যাকাত কখন ফরজ হয়?
প্রশ্নঃ ১২২৭০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, যাকাত কখন ফরোজ হয় এবং কি কি জিনিসের যাকাত দিতে হয় কিলিয়ার বোললে ভালো হয়
১৬ মার্চ, ২০২৫
পশ্চিমবঙ্গ ৭০০১০৪
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
যাকাত ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি রোকন। ইমানের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হচ্ছে সালাত ও যাকাত। কুরআন কারিমের অনেক জায়গায় সালাত ও যাকাতের আদেশ করা হয়েছে, আল্লাহ তাআলা এক আয়াতে বলেন,
{ وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ} [البقرة: 43]
অর্থাৎ, তোমরা সালাত কায়েম করো এবং যাকাত প্রদান করো এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো। [আল-বাকারা : ৪৩]
অপর এক আয়াতে বলেন,
{وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَمَا تُقَدِّمُوا لِأَنْفُسِكُمْ مِنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِنْدَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ} [البقرة: 110]
অর্থাৎ, তোমরা সালাতা আদায় করো এবং যাকাত প্রদান করো। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য অগ্রে প্রেরণ করবে তা আল্লাহর নিকট পাবে। নিশ্চয় তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখছেন। [আল-বাকারা : ১১০]
আরেক আয়াতে বলেন,
{ وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ} [النور: 56]
অর্থাৎ, তোমরা সালাত আদায় করো, যাকাত প্রদান করো এবং রাসূলের আনুগত্য করো; যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পার। [আন-নূর : ৫৬]
এছাড়াও অনেক আয়াত ও হাদিসে যাকাতের গুরুত্বারূপ করা হয়েছে। যার উপর যাকাত ফরজ, যাকাত আদায় ব্যতীত তার জন্য আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা অসম্ভব। নিম্নে যাকাত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো—
যাদের উপর যাকাত ফরজ
যাকাত যেহেতু ইসলামের একটি অপরিহার্য ইবাদত সুতরাং তা শুধুমাত্র একজন মুসলমানের উপরই ফরজ হবে। সুস্থমস্তিষ্ক, স্বাধীন, বালেগ মুসলমান নারী বা পুরুষ নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার উপর যাকাত আদায় করা ফরজ।–আদ্দুররুল মুখতার : ২/২৫৯; বাদয়েউস সাানায়ে : ২/৭৯, ৮২।
যেসব জিনিস বা সম্পদের উপর যাকাত ফরজ হয়
সব ধরণের সম্পদ ও সামগ্রীর ওপর যাকাত ফরজ হয় না। শুধু সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা, পালিত পশু (নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী) এবং ব্যবসার পণ্যে যাকাত ফরজ হয়।
সোন-রূপার অলংকার সর্বদা বা মাঝেমধ্যে ব্যবহার হোক সর্বাবস্থাতেই তার যাকাত দিতে হবে। এমনিভাবে অলংকার ছাড়া সোনা-রূপার অন্যান্য সামগ্রীর ওপরও যাকাত ফরজ হবে।—সুনানে আবু দাউদ : ১/২৫৫; সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২২৫৮; মুসান্নাাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭০৬১, ৭০৬৬, ৭১০২।
মৌলিক প্রয়োজন থেকে উদ্ধৃত্ত টাকা-পয়সা নিসাব পরিমাণ হলে এবং এক বছর স্থায়ী হলে বছর শেষে তার যাকাত আদায় করা ফরজ। তদ্রুত ব্যাংক ব্যালেন্স, ফিক্সড ডিপোজিড, বন্ড, সার্টিফিকেট ইত্যাদিও নগদ টাকা-পয়সার মতোই। এসবের ওপরও যাকাত ফরজ হবে।– মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক : ৭০৯১, ৭০৯২।
টাকা পয়সা ব্যবসায় না খাটিয়ে এমনতি রেখে দিলেও তার ওপর যাকাত ফরজ হয়।–আদ্দুররুল মুখতার : ২/২৬৭; রদ্দুল মুহতার : ২/২৬২, ৩০০।
হজ, বাড়ি ঘর বানানো বা ছেলে মেয়ের বিয়ের উদ্দেশ্যে জমিয়ে রাখা টাকার ওপরও যাকাত ফরজ হবে। তা নিসাব পরিমাণ হলে এবং বছর অতিবাহিত হলে তারও যাকাত দিতে হবে।–মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক : ৭০৩২; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১০৩২৫।
দোকানপাটে যা কিছু বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে রাখা হয় তা বাণিজ্য-দ্রব্য। তার মূল্য নিসাব পরিমাণ হলে যাকাত দিতে হবে।–সুনানে আবু দাউদ : ১/২১৮; সুনানে কুবরা বায়হাকি : ৪/১৫৭; মুয়াত্তা মালেক পৃ : ১০৮।
ব্যবসার নিয়তে কোন কিছু ক্রয় করলে তা স্থাবর সম্পত্তি হোক যেমন, জমি-জমা, ফ্ল্যাট কিংবা আস্থাবর যেমন, মুদী সামগ্রী, কাপড়-চোপড়, অলংকার, গাড়ি, ফার্নিচার ইত্যাদি। সেগুলোও বাণিজ্য-পণ্য বলে গণ্য হবে এবং মূল্য নিসাব পরিমাণ হলে তার ওপর যাকাত ফরজ হবে।–মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭১০৩, ৭১০৪।
কী পরিমাণ সম্পদ থাকলে নিসাব পূর্ণ হয়
স্বর্ণের ক্ষেত্রে যাকাতের নিসাব হলো বিশ মিসকাল। আধুনিক হিসাবে সাড়ে সাত ভরি। আর রূপার ক্ষেত্রে নিসাব হলো দু‘শ দিরহাম। আধুনিক হিসাবে সাড়ে বায়ান্ন তোলা। উল্লেখিত পরিমাণে সোনা-রূপা থাকলে যাকাত দিতে হবে। সুতরাং সোনা-রূপা ছাড়া অন্যান্য যে সকল জিনিসে যাকাত ফরজ হয় যেমন, প্রয়োজনের উদ্ধৃত্ত টাকা-পয়সা বা বাণিজ্য দ্রব্যের মূল্য যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমপরিমাণ হয় তাহলে যাকাতের নিসাব পূর্ণ হয়েছে বলে ধরা হবে এবং যাকাত দিতে হবে।–সুনানে আবু দাউদ : ১/২২১; মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭০৭৭, ৭০৮২; সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৪৪৭; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৯৭৯।
যে পরিমাণে যাকাত দিতে হবে
যাকাতযোগ্য সম্পদের মূ্ল্য হিসাব করে তার থেকে চল্লিশ ভাগের এক ভাগ তথা শতকরা ২.৫% হারে যাকাত দিতে হবে।—মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ৯৮৮৪।
যাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন,
{إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ } [التوبة: 60]
অর্থাৎ, যাকাত তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও যাকাতের কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য, যাদের মনোরঞ্জন উদ্দেশ্য তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জিহাদকারী ও মুসাফিরের জন্য। এ আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। [আত-তাওবা : ৬০]
তবে অবশ্যই যাকাত আদায় করার ক্ষেত্রে প্রথমে নিজের রক্তসম্পর্কীয় দরিদ্রদেরকে প্রাধান্য দিবে। এরপর আস্তে আস্তে দূরবর্তীদেরকে দিবে। বিশেষত এমন বিষয়ে খরচ করার চেষ্টা করবে যেখানে খরচ করলে সদকায়ে জারিয়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সর্বশেষ কথা যাকাত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রোকন। এর মাসাআলার ব্যাপ্তি অনেক বেশি। একটি প্রশ্নের উত্তরে তার সকল দিক যথাযথভাবে তুলে ধরা অসম্ভব। যাকাত ফরজ হলে অবশ্যই আদায় করার আগে কোন বিজ্ঞা দ্বীনদার আলেমের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বুঝার তাওফিক দান করুন।
والله اعلم بالصواب
মুফতী মুহাম্মাদ রাশেদুল ইসলাম
উস্তাযুত তাফসির, মারকাযুল বুহুসিল ইসলামিয়া, বাড্ডা।
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
আল কুরআনুল কারীম
৪
হাদীস ও সুন্নাহ
৬
তাসাউফ-আত্মশুদ্ধি । ইসলাহী পরামর্শ
৩
শরীআত সম্পর্কিত
১৪
ফিতনাসমুহ; বিবরণ - করণীয়
২
আখিরাত - মৃত্যুর পরে
৩
ঈমান বিধ্বংসী কথা ও কাজ
৬
ফিরাকে বাতিলা - ভ্রান্ত দল ও মত
২
পবিত্রতা অর্জন
৮
নামাযের অধ্যায়
১৯
যাকাত - সদাকাহ
৫
রোযার অধ্যায়
৬
হজ্ব - ওমরাহ
২
কাফন দাফন - জানাযা
৫
কসম - মান্নত
১
কুরবানী - যবেহ - আকীকা
৪
বিবাহ শাদী
৮
মীরাছ-উত্তরাধিকার
২
লেনদেন - ব্যবসা - চাকুরী
৯
আধুনিক মাসায়েল
৬
দন্ড বিধি
২
দাওয়াত ও জিহাদ
৩
ইতিহাস ও ঐতিহ্য
৬
সীরাতুন নবী সাঃ । নবীজীর জীবনচরিত
৩
সাহাবা ও তাবেঈন
৩
ফাযায়েল ও মানাকেব
৩
কিতাব - পত্রিকা ও লেখক
৩
পরিবার - সামাজিকতা
৭
মহিলা অঙ্গন
২
আখলাক-চরিত্র
২
আদব- শিষ্টাচার
১২
রোগ-ব্যধি। চিকিৎসা
২
দোয়া - জিকির
২
নাম। শব্দ জ্ঞান
৩
নির্বাচিত
২
সাম্প্রতিক
১
বিবিধ মাসআলা
১