তখন তিনি ইকামত বলা শুরু করতেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬০৬
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নামাযের জন্য আসতে দেখা গেলে ইকামত শুরু করে দেওয়া হত। আর সাহাবায়ে কেরাম কাতার সোজা করা শুরু করতেন। এভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জায়গায় পৌঁছার পূর্বেই কাতার পুরোপুরি সোজা হয়ে যেত। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬০৫
অপর হাদীসে আছে, মুআযযিন আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বলে ইকামত শুরু করামাত্রই লোকেরা নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে যেত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জায়গায় পৌঁছতে পৌঁছতে কাতার সোজা হয়ে যেত। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ১৯৪২
সুতরাং ইমাম মেহরাবের কাছে উপস্থিত থাকুক বা মেহরাবের দিকে আসতে থাকুক উভয় অবস্থায় ইকামতের শুরুতে মুক্তাদীগণ দাঁড়িয়ে যাবে। কারণ কাতার সোজা করার গুরুত্ব অনেক বেশি। বহু হাদীসে এ ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
নুমান বিন বাশীর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাতারগুলো এভাবে সোজা করতেন যেন তিনি এই কাতার দিয়ে তীর সোজা করবেন। এভাবে এক সময় তিনি নিশ্চিত হলেন যে, আমরা কাতার সোজা করার বিষয়টি ভালোভাবে বুঝে নিয়েছি। এরপর একদিন তিনি নামায পড়ানোর জন্য আসলেন এবং নির্ধারিত স্থানে দাঁড়ালেন। তিনি তাকবীর বলে নামায শুরু করবেন এমন সময় লক্ষ্য করলেন এক ব্যক্তির বুক কাতার থেকে কিছুটা সামনের দিকে বেড়ে আছে। তিনি তখন বললেন, আল্লাহর বান্দারা! তোমাদের কাতারগুলো সোজা করে নাও। অন্যথায় আল্লাহ তাআলা তোমাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে দিবেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৩৬
হযরত উমর রা. কয়েকজন মানুষকে শুধু এজন্যই নির্ধারিত রেখেছিলেন যে, তারা মুসল্লিদের কাতার সোজা করবেন। তারা যখন এসে জানাতেন যে, কাতার সোজা হয়েছে তখন উমর রা. নামায শুরু করতেন।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ২৪৩৭-২৪৩৯
হযরত উসমান রা.-এর নিয়মও এমনই ছিল। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৫৫২
والله اعلم بالصواب
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন