প্রশ্নঃ ১১৩২১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আচ্ছালামু আ'লাইকুম হুজুর, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের যে দশটি উল্লেখযোগ্য আকিদার কথা পাওয়া যায়, সেই দশটি আকিদা যদি বলতেন বিস্তারিত।,
১৪ ডিসেম্বর, ২০২১
ঢাকা ১২১২
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’
পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, উম্মাহর সকল দলের মধ্যে সিরাতে মুসতাকীমের উপর অবিচল দলটি হল ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’। এবং একমাত্র এই দলটিই ‘ফিরকায়ে নাজিয়াহ’ (মুক্তিপ্রাপ্ত দল) ও ‘ত্বায়েফায়ে মানসুরাহ’ (সাহায্যপ্রাপ্ত জামাত) যাদের সম্পর্কে হাদীস শরীফে আছে মুক্তির অঙ্গিকার এবং কিয়ামত পর্যন্ত খোদায়ী মদদ ও নুসরত শামেলে হাল হওয়ার সুসংবাদ।
এই নামের উৎস
নাজাতপ্রাপ্ত দলের এই নাম মূলত নিম্নোক্ত হাদীসসমূহ থেকে গৃহীত-
এক.
أَلَا إِنَّ مَنْ قَبْلَكُمْ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ افْتَرَقُوا عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، وَإِنَّ هَذِهِ الْمِلَّةَ سَتَفْتَرِقُ عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ: ثِنْتَانِ وَسَبْعُونَ فِي النَّارِ، وَوَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ، وَهِيَ الْجَمَاعَةُ .
জেনে রেখো, তোমাদের পূর্ববর্তী আহলে কিতাব বায়াত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে । আর এ উম্মত বিভক্ত হবে তিয়াত্তর দলে। বায়াত্তর দল জাহান্নামী হবে আর একটি দল জান্নাতী হবে। সেই দলটি হচ্ছে ‘আলজামাআহ’। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৫৯৬; মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১৬৯৩৭, হাদীসটির সনদ সহীহ।
দুই.
إِنَّ بني إسرائيل تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً، قَالُوا: وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي.
قال الترمذي: هَذَا حَدِيثٌ مُفَسَّرٌ غَرِيبٌ، لاَ نَعْرِفُهُ مِثْلَ هَذَا إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ.
বনী ইসরাঈল বায়াত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে আর আমার উম্মত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে। একটি দল ছাড়া আর সবাই জাহান্নামী হবে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা কারা? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, যারা আমার ও আমার সাহাবীগণের পথে অবিচল থাকবে।’ -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৪১, কিতাবুল ঈমান
তিন.
إِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرى اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ، تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ.
তোমাদের যারা আমার পরে বেঁচে থাকবে তারা অবশ্যই বহু মতভেদ দেখবে। তখন আমার সুন্নাহ ও আমার পরের খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ অবলম্বন করো। তা মজবুতভাবে ধারণ করো এবং মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে রেখো। আর নবআবিষ্কৃত বিষয়াদি থেকে অবশ্যই বেঁচে থেকো। কারণ (দ্বীনের নামে আবিষ্কৃত) সকল নতুন বিষয় বিদআত আর সকল বিদআত গোমরাহী। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৬৬৯২; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৬০৭; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৭৬ হাদীসটির সনদ সহীহ।
এই হাদীসগুলো থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, যখন উম্মতের মধ্যে বহু মত ও পথের উদ্ভব ঘটবে তখন সিরাতে মুসতাকীমের উপর দৃঢ়পদ থাকার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ ও খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করতে হবে। সেই নাযুক মুহূর্তে তারাই হবে নাজাতপ্রাপ্ত যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাহর উপর অটল থাকবে এবং একই সাথে নিজেকে ‘আল জামাআহ’-এর অন্তর্ভুক্ত রাখবে। বিচ্ছিন্নতা অবলম্বন করবে না।
যেহেতু নাজাতপ্রাপ্তদের মূল বৈশিষ্ট্য হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাহর উপর অবিচলতা ও ‘আল জামাআহ’ থেকে বিচ্ছিন্ন না হওয়া, এজন্য তাদেরকে ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’ অর্থাৎ ‘সুন্নাহ ও জামাআহ ধারণকারী’ নামে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এর বিপরীতে যারা সুন্নাহ ত্যাগ করে বিদআত অবলম্বন করে এবং মুসলমানদের জামাআত থেকে বিচ্ছিন্নতা অবলম্বন করে উম্মাহর মাঝে বিভেদ ও অনৈক্য সৃষ্টি করে তাদের নাম ‘আহলুল বিদআতি ওয়াল ফুরকাত’ অর্থাৎ বিদআত ও বিচ্ছন্নতা অবলম্বনকারী।
সূরা আলে ইমরান ১০৬ ও ১০৭ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা আখেরাতের প্রসঙ্গে বলেছেন, যেদিন এক দলের চেহারা উজ্জ্বল হবে আর অপর দলের চেহারা কালো হবে।’ এর তাফসীরে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত,
يَعْنِي: يَوْمَ الْقِيَامَةِ، حِينَ تَبْيَضُّ وُجُوهُ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ، وَتَسْوَدُّ وُجُوهُ أَهْلِ البِدْعَة وَالْفُرْقَةِ.
অর্থাৎ ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের’ চেহারা উজ্জ্বল হবে আর ‘আহলুল বিদআত ওয়াল ফুরকাতের’ চেহারা কালো হবে। -তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৪১৯; আদদুররুল মানসূর ফিত তাফসীরি বিল মা’সূর, সুয়ূতী ৪/৬৩; শরহু উসূলি ইতিকাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামাআহ, লালিকায়ী ১/৭৯ প্যারা নং ৭৪
‘আস্সুন্নাহ’ ও ‘আলজামাআহ’-এর অর্থ
আমরা জেনেছি যে, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর বৈশিষ্ট্যই হল, সুন্নাহর অনুসরণ ও ‘আল জামাআহ’-য় শামিল থাকা। তা থেকে বিচ্ছিন্ন না হওয়া। এখন আমাদেরকে এই দুই শব্দের মর্ম বুঝতে হবে।
কুআন হাদীসের আলোকে আলিমগণ ‘সুন্নাহ’র অর্থ বর্ণনা করেছেন,
وَالسُّنَّةُ: هِيَ الطَّرِيقَةُ الْمَسْلُوكَةُ، فَيَشْمَلُ ذَلِكَ التَّمَسُّكَ بِمَا كَانَ عَلَيْهِ هُوَ وَخُلَفَاؤُهُ الرَّاشِدُونَ مِنَ الِاعْتِقَادَاتِ وَالْأَعْمَالِ وَالْأَقْوَالِ.
অর্থাৎ দ্বীনের যে পথ ও পন্থার উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও খোলাফায়ে রাশেদীন ছিলেন, আকীদা-বিশ্বাস, আমল ও কর্ম তথা দ্বীনের সকল বিষয়ে তাদের ঐ পথ ও পন্থাই হচ্ছে ‘সুন্নাহ’। -জামিউল উলূমি ওয়াল হিকাম, ইবনে রজব পৃ. ৪৯৫; আস সুন্নাতুন নাবাবিয়্যাহ ওয়া মাদলূলুহাশ শরয়ী, আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ
‘আল জামাআহ’-তে রয়েছে চারটি বিষয় :
১. আমীরুল মুমিনীন বা সুলতানের কর্তৃত্ব স্বীকারকারীদের থেকে বিচ্ছিন্ন না হওয়া এবং শরীয়তসম্মত বিষয়ে তার আনুগত্য বর্জন না করা। (দ্রষ্টব্য : ফাতহুল বারী ১৩/৩৭, হাদীস ৭০৮৪-এর আলোচনায়)
২. শরীয়তের আহকাম ও বিধানের ক্ষেত্রে উম্মাহর আমলে মুতাওয়ারাছ তথা সাহাবা-তায়েয়ীন যুগ থেকে চলে আসা কর্মধারা এবং উম্মাহর সকল আলিম বা অধিকাংশ আলিমের ইজমা ও ঐক্যের বিরোধিতা না করা। (দ্রষ্টব্য : উসূলের কিতাবসমূহের ইজমা অধ্যায়)
৩. হাদীস-সুন্নাহ এবং ফিকহের ইলম রাখেন এমন উলামা-মাশাইখের সাথে নিজেকে যুক্ত রাখা। ইমাম তিরমিযী রাহ. আহলে ইলম থেকে আলজামাআর যে ব্যাখ্যা বর্ণনা করেছেন তা এই-
أهل الفقه والعلم والحديث
অর্থাৎ জামাআ হচ্ছে ফিকহ ও হাদীসের ধারক আলিম সম্প্রদায়। (কিতাবুল ফিতান, বাবু লুযুমিল জামাআ, হাদীস ২১৬৭-এর আলোচনায়)
৪. মুসলিম শাসনকর্তার অধীনস্ত মুসলমানদের জামাত। -আল ইতিসাম, শাতিবী, শরহু উসূলি ইতিকাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামাআহ
সুতরাং কেউ আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অর্থ, সে দ্বীনের প্রতিটি বিভাগে :
১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতের উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে। আকাইদ, ইবাদত, ইত্যাদি কোনো ক্ষেত্রেই নিজের জন্য নতুন কোনো পথ নির্বাচন করবে না। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেখানো আকাইদ ও ইবাদতই গ্রহণ ও অনুসরণ করবে, যা গ্রহণ ও অনুসরণ করেছিলেন খোলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবায়ে কেরাম। সকল প্রকারের বিদআত ও রুসুম-রেওয়াজ থেকে দূরে থাকবে। লেনদেন, সামাজিকতা, আচার-ব্যবহার অর্থাৎ দ্বীন-দুনিয়ার সকল ক্ষেত্রে সুন্নাহর শিক্ষাকেই অন্য সব কিছুর উপর প্রাধান্য দিবে।
২. কোনো বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন ও উলামায়ে হক্বের ইজমা ও ঐকমত্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও অবস্থানের বিরোধিতা করবে না। ইজমার বিরুদ্ধাচরণ করে এই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত হবে না- مَنْ شَذَّ شَذَّ في النار
যে দলছুট হল সে দলছুট হয়ে জাহান্নামে পতিত হবে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২১৬৭
৩. কোনো ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহর অনুসৃত পথ থেকে বিচ্যুত হবে না। আল্লাহ তাআলার ইরশাদ-
وَ مَنْ یُّشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْۢ بَعْدِ مَا تَبَیَّنَ لَهُ الْهُدٰی وَ یَتَّبِعْ غَیْرَ سَبِیْلِ الْمُؤْمِنِیْنَ نُوَلِّهٖ مَا تَوَلّٰی وَ نُصْلِهٖ جَهَنَّمَ ؕ وَ سَآءَتْ مَصِیْرًا۠.
কারো নিকট সুপথ প্রকাশিত হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতিত অন্য পথ অনুসরণ করে তবে যা সে গ্রহণ করেছে তাতে তাকে ছেড়ে দেব এবং তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করব। আর তা কতই না মন্দ আবাস। -সূরা নিসা (৪) : ১১৫
৪. মুসলমানদের অধিকাংশ আহলুর রায় (أهل الحل والعقد) কোনো আমীরের আনুগত্যের ব্যাপারে একমত হলে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বা অভিযান পরিচালনা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকবে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য
উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ ছাড়াও আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ্র এক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য এও যে, তারা কোনো ‘মুসলমান’কে ‘কাফের’ আখ্যা দেয় না। ‘কাফের’ শব্দটিকে একটি গালি হিসেবে ব্যবহার করা বা অন্যের উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে তাকে কাফের আখ্যা দেওয়া তো দূরের কথা, গুনাহে কবীরায় লিপ্ত হওয়ার কারণে বা এমন কোনো কারণে যা ‘কুফরী’ হওয়া স্পষ্ট নয়- কোনো মুসলমানকে কাফের বলে না। কিন্তু বিদআতী লোকদের বিশেষ পরিচয়ই হল, এরা ‘মুসলমান’দের ‘কাফের’ আখ্যা দিয়ে থাকে। কারো উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে অর্থাৎ তার নামে কুফরী কথাবার্তা বানিয়ে বা তার কোনো সঠিক কথাকে বিকৃত করে কুফরী কথার রূপ দিয়ে তাকে ‘কাফের’ সাব্যস্ত করা এদের পক্ষে অতি সহজ। কোনো কোনো বিদআতী সম্প্রদায় এমনও ছিল যারা কবীরা গুনাহের কারণে মুসলমানদের কাফের আখ্যা দিত। আবার কতক বিদআতী এমনও ছিল যারা নিজেদের দলের লোক ছাড়া অন্য সকলকে কাফের বলত। এই নীতি ও কর্মের বিদআতী যে শুধু অতীতেই ছিল তা নয়, এখনও আছে।
আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের এ বৈশিষ্ট্যও এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের ‘সুন্নাহ’র অনুসরণ থেকে। কারণ তাঁরা আহলে ক্বিবলা (পারিভাষিক অর্থে)-কে কাফের বলতে নিষেধ করেছেন এবং ‘আলজামাআত’-এর মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করতে নিষেধ করেছেন। আর সত্য কথা হল, কেউ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ্র অন্তর্ভুক্ত হবে আবার মুসলমানদের কাফেরও বলবে এটা কখনো হতে পারে না।
সালাফে সালেহীন আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ্র বৈশিষ্ট্যসমূহের আলোচনায় এ বৈশিষ্ট্যও অতি গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করেছেন।
আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের দশ বৈশিষ্ট্যঃ
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ্র পরিচয় দিয়ে ইমাম আবু হানিফা রাহ.-এর এ বাণী তো অতি প্রসিদ্ধ। তিনি বলেছেন,
الْجَمَاعَة ان تفضل أَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعَلِيًّا وَعُثْمَانَ وَلا تَنْتَقِصَ أَحَدًا مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَلا تُكَفِّرَ النَّاسَ بِالذُّنُوبِ وَتُصَلِّيَ على من يَقُول لَا إِلَهَ إِلا اللَّهُ، وَخَلْفَ مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَتَمْسَحَ عَلى الْخُفَّيْنِ وَتُفَوِّضَ الأَمْرَ إِلَى اللَّهِ وَتَدَعَ النُّطْق فِي اللَّهِ جَلَّ جَلالُهُ.
‘আবু বকর, উমর, আলী ও উসমান রা.-কে শ্রেষ্ঠ মনে করবে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো সাহাবীর অসম্মান করবে না, গোনাহের কারণে মানুষকে কাফের আখ্যা দিবে না, যে কালিমা পাঠ করে তার মৃত্যুতে জানাযার নামায পড়বে। কালেমা পাঠকারীর ইমামতিতে নামায পড়তে অসম্মত হবে না। চামড়ার মোজার উপর মাস্হ করবে। সব কিছুকে আল্লাহর উপর ন্যস্ত করবে আর আল্লাহ তাআলার সত্তার বিষয়ে মুখ খুলবে না।’ -আলইনতিকা, ইবনে আব্দুল বার পৃ. ৩১৪-৩১৫
ফিকহে হানাফীর প্রসিদ্ধ কিতাব ‘আল বাহরুর রাইক’ (তাকমিলাহ)-এ ফিকহের প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য কিতাব ‘আলহাভী’ থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে যে,
أَهْلُ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ مَنْ فِيهِ عَشَرَةُ أَشْيَاءَ: الْأَوَّلُ أَنْ لَا يَقُولَ شَيْئًا فِي اللَّهِ تَعَالَى لَا يَلِيقُ بِصِفَاتِهِ. وَالثَّانِي: يُقِرُّ بِأَنَّ الْقُرْآنَ كَلَامُ اللَّهِ تَعَالَى وَلَيْسَ بِمَخْلُوقٍ. الثَّالِثُ: يَرَى الْجُمُعَةَ وَالْعِيدَيْنِ خَلْفَ كُلِّ بَرٍّ وَفَاجِرٍ. وَالرَّابِعُ: يَرَى الْقَدَرَ خَيْرَهُ وَشَرَّهُ مِنْ اللَّهِ تَعَالَى. وَالْخَامِسُ: يَرَى الْمَسْحَ عَلَى الْخُفَّيْنِ جَائِزًا. وَالسَّادِسُ: لَا يَخْرُجُ عَلَى الْأَمِيرِ بِالسَّيْفِ. وَالسَّابِعُ: يُفَضِّلُ أَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَانَ وَعَلِيًّا عَلَى سَائِرِ الصَّحَابَةِ. وَالثَّامِنُ: لَا يُكَفِّرُ أَحَدًا مِنْ أَهْلِ الْقِبْلَةِ بِذَنْبٍ. وَالتَّاسِعُ: يُصَلِّي عَلَى مَنْ مَاتَ مِنْ أَهْلِ الْقِبْلَةِ. وَالْعَاشِرُ: يَرَى الْجَمَاعَةَ رَحْمَةً وَالْفُرْقَةَ عَذَابًا.
‘আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের অন্তর্ভুক্ত সে, যার মধ্যে দশটি বৈশিষ্ট্য থাকবে :
১. আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে এমন কিছু না বলা যা তাঁর গুণাবলীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
২. স্বীকার করা যে, কুরআন আল্লাহর কালাম, তা মাখলূক বা তাঁর সৃষ্টি নয়।
৩. নেককার গোনাহগার উভয় শ্রেণির মানুষের পিছনেই জুমা ও দুই ঈদের নামায পড়াকে জায়েয মনে করা।
৪. তাকদীরের ভালো-মন্দ আল্লাহর পক্ষ থেকে হওয়ার বিশ্বাস রাখা।
৫. চামড়ার মোজার উপর মাস্হ করাকে জায়েয মনে করা।
৬. আমীরের বিরুদ্ধে তরবারী উত্তোলন করা থেকে বিরত থাকা।
৭. আবু বকর, উমর, উসমান ও আলী রা.-কে অন্য সকল সাহাবী থেকে শ্রেষ্ঠ বিশ্বাস করা।
৮. গুনাহের কারণে কোনো আহলে কিবলাকে কাফের আখ্যা না দেওয়া।
৯. আহলে কিবলার অন্তর্ভুক্ত কেউ মৃত্যুবরণ করলে তার জানাযার নামায আদায় করা।
১০. মুসলমানদের মধ্যকার ঐক্যকে রহমত ও অনৈক্যকে আযাব মনে করা। -আল বাহরুর রাইক, তাকমিলাহ, খ- ৮, পৃ. ১৮২ কিতাবুল কারাহিয়্যাত
قال صاحب الكشاف : في هذا الفصل شروط وزيادات لأصحابنا يجب أن تراعى.
কাশশাফ গ্রন্থকার বলেন, এ প্রসঙ্গে আমাদের আলিমগণের আরো কিছু বিষয়াদি রয়েছে, যার প্রতি লক্ষ্য রাখাও অপরিহার্য। -প্রাগুক্ত
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতেঃ
১- ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস (ইসলাম ও আমাদের জীবন-১) by শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী দাঃ
২- ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ by মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দীন দাঃ
৩- কিতাবুল ইমান - মুফতী মনসুরুল হক্ব দাঃ
والله اعلم بالصواب
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
১৮৪৪১
১৫ মে, ২০২২
বরিশাল

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে