আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১২৫৫৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মোবাইল ফোন বন্ধ করুন । এ কথাটি কাগজে লিখে মসজিদের ওয়ালে লাগানো যাবে কি?

৮ জানুয়ারী, ২০২২
সাপাহার

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم





মসজিদে কেবলার দিকে কোন এলান
লিখিত কাগজ, ক্যালেন্ডার, কাবা শরিফ বা মসজিদে নববির ছবি, কোরআনের আয়াতের ক্যালিগ্রাফি, কোরআনের বিভিন্ন সুরা, কালিমা ও দোয়া ইত্যাদি লেখা কারুকার্য খচিত ফলক এবং জিকির-আজকার সম্বলিত স্ট্যান্ড/পোস্টার ইত্যাদি রাখা ঠিক নয়। কেননা, এতে মুসল্লিদের মনোযোগ বিঘ্নিত হতে পারে। নামাজ আদায়ের সময় বেখেয়ালে এসব আকর্ষণীয় জিনিসের দিকে দৃষ্টি চলে যেতে পারে।

মসজিদে কিছু টাঙানোর ব্যাপারে হাদিস

উসমান বিন তালহা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) কাবা ঘরে প্রবেশের পরে আমাকে বললেন- ‘আমি তোমাকে (কাবা ঘরের দেয়ালে টাঙ্গানো) শিং দুইটি ঢেকে রাখার আদেশ দিতে ভুলে গেছি। কারণ, আল্লাহর ঘরে এমন জিনিস থাকা সমীচীন নয়— যা সালাত আদায়কারীকে অন্যমনস্ক করে দেয়।’ (সহিহ আবু দাউদ, হাদিস : ২০৩০)

উল্লেখ্য যে, কাবা ঘরের দেয়ালে ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে জবাইকৃত দুম্বার দুইটি শিং ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।
মসজিদের পবিত্রতা রক্ষার ব্যাপারে ইসলামী শরীয়ত খুব কড়াকড়ি আরোপ করেছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, 'কোনো মুশরিক যেন কখনোই মসজিদে প্রবেশ না করে।'


মুফাসসিরগণ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, এ ধরনের নির্দেশনা শুধুমাত্র মসজিদের পবিত্রতা রক্ষার জন্যই দেওয়া হয়েছে।

আমাদের দেশের অনেক মসজিদেই একটি দৃষ্টিকটু বিষয় দেখা যায়। সেটি হচ্ছে- মসজিদের দেয়ালে নানান ধরনের পোস্টার এবং প্রচারপত্র সেঁটে দেওয়া। ওয়াজ-মাহফিল থেকে শুরু করে রাজনীতি এমনকি ব্যবসায়িক প্রচারপত্রও মসজিদের দেয়ালে নির্বিঘ্নে লাগিয়ে দেওয়া হয়।

এতে করে মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা হচ্ছে নাকি ক্ষুন্ন হচ্ছে এই বিষয়টিও কেউ ভেবে দেখে না। মসজিদের দেয়ালে পোস্টার লাগানোর বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা কি আসুন জেনে নিই।


মসজিদের দেয়ালে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক কিংবা ব্যাবসায়িক যেকোনো প্রচারপত্র বা পোস্টার লাগানো সম্পূর্ণ হারাম। শরীয়ত বিশেষজ্ঞদের মতে, মসজিদের দেয়াল কোনোভাবেই কেউ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতে পারবে না। এই নীতিমালার উপর ভিত্তি করে মসজিদের দেয়ালে পোস্টার সাঁটানো হারাম ফতোয়া দিয়েছেন আলেমরা।

তাছাড়া আরেকটি কারণেও মসজিদের দেয়ালে পোস্টার লাগানো হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রখ্যাত মুফতি আল্লামা ইউসুফ লুধিয়ানাভী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করা ওয়াজিব। পোস্টার লাগানোর ফলে মসজিদের পবিত্রতা এবং পরিচ্ছন্নতা নষ্ট হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। যেসব মসজিদের দেয়ালে পোস্টার লাগানো হয়, ওইসব দেয়ালের সৌন্দর্য ও পরিচ্ছন্নতা থাকে না বললেই চলে। এ কারণেও মসজিদের দেয়ালে পোস্টার লাগানোর অনুমতি দেওয়া যায় না।


মাওলানা লুধিয়ানাভীর দ্বিতীয় যুক্তি হলো, মসজিদের দেয়ালে পোস্টার লাগানোর ফলে মসজিদের পবিত্রতা এবং সম্মান নষ্ট হয়। কেউ কি চাইলেই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পোস্টার লাগাতে পারবে? তাহলে আল্লাহর ঘরের দেয়ালে মানুষ কিভাবে কোন সাহসে পোস্টার লাগায়?

সাধারন কোন মানুষ ও তো তার ঘরের দেয়াল পোস্টার লাগিয়ে ভরে ফেলা হোক এমনটির অনুমতি দেবে না। তাই মসজিদের পবিত্রতা রক্ষার্থে মসজিদের দেয়ালে কোন ধরনের পোস্টের লাগানোর অনুমতি আমরা দিতে পারি না।

তবে একদল আলেমের মতে, বিশেষ কোনো জরুরি কারণে মসজিদ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে পবিত্রতা এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে ধর্মীয় এবং মানুষের কল্যাণমূলক পোস্টার বা প্রচারপত্র লাগানো জায়েজ।

والله اعلم بالصواب

মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন