আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১১৫৫৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, নামাজ শেষে সালাম ফেরানোর আগে কি কি দোয়া পড়া যায়,

১৫ ডিসেম্বর, ২০২১

ত্রিপুরা ৭৯৯১০৫

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم





হাদিসে সালাম ফেরানোর আগে পড়ার অনেকগুলো দোয়া এসেছে। যার কয়েকটি তুলে ধরা হলো-


>> হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদেরকে এই দোয়াটি এভাবে শেখাতেন, যেভাবে কুরআনের সুরা শেখাতেন। তিনি বলতেন-

اَللَّهُمَّ اِنِّىْ أعُوْذُبِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّم- وَأعُوْذُبِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ- وَ أَعُوْذُبِكَ مِن فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ - وَ أَعُوْذُبِكَ مِن فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَ فِتْنَةِ الْمَمَاتِ - اَللَّهُمَّ اِنِّىْ أعُوْذُبِكَ مِنْ الْمَأْثَمِ وَ الْمَغْرَم

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবি ঝাহান্নাম। ওয়া আউজুবিকা মিন আজাবিল ক্ববর। ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ দাঝ্‌ঝাল। ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল্ মাছামি ওয়া মিনাল মাগরাম।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে জাহান্নামের আজাব থেকে আশ্রয় চাই, কবরের আজাব হতে আশ্রয় চাই। আশ্রয় চাই দাজ্জালের ফিতনার পরীক্ষা থেকে। তোমার কাছে আশ্রয় চাই জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা থেকে এবং তোমার কাছে আশ্রয় চাই পাপ ও ঋণের বোঝা থেকে।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)


>> হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একবার আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম, আমাকে একটি দোয়া শিখিয়ে দিন। যা আমি নামাজে পড়বো। তখন তিনি বললেন, তুমি বল-

اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كثِيرًا، وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ، فَاغْفِر لِي مغْفِرَةً مِن عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِي، إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفور الرَّحِيم

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাছিরাও ওয়া লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা ফাগফিরলি মাগফিরাতাম মিন্ ইন্দিকা ওয়ার হামনি ইন্নাকা আংতাল গাফুরুর রাহিম।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আমার উপর অত্যধিক অত্যাচার করেছি এবং তুমি ব্যতিত পাপ ক্ষমা করার কেউ নেই। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। ক্ষমা একমাত্র তোমার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। আমার প্রতি রহম কর। নিশ্চয়ই তুমি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)

>> হজরত আবু মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তার পিতা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দোয়া পড়তেন-

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ وَمَا أَسْرَفْتُ وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ ‏

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফিরলি মা ক্বাদ্দামতু ওয়া মা আখখারতু ওয়া মা আসরারতু ওয়া মা আলানতু ওয়া মা আসরাফতু ওয়া মা আংতা আলামু বিহী মিন্নি আংতাল মুক্বাদ্দিমু ওয়া আংতাল মুয়াখখিরু লা ইলাহা ইল্লা আংতা।’ (মুসলিম)

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার আগের ও পরের সব গোপন ও প্রকাশ্য গোনাহ ক্ষমা কর (এবং ক্ষমা কর সেসব গোনাহ) যাতে আমি বাড়াবাড়ি করেছি। আর সেসব গোনাহ যে বিষয়ে তুমি আমার চেয়ে বেশি জান। তুমি প্রথম এবং শেষের মালিক। তুমি ব্যতিত কোনো উপাস্য নেই।’

>> হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাছ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ শব্দগুলো দ্বারা ক্ষমা চাইতেন-

- اَللَّهُمَّ اِنِّى اَعُوْذُبِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَاَعُوْذُبِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَاَعُوْذُبِكَ مِن اَن اُرَدَّ اِلَى اَرْذَلِ الْعُمُرِ وَ اَعُوْذُبِكَ مِن فِتْنَةِ الدُّنْيَا وَ عَذَابِ الْقَبْرِ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বুখলি ওয়া আউজুবিকা মিনাল জুবনি ওয়া আউজুবিকা মিন আন্ উরাদ্দা ইলা আরযালিল ওমুরি ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিদ দুনইয়া ওয়া আউজুবিকা মিন আজাবিল ক্বাবরি।’ (বুখারি ও মিশকাত)

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি কৃপণতা থেকে, কাপুরুষতা থেকে, বার্ধক্যের চরম দুঃখ-কষ্ট থেকে, দুনিয়ার ফেতনা-ফাসাদ ও কবরের আযাব থেকে।’

>> হজরত মুআয ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার হাত ধরে বললেন, হে মুআয! নিশ্চয়ই আমি তোমাকে ভালবাসি, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমিও আপনাকে ভালবাসি। তিনি বললেন, মুআয তুমি প্রত্যেক ছালাতের শেষে এই দোয়াটি কখনো পড়া থেকে বিরত থেকো না-

اَللَّهُم أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ، وحُسنِ عِبَادتِك

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আ-ইন্নি আলা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিক।’ (মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, নাসাঈ, মিশকাত)

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনাকে স্মরণ করার জন্য, আপনার শুকরিয়া আদায় করার জন্য এবং আপনার সুন্দর ইবাদত করার জন্য আমাকে সাহায্য করুন।’

>> হজরত বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন লোককে বলতে শুনলেন-

اَللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنِّي أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، الأَحَدُ الصَّمَدُ، الَّذِي لَمْ يَلِدْ، وَلَمْ يُولَدْ، وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আস্আলুকা বি-আন্নি আশহাদু আন্নাকা আন্তাল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা আন্তাল আহাদুস সামাদুল্লাজি লাম্ ইয়ালিদ্ ওয়া লাম্ ইউলাদ্ ওয়া লাম্ ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট চাই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি একমাত্র তুমিই আল্লাহ। তুমি ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই। তুমি একক অমুখাপেক্ষী। যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কারো থেকে জন্ম নেননি। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।’ (আবু দাউদ)

তারপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, অবশ্যই সে আল্লাহকে এমন নামে ডেকেছে, যে নামে চাওয়া হলে তিনি দান করবেন এবং প্রার্থনা করা হলে তিনি কবুল করেন।

প্রকাশ থাকে যে, নামাজের মধ্যে সালাম ফেরানোর আগে কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক যে কোনো দোয়াই পড়া বৈধ। (বুখারি)

তবে নামাজের মধ্যে আপন আপন ভাষায় দোয়া করা যাবে না। এমনকি আরবিতেও নিজের বা কারো বানানো দোয়া পড়া যাবে না। শুধুমাত্র কুরআন-সুন্নায় বর্ণিত দোয়া পড়তে হবে।

কেননা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের ভাষাকে নামাজে ব্যবহার করাকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই নামাজ মানুষের কথা বলার ক্ষেত্র নয়। এটাতো কেবল তাসবিহ, তাকবির ও কুরআন তেলাওয়াতের জন্যই সুনির্দিষ্ট।’ (মুসলিম,আবু দাউদ, নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজের সালাম ফেরানোর আগে কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক মাসনুন দোয়াগুলো যথাযথভাবে পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৩৬০৬৯

অমুসলিমরা কি জাহান্নামে চিরকাল থাকবে?


৯ জুলাই, ২০২৩

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

১৯১৬২

আল্লাহকে কোথায় পাওয়া যাবে?


২৫ অক্টোবর, ২০২৩

বরিশাল

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৩৪১৮৬

দুর্বল ঈমান শক্তিশালী করার আমল ও কৌশল


৩ জুন, ২০২৩

যশোর, Khulna, Bangladesh

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

২৫১০০

তাওহিদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি ও পুরস্কার


১৩ নভেম্বর, ২০২২

ঢাকা ১২১৪

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy