আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১৬০৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, বিতর নামায আমরা কোন নিয়মে পড়ব? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

১৫ আগস্ট, ২০২১

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


বিতর নামায তিন রাকাত। ওয়াজিব। যা এশার পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত আদায় করা যায়। তা আদায়ের নিয়ম স্বাভাবিক নামাযের মতই। তবে এতে কিছু ভিন্নতা রয়েছে। যেমন এর প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা মিলানো ওয়াজিব। দ্বিতীয় রাকাত শেষে বৈঠকে শুধু তাশাহহুদ পর্যন্ত পড়বে। এরপর তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে  যাবে। তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা মিলানোর পর আল্লাহু আকবার বলে দুই হাত উঠাবে। এরপর দুই হাত বেঁধে দুআ কুনূত পাঠ করবেঅতপর যথানিয়মে নামায শেষ করবে।

বিতর নামায আদায়ের উক্ত পদ্ধতি ও বিবরণ বিশুদ্ধ হাদীস ও আসার দ্বারা প্রমাণিত। যেমন :

এক. সহীহ মুসলিমের একটি দীর্ঘ হাদীসে ইবনে আব্বাস রা. বলেনএকবার তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট রাত্রিযাপন করলেন। রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে মিসওয়াকওযু করে দীর্ঘ কেরাত ও রুকু-সিজদার সাথে দুই রাকাত নামায আদায় করলেন। অতপর তিনি পুনরায় নিদ্রা যাপন করলেন। এরূপভাবে তিনবারে তিনি ছয় রাকাত আদায় করলেন অতপর তিন রাকাত বিতর আদায় করলেন। Ñসহীহ মুসলিম১/২৬১

দুই. আয়েশা রা. হতে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত আছেতিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের দুই রাকাত শেষে সালাম ফেরাতেন না। Ñসুনানে নাসায়ী ১/২৪৮

তিন. উবাই ইবনে কাব রা. বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিতির পড়তেন। প্রথম রাকাতে সূরা আলাদ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরূন ও তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়তেন। এবং রুকুর পূর্বে দুআ কুনত পড়তেন...। Ñসুনানে নাসায়ীহাদীস ১৬৯৯শরহু মুশকিলিল আসার ১১/৩৬৮

চার. উবাই বিন কাব রা. থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর পড়তেন এবং রুকুর পূর্বে কুনূত পড়তেন। Ñসুনানে ইবনে মাজাহ,হাদীস ১১৮২উমদাতুল ক্বারী ৭/১৯

পাঁচ. সাবেত আল বুনানী রাহ. বলেনআমি আনাস রা.-এর ঘরে রাত্রি যাপন করেছি এবং তার সাথে নামায পড়েছি। তাঁকে দেখেছি রাতে দুই রাকাত করে নামায পড়েছেন এবং সবশেষে মাগরিবের নামাযের মত তিন রাকাত বিতর পড়লেন। Ñমুসান্নাফে আব্দুর রাযযাকহাদীস ৪৬৩৬

ছয়. সুফিয়ান সাওরী রাহ. বলেনতারা (অর্থাৎ তাবেয়ীগণ) তিন রাকাত বিতরের প্রথম রাকাতে সূরা আলা পড়তেন দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফীরুন পড়তেন। তারপর বসে তাশাহহুদ পড়ে আবার উঠে দাঁড়াতেন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়তেন। Ñসালাতুল বিতর লিল মারওয়াযী পৃ. ২৭৯

সাত. আসওয়াদ রাহ. বলেনআব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. কেবল বিতর নামাযেই কুনূত পড়তেন। তিনি রুকুর আগে কুনূত পড়তেনকেরাআত শেষ করে কুনূতের জন্য তাকবীর বলতেন। Ñশরহু মুশকিলুল আছার ১১/৩৭৪

মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বায় আরো এসেছে যেতিনি কুনূতের জন্য হাত উঠাতেন। Ñহাদীস ৭০২৭জুযউ রাফইল ইয়াদাইনইমাম বুখারী৬৮-৬৯

আট. আসেম রাহ. বলেন আমি আনাস রা. কে কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বলেছেনকুনূত পড়ার বিধান রয়েছে। এরপর আমি জিজ্ঞাসা করলাম রুকুর পরে না রুকুর আগেতিনি বললেনরুকুর আগে। আমি বললামঅমুক আমাকে বলেছেআপনি  নাকি রুকুর পরে কুনূত পড়ার কথা বলেন। তিনি বললেনসে ভুল বলেছে। রুকুর পরে নবী সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামশুধু একমাস কুনূত পড়েছিলেন। Ñসহীহ বুখারীহাদীস ১০০২

উলে­খ্য যেবিতর নামাযে দুআ কুনূত পাঠ করা ওয়াজিব। আর হাদীসে বর্ণিত দুআই কুনূতের জন্য পাঠ করা উত্তম।

বি. দ্র. মাসিক আল কাউসারের মে/জুন/জুলাই-আগষ্ট ২০১০ সংখ্যায় বিতর নামায সম্পর্কে বিস্তারিত প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। প্রয়োজনে তা দেখা যেতে পারে।


والله اعلم بالصواب

মাসিক আলকাউসার
প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন