সাদাস্রাব বা লিউকোরিয়া নারীদের একটি সাধারণ ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া
প্রশ্নঃ ১৩৩৮৬. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার লিউকুরিয়া বা সাদা স্রাবের অসুস্থতা আছে। অনেক ধরনের ঔষধ খাচ্ছি কিন্তু কেন যেন ভালো হচ্ছে না। তাতে আমার আল্লাহর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নাই। আমি দোয়া করতে থাকি। সারাদিনই কতক্ষণ পরপর বের হতে থাকে। আমি পরিষ্কার করে ফেলি। কিন্তু নামাজের মধ্যে আমার বেশির ভাগ সময় মনে হয় স্রাব বের হচ্ছে ও কিছু একটা ভেজা ভেজা অনুভব হয় । পরে যেই অবস্থায় থাকি ডান পাশে সালাম ফিরিয়ে পুনরায় ওজু করে আসি। কিন্তু প্রায় সময় স্রাব থাকে ও প্রায় সময় কিছু থাকে না। আবার প্রায় সময় ভেজা ভেজা অনুভব হওয়ার পরও নামাজ পড়ে ফেলি ভাবি শয়তানের ওসওয়াসা। এখন আমার প্রশ্ন হলো নামাযের মধ্যে যদি আমার এরকম হয় তাহলে কি আমি নামাজ ভেঙে পুনরায় ওজু করে আসব? নাকি নামাজ পড়তেই থাকব। প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজেই এরকম হয়। হাটাহাটি, ওঠবস, বসে থাকা , যেকোনো সময়ই বের হয়। নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। আমার মনে হয় আমি কি মাযুর হয়ে গেলাম আমার বয়স আরবি হিসাব অনুযায়ী সতের বছর। আমার কি করণীয় জানালে অনেক উপকৃত হতাম।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
সাদা স্রাব বা লিউকোরিয়া নিয়ে অনেক নারী চিন্তিত থাকেন। অনেক নারীর ধারণা, সাদা স্রাবের ফলে শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয় এবং স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে।
এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ ডা. দীনা লায়লা হোসেন বলেন, সাদা স্রাব বা লিউকোরিয়া নারীদের একটি সাধারণ ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। অন্য কোনো রোগের আশঙ্কা ছাড়াই যোনি থেকে এটি নির্গত হয়। একজন নারীর মাসিকের ওপর নির্ভর করে তার স্বাভাবিক স্রাব, রঙ, পরিমাণ ও ঘনত্ব। স্রাব একটি স্বচ্ছ তরল, যা যোনিকে আর্দ্র ও পিচ্ছিল রাখে এবং যোনিতে জীবাণুর সংক্রমণে বাধা দেয়। যৌন আর্দ্র রাখার জন্যই আল্লাহ প্রাকৃতিকভাবে সাদা স্রাব দিয়েছেন। একজন নারীর বয়ঃসন্ধিকাল থেকে মেনোপোজ পর্যন্ত প্রাপ্তবয়স্কদের জীবনে হরমোনের মাত্রার তারতম্যের ওপর স্রাব হয় (যুগান্তর, লাইফস্টাইল ডেস্ক)
সম্মানিত প্রশ্নকারী!
আশা করছি বিষয়টি নিয়ে অযথাই চিন্তিত হবেন না।
যেহেতু আপনার সারাক্ষণই অল্প অল্প পরিমাণ স্রাব নির্গত হতে থাকে (এবং আপনার বর্ণনা মতে আপনি নামাজর পড়ার সময়টুকুও বিনাস্রাবে পান না) তাহলে শরিয়তের পরিভাষায় আপনি মাজুর হিসেবে গন্য হবেন। (শরীয়তের এই মাজুর মানে আমরা যাকে অসুস্থ বলি সেটা নয়।)
আর মাজুর ব্যক্তির জন্য শরিয়তের বিধান হচ্ছে, তিনি প্রতি ওয়াক্তের নামাজের জন্য নতুন করে অজু করবেন এবং এই অজু দিয়ে ওয়াক্তের মধ্যে ফরজ বা নফল যত নামাজ পড়তে চান পড়তে পারবে।কোরআন শরীফ স্পর্শ করতে পারবে। ওয়াক্তের মধ্যে স্রাব নির্গত হতে থাকলেও কোনো অসুবিধা নাই। ওয়াক্ত শেষ হওয়ার সাথে সাথে তার অজু ভেঙ্গে যাবে। পরবর্তী ওয়াক্তের জন্য আবার নতুন করে অজু করতে হবে। এভাবেই তিনি নামাজ ইত্যাদী আদায় করবেন। কাজেই আপননিও একই পদ্ধতি অবলম্বন করুন।
হাদিসে আছে, একবার ফাতিমা বিনতে আবু হুবায়শ (রা.) রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার রক্তস্রাব হতেই থাকে এবং আমি কখনো পবিত্র হতে পারি না। আমি কি নামাজ ছেড়ে দেব? রাসুলুল্লাহ সা. জবাব দিলেন, না, এটা এক ধরনের শিরাজনিত রোগ, এটা ঋতুস্রাবের রক্ত নয়। তুমি তোমার ঋতুস্রাবের মেয়াদকাল নামাজ থেকে বিরত থাকো, আর যখন তা বন্ধ হয়ে যাবে, তখন রক্ত ধুয়ে ফেলবে, তারপর নামাজ আদায় করবে। (বুখারি, হাদিস : ২২৮)
والله اعلم بالصواب
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন