আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

ইসলামের দৃষ্টিতে বিজয় দিবস পালনের পথ ও পন্থা

প্রশ্নঃ ১১৫৮৪. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, একজন মুসলিম কি বিজয় দিবস উদযাপন করতে পারবে?,

৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


ইসলামের দৃষ্টিতে বিজয় দিবস পালনের পথ ও পন্থা
--------------------------------------------------------
আজ ১৬ই ডিসেম্বর। জাতীয় বিজয় দিবস। বাংলাদেশের মানুষের জন্য আনন্দের দিন। আমাদের মহান স্বাধীনতার বিজয় দিবস।
মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব হল, তার ভূখন্ড ও মাতৃভূমিকে ভালবাসা। এটাই প্রিয় নবীজীর সা.-এর উত্তম আদর্শ। মহানবী সা. যখন স্বীয় মাতৃভূমি মক্কা নগরী ত্যাগ করে পাড়ি জমাচ্ছিলেন ইয়াছরিবের (মদীনার ) প্রতি, তখন তাঁর চোখ থেকে অশ্রুর বন্যা বয়ে যাচ্ছিল এবং মনে মনে বলেছিলেন, হে মক্কা! আমি তোমাকে ভালবাসি। কাফেররা নির্যাতন করে যদি আমাকে বের করে না দিত, কখনো আমি তোমাকে ত্যাগ করতাম না। (তাফসীরে ইবনে কাসীর, ৩য় খণ্ড, ৪০৪ পৃষ্ঠা)
হাদীস শরীফে রয়েছে, নবীজী সা. মদিনা নগরীকে খুব ভালবাসতেন। কোন সফর থেকে প্রত্যাবর্তনকালে মদীনার সীমান্তে উহুদ পাহাড় চোখে পড়লে নবীজীর চেহারাতে আনন্দের আভা ফুটে উঠত এবং তিনি বলতেন, এই উহুদ পাহাড় আমাদেরকে ভালবাসে এবং আমরাও উহুদ পাহাড়কে ভালবাসি। (সহীহ বুখারী, ২য় খণ্ড, ৫৩৯ পৃষ্ঠা/ সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, ৯৯৩ পৃষ্ঠা)
সুতরাং দেশপ্রেম ও মাতৃভূমির প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা হচ্ছে ইসলামসম্মত বিশেষ সহজাত গুণ। সুতরাং দেশের বিজয় দিবস আমাদের গৌরব, অহংকার।
এখন জানার বিষয় হলো, বছরের চাকা ঘুরে যখন ১৬ই ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ আসবে, তখন সে দিনগুলোতে কুরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টিতে আমাদের করণীয় কী ?

বিজয় দিবস কীভাবে পালন করা কর্তব্য?

বিজয় সম্পর্কে কুরআনের দু’টি সুরা আমাদের সামনে রয়েছে। একটি সুরাহ ফাতহ (বিজয়) এবং অপরটি সুরাহ নাসর (সাহায্য)। সুরা নাসর-এ মহান আল্লাহ বলেন, “যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও বিজয় আসবে এবং দলে দলে লোকদেরকে ইসলামে প্রবেশ করতে দেখবেন, তখন স্বীয় পরওয়ারদেগারের প্রশংসার সাথে তাসবীহ পড়ুন এবং আল্লাহর নিকট ইস্তিগফার করুন।
এখানে তিনটি কর্তব্যের কথা বর্ণনা করা হয়েছে :
১. এই দিনে বিজয়ের জন্য আল্লাহর মহ্ত্ত্ব, পবিত্রতা ও বড়ত্ব বর্ণনা করা।
২. আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা।
৩. মহান আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে আত্মনিবেদন ও ইস্তিগফার করা।
আমাদের মনে রাখতে হবে--বিজয় দিবসে আল্লাহর নবীর আদর্শ কী? যে মক্কা নগরী থেকে আল্লাহর নবী বিতাড়িত হলেন, ১০ বছর পর শত-সহস্র সাহাবায়ে কেরামের বিশাল বহর নিয়ে যখন পবিত্র মক্কা নগরীতে প্রবেশ করলেন, তখন তিনি বিজয় মিছিল-শোভাযাত্রা কিছুই করেননি। গর্ব-অহংকার করেননি। বাদ্য-বাজনা বাজাননি। নবীজীর অবস্থা কি ছিল? আল্লাহর নবী একটি উষ্ট্রীর উপর আরোহণাবস্থায় ছিলেন, তাঁর চেহারা ছিল নিম্নগামী। অর্থাৎ বিনয়ের সাথে তিনি মক্কায় প্রবেশ করেন।
এরপর সর্বপ্রথম তিনি উম্মে হানীর ঘরে প্রবেশ করেন। সেখানে আট রাকাত নফল নামায আদায় করেন। এই নামাযকে বলা হয় ‘বিজয়ের নামায’। এতে বিজয় দিবসে মহান আল্লাহর দরবারে শুকর আদায়ে এভাবে নফল নামায পড়া ইসলামের শিক্ষা বলে পরিগণিত হয়।
এরপর নবীজী সা. হারাম শরিফে এসে সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে বয়ান প্রদান করেন। তিনি বলেন, হে মক্কার কাফের সম্প্রদায় ! তের বছর ধরে আমার উপর, আমার পরিবারের উপর, আমার সাহাবাদের উপর নির্যাতনের যে স্টিম রোলার চালিয়েছ, এর বিপরীতে আজকে তোমাদের কি মনে হয়, তোমাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করব? তারা বলল, হ্যাঁ, আমরা কঠিন অপরাধী। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস, আপনি আমাদের উদার ভাই, উদার সন্তান, আমাদের সাথে উদারতা, মহানুভবতা প্রদর্শন করবেন। এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। তখন আল্লাহর নবী সা. বললেন-- হ্যাঁ, আমি আজ তোমাদের সকলের জন্য হযরত ইউসুফ আ.-এর মত সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলাম। যাও তোমাদের প্রতি আজ কোন অভিযোগ নেই। তোমাদের থেকে কোন প্রতিশোধ নেয়া হবেনা। (সুনানে বাইহাকী, ৯ম খণ্ড, ১১৮ পৃষ্ঠা)
এখানেই ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব, অনবদ্যতা, অনন্যতা। এভাবে মহানুভবতা ও উদারতা প্রদর্শনের দ্বারাই মানুষের মন ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হয়েছে। তখন মক্কার কাফিররা মুগ্ধ হয়ে দলে দলে ইসলামে দাখিল হয়েছে।
এভাবে শান্তিপূর্ণভাবে মক্কা বিজয় করে মহানবী সা. পুরো বিশ্বকে এই ম্যাসেজ দিলেন যে, আমরা শান্তির পক্ষে। আমরা খুনাখুনি, ত্রাস এবং লুন্ঠনের বিপক্ষে।
আমাদেরকে এভাবে ইসলামের পদ্ধতিতে বিজয় দিবস পালন করা দরকার। এদিন নফল নামায পড়ে এবং মহান আল্লাহর দরবারে তাসবীহ-তাহমীদ পাঠ করে বিজয়ের জন্য তাঁর শোকর আদায় করতে পারি। আর কুরআন তিলাওয়াত করে এবং দান-খাইরাত করে তার ছাওয়াব দেশের স্বাধীনতার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন, রক্ত দিয়েছেন, সেই শহীদ ভাই-বোনগণের রূহে রেসানী করতে পারি। তাদের জন্য দু‘আ করতে পারি। আর দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং শান্তিময় ও সমৃদ্ধশালী দেশ গঠনে প্রত্যয় করতে পারি।
সমাধিতে পুষ্প অর্পন, একমিনিট নীরবতা পালন ইত্যাদি এগুলো পাশ্চাত্য বিধর্মী কালচার। খ্রীস্টানদের কৃষ্টিতে কবর যিয়ারত নেই, কুরআন খানি নেই, ঈসালে ছাওয়াব নেই. তাই কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তারা মনে প্রবোধ পেতে চায়। কিন্তু আমাদের তো এ ব্যাপারে সুবিধিবদ্ধ করণীয় নির্দেশনা রয়েছে। তাই আমাদের কর্তব্য হচ্ছে--নিজেদের কৃষ্টি-কালচার অনুযায়ী মহান আল্লাহর মনোনীত পথ ও পদ্ধতিতে এসব পালন করা--যা সার্বিকভাবেই কল্যাণ ও সাফল্য লাভের উপায়।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৭৯৩৮৪

টাকা দিয়ে মিথ্যা ব্যাংক স্টেটমেন্ট বানানো কি জায়েয?


২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

Narayanganj

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

২৩৩১৫

إذا صح الحديث فهو مذهبي কথাটি কি ইমাম আবু হানীফা রহ. থেকে প্রমাণিত?


২০ আগস্ট, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

৭৭০৬৬

গার্মেন্টস মার্চেন্ডাইজের ইনকাম হালাল?


২৪ নভেম্বর, ২০২৪

CVXM+৭৫৯

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

২৮৮০৪

মুশারাকা বা শরিকানা ব্যবসার শর্ত ও ধরন


১৫ মার্চ, ২০২৩

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy