প্রশ্নঃ ১২০৯৬. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি স্কুলের টিচার।বাবা মারা যাওয়া এবং কোভিড পরিস্থিতির কারনে আর্থিক সংকট চলছে। আমার খালা- চাচারা আল্লাহ রহম সামর্থবান কিন্তু আমাদের সাহায্য করার মতো কারোর মন বা সময় কিছুই নেই।আমি বিভিন্ন পরিক্ষা দিয়েছিলাম।ইসলামি ব্যাংক থেকে ডাক আসছে। আমি কোনদিন ও ব্যাংক এ চাকরির পক্ষে ছিলাম না।কারণ আমি সুদ কি এবং এর শাস্তি সম্পর্কে অবগত।আমার পরিবারে আমি, আমার মা,আর ছোট ভাই আছে।এখন আমার অবস্থা এমনি যে আমরা মারা গেলেও আমাদের আত্মীয়দের কষ্ট লাগবে না।স্কুলের টাকা,টিউশন দিয়ে আমি খরচ চালাতে পারছিনা এবং কোন সাহায্যও কেও করছেনা।এখন আমি ব্যাংকে চাকরি করলে আল্লাহর শাস্তির সম্মুখিন হবো, আবার না করলেও টিকে থাকাটা অনেক কঠিন আমার জন্য।আমি অবিবাহিত মেয়ে।এখন আমার করণীয় কি? জানালে উপকৃত হতাম হুজুর।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রিয় প্রশ্নকারী! আল্লাহ তায়ালা আপনার সকল পেরেশানী ও সঙ্কট দূর করে দিন। আপনাকে হালাল এবং উত্তম রিজিকের ফায়সালা করে দিন। সমাজে যার বিত্তবান অসহায়ের সাহায্যে তাদের এগিয়ে আসার তাওফিক দিন। আসলে আমরা আমাদের অবস্থান থেকে কোরআন হাদিসের বাইরে কোনো পরামর্শ দিতে পারি না। এক্ষেত্রে যদি আমরা সঠিক উত্তর দিতে পারি তাহলে আল্লাহ যেন আমাদের এই মেধা, শ্রম ও সময়কে কবুল করেন। আর যদি কোনো ভুল করে থাকি তাহলে যেন ক্ষমা করে দিন। আমিন।
এক. যেহেতু ইসলামী ব্যাংক এব্যাপারে পরিপূর্ণ প্রতিশ্রুতি দেয় যে, তারা সুদের ভিত্তিতে নয়; বরং লাভ-ক্ষতির ভিত্তিতে ইসলামের পূর্ণ রীতি মেনে ব্যাংকিং করে, সেহেতু ইসলামী ব্যাংকে চাকরি করা, একাউন্ট খোলাসহ যাবতীয় লেনদেন করা কিছু আলেম জায়েয মনে করেন।
পক্ষান্তরে যেহেতু বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকগুলো ইসলামের পূর্ণ রীতি মেনে ব্যাংকিং করে কিনা–এ নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ আছে। তাই ওখানে চাকরি করার ব্যাপারে কিছু আলেম বলেন, যেসব পদ সুদি অর্থ লেনদেনের সাথে জড়িত নয়, যেমন- সিকিউরিটি, গাড়ি চালনা, মালি, সাধারণ শ্রমিক ইত্যাদি এসব চাকরি করা যাবে। শুধু সুদ দেয়া, নেয়া, সাক্ষী থাকা, লেখালেখি, কমিশন, অ্যাজেন্ট তথা সরাসরি সুদসংশ্লিষ্ট কাজগুলো করা জায়েয হবে না। কেননা, হাদীস শরীফে এসেছে, জাবের রাযি. বলেন,
لَعَنَ رَسُولُ اللهِ ﷺ آكِلَ الرِّبَا، وَمُؤْكِلَهُ، وَكَاتِبَهُ، وَشَاهِدَيْهِ، وَقَالَ: هُمْ سَوَاءٌ
‘রাসূলুল্লাহ ﷺ সুদ ভক্ষণকারী, সুদ প্রদানকারী, সুদের লেখক এবং সাক্ষীগণকে অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেন, (গুনাহের ক্ষেত্রে) তারা সবাই বরাবর।’ (মুসলিম ১৫৯৮)
দুই. তবে সর্বাবস্থায় চাকরি না করাটাই হবে তাকওয়ার পরিচায়ক। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ
অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর। (সূরা তাগাবুন ১৬)
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
لاَ يَبْلُغُ الْعَبْدُ أَنْ يَكُونَ مِنَ الْمُتَّقِينَ حَتَّى يَدَعَ مَا لاَ بَأْسَ بِهِ حَذَرًا لِمَا بِهِ الْبَأْسُ
কোন বান্দা ক্ষতিকর কাজে জড়িয়ে পড়ার ভয়ে বৈধ অক্ষতিকর বিষয় না ছেড়ে দেয়া পর্যন্ত মুত্তাকীদের পর্যায়ে উন্নীত হতে পারবে না। (তিরমিযি ২৪৫১)
প্রখ্যাত সাহাবী আবুদ্দারদা রাযি. বলেন,
تَمَامُ التَّقْوَى أَنْ يَتَّقِيَ اللهَ الْعَبْدُ حَتَّى يَتَّقِيَهُ مِنْ مِثْقَالِ ذَرَّةٍ، وَحَتَّى يَتْرُكَ بَعْضَ مَا يَرَى أَنَّهُ حَلَالٌ خَشْيَةَ أَنْ يَكُونَ حَرَامًا حِجَابًا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْحَرَامِ
পরিপূর্ণ তাকওয়া হচ্ছে, বান্দা আল্লাহকে এমনভাবে ভয় করবে যে, সে বিন্দু পরিমাণ গুনাহ থেকেও নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবে। এমনকি সে হারামে লিপ্ত হওয়ার ভয়ে এমন কিছু বিষয়ও ত্যাগ করবে, যা বাহ্যিক দৃষ্টিতে হালাল। যাতে করে তার মাঝে এবং হারামের মাঝে প্রতিবন্ধক তৈরি হয়ে যায়। (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, ইবনু রজব হাম্বলী ১/২১৭)
হাসান বসরী রহ. বলেন,
مَا زَالَتِ التَّقْوَى بِالْمُتَّقِينَ حَتَّى تَرَكُوا كَثِيرًا مِنَ الْحَلَالِ مَخَافَةَ الْحَرَامِ
মুত্তাকিদের তাকওয়া ততক্ষণ বিদ্যমান থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে বেশ কিছু হালাল ত্যাগ করবে হারামে লিপ্ত হওয়ার ভয়ে। (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, ইবনু রজব হাম্বলী ১/২১৭)
والله اعلم بالصواب
-শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী
والله اعلم بالصواب
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন