আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

আত্মসমালোচনার নামেও গীবত!

প্রশ্নঃ ১৩১২৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, শায়েখ, আশা করি মহান আল্লাহ তা'আলার অশেষ রহমতে ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। আমার প্রশ্ন হলো আত্মসমালোচনার ব্যাপারে ইসলাম কী বলে? এমন অনেকেই আছে যাঁরা অকারণে অন্যের দোষত্রুটি খোঁজার চেষ্টা করে এমনকি খুঁজেও বেড়ায়। যাদেরকে সহজ কথায় নিন্দুক বলে। এদের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কীরকম?,

১৭ মে, ২০২৪

ঢাকা ১২১৯

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের পেছনে দোষ বর্ণনা, পরচর্চা ও নিন্দা করা জঘন্যতম অপরাধ। ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার দোষত্রুটি আলোচনা নামই হলো গিবত বা পরনিন্দা।

এ গিবত হতে পারে কথায় বা ইশারায় কিংবা লেখনীর মাধ্যমে। গিবত যেভাবেই হোক তা মানুষের দুনিয়া ও পরকালে লাঞ্ছিত হওয়ার অন্যতম কারণ।


আরবি গিবত শব্দের অর্থ হলো পরনিন্দা। গিবত বা পরনিন্দা যে করে আর যে শুনে উভয়েই সমান অপরাধী। আল্লাহ তাআলা গিবতকারীকে মৃত ব্যক্তির গোশত ভক্ষণকারী হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের পেছনে নিন্দা করো না। তোমাদের কেউ কী স্বীয় মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তা একেবারেই ঘৃণাই করো। (সুরা হুজরাত : আয়াত ১২)

হাদিসে গিবতের পরিচয়
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদের জিজ্ঞাসা করলেন- তোমরা কি বলতে পার গিবত কাকে বলে?

সাহাবাগণ আরজ করলেন- আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভালো জানেন। তখন তিনি (প্রিয়নবি) বললেন-


‘গিবত হল কোনো ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার এমন দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা; যা শুনলে সে অসন্তুষ্ট হয় এবং অন্তরে আঘাত পায়, এটাই গিবত। অর্থাৎ কারো অগোচরে তার এমন দোষ বলা যা বাস্তবেই তার মধ্যে আছে তাই গিবত বা পরনিন্দা।’ (তিরমিজি)

অন্য হাদিসে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গিবতের পরিচয় এভাবে তুলে ধরেছেন-

‘একদিন কোনো প্রয়োজনে এক বেঁটে মহিলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে আসেন। সে মহিলা চলে যাওয়ার পর হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট ঐ মহিলার দৈহিক কাঠামো বেঁটে হওয়ার ত্রুটি বর্ণনা করেন। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কথায় তাঁর চেহারা মলিন হয়ে গেল।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আয়েশা তুমি ঐ মহিলাটির গিবত করলে! তুমি এমন কথা বললে যা সমুদ্রে নিক্ষেপ করলে সমুদ্রের পানির রং পরিবর্তন হয়ে কালো হয়ে যেত।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন তার বেঁটে হওয়ার কথাই তো বলছি এবং এই ত্রুটিতো তার মধ্যে রয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হে আয়েশা যদিও তুমি সত্য কথা বলেছো কিন্তু তুমি তার ত্রুটি বর্ণণা করায় তা গিবত তথা পরনিন্দা হয়ে গেল।’ (মুসলিম)

গিবতের ভয়াবহতা
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-

‘গিবত ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্য। তিনি জানতে চাইলেন এটা কিরুপে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- এক ব্যক্তি ব্যভিচার করার পর তাওবাহ করলে তার গোনাহ মাফ হয়ে যায়। কিন্তু যে গিবত করে তার গোনাহ প্রতিপক্ষের (যার গিবত করা হয় সে) মাফ না করা পর্যন্ত মাফ হয় না।’ (তাফসিরে মাজহারি)

গিবতের ক্ষতিকর দিক
হাদিসের এসেছে, ‘তোমরা গিবত বা পরনিন্দা করা থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ তাতে রয়েছে তিনটি মারাত্মক ক্ষতি-
>> গিবতকারীর দোয়া কবুল হয় না।
>> গিবতকারীর কোনো নেক আমল কবুল হয় না এবং
>> আমলনামায় তার পাপ বৃদ্ধি হয়ে থাকে। (বুখারি)

গিবতকারীর শাস্তি
হজরত হাসান ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মেরাজের রাতে আমাকে এমন একদল মানুষের পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো। যাদের নখ ছিল তামার। তারা নখ দ্বারা মুখমণ্ডল ও দেহের গোশত আচড়াচ্ছিলো। আমি জিবরাঈল কে জিজ্ঞাসা করলাম ওরা কারা? তিনি বললেন, ওরা ঐ সব লোক যারা তাদের মুসলমান ভাইয়ের গিবত করত এবং ইজ্জতহানী করতো।’ (মাজহারি)

পরিশেষে...
গিবত করা হারাম এবং কবিরা গোনাহ। গিবতের মাধ্যমে আল্লাহর হক ও বান্দার হক দুটোই নষ্ট করা হয়। মানবজীবনে পরনিন্দা ও পরচর্চায় পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি হয়, বিদ্বেষ জন্মে ও সমাজের শান্তি-শৃংখলা বিনষ্ট হয়। তাই গিবত পরিত্যাগ করা অত্যন্ত জরুরি।

গিবত পরিত্যাগে প্রিয়নবি নসিহত মেনে চলা আবশ্যক। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘তোমরা একে অপরের নিন্দা কর না। আর পরনিন্দা হলো অপর ভাইয়ের এমন দোষ বর্ণনা করা যা তার অপছন্দ। যে ব্যক্তি অপর মুসলমানের দোষ অনুসন্ধান করে আল্লাহ তার দোষ অনুসন্ধান করেন। আল্লাহ যার দোষ অনুসন্ধান করেন তাকে লাঞ্চিত ও অপমানজনক শাস্তি দিবেন।’ (তিরমিজি)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মানুষের ব্যক্তি, পারিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রীয় জীবনে নৈতিকতা ও আত্মশুদ্ধি অর্জনে অন্যের দোষ বর্ণনা তথা গিবত পরিহার করার তাওফিক দান করুন। গিবত তথা পরনিন্দার ভয়বহতা, ক্ষতি ও শাস্তি থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৩৫৮৬৪

নামাজে মনোযোগী হওয়ার উপায়


১৮ নভেম্বর, ২০২৩

Dhaka, Bangladesh

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি মোহাম্মদ আমীর হোসাইন

৩৭৫২৮

পালক পিতা-মাতার হক


৯ আগস্ট, ২০২৩

রংপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৩৯৭৫৩

স্বামীর পকেট থেকে টাকা নেওয়ার ব্যাপারে ইসলাম কি বলে??


১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী আরিফুর রহমান

৪১২০৪

বান্দার হক


২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

Dhaka

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি মোহাম্মদ আমীর হোসাইন

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy