আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

নারীদের জামাতে ইকামতের বিধান

প্রশ্নঃ ১২১৭৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহ,পরিবার নিয়ে জামাতে নামায আদায় করা নিয়ে একটি ছবি আপনাদের ফেসবুক পেজে পেয়েছি। আচ্ছা পরিবার অর্থাৎ মা বোনকে নিয়ে নামায পড়লে তারা ইমাম ও হতে পারবেননা এবং ইকামত ও দিতে পারবেননা। এবং তাদের নিয়ে ফরজ নামায আদায় করা যাবে। নফল নামায ও কি আদায় করা যায়? পরিবারকে নিয়ে জামাতে নামায আদায় করার নিয়মটা জানালে উপকৃত হতাম।,

২০ আগস্ট, ২০২৪

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


পুরুষের জন্য যেমন মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে ফরজ নামাজ আদায় করা জরুরি, তেমনি মহিলাদের জন্য ঘরে একা নামাজ পড়াই শরিয়তের বিধান। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে মহিলাদের পর্দার প্রতি অত্যধিক তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

ঘরের জামাতে মহিলাদের অংশগ্রহণ : ফরজ নামাজের জন্য জামাতের নির্দেশ কেবল পুরুষদের জন্য। নারীদের ওপর জামাতের কোনো নির্দেশ নেই। তাই নারীরা ঘরে একত্রিত হয়ে পুরুষ বা মহিলা ইমাম বানিয়ে জামাত করাও শরিয়ত নির্দেশিত নয়। এর প্রতি উৎসাহিতও করা হয়নি। হ্যাঁ, যদি তারা পুরুষ ইমামের পেছনে নামাজ পড়ে নেয়, তাহলে ওই নামাজ শুদ্ধ হবে। এ ক্ষেত্রে নারীদের পর্দার বিধান লঙ্ঘন না হলে ঘরে এ ধরনের জামাত বৈধ। (তাবঈনুল হাকায়েক : ১/১৩৫, ফাতাওয়া দারুল উলুম : ৩/৪৩)

মাহরাম নারীদের নিয়ে ঘরে জামাত করা : যদি কোনো পুরুষ শরিয়ত অনুমোদিত কোনো ওজরবশত মসজিদে যেতে না পারে, তাহলে তার জন্য ঘরের মাহরাম নারীদের নিয়ে জামাতে নামাজ পড়া বৈধ। এ ক্ষেত্রে সবাই জামাতের সাওয়াব পাবে। কিন্তু গায়রে মাহরাম নারীদের নিয়ে জামাতে নামাজ পড়া সমীচীন নয়। তা সত্ত্বেও গায়রে মাহরাম নারীরা তাতে শরিক হতে চাইলে অবশ্যই পর্দার আড়ালে থাকবে। পর্দার বিধান লঙ্ঘন করে জামাত করা বৈধ নয়। (খুলাসাতুল ফাতাওয়া : ১/২২৮, আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল : ২/২২৭)

এ ক্ষেত্রে জামাতে দাঁড়ানোর পদ্ধতি হলো—এক বা একাধিক নারী পেছনের সারিতে দাঁড়াবে। (রদ্দুল মুহতার : ১/৫৬৬, আহসানুল ফাতাওয়া : ৩/২৯৯)

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আমি নবী করিম (সা.)-এর সঙ্গে ঘরে জামাতে নামাজ পড়েছি, একবার আমি নবী করিম (সা.)-এর পাশে দাঁড়িয়েছি, আর আয়েশা (রা.) আমাদের পেছনে দাঁড়িয়ে আমাদের সঙ্গে জামাতে শরিক হয়েছিলেন। (সুনানে নাসাঈ, হাদিস : ৮০৩)

নারী-পুরুষ একাকী ও ভিন্ন ভিন্ন নামাজ পড়ার সময় বরাবর বা আগে-পেছনে দাঁড়াতে পারবে। এ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অগ্র-পশ্চাৎ বা সমানভাবে দাঁড়ানোর উপরোক্ত বিধান প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ একে অপরের অগ্র-পশ্চাৎ হওয়ায় নামাজের শুদ্ধতায় কোনো প্রভাব পড়বে না। কেননা ওই বিধান উভয়ে একই সঙ্গে জামাতে অংশগ্রহণের বেলায় প্রযোজ্য। (মাবসুতে সারাখসি : ১/১৮৫)

স্বামী-স্ত্রীর জামাতের বিধান ও পদ্ধতি : স্বামী-স্ত্রী উভয়ে জামাতে নামাজ আদায় করতে পারবে। তবে স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে সংলগ্ন না দাঁড়িয়ে পেছনের সারিতে একা দাঁড়াবে। অপারগতায় ডান পাশে একটু পেছনে সরে দাঁড়ালেও নামাজ হয়ে যাবে। তবে স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে সমান হয়ে দাঁড়াতে পারবে না, কারণ এতে উভয়ের নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। (রদ্দুল মুহতার ১/৫৭২)

নাবালেগ ও নারীদের কাতারের অবস্থান : সাধারণত নামাজের কাতার করার সুন্নাত পদ্ধতি হলো, প্রথমে বালেগ পুরুষ, তারপর নাবালেগ ছেলে দাঁড়াবে। আর নারীরা জামাতে অংশগ্রহণ করলে তারা সবার পেছনে দাঁড়াবে। (সুনানুল বাইহাকি, হাদিস : ৫১৬৬; হেদায়া : ১/২৩৯)

শুধু নারীদের জামাত বৈধ নয় : ঘরে বা অন্য কোথাও নারীরা একত্রিত হয়ে নারী ইমাম বানিয়ে নামাজের জামাত করা মাকরূহে তাহরিমি তথা নাজায়েজ। যদিও জামাতে আদায়কৃত ওই নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে, তবে তারা সবাই গোনাহগার হবে। তা সত্ত্বেও নারীরা আলাদা জামাত করলে ইমাম সাহেবা কাতারে সবার সামনে দাঁড়াবেন না, বরং প্রথম কাতারের মাঝখানে দাঁড়াবেন। (তাবঈনুল হাকায়েক : ১/১৩৫, ফাতাওয়া দারুল উলুম : ৩/৪৩) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জামানায় তাঁর স্ত্রীগণ একত্রিত হয়ে জামাতে নামাজ আদায় করার কোনো প্রমাণ হাদিস শরিফে পাওয়া যায় না।

হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘কোনো নারী জামাতের ইমামতি করতে পারবে না।’ অনুরূপ তাবেঈ হজরত ইবরাহিম নাখয়ি, ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ, রবিআ ও ইবনে শিহাব জুহরি (রহ.) প্রমুখ থেকে তা বর্ণিত হয়েছে। (আলমুদাওয়ানাতুল কোবরা : ১/১৭৮)

শিব্বির আহমদ উসমানি (রহ.) বলেন, হাদিসটির সূত্র বিশুদ্ধ। (ইলাউস সুনান : ৩/১৩০১)

নারীদের জামাতে আজান-একামত : নারীদের জামাত যেহেতু মাকরুহ, তাই তাতে আজান-একামত দেওয়াও মাকরুহ। (মাবসুতে সারাখসি : ১/১৩৩)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৪৯৫০৮

ওজর ছাড়া সুন্নত নামাজ বসে পড়ার বিধান


২৩ ডিসেম্বর, ২০২৩

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৯৩২৯৫

ফরয নামাযের শেষ দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলালে সাহু সাজদা দিতে হবে?


৫ মার্চ, ২০২৫

মোল্লাপুর ইউনিয়ন

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৯০৭৩৭

ফরয নামাযের সিজদায় অতিরিক্ত দু‘আ করা


২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

মনাইর কান্দি

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী মাহমুদুল হাসান

৭১৭০৩

মাগরিব পড়ে সৌদীগামী বিমানে আরোহণ


৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Chinarang

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy