আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

সম্মিলিত মুনাজাত

প্রশ্নঃ ১৪৮৩০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি একজন চাকরিজীবী। বছরখানেক হল নতুন এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে ট্রান্সফার হই । এখানে শহরের/ উপজেলার উপকূলে কিছুটা গ্রাম নির্ভর একটা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি। আমার মহল্লার মসজিদে নামাজের পর সম্মিলিতভাবে জোরে জোরে মাইকে দীর্ঘক্ষণ মুনাজাত করা হয়। এ সময় অনেক মসবুক নামাজ আদায় করে, আবার অনেককেই দেখি যারা নামাজ এক রাকাতও পাননি তারাও নামাজ পড়েন। তাই, এ বিষয়টি (সম্মিলিতভাবে জোরে জোরে মোনাজাত) আমি দিল থেকে মেনে নিতে পারি না। আমি নিজে যখন মসবুক হই তখন অনুভব করি যে, জোরে জোরে মোনাজাতের জন্য আমার নামাজে অসুবিধা হচ্ছে। সেদিন থেকে আমি এই মুনাজাতে অংশগ্রহণ করিনা। তার পূর্বে সবসময়ই করতাম। আবার আমার কাছে মনে হয়, দীর্ঘক্ষণ হাত তুলে থাকতে আমার হাত ব্যথা হয়ে যায়। সব মুনাজাতে কিন্তু প্রাণ থাকেনা। বেশিরভাগ মুনাজাত দেখি প্রথাগত। যেখানে দিল থেকে আসে, অন্য কোন সমস্যা লক্ষ্য করি না, তখন কিন্তু ঠিকই মুনাজাতে অংশগ্রহণ করি। আবার নামাজের পরে কিছু জিকির, দোয়া দরুদ, সুরা কেরাত থাকে, আমি ঐগুলি পড়ি। তাই মুনাজাতে শরিক হই না। মাঝেমধ্যে যখন দেখি কেউ নামাজ পড়ছে না কিংবা সকলের নামাজ শেষ হয়েছে, ঐরকম ক্ষেত্রে আমি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করি । আজকে মসজিদের ইমাম সাহেব আমাকে ডেকে বললেন, এলাকায় আমাকে নিয়ে কানাঘুষা চলছে। আমি নাকি কাদিয়ানী, আরো অনেক কিছু ইত্যাদি ইত্যাদি ? হুজুর আমাকে বললেন, আপনাকে মোনাজাত সম্মিলিতভাবে করতেই হবে নতুবা এলাকায় ফিতনার সৃষ্টি হবে। আমাকে বিষয়টি বারবার বললেন। আমি বলেছি, কে কি বলল এগুলোকে আমি গুরুত্ব দেই না। আমার কাছে মনে হচ্ছে, বিষয়টি স্পষ্টই আমার উপর জুলুম। আমাকে মোনাজাত করতে বাধ্য করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত দুটা বিষয় উল্লেখ করছে। এক, প্রথম প্রথম 2, 1 জুমার নামাজ এ মসজিদে পড়ার পর আমি মহল্লার মসজিদে জুমা পড়ি না। কারণ, জুমার জন্য আমি অত্র অঞ্চলের সব মসজিদে একদিন একদিন নামাজ আদায় করে দেখেছি, কোন মসজিদের জুমা পড়লে আমার দিল বেশি তৃপ্তি পায় । তাই আমি একটু দূরে গিয়ে যেখানে ভালো লাগে সেখানে জুমা পড়ি। বিষয়টি ইমাম সাহেব হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন। আমাকে একদিন বলেছেন, ইদানিং আপনাকে দেখি না। দুই, মহল্লার মসজিদ ছাড়া অন্য মসজিদগুলো বেশ খানিক দূরে। এখন আমি আমার মহল্লার মসজিদে নামাজ পড়তে স্বাচ্ছন্দবোধ করছি না। আমার কাছে বিষয়টি খুব কষ্ট দিয়েছে। আমি কি নামাজ ঘরে পড়তে পারবো ? একটি বিষয় প্রসঙ্গত উল্লেখ করছি, প্রত্যন্ত অঞ্চল এবং সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় এলাকায় সবাই এমনিতেই আমাকে চিনে ফেলেছে। অন্য মসজিদে গেলে তারা নতুন কোন কথা বের করতে পারে। উপরোক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এখন আমার করনীয় কি ? উল্লেখ্য, ইমাম সাহেব কওমি সিলসিলার এবং ঢাকার একটি ভালো কওমি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেছেন। আমরা যারা সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত, আলেমদের সোহবতকে নিজেদের জন্য নাজাতের উসিলা মনে করি, দ্বীন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি, তাদের কাছে কওমি সিলসিলা সহিহ সিলসিলা হিসেবে পরিচিত। এজন্য বিষয়টি আমাকে বেশি আহত করেছে। আমি দুঃখিত যে বিষয়টি অনেক বড় হয়ে গেল। জাযাকাল্লাহু খাইরান।,

৩১ অক্টোবর, ২০২৩

ঢাকা ১০০০

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


সম্মানিত প্রশ্নকারী!
সম্মিলিত মুনাজাতের বিষয়ে ইতিপূর্বে আমরা অনেকবার বলেছি। সচেতন উলামায়ে কেরামও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। এমনকি আমরা সম্ভবত আপনার করা প্রশ্নেও সুস্পষ্ট ভাষায় বিষয়টি নিয়ে উল্লেখ করেছি। তাই আশা করছি সম্মিলিত মুনাজাতের বৈধতা, সীমারেখা, এবং এক্ষেত্রে কাউকে বাধ্য করা কিংবা করলে বা না করলে নিন্দা করার ব্যাপারে আপনার কোনো দ্বিধা সংশয় থাকার কথা নয়।

এখন বাকী থাকলে আপনাকে যারা এই ব্যাপারে বাধ্য করছে তাদের কাজটা কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। সম্মিলিত মুনাজাত যেহেতু একটি জায়েজ ( সর্বোচ্চ মুস্তাহাব আমল) তাই আপনি যদি সম্মিলিত মুনাজাত করতে না চান তাহলে না করবেন, এতে তো কারো কোনো আপত্তি থাকতে পারে না। যারা করে আপনিও তাদের ওপর সরাসরি কোনো আপত্তি তুলবেন না। তাহলে আশা করছি বিষয়টি আর সামনে এগোবে না।

যদি ইমাম সাহেবের তেলাওয়াত এবং মাসয়ালা মাসায়েলে কোনো সমস্যা না থাকে তাহলে শুধুমাত্র মুনাজাতকে কেন্দ্র করে মহল্লার মসজিদে নামাজ আদায় না করা উচিত হবে না। কাজেই আপনি অবশ্যই মসজিদে গিয়েই নামাজ আদায় করবেন।

আমাদের দেশের জুমার নামাজের আগের বয়ান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বয়ানে মানুষের মাঝে যেই বিপ্লব ঘটায় সাধারণ ওয়াজ মাহফিলে অনেক সময় সেটা হাসিল হয় না। কাজেই এখানে শুধু দুই রাকাত নামাজই নয় বরং ইমাম সাহেবের বয়ানের গ্রহনযোগ্যতারও একটা বিষয় থাকে। সেই দিকে লক্ষ করে আপনি চাইলে দূরের মাসজিদে গিয়েও নামাজ আদায় করতে পারেন। সেখানেও করও আপত্তি থাকতে পারে না। আসলে আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে যাদের কাজই হলো অনর্থক সমালোচনা করা। খোঁজ নিলে দেখা যাবে তার সমালোচনার কোনো উৎসই নেই!! সুতরাং কর্মমুখর মানুষের সমালোচনা শোনার সময় কোথায়!!??

আপনি শ্রদ্ধা ভক্তি ও ভালোবাসা বজায় রেখে আপনার ইমাম সাহেবের সাথে বিষয়গুলো আলোচনা করুন। আশা করি তিনি বুঝতে পারবেন। যদি তিনিও না বোঝেন তাহলে আপনার জন্য নিরবতাই শ্রেয়। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে "যে চুপ থাকে সে নাজাত পায়।"
আল্লাহ তায়ালা সবাইকে দ্বিনের সহিহ বুঝ দান করুন আমিন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৪৫২৬৯

সুদখোর বা সুদদাতাকে ঋণ দেওয়ার বিধান


২৮ নভেম্বর, ২০২৩

নামুজা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৮৭৩৫১

আল্লাহ কেন অমুসলিমদেরকে এমন অনেক বিষয় দান করেন যা অনেক সময় মুসলিমরা পায়না?


২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

বগুড়া

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

৮৮৪৬৫

দুআ কবুল হওয়ার বিশেষ কিছু মুহূর্ত


৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

করিমগাঞ্জ

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী আবু সাঈদ

৭৪৭৮৩

স্বামীর জন্য স্ত্রীর নৃত্য


৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

Imamnagar

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি জাওয়াদ তাহের

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy