আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১২৮৯১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, সদকা করলে কি কি লাভ হয়?

১৯ জানুয়ারী, ২০২২
বরিশাল

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم





গোনাহ ও আজাব দূর করার আমল ‘সাদাকাহ’
দুনিয়া ও পরকালের অনেক কল্যাণ লাভের ইবাদত হলো ‘দান বা সাদাকাহ’। এমন অনেক কঠিন কাজ রয়েছে যা দান-সাদাকাহ’র মাধ্যমে লাভ করা যায়। এমনকি দান-সাদাকার মাধ্যমে সুনিশ্চিত মরণব্যাধি থেকেও আরোগ্য লাভ করা যায়।

হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দান-সাদাকাহ সম্পর্কে ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় দান-সাদাকাহ (মানুষের) পাপাচারের কারণে আল্লাহর গজবের যে আগুন সৃষ্টি হয় তাকে নিভিয়ে দেয়; যেভাবে আগুন পানিকে নিভিয়ে দেয়।’ (তিরমিজি)


কুরআন ও সুন্নার বর্ণনা মতে, আল্লাহ তাআলা মানুষকে দান-সাদকার ফলে কৃত অপরাধের গোনাহ মাফ করে দেন। জাহান্নামের আগুন থেকে সুরক্ষা দেবেন। কেয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়া দানে সম্মানিত করবেন। শারীরিক ও আত্মিক রোগমুক্ত করবেন। সম্পদের বরকত দান করবেন বলেও ঘোষণা রয়েছে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সাদকার মাধ্যমে তোমাদের রোগীদের চিকিৎসা কর।’ (আবু দাউদ, সহিহ জামে)

দান-সাদকার মধ্যে সর্বোত্তম দান হলো সম্পদের সল্পতা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত লোকদের মধ্যে গোপনে দান করে। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘৩ ব্যক্তি আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয়-
- যে ব্যক্তি রাতে জেগে কুরআনুল কারিম তেলাওয়াত করে;
- যে ব্যক্তি ডান হাতে আল্লাহর পথে ব্যয় করে অথচ বাম হাত তা জানে না এবং
- সে ব্যক্তি যে জিহাদে অংশগ্রহণ করে তার সঙ্গী পরাজিত হয়ে পলায়ন করে কিন্তু সে দুশমনের মোকাবেলায় সুদৃঢ় থাকে।’ (তিরমিজি)

দান-সাদকার ফজিলত বর্ণনায় অন্য হাদিসে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলাদা আলাদাভাবে এমন ৩ ব্যক্তির বর্ণনা দিয়েছেন যাদেরকে আল্লাহ পছন্দ করে; আর ৩ শ্রেণীর ব্যক্তিকে অপছন্দ করেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু জর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা ৩ ব্যক্তিকে পছন্দ করেন আর ৩ ব্যক্তিকে অপছন্দ করেন। তারা হলো-

যাদেরকে পছন্দ করেন
- একজন সাহায্য প্রার্থী আল্লাহর ওয়াস্তে কিছু লোকের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে, যাদের সঙ্গে তার আত্মীয়তার বন্ধন নেই। মজলিশের কেউ তাকে সাহায্য করে না। এমন অবস্থায় এক ব্যক্তি মজলিশ থেকে ওঠে গিয়ে এমন গোপনীয়তার সঙ্গে ওই ব্যক্তিকে সাহায্য করে যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ তা জানেন না।

- মুসলমানদের একটি দল শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত। রাতের শেষ প্রহরে মানুষ যখন ঘুমে মগ্ন; সে সময় যে ব্যক্তি জেগে থেকে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করে ও কুরআন তেলাওয়াত করতে থাকে।

- সে ব্যক্তি, যে জেহাদে অংশ গ্রহণ করে, জিহাদে পরাজিত হয়ে তার সঙ্গীরা পলায়ন করলেও সে শত্রুর মোকাবেলায় শাহাদাত বরণ করার আগ পর্যন্ত কিংবা বিজয় লাভ করা পর্যন্ত জিহাদে রত থাকে।

যে ৩ ব্যক্তিকে আল্লাহর অপছন্দ করেন
- বৃদ্ধ ব্যভিচারী;
-অহংকারি ভিক্ষুক এবং
- অত্যাচারী সম্পদশালী ব্যক্তি।

উল্লেখিত হাদিসগুলোর আলোকেও বুঝা যায় যে, দানের গুরুত্ব অপরিসীম। যে কাজ অর্থ-সম্পদ ও সময় ব্যয় করে অর্জন করা সম্ভব নয়; শুধুমাত্র দান-সাদকার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মানুষকে তা দান করেন।

মানুষের উচিত চরম অর্থাভাবেও আল্লাহর রাস্তায় দান করা। দ্বীন ও ইসলামের পথে অকাতরে দান করা। যে কারণে ইসলামের প্রাথমিক যুগে দান-সাদকার প্রতিযোগিতা করেছিলেন হজরত আবু বকর, ওমর, ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুমসহ অগণিত সাহাবায়ে কেরাম। মুসলিম উম্মাহর শিক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে যা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখা রয়েছে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুখ-দুঃখ, স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল অবস্থায় গরিব দুঃখীর মাঝে আল্লাহর ওয়াস্তে অকাতরে দান করার তাওফিক দান করুন। দান-সাদকার মাধ্যমে সুস্থতা, গোনাহ ও আল্লাহর কঠিন পরীক্ষা ও আজাব থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
(সংগৃহীত)

والله اعلم بالصواب

মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর
প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন