আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১১৯২৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামুয়ালাইকুম,হুজুর।যে মহিলারা নিজেদের সন্তানদের দুধ পান করায় না তাদের জন্য কি আখিরাতে কি কোনো শাস্তি আছে?থাকলে কি শাস্তি?জাযাকাল্লাহ খইরন,

২৮ ডিসেম্বর, ২০২১

Khulna

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


 



আপনার প্রশ্নের উত্তর জানতে নিচের প্রবন্ধটি পড়তে পারেন।

জেনে নিন মায়ের বুকের দুধে সন্তানের অধিকার

পবিত্র কোরআন ও হাদিস শরীফে মায়ের বুকের দুধে সন্তানের অধিকার, উপকারিতা ও স্তন্যদানে মাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। শিশুর মাতৃদুগ্ধ পান নিশ্চিত করতে পারলে নবজাতক ও শিশু মৃত্যুর হার অনেকটাই রোধ করা সম্ভব। 

 

সুনানে তিরমিজির একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) শিশু জন্মের পরপরই মায়ের বুক থেকে যে দুধ আসে, তা শিশুর জন্য অত্যন্ত সুষম, উপাদেয় ও উপকারী খাবার হিসেবে অভিহিত করেছেন।

 

নবজাতকের জন্য মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা প্রথম ছয় মাস শিশুকে শুধু মায়ের দুধ পান করানোর পরামর্শ দেন। কেননা তা একই সঙ্গে শিশুর জন্য সুষম খাবার ও তার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিকারী।

 

মায়ের দুধ সন্তানের অধিকার। শিশুর জন্য মায়ের দুধ সর্বোত্তম খাবার। আধুনিক বিজ্ঞানের দাবি, সন্তানের জীবন রক্ষায় প্রথম প্রতিষেধক।

 

পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে মায়ের স্তন্যদানের বিধান আলোচিত হয়েছে, যেখানে স্তন্যদানের সময়কাল, মা ও শিশুর অধিকার এবং বাবার করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনায় এসেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘(তালাক হওয়ার পর) বাবা যদি চায়, সন্তান পূর্ণ সময়কাল দুধ পান করতে থাকুক, তবে মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুই বছর দুধ পান করাবে। এ অবস্থায় বাবাকে প্রচলিত নিয়ম অনুসারে মায়ের খোরপোশ দিতে হবে। তবে কারো ওপর তার সামর্থ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপানো ঠিক নয়, না মায়ের এ জন্য কষ্টে নিক্ষেপ করা উচিত যে সন্তান তো তারই, আর না বাবাকে এ জন্য চাপ দেয়া উচিত যে সন্তান তো তারই। স্তন্যদানকারিণীর এই অধিকার যেমন সন্তানের বাবার ওপর রয়েছে, তেমনি রয়েছে তার উত্তরাধিকারীদের ওপরও। কিন্তু উভয় পক্ষই যদি পারস্পরিক সন্তোষ ও সমঝোতার ভিত্তিতে দুধ ছাড়াতে চায়, তাহলে এরূপ করাতে কোনো দোষ হবে না। আর যদি তোমরা তোমাদের সন্তানদের অন্য কোনো নারীর দুধ পান করাতে চাও, তাহলে তাতেও কোনো দোষ হবে না। তবে শর্ত হলো, এ জন্য যে পারিশ্রমিক নির্দিষ্ট করা হবে, তা যথারীতি আদায় করতে হবে। আল্লাহকে ভয় করো। আর জেনে রেখো, তোমরা যা-ই করো আল্লাহ তার সবই দেখেন।’ (সূরা বাকারা, আয়াত: ২৩৩)।

দীর্ঘ এই আয়াতে আল্লাহপ্রদত্ত বিধান পর্যালোচনা করলে সহজেই অনুমেয় যে আল্লাহ তায়ালা কোনো অবস্থায়ই চান না মাতৃদুগ্ধ পান থেকে শিশু বিরত হোক। সুস্থ স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবনে শিশু যেমন মায়ের দুধ পান করে, তেমনি কোনো কারণে মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়ে গেলেও যেন সন্তান মায়ের দুধ থেকে বিরত না হয় সে নির্দেশ দিয়েছেন মহান আল্লাহ। এমনকি কোনো কারণে মা স্তন্যদানে অক্ষম হলে আর্থিক বিনিময়ের ভিত্তিতে শিশু অন্য নারীর দুধ পান করবে। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যদি তারা গর্ভবতী হয়, তাহলে সন্তান ভূমিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত তাদের জন্য অর্থ ব্যয় করবে, যদি তারা তোমাদের সন্তানদের স্তন্য দান করে, তবে তাদের পারিশ্রমিক দেবে এবং সন্তানের কল্যাণ সম্পর্কে তোমরা সংগতভাবে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করবে। তোমরা যদি নিজ নিজ দাবিতে অনমনীয় হও, তাহলে অন্য নারী তার পক্ষে স্তন্য দান করবে।’ (সূরা: তালাক, আয়াত: ৬)। 

 

উল্লিখিত দুই আয়াতের আলোকে ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞরা বলেন, মা যদি সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় থাকেন এবং সন্তান তার দুধের ওপর নির্ভরশীল হয়, তবে তার জন্য দুধ পান করানো ওয়াজিব। এ ক্ষেত্রে তার অবহেলা শরিয়তের দৃষ্টিতে অপরাধ বলে গণ্য হবে। (তাফসিরে মারেফুল কোরআন (বাংলা), ১৩০)।

 

শরিয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া কোনো নারী যদি সন্তানকে বুকের দুধের অধিকার থেকে বিরত করে, তবে পরকালেও তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। আবু উমামা বাহেলি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) মিরাজের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘এরপর আমাকে আরো সামনে নিয়ে যাওয়া হলো। কয়েকজন নারীকে দেখলাম, যাদের বুকের ছাতি সাপ দংশন করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কোন মহিলা? বলা হলো, তারা সেসব মহিলা, যারা নিজের শিশুকে নিজের দুধ পান করাত না।’ (আল-মুসতাদরাক আলাস-সহিহাইন: ২/২২৮)।

 

মায়ের দুধে সন্তানের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য ইসলামী শরিয়ত মাকে রোজার মতো ফরজ বিধানে স্তন্যদানকারী মাকে অবকাশ দিয়েছে। যদি রোজা রাখলে শিশু মায়ের দুধ ঠিকমতো না পায় এবং সে বিকল্প খাবারেও অভ্যস্ত না হয়, তবে মা রোজা ভাঙতে পারবে। তবে পরবর্তী সময় তাকে এই রোজার কাজা আদায় করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ মুসাফিরের ওপর থেকে চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজের অর্ধেক রহিত করে দিয়েছেন এবং মুসাফির, স্তন্যদানকারিণী ও গর্ভবতী মহিলা থেকে রমজানের রোজা পালন করার বাধ্যবাধকতাও শিথিল করেছেন।’ (সুনানে তিরমিজি)।

 

মাতৃস্বাস্থ্য রক্ষা ও শিশুর মাতৃদুগ্ধ পান নিশ্চিত করতে হজরত ওমর (রা.) বিশেষ ভাতা চালু করেন, যেন স্তন্যদানকারী নারীদের অর্থের জন্য বিকল্প চিন্তা করতে না হয়।

 

মায়ের দুধ শুধু সন্তানের জীবন রক্ষাকারী নয়, বরং তা নারীর জন্য বিশেষ উপকারী। চিকিৎসাবিজ্ঞানের একাধিক গবেষণায় উঠে এসেছে, ঠিকমতো স্তন্যদান না করলে মায়ের বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরি হয়; যার মধ্যে দুরারোগ্য ক্যান্সারও রয়েছে। অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গাইনিকোলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নবজাতকের জন্মের পর থেকে এক বছর পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ালে মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি পাঁচ হাজারবারের বেশি সময় এড়িয়ে যেতে সক্ষম হন। শুধু তা-ই নয়, তিনি উচ্চ রক্তচাপ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকেন।

 

মায়ের দুধ সন্তানের জন্য অপরিহার্য হওয়ায় আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর সব মানুষকে অভিন্ন এই রিজিক দান করেছেন। মায়ের দুধ সন্তান ও মায়ের ভেতর একটি গভীর ও নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করে। এর মাধ্যমে সন্তান মায়ের শারীরিক ও মানসিক উত্তরাধিকার লাভ করে।


আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে বুঝার তাওফিক দান করুন। 

(সংগৃহীত) 




والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৩৫৮৬৪

নামাজে মনোযোগী হওয়ার উপায়


১৮ নভেম্বর, ২০২৩

Dhaka, Bangladesh

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি মোহাম্মদ আমীর হোসাইন

৫৩৮১১

বাজি ধরে ক্রিকেট খেলা


১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

গফরগাঁও - টোক সড়ক

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী মুহাম্মাদ রাশেদুল ইসলাম

৫১১৪০

লোগো হিসেবে Caduceus এবং প্রেসক্রিপশনে Rx ব্যবহারের বিধান


৩ জুন, ২০২৪

৯M৮F+P৯২

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী হিফজুর রহমান

৪১১৫৬

বিয়ের আগে যিনা করা নারীকে বিয়ে করা কি আবশ্যক?


২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

Al-Madinah al-Munawwarah ৪২৩১৬

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy