আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১১৮৯৬. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, দশটি সগীরা গুণাহের উদাহরণ জানতে চাই।

২৩ ডিসেম্বর, ২০২১
মৌলভীবাজার

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم





হযরত ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত
أن الصغيرة ما دون الحدين: حد الدنيا وحد الآخرة

“সগীরা বা ছোট পাপ বলা হয় ঐ পাপকে, যা দুনিয়ার দণ্ড ও আখিরাতের দণ্ড (অবধারিত হয় এমন পাপ) থেকে নিম্ন পর্যায়ের।”

[অর্থাৎ ছোট গুনাহ বলতে বুঝায়, যে সকল অপরাধের ক্ষেত্রে দুনিয়ায় আইনগত দণ্ড বিধি নেই (যেমন, হাত কাটা, পাথর মেরে মৃত্যু দণ্ড দেয়া, বেত্রাঘাত করা ইত্যাদি) অনুরূপভাবে আখিরাতেও নির্ধারিত কোনো দণ্ড বা শাস্তির কথা বলা হয় নি। যেমন: কবরের আযাব, জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ ইত্যাদি]

“কবীরা বা বড় গুনাহ বলা হয় ঐ সকল গুনাহকে যেগুলোর ব্যাপারে বিশেষ কোনো শাস্তি আরোপের বিধান রয়েছে। অর্থাৎ যেগুলো শুধু নিষেধ বা হারামের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং তাতে অবশ্যই বিশেষ শাস্তি রয়েছে। যেমন: যে এ কাজ করবে সে ইমানদার নয় অথবা সে আমাদের দলভুক্ত নয় ইত্যাদি। এগুলো হল কাবীরা গুনাহ। আর সগীরা বা ছোট গুনাহ হল ঐ সকল হারাম কাজ যেগুলোর জন্য শাস্তি নাই।”

সুতরাং , যে সকল গুনাহ কবীরা পর্যায়ের নয় সেগুলোই সগীরা গুনাহ। তাহলে সগীরা গুনাহ সম্পর্কে জানতে হলে আগে কবীরা গুনাহ সম্পর্কে জানতে হবে।

▪কোনো কোনো আলেম বলেন: “যে সব গুনাহ তওবা ছাড়া মাফ হয় না সেগুলো কবীরা গুনাহ আর যে সব গুনাহ তওবা ছাড়া বিভিন্ন প্রকার নেক আমলের দ্বারা মাফ হয় সেগুলো সগীরা গুনাহ।”

সগীরা বা ছোট গুনাহের ভয়াবহতা:

➤ হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« إِيَّاكُمْ وَمُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ فَإِنَّمَا مَثَلُ مُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ كَقَوْمٍ نَزَلُوا فِي بَطْنِ وَادٍ، فَجَاءَ ذَا بِعُودٍ، وَجَاءَ ذَا بِعُودٍ حَتَّى أَنْضَجُوا خُبْزَتَهُمْ، وَإِنَّ مُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ مَتَى يُؤْخَذْ بِهَا صَاحِبُهَا تُهْلِكْهُ».
‘সাবধান! গুনাহকে তুচ্ছ মনে করার ব্যাপারে সর্তক হও। কেননা গুনাহকে তুচ্ছ মনে করার উদাহরণ হল:
একদল লোক কোন এক পাহাড়ের উপত্যকায় যাত্রা বিরতি করলো। এরপর সেখানে কেউ একটা কাঠি নিয়ে এলো, আরেকজন আরেকটা কাঠি নিয়ে এলো।তারপর তারা (এই ছোট ছোট কাঠিগুলো জমা করে সেগুলো দ্বারা) রুটি পাকালো।
ঠিক তদ্রূপ যে সব গুনাহকে তুচ্ছ ভাবা হয় সেগুলোই এতে লিপ্ত ব্যক্তিদেরকে ধ্বংস করে ফেলবে।“ [মুসনাদ আহমাদ ৫/৩৩১। সহীহুল জামে‘, নাসিরুদ্দিন আলবানী, আল মাকতাবুল ইসলামী, ৩য় প্রকাশ, হাদিস নং: ২৬৮৬।]
➤ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
إِيَّاكُمْ وَمُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ ، فَإِنَّهُنَّ يَجْتَمِعْنَ عَلَى الرَّجُلِ حَتَّى يُهْلِكْنَهُ
“তোমারা ছোট গুনাহ থেকেও দূরে থাকবে। কেননা, এগুলো জমা হয়ে মানুষকে ধ্বংস করে ছাড়ে।” (সহীহুল জামে লিল আলবানী, হা/২৬৮৭-সহীহ)

➤ বিজ্ঞ আলিমগণ বলেছেন: ছোট গুনাহকে যদি কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে বারবার করে বা তুচ্ছ মনে করে করে তখন তা আর ছোট থাকে না বরং তা বড় গুনাহে পরিণত হয়।
যেমন: ইমাম নওবী রহ. সহীহ মুসলিম এর ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন:
رُوِيَ عَنْ عُمَر وَابْن عَبَّاس وَغَيْرهمَا رَضِيَ اللَّه عَنْهُمْ : لا كَبِيرَة مَعَ اِسْتِغْفَارٍ ، وَلا صَغِيرَة مَعَ إِصْرَار
مَعْنَاهُ : أَنَّ الْكَبِيرَة تُمْحَى بِالاسْتِغْفَارِ , وَالصَّغِيرَة تَصِير كَبِيرَة بِالإِصْرَارِ اهـ
উমর রা. এবং ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত আছে। তারা বলেছেন: ইস্তিগফার তথা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা হলে কোনো কবীরা (বড়) গুনাহ অবশিষ্ট থাকে না আর কোনো গুনাহ বারবার করা হলে তা আর সগীরা (ছোট) থাকে না।”
এ কথার অর্থ হল: বড় গুনাহ ইস্তিগফার (আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা) এর মাধ্যমে মুছে যায়আর ছোট গুনাহ বারবার করার মাধ্যমে বড় গুনাহে পরিণত হয়।”

➤ ছোট গুনাহগুলোকে তুচ্ছ মনে না করা আল্লাহর নির্দেশনার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَن يُعَظِّمْ حُرُمَاتِ اللَّـهِ فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ عِندَ رَبِّهِ

“আর কেউ আল্লাহর সম্মানযোগ্য বিধানাবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে পালনকর্তার নিকট তা তার জন্যে উত্তম।” (সূরা হজ্জ: ৩০)


সগীরা বা ছোট গুনাহের কতিপয় উদাহরণ:

সগীরা বা ছোটগুনাহের সীমা-সংখ্যা নাই। তবুও নিম্নে বহুল প্রচলিত কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরা হল:

,,,নামাযরত অবস্থায় এদিক ওদিকে দৃষ্টিপাত করা।

,,,নামায অবস্থায় কাপড়, দাড়ি, বা শরীরের কোন অঙ্গ নিয়ে খেলা করা।

,,,জুমার ২য় আযানের সময় বেচাকেনা করা।

,,,কোন ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোনো মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাবের উপর তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে অন্যজন প্রস্তাব করা।

,,,বেচাকেনার ক্ষেত্রে কেউ দরদাম করছে এমতাবস্থায় তার শেষ হওয়ার আগে আরেকজন এসে দরদাম শুরু করা।

,,,কোন পর নারীর দিকে দৃষ্টিপাত করা।

,,, স্ত্রীকে এক বৈঠকে একাধিক তালাক দেয়া।

,,, ঋতু চলাকালীন সময়ে তালাক দেয়া।

,,,,অতিরিক্ত ঝগড়া-ঝাটি করা।

,,, গীবত শুনে চুপ থাকা।

,,, পাপাচারী লোকদের সাথে ( সংশোধন ও দাওয়াত দেয়ার উদ্দেশ্য ছাড়া) উঠবস করা।

,,, খোলা স্থানে কিবলার দিকে মুখ করে বা কেবলাকে পেছনে করে পেশাব-পায়খানা করা।

,,, বিনা প্রয়োজনে উপকার হীন কথাবার্তা বলা ইত্যাদি।

পাপ ছোট না বড় সে দিকে না তাকিয়ে আমাদের উচিৎ সব ধরণের পাপাচার থেকে বিরত থাকার সর্বাত্বক চেষ্টা করা। তারপরও শয়তানের কুমন্ত্রণা ও কু প্রবৃত্তির তাড়নায় কোনো পাপাচার করে ফেললে তৎক্ষণাৎ অনুতপ্ত হৃদয়ে সেই ক্ষমাশীল দয়াময় প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা আবশ্যক। তাহলে তিনি ক্ষমা করবেন বলে আশা করা যায়।
পরিশেষে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই জনৈক মনিষীর চমৎকার একটি বাণী:
لا تَنْظُرْ إِلَى صِغَرِ الْخَطِيئَةِ ، وَلَكِنِ انْظُرْ إِلَى عَظَمَةِ مَنْ تَعْصِي
“পাপের ক্ষুদ্রতার দিকে না তাকিয়ে যার অবাধ্যতা করছ তার বিশালত্বের দিকে তাকাও।”
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ছোট-বড় সকল প্রকার গুনাহ থেকে বেঁচার তাওফিক দান করুন এবং জেনে-নাজেনে যে সকল গুনাহ করে ফেলি সেগুলো ক্ষমা করুন। আমীন।

والله اعلم بالصواب

মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ
প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন