আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১২৬৯৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, নামাজে রুকু থেকে সিজদায় যাওয়ার সময় আগে হাটু রাখতে হবে না আগে হাত রাখতে হবে সহিহ কোন নিয়মটা,

১১ জানুয়ারী, ২০২২

Terengganu

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم





সেজদায় যাবার সুন্নাহ সম্মত বিশুদ্ধ পদ্ধতি হল, প্রথমে দুই হাটু জমিনে রাখবে, তারপর হাত রাখবে।

حَدّثَنَا أبُو الْعبّاسِ بْنُ محمّدٍ الدوري الْعَلَاءِ بْنِ إسْمَاعِيلَ الْعَطَّارِ ثَنَا حَفْصُ بْنُ غِيَاثٍ عَنْ عَاصِمٍ الْأَحْوَلِ عَنْ أَنَسٍ قَالَ رَأَيْت رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَبَّرَ فَحَاذَى بِإِبْهَامَيْهِ أُذُنَيْهِ ثُمَّ رَكَعَ حَتَّى اسْتَقَرَّ كُلُّ مَفْصِلٍ مِنْهُ وَانْحَطَّ بِالتَّكْبِيرِ حَتَّى سَبَقَتْ رُكْبَتَاهُ يَدَيْهِ، هذَا إسْنَادٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ، وَلَا أَعْلَمُ لَهُ عِلَّةً وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ

অর্থ: আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখলাম, তিনি তাকবীর দিয়ে সেজদায় গেলেন এবং হাত রাখার আগে হাঁটু রাখলেন। [দারাকুতনী, হাদীস ১৩০৪, হাকেম, হাদীস ৮২২ ও বায়হাকী, হাদীস ২৬৩২ ]

হাদীসটির স্তর :

সহীহ। হাকেম আবু আব্দুল্লাহ রহ. বলেন: এ হাদীসের সনদ বুখারী-মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ। আর এ হাদীসে কোন সমস্যা আছে বলে আমার জানা নেই। তবে ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহ. তাঁদের কিতাবে এ হাদীসটি আনেননি। ইমাম জাহাবী রহ.ও তাঁর ‘তালখীস কিতাবে অনুরূপ মন্তব্য করেছেন।

এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রসূলুল্লাহ স.-এর আমল ছিলো সিজদায় যাওয়ার সময়ে আগে হাঁটু এবং পরে হাত রাখা।

حَدَّثَنَا سَلَمَةُ بْنُ شَبِيبٍ، وَأَحْمَدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الدَّوْرَقِيُّ، وَالْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ الْحُلْوَانِيُّ، وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُنِيرٍ، وَغَيْرُ، وَاحِدٍ، قَالُوا حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ، أَخْبَرَنَا شَرِيكٌ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا سَجَدَ يَضَعُ رُكْبَتَيْهِ قَبْلَ يَدَيْهِ وَإِذَا نَهَضَ رَفَعَ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ ‏.‏ قَالَ زَادَ الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ فِي حَدِيثِهِ قَالَ يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ وَلَمْ يَرْوِ شَرِيكٌ عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ إِلاَّ هَذَا الْحَدِيثَ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُ أَحَدًا رَوَاهُ مِثْلَ هَذَا عَنْ شَرِيكٍ ‏.‏ وَالْعَمَلُ عَلَيْهِ عِنْدَ أَكْثَرِ أَهْلِ الْعِلْمِ يَرَوْنَ أَنْ يَضَعَ الرَّجُلُ رُكْبَتَيْهِ قَبْلَ يَدَيْهِ وَإِذَا نَهَضَ رَفَعَ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ ‏( رَوَاه التِّرمٍذِىْ فِىْ بَابِ مَا جَاءَ فِي وَضْعِ الرُّكْبَتَيْنِ قَبْلَ اليَدَيْنِ فِي السُّجُودِ)‏

হযরত ওয়াইল বিন হুজ্র রা. বলেন: আমি রসূলুল্লাহ স.কে দেখেছি: তিনি সিজদার সময়ে উভয় হাত রাখার আগেই উভয় হাঁটু রেখেছেন। আর সিজদা থেকে ওঠার সময়ে উভয় হাত উভয় হাঁটুর আগে উঠিয়েছেন।

[আবূ দাউদ শরীফ, হাদীস নং ৮৩৮; তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং ২৬৮; নাসায়ী শরীফ, হাদীস নং ১০৮৯; ইবনে মাজাহ শরীফ, হাদীস নং ৮৮২; ইবনে খুযায়মা, হাদীস নং ৬২৬; ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ১৯০৯ ও ইবনুস সাকান (দ্র. আছারুস সুনান,পৃ. ১৪৮] ।
ইমাম তিরমিজী রহ. বলেন: এ হাদীসটি হাসান-গরীব। শারীক ছাড়া আর কেউ এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন বলে আমার জানা নেই। অধিকাংশ আহলে ইলম এ হাদীস অনুসারে আমল গ্রহণ করেছেন। তারা মনে করেন: মানুষ সিজদা দেয়ার সময়ে আগে হাঁটু এবং পরে হাত রাখবে আর যখন উঠবে তখন আগে হাত এবং পরে হাঁটু উঠাবে। (তিরমিজী: ২৬৮)

হাদীসটির স্তর : হাসান। ইমাম তিরমিজী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। শাব্দিক কিছু তারতম্যসহ হাদীসটি আবু দাউদ, নাসাঈ এবং ইবনে মাজাহ শরীফেও বর্ণিত হয়েছে। (জামিউল উসূল: ৩৫১৭)

এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রসূলুল্লাহ স.-এর আমল ছিলো সিজদায় যাওয়ার সময়ে আগে হাঁটু এবং পরে হাত রাখা। আর সিজদা থেকে ওঠার সময়ে এর বিপরীত করা। ইমাম তিরমিজী রহ.-এর মন্তব্য থেকে প্রমাণিত হয় যে, অধিকাংশ উলামায়ে কিরামের আমলও এ হাদীস অনুযায়ী।

حَدَّثَنَا يَعْلَى عَنِ الأَعْمَشِ عَنْ إبْرَاهِيمَ عَنِ الأَسْوَدِ ؛ أَنَّ عُمَرَ كَانَ يَقَعُ عَلَى رُكْبَتَيْهِ.

হযরত উমার রা. হাঁটুর ওপর ভর করে (সিজদার জন্য) নীচু হতেন (ইবনে আবী শাইবা: ২৭১৯)

হাদীসটির স্তর : সহীহ, মাউকুফ। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী।

حَدَّثَنَا ابْنُ فُضَيْلٍ ، عَنْ مُغِيرَةَ ، عَنْ إبْرَاهِيمَ ؛ أَنَّهُ سُئِلَ عَنِ الرَّجُلِ يَضَعُ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ ؟ فَكَرِهَ ذَلِكَ ، وَقَالَ : هَلْ يَفْعَلُهُ إِلاَّ مَجْنُونٌ ؟!.

হযরত ইবরাহীম নাখঈ রহ.কে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, সিজদার সময়ে হাঁটুর আগে হাত রাখে। তিনি এটাকে অপছন্দ করলেন এবং বললেন: পাগল ছাড়া কেউ এমন করে? (ইবনে আবী শাইবা: ২৭২২)

হাদীসটির স্তর : সহীহ, মাকতু’। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী।

উপরোক্ত হাদীসসহ আরো অনেক সহীহ ও হাসান পর্যায়ের হাদীস প্রমাণ করে যে, সেজদায় যাবার বিশুদ্ধ পদ্ধতি হল, প্রথমে হাটু রাখা, তারপর হাত রাখা।

তবে অসুস্থ্য হলে প্রথমে হাত রাখা যেতে পারে।

আবু দাউদে বর্ণিত হাদীসটি জবাব

প্রথমে হাদীসটি দেখে নেইঃ

আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন,

إذا سجد أحدكم فلا يبرك كما يبرك البعير وليضع يديه قبل ركبتيه

অর্থাৎ তোমাদের কেউ যখন সেজদা করে তখন উটের মতো করে যেন না বসে। সে যেন তার হাঁটুদ্বয়ের পূর্বে হস্তদ্বয় রাখে। (আবু দাউদ, হাদীস ৮৪০]

এ হাদীসটির সনদেও দুজন সমালোচিত রাবী রয়েছেন।

একজন হলেন মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে হাসান।

ইমাম বুখারী রহ. তার আত তারীখুল কাবীরে এ হাদীসটি উল্লেখপূর্বক মন্তব্য করেছেন, لا يتابع عليه ولا أدري سمع من أبي الزناد أم لا অর্থাৎ তার হাদীসটির সমর্থন পাওয়া যায় না। আমি জানি না তিনি আবুয যিনাদ থেকে (হাদীসটি) শুনেছেন কি না। (নং ৪১৮)

তাহলে ইমাম বুখারীর মতে উক্ত হাদীসটির সূত্র সঠিক কি না? তাই সন্দেহযুক্ত।

এ হাদীসের আরেকজন বর্ণনাকারী মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন হাসানের শিষ্য আব্দুল আযীয ইবনে মুহাম্মদ আদ দারাওয়ার্দী।

দারাওয়ার্দীর স্মৃতিদুর্বলতা নিয়ে অনেক মুহাদ্দিসই সমালোচনা করেছেন।

ইমাম আহমদ বলেছেন, যখন তিনি স্মৃতি থেকে হাদীস বর্ণনা করেন, তখন ভুল করে ফেলেন, তখন আর তিনি বিশ্বস্ত থাকেন না। আর যখন কিতাব থেকে বর্ণনা করেন তখন ঠিক মতোই বর্ণনা করেন।

অন্যত্র তিনি বলেছেন, স্মৃতি থেকে বর্ণনা করার সময় তিনি অনেক বাতিল হাদীস বর্ণনা করেছেন।

তিনি আরো বলেছেন, অনেক সময় তিনি অন্যদের কিতাব থেকে বর্ণনা করতেন এবং ভুলের শিকার হতেন।

আবু যুরআ রাযী বলেছেন,তিনি দুর্বল স্মৃতিসম্পন্ন। স্মৃতি থেকে কিছু হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং ভুলের শিকার হয়েছেন।

নাসাঈ এক বর্ণনায় বলেছেন, তিনি মজবুত বর্ণনাকারী নন। আবু হাতেম রাযী বলেছেন,তার দ্বারা প্রমাণ পেশ করা যায় না।

[দ্রষ্টব্যঃ-আলজরহু ওয়াত তাদীল, রাবী নং-১৮৩৩, মীযানুল ইতিদাল, রাবী নং-৫১২৫,তাহযীবুত তাহযীব, রাবী নং-৬৮০]
এসব কারণে বুখারী ও মুসলিম তার একক কোন বর্ণনা গ্রহণ করেন নি। সুতরাং তার একক বর্ণনাকে সহীহ আখ্যা দেওয়া যায় না।

তাই এ হাদীস পেশ করে সেজদায় যাবার বিশুদ্ধ পদ্ধতি তথা প্রথমে হাটু তারপর হাত রাখার সহীহ হাদীস নির্ভর আমলটিকে বাদ দেয়া যায় না।

দ্বিতীয়ত এ হাদীসটির ক্ষেত্রে আমাদের জবাব হল,

হাদীসটিতে উটের মত বসতে নিষেধ করা হয়েছে। আর উটের সামনের দু’টি পা হল হাত। উট যেহেতু বসার সময় প্রথমে সামনে দুই পা মাটিতে রাখে। মানে হল, তার দু’টি হাত মাটিতে রাখে। তারপর বসে। হাদীসে এভাবে প্রথমে হাত রেখে মাটিতে বসতে নিষেধ করা হয়েছে।

আল্লামা আবু বকর জাসসাস রাযী, সারাখসী, ইবনুল কাইয়্যিম, আমীর ইয়ামানী, হাসান ইবনে আহমদ সানআনী (ফাতহুল গাফফার প্রণেতা) ও শায়খ সালিহ উছায়মীন প্রমুখ এ মতই অবলম্বন করেছেন।

সুতরাং এ হাদীস দ্বারা প্রথমে হাটু মাটিতে রাখার নিষেধাজ্ঞার দলীল দেয়া ঠিক নয়।

তৃতীয়ত আমরা বলে অসুস্থ্য ব্যক্তির জন্য প্রথমে হাত মাটিতে রেখে বসার অনুমতি রয়েছে।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

২৬৫৭৪

নফল নামাযে উচ্চস্বরে কেরাত পড়া যাবে কি?


১৬ ডিসেম্বর, ২০২২

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

২৯৬০৩

কেরাতে আস্তের জায়গায় জোরে পড়ার বিধান


২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

Nowtola

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৯৪৬৬৩

সাজদায়ে সাহু, আদায় পদ্ধতি


১০ মার্চ, ২০২৫

LQDB৫২০৫، ৫২০৫ محمد الهاشمي، ৯৮৮৪، القويعية ১৯২২৬، السعودية (SA)

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

২৮৫৪০

সুরা ফাতেহার আগে অন্য সুরা পড়ে ফেললে করণীয়


১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

পাবনা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী সিরাজুল ইসলাম

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy