আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১৩২৬৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, সুদ খাওয়া অথবা সুদ দেওয়া সম্পর্কে হাদিসে কি বলা আছে...?

৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
৯F৪W+G৯৪ - Musaffah - M-৩৮ - Abu Dhabi - সংযুক্ত আরব আমিরাত

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم





সুদ খাওয়া হরাম। কুরআন হাদিসের অসখ্য বর্ণনায় এই ব্যাপারে বিস্তারিত বলা আছে।

আল-কোরআনে ‘রিবা’ শব্দের সমার্থক হলো ‘সুদ’ বা ‘ইন্টারেস্ট’ (interest। প্রচলিত অর্থে সুদ বলতে বোঝায়, নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ধার দিয়ে চুক্তির শর্ত মোতাবেক আসলের ওপর নির্দিষ্ট পরিমাণ অতিরিক্ত গ্রহণ করা। কিন্তু রিবা শুধু ঋণের ক্ষেত্রে আসলের অতিরিক্ত গ্রহণ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর পরিধি ও পরিসর আরো ব্যাপক ও বিস্তৃত।

কেননা ঋণের বাইরেও এমন কিছু কেনাবেচা ও লেনদেন আছে, যার সঙ্গে সুদের সম্পর্ক আছে। রিবা, সুদ বা ইন্টারেস্ট—যে নামেই বলি না কেন, ইসলামে এগুলোকে নিষিদ্ধ বা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু ইসলাম সুদ নিষিদ্ধ করেনি, দুনিয়ার প্রধানতম ধর্মগুলো, এমনকি বিভিন্ন মতবাদেও সুদ নিষিদ্ধ।
আল-কোরআনের বর্ণনায় সুদ : আল-কোরআনের চারটি সুরার মোট ১২টি আয়াতে সুদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সুরা রুমের ৩৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আর মানুষের ধন-সম্পদের মধ্যে বৃদ্ধি পাবে বলে তোমরা সুদের ভিত্তিতে যা প্রদান করে থাকো, তা আল্লাহর কাছে বৃদ্ধি পায় না। আর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যে জাকাত (দান-সদকা) তোমরা দিয়ে থাক (তা-ই বৃদ্ধি পায়) এবং তারাই সমৃদ্ধিশালী। ’

সুরা আলে-ইমরানের ১৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা দ্বিগুণ-বহু গুণে সুদ খেয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো। তোমরা সে আগুনকে ভয় করো, যা কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। আর তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর ও রাসুলের, যাতে তোমরা দয়াপ্রাপ্ত হতে পারো। ’

সুরা বাকারার ২৭৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যারা সুদ খায় তারা (কিয়ামতের দিন) ওই ব্যক্তির দাঁড়ানোর মতো দাঁড়াবে যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে দেয়। এটি এ কারণে যে তারা বলে কেনাবেচা তো সুদের মতোই; অথচ আল্লাহ কেনাবেচাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম। ’

সুরা বাকারার ২৭৮ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা অবশিষ্ট আছে তা ছেড়ে দাও—যদি তোমরা মুমিন হও। কিন্তু যদি তোমরা তা না করো, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে (তোমাদের বিরুদ্ধে) যুদ্ধের ঘোষণা জেনে নাও, আর যদি তোমরা তাওবা করো, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদের জন্য, তোমরা জুলুম করবে না এবং তোমাদের প্রতিও জুলুম করা হবে না এবং যদি সে (ঋণগ্রহীতা) অসচ্ছল হয় তাহলে সচ্ছলতা পর্যন্ত তাকে অবকাশ দাও। আর সদকা করে দেওয়া তোমাদের জন্য উত্তম—যদি তোমরা জানতে। আর তোমরা সেই দিনকে ভয় করো, যেদিন তোমাদের আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে, এরপর প্রত্যেক ব্যক্তিকে সে যা অর্জন করেছে তা (তার প্রতিফল) পুরোপুরি দেওয়া হবে এবং তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না। ’

সুুন্নাহর দৃষ্টিতে রিবা বা সুদ : জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) সুদগ্রহীতা, সুদদাতা, সুদের লেখক (চুক্তি সম্পাদনকারী) ও সুদের সাক্ষীদ্বয় সবার ওপর অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেন, তারা সবাই সমান অপরাধী। ’

আবদুল্লাহ ইবনে হানজালা (রা.) থেকে বর্ণিত মহানবী (সা.) বলেন, ‘জেনে-বুঝে সুদের এক দিরহাম গ্রহণ করা ৩৬ বার ব্যভিচার করার চেয়েও নিকৃষ্ট অপরাধ। ’

রাসুল (সা.) অন্য এক হাদিসে বলেছেন, ‘আল্লাহ তাঁর অধিকার হিসেবে চার শ্রেণির ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না এবং তার নিয়ামতের স্বাদও আস্বাদন করাবেন না। তারা হলো : ১. শরাব বা মদ্যপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি, ২. সুদখোর ব্যক্তি ৩. ইয়াতিমের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণকারী ৪. পিতামাতার অবাধ্য ব্যক্তি। ’

সংগৃহিত

والله اعلم بالصواب

মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর
প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর