প্রশ্নঃ ১৩১২২. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, পেশায় আমি একজন নারী ডাক্তার। বাবা কম দ্বীনদার হওয়ায় তাঁর চাপে ডাক্তারী পাশ করেছি। যদিও এক্ষেত্রে আমার মা তেমন কোন সহযোগিতা করেননি। আবার নিয়ত এবং চেষ্টা ছিল একজন দ্বীনদার জীবনসঙ্গী পাওয়া। কিন্তু এখানেও আমার বাবা বাধ্য করেছে তার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করতে। যদিও আমার স্বামী ডাক্তার এবং কিছুটা হলেও দ্বীনের বুঝ আছে, সে আমাকে দ্বীন মানার ব্যাপারে সহযোগিতা করে না। এখন যেহেতু ডাক্তারীর পাশাপাশি একজন মেয়েকে দ্বীন মানাটা বেশ কষ্টকর। প্রতিনয়ত না চাইতে মনে হয় অনেক গোনাহের মধ্যে লিপ্ত হচ্ছি। মানসিক অস্থিরতা এবং কনফিউশান তৈরি হয়। হতাশা এবং ডিপ্রেশনে চলে যায়। ভালো কাজের পরিমানের চাইতে গোনাহ বেশি হয়ে যাচ্ছে নাতো! এখন আমি কিভাবে আগাতে পারি বা কি চিন্তা করতে পারি বা কিভাবে আমার গোনাহের পরিমাণ কমাতে পারি। আমি এখন পোষ্টগ্রাজুয়েশনের জন্য পড়াশোনা এবং ট্রেনিংয়ে ব্যস্ত আছি।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রিয় প্রশ্নকারী! আল্লাহ তায়ালা আপনাকে কবুল করুন। আপনার দীলের নেক তামান্নাগুলো পুরণ করুন। পেশা-স্বামী-সংসার এবং দ্বিনদারী- সবকিছু নিয়ে সুখময় জীবন দান করুন।
সম্মানিত বোন!
আপনার বর্তমাণ অবস্থান বিবেচনায় আপনার স্বামীই আপনার জন্য সবচেয়ে বড় সহায়কের ভূমিকা রাখতে সক্ষম। যেহেতু আপনি আলহামদুলিল্লাহ দীন মেনে চলার চেষ্টা করছেন কিন্তু স্বামীর পক্ষ থেকে যথাযথা সহায়তা পাচ্ছেন না, তো আমাদের অভিজ্ঞতায় বলে যেই নারী নিজে দীন মেনে চলে স্বামী তার দীনের পথে খুব একটা বাধা হতে পারে না। যা হয়ে থাকে বিপরিত ক্ষেত্রে। কাজেই এক্ষেত্রে প্রথমেই আপনার স্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণ করুন। অর্থাৎ তাকেও পূর্ণ দীনদার হিসেবে গড়ে তুলুন। এটা একজন নারীর জন্য মোটেও কঠিন নয়। কেননা নারী জাতির মাঝে আল্লাহ তায়ালা এমন এক মহান শক্তি দিয়েছেন যা দিয়ে সে কঠোর হৃদয়কেও বিগলিত করতে পারে। আদর সোহাগ-হৃদ্যতা এবং ভালোবাসা দিয়ে আপনার স্বামীকে পূর্ণ দীনদার রূপে গড়ে তুলুন। এবং শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে কিছুটা মান-অভিমানও কাজে লাগাতে পারেন। তাকে কোনো আল্লাহ ওয়ালার সাথে সম্পৃক্ত করে দিতে পারেন। ওলামায়ে কেরামের তত্ত্ববধানে পরিচালিত দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতের সাথে সম্পৃক্ত করে দিতে পারেন। ইনশাআল্লাহ আশা করা যায় এর মাধ্যমে তার মধ্যে অমূল পরিবর্তণ ঘটবে।
দ্বিতীয়ত: সত্যিই মুসলিম জাতি হিসেবে এবং ৯৫% মুসলিমের দেশ হয়েও আমরা আজও লজ্জিত যে এই দেশে সহশিক্ষা এবং সহাবস্থানের নামে নারী পুরুষকে একাকার করে ফেলা হচ্ছে। যেখানে না আছে একজন নারীর জন্য দীনের বিধান মেনে শিক্ষা লাভের সুযোগ। আর না আছে নিরাপদ ও শরিয়তবান্ধন কর্মক্ষেত্র। যার কারণে নারী নিজেকে পর্দায় রেখে কাজ-কর্ম করা দুরহ প্রায়। আমরা দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা যেন নারীদের জন্য উপযুক্ত ও নিরাপদ শিক্ষাব্যবস্থা এবং কর্মক্ষেত্রের ব্যবস্থা করে দেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে যথাসম্ভব আপনি হিজাব ও পর্দা রক্ষা করে আপনার পড়াশোন কাজগুলো চালিয়ে যান। কখনো যদি ভুলে কিংবা অসতর্কতাবশত পর্দা লঙ্ঘন হয় যায় তাহলে সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালার দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। একজন দীনদার নারী ডাক্তার এই সমাজেরই একটি অমূল্য সম্পদ। আশা করি আপনি সেই সম্পদকে অপাত্রে নষ্ট করবেন না।
নিয়মিত পাঁচওয়াক্ত নামাজের প্রতি গুরুত্বারোপ করুন। রমজান আসলে ঠিকমতো রোজাগুলো রাখুন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে জিকির আজকার, মাসনুন দোয়ার এহতেমাম করুন। যদি কুরআনুল কারিমের তেলাওয়াত শিখে থাকেন তাহলে শুকরিয়া। আর শেখা না হলে দ্রুত শিখে নিন এবং প্রতিদিন রুটিন করে কিছু কিছু তেলাওয়াত করুন।
সাথে সাথে সম্ভব হলে, মুফতি মুশতাকুন্নবী কাসেমী সাহেব হাফিজাহুল্লাহু এর বয়ানগুলোও শোনতে পারেন। এবং তার লিখিত ইসলাহী বইগুলো পড়তে পারেন। আশা করছি ইনশাআল্লাহ জীবনের মোড় ঘুরে যাবে। হতাশা দূর হবে। আল্লাহ তায়ালার সাথে মুহব্বতের সম্পর্ক কায়েম হবে। তবে নারীদের প্রতি হযরতের পরামর্শ হলো তারা যেন হযতের বয়ান শোনার সময় মোবাইলের স্কিন ঢেকে রাখেন অথবা ঘুরিয়ে রাখেন। কেননা পুরুষের জন্য যেমনিভাবে পরনারীর চেহারা দেখা হারাম তেমনিভাবে নারীর জন্যও পরপুরুষের চেহারা দেখা হারাম।
والله اعلم بالصواب
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন