প্রশ্নঃ ১৪৪৮৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, হযরত, একটা প্রশ্ন আমার দিলের ভিতর প্রায় সময় উদিত হয়। আমি জানি এটা শয়তান থেকে হয়। কোথাও এই প্রশ্ন করার সাহস পাই না। আমার দিলের সংশয় এবং শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সন্তোষজনক একটি উত্তর প্রদান করলে কৃতজ্ঞ থাকবো। মহান আল্লাহ তাআলা আমাকে ক্ষমা করুন।প্রশ্ন টি হল :আল্লাহ তায়ালা আমাদের রুহ সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আমাদেরকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। নবী রাসুল পাঠিয়েছেন আমাদের হেদায়েতের জন্য। আমার প্রশ্ন হল, আমাকে যদি সৃষ্টি না করা হতো তাহলে তো আর জান্নাত-জাহান্নামের প্রশ্ন আসতো না। কেন আমাকে সৃষ্টি করা হলো ? এটা কিভাবে ইনসাফ যে, আমি কাউকে সৃষ্টি করলাম আর বললাম তুমি যদি আমাকে মেনে চলো তাহলে তোমাকে অনেক নিয়ামত দিব আর না মেনে চললে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে। সে যদি প্রশ্ন করে, আমাকে আপনি সৃষ্টি করলেন কেন ? সৃষ্টি না করলে তো এখন আমাকে ঝামেলায় পড়তে হতো না। আমার কোনো অস্তিত্বই থাকত না। জান্নাত-জাহান্নামের আমার দরকার নেই । আমি সৃষ্টি হতে চাই না। আপনি কেন আমাকে অস্তিত্ব দিয়েছেন ? এর জবাব কি ? আমি জানি যে, আল্লাহতালা আমাদেরকে নেক আমল করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ সেটা বলেছেন। আমার প্রশ্ন হল, সৃষ্টি না করলে তো নেক আমলের - বদ আমলের প্রশ্ন আসতো না ? এটা কিভাবে ইনসাফ ? আল্লাহ আমাকে মাফ করুন। আমার জন্য দোয়া চাই। শয়তান যাতে আমাকে ধ্বংস করে না দেয়।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
মুহতারাম প্রিয় ভাই,
আল্লাহ তায়ালা আপনাকে, আমাকে, সকল মানুষকেই ভালোবাসেন। তাই তিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। এরপর যারা ঈমান এনেছে তাদের প্রতি আল্লাহ তা'আলা রাজি ও খুশি আছেন।
আল্লাহ তাআলা দয়া করে মায়া করে আমাদেরকে হিদায়াত করার জন্য কিতাব নাযিল করেছেন। যুগে যুগে নবী পাঠিয়েছেন। জান্নাতের অফুরন্ত নেয়ামতের কথা শুনিয়ে আগ্রহ সৃষ্টি করেছেন। তিনি সকল মানুষকে জান্নাতি হওয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান রাখছেন।
কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
والله يدعو الى الجنة والمغفرة باذنه
আপনার মনে যে প্রশ্ন জেগেছে, এই প্রশ্নের উৎপত্তি যদি আল্লাহর শাস্তি ও পরকালীন ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে হয়ে থাকে তাহলে এটি মন্দ নয়। এটি আল্লাহ তায়ালার আজাব থেকে বাঁচার জন্য দিলের কাকুতি এবং এটি ঈমানের নিদর্শন।
আপনাকে আমরা পাল্টা প্রশ্ন করতে চাই। এখন যেভাবে প্রশ্ন করা হলো যে, আল্লাহ সৃষ্টি করে কেন আমাকে পরীক্ষায় ফেললেন? আমার জান্নাত জাহান্নামের প্রয়োজন নাই। আল্লাহ যদি আমাকে সৃষ্টি না করতেন!
আল্লাহ যদি সৃষ্টি না করতেন, তখনও তো ঠিক এমনই প্রশ্ন হতে পারত যে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সৃষ্টি করতে। আমাকে একবার সুযোগ দিয়ে দেখতে। আমারতো জান্নাতের অফুরন্ত নেয়ামতের প্রয়োজন ছিল। আমিতো সেই নেয়ামত অর্জন করতে পারতাম। তুমি আমাকে সৃষ্টি না করে আমার প্রতি বেইনসাফি করেছো!
প্রিয় ভাই! আসল কথা হল, আল্লাহ যা করেছেন সবই ঠিক করেছেন। অস্থির মনে সব ধরনের প্রশ্ন আসতে পারে। সৃষ্টি করার পর সৃষ্টি না করার প্রশ্ন আসতে পারে। সৃষ্টি না করলে সৃষ্টি করার প্রশ্নও আসতে পারে। সব প্রশ্ন যৌক্তিক মনে হতে পারে। বাস্তবতায় যৌক্তিক হলো আল্লাহ যা করেছেন সেটি।
আপনি বেশি বেশি এই দোয়া পড়ুন। বিশেষ করে পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের পর পড়ুন-
يا مصرف القلوب صرف قلبي على دينك
ওহে অন্তর পরিচালনাকারী! তোমার দ্বীনের উপর আমার অন্তর পরিচালিত করো।
يا مقلب القلوب ثبت قلبي على دينك
ওহে অন্তর ঘূর্নয়নকারি! তোমার দ্বীনের উপর আমার অন্তরকে অটল-অবিচল করে দাও।
والله اعلم بالصواب
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন