আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

ধর্মীয় বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করার ব্যাখ্যা

প্রশ্নঃ ১১২৯৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার প্রশ্ন শেষনবী সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়া সাল্লামা বলেছেনঃ ‘হে মানুষ সকল! তোমরা ধর্মীয় ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না। কারণ, তোমাদের পূর্বেকার সকল উম্মাত শুধু এ কারণেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে,। এখানে বাড়াবাড়ি বলতে কি বুঝানো হয়েছে এবং কোন কোন উম্মাত ধ্বংস হয়েছিল।

১৮ জুন, ২০২৫
ঢাকা ১২০৯

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন।

يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لَا تَغْلُوا فِي دِينِكُمْ وَلَا تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ إِلَّا الْحَقَّ ۚ إِنَّمَا الْمَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ رَسُولُ اللَّهِ وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَىٰ مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ ۖ فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ ۖ وَلَا تَقُولُوا ثَلَاثَةٌ ۚ انْتَهُوا خَيْرًا لَكُمْ ۚ إِنَّمَا اللَّهُ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ ۖ سُبْحَانَهُ أَنْ يَكُونَ لَهُ وَلَدٌ ۘ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ وَكِيلًا 171
“ হে আহলে কিতাব! তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি কোরো না। আর হক কথা ছাড়া আল্লাহর শানে কোনো কথা বোলো না। নিঃসন্দেহে মরিয়মপুত্র ঈসা মসিহ আল্লাহর রাসুল এবং তাঁর বাণী, যা তিনি মরিয়মের নিকট প্রেরণ করেছেন ও তাঁর (বিশেষ) আদেশ। অতএব, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলগণের ওপর ইমান আনো। আর এ কথা বোলো না যে 'আল্লাহ তিনের এক'। এ কথা পরিহার করো, তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর হবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ একক উপাস্য। সন্তানাদি থেকে তিনি পবিত্র। আসমানসমূহে ও জমিনে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর। আল্লাহ তায়ালা (একাই যেকোনো) কাজ সম্পাদনের জন্য যথেষ্ট”। - সুরা : আন-নিসা, আয়াত : ১৭১

তাফসির : আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইহুদি-নাসারাদের ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন। ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করার অর্থ হলো, ধর্মের ন্যায়সংগত সীমারেখা অতিক্রম করা। আহলে কিতাব তথা ইহুদি ও খ্রিস্টান জাতিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে ধর্মের ব্যাপারে কোনোরূপ বাড়াবাড়ি কোরো না। কারণ এ বাড়াবাড়ির ফলে উভয় জাতিই আক্রান্ত হয়েছে। খ্রিস্টানরা হজরত ঈসা (আ.)-কে ভক্তি, শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেছে। তাঁকে স্বয়ং খোদা, খোদার পুত্র অথবা তিনের এক খোদা বানিয়েছে। অন্যদিকে ইহুদিরা তাঁকে অমান্য ও প্রত্যাখ্যান করার দিক দিয়ে বাড়াবাড়ির শিকার হয়েছে। তারা হজরত ঈসা (আ.)-কে আল্লাহর নবী হিসেবে স্বীকার করেনি, বরং তাঁর মা হজরত মরিয়ম (আ.)-এর ওপর মারাত্মক অপবাদ আরোপ করেছে। ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি ও সীমা লঙ্ঘনের কারণে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের পথভ্রষ্টতা ও ধ্বংস হওয়ার শোচনীয় পরিণতি বারবার প্রত্যক্ষ হয়েছে। তাই হজরত রাসুল (সা.) তাঁর প্রিয় উম্মতকে এ ব্যাপারে সংযত থাকার জন্য সতর্ক করেছেন। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, 'তোমরা আমার প্রশংসা করতে গিয়ে এমন অতিরঞ্জিত কোরো না, যেমন খ্রিস্টানরা হজরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.)-এর ব্যাপারে করেছে। নিঃসন্দেহে আমি আল্লাহর বান্দা। অতএব, আমাকে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসুল বলবে।' বস্তুত, ইহুদি-খ্রিস্টানরা শুধু নবীদের ব্যাপারেই বাড়াবাড়ি করেনি, তারা নবীদের সহচর সঙ্গীদের ব্যাপারেও অতিরঞ্জিত করত। তারা পাদ্রি-পুরোহিতদেরও নিষ্পাপ মনে করত।

এতটুকু যাচাই করারও প্রয়োজন মনে করত না যে তারা সত্যিকারভাবে নবীদের অনুগত এবং তাঁদের শিক্ষার অনুসারী, না শুধু উত্তরাধিকার সূত্রে পণ্ডিত-পুরোহিতরূপে পরিগণিত হন। ফলে পরবর্তী সময়ে তাদের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব এমন পাদ্রি-পুরোহিতদের কুক্ষিগত হয়েছে, যারা নিজেরা স্বার্থপর ও পথভ্রষ্ট ছিল এবং অনুসারীদের চরম বিভ্রান্তি ও গোমরাহির আবর্তে নিক্ষেপ করেছে। ধর্মকর্মের নামে তারা অধর্ম-অনাচারে লিপ্ত হয়েছে। কোরআন পাক ঘোষণা করছে, 'তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের ধর্মীয় পণ্ডিত ও সন্ন্যাসীদের মাবুদের আসনে বসিয়েছিল।' এ থেকে বোঝা গেল যে ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা এমন এক মারাত্মক ব্যাধি, যা ধর্মের নামেই পূর্ববর্তী ধর্মসমূহের সত্যিকার রূপরেখাকে বিলীন করেছে। হাদিস শরিফে এসেছে, তোমরা ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা থেকে দূরে থাকো। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতরা তাদের ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করার কারণেই ধ্বংস হয়েছে।

(তাফসিরে মা'আরেফুল কোরআন ও ইবনে কাছির অবলম্বনে)
সংগৃহীত ও সংযোজিত।

والله اعلم بالصواب

মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন