আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১১০১৪. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামুয়ালাইকুম,নামাজে সিজদার সময় দুই পা কি একসাথে থাকবে নাকি দুই পায়ের মাঝে ফাঁকা থাকবে??হাদীস অনুযায়ী উত্তর জানতে চাচ্ছি,

১ ডিসেম্বর, ২০২১

শংকরচন্দ্র

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم





নামাযের মধ্যে সিজদার সময় উভয় পায়ের মধ্যে চার আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁক রাখা যে সুন্নাত তরীকা হিসেবে বলা হয়েছে এটাই সহীহ মাসআলা। বেহেশতী যেওর ১ম খন্ড ১৩৯ পৃষ্ঠায় সিজদার মধ্যে গোড়ালী মিলানোর যে কথা আছে, তার উদ্দেশ্যও সেটা। অর্থাৎ উভয় গোড়ালীর মধ্যে বেশী দূরত্ব রাখবে না। বরং মিলানোর কাছাকাছি করে রাখবে। যার দূরত্ব মোটামুটি চার আঙ্গুল পরিমাণ। উভয় গোড়ালী সম্পূর্ণ মিলানো এজন্য উদ্দেশ্য হতে পারে না যে, তাতে একটি হাদীসের আমল হলেও এসম্পর্কিত অপর তিনটি হাদীসের উপর আমল তরক হয়ে যায়। আর আমরা যেভাবে বলেছি, তাতে এ ব্যাপারে বর্ণিত চারটি হাদীসের তিনটার উপরই সরাসরি আমল হয়ে যায়। একটি হাদীসের মধ্যে সামান্য ব্যাখ্যা দিতে হয়। হাদীসগুলো ‍নিম্নরূপ:


(১) হযরত আয়িশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‍কে বিছানায় না পেয়ে তালাশ করতে শুরূ করি। তখন আমার হাত হুজুর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর উভয় পায়ের উপর পড়ে। যা তখন খাড়া অবস্থায় ছিল। হুজুর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন নামাযের স্থানে সিজদাহরত ছিলেন। [প্রামাণ মিশকাত শরীফ, ৮৪ পৃঃ]


(২) হযরত আবূ হুমাইদ আস-সায়ীদী এক লম্বা হাদীসে নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর নামাযের বর্ণনা দেন। যার শেষাংশে বলেন- অতঃপর তিনি সিজদার জন্য মাটিতে ঝুঁকতেন। সিজদায় হস্তদ্বয়কে উভয় পাঁজর থেকে পৃথক রাখতেন। আর উভয় পায়ের আঙ্গুলগুলোকে কিবলার দিকে মুড়ে রাখতেন। [প্রামাণ মিশকাত শরীফ, ৭৬ পৃ:]


(৩) হযরত বারা রা. বর্ণনা করেন যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন রুকুতে যেতেন, তখন পায়ের আঙ্গুলগলোকে এমনভাবে কিবলামূখী করাইতেন যে, উভয় পায়ের মাঝখানে ফাঁকা থাকত। (বাইহাকী) উল্লেখিত তিনটি রিয়াওয়াত দ্বারা সিজদার মধ্যে উভয় পায়ের গোড়ালীর ফাঁক রাখা সাব্যস্ত হয়।


কারণ, তৃতীয় হাদীসটি একদম স্পষ্ট যে, উভয় পায়ের মাঝে ফাঁক থাকবে। আর ১ম হাদীস দ্বারা এভাবে ছাবিত হয় যে, শুধু গোড়ালী মিশালে উভয় পা খাড়া থাকে না। বরং বাঁকা হয়ে যায়। আর দুই পায়ের মাঝে চার আঙ্গুল ফাঁকা রাখলে উভয় পা খাড়া থাকে। তেমনিভাবে ২য়, ৩য় হাদীসে বলা হয়েছে যে, পায়ের আঙ্গুল সমূহ কিবলামুখী করে রাখতে হবে। এটাও তখনই সম্ভব যখন পা দ্বয়ের মাঝে চার আঙ্গুল ফাঁকা থাকবে। কারণ, উভয় পায়ের গোড়ালী মিলালে দুই পায়ের শুধুমাত্র বৃদ্ধাঙ্গুলী ব্যতীত অন্য কোন আঙ্গুল কিবলামুখী করা সম্ভব হয় না।


(৪) হযরত আয়িশা রা. বর্ণনা করেন যে, একরাতে আমি হুজূর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে হারিয়ে ফেলি। অথচ তিনি আমার সাথে একই বিছানায় শুয়েছিলেন। অতঃপর খুঁজতে খুঁজতে তাঁকে সিজদারত পাই। এমতাবস্থায় যে, তার পায়ের গোড়ালীদ্বয় মিলানো ছিল। আর পায়ের আঙ্গুলীগুলো মিলানো ছিল। আর পায়ের আঙ্গুলীগুলো কিবলামুখী ছিল। [ই’লাউল সুনান, ইবনে হিব্বান , নাসায়ী] যারা সিজদায় গোড়ালী মিলাতে বলেন এ হাদীসটি তাদের দলীল। কিন্তু একটা হাদীসের উপর আমল করলে, অবশিষ্ট তিনটি হাদীস বাদ দিতে হয়। এবং এ হাদীসের শেষের অংশের উপরও আমল করা যায় না। এজন্য ফুকাহাগণ বলেছেন যে, ৪র্থ হাদীসে যে গোড়ালীদ্বয় মিলানোর উল্লেখ আছে, এর অর্থ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর গোড়ালীদ্বয় নিকটবর্তী ও কাছাকাছি ছিল এবং তার মর্ম এই যে, উভয় গোড়ালীর মধ্যে চার আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁক যেহেতু বেশী নয়, সুতরাং তাকেও মিলানো বলা যায়।


ফুকাহাগণ এ ব্যাখ্যা এজন্য করেছেন যে, এ ব্যাখ্যা না করলে খোদ এ হাদীসের শেষাংশে যে পায়ের আঙ্গুল সমূহকে কিবলামুখী করতে বলা হয়েছে তার উপরেও আমল করা যায় না এবং উপরের তিনটা হাদীসও বাদ ‍দিতে হয়। তার উপরও আমল করা যায় না। যারা গোড়ালী মিলাতে বলেন, তারা ফাতাওয়া শামীর কথাও বলে থাকেন। কিন্তু ফাতাওয়া শামীতে যে পুরুষদের জন্য রুকু ও সিজদায় উভয় পায়ের গোড়ালী মিলানোর কথা আছে, এটাকে এবং এর পক্ষে তিনি যে দলীল পেশ করেছেন তা অন্যান্য ফুকাহাগণ গ্রহণ করেন নি। কারণ স্পষ্ট।


[আহসানুল ফাতাওয়া ৩ : ৪১ # তাহাবী শরীফ, ১ : ১৬৬ # ই’লাউস সুনান, ৩ : ৩০]


قال الامام الطحاوى فرأينا السنة جائت عن النبى صلى الله عليه وسلم بالتجافى فى الركوع والسجود واجمع المسلمون على ذالك فكان ذالك من تفريق الاعضاء - [شرح معانى الاثار.1/166]


قال عبد الحى اللكنوى رحمة الله عليه قلت لقد دارت هذه المسئة فى سنة اربع وثمانين بعد اللف والمأتين بين علماء عصرنا فاجاب اكثرهم بأن الصاق الكعبين فى الركوع والسجود ليس بمسنون ولا اثر له فى الكتب المعتبرة –


والقول الفصيل ان يقال ان كان المراد بالصاق الكعبين ان يلزق المصلى احد كعبين بالأخر ولا يفرج بينهما كما هوظاهر عبارة الدرالمختاروالنهر وغيرهما وسبق اليه فهم المفتى ابى السعود ايضا فليس هومن السنن على الاصح كيف ؟ وقد ذكرالمحققون من الفقهاء ان الاولى للمصلى ان يجعل بين قدميه نحواربعة اصابع ولم يذكروا انه يلزقهما فى حالة الركوع والسجود –


وقال العينى فى البناية نقلا عن الواقعات ينبغى ان يكون بين قدمى المصلى قدراربع اصابع اليد لانه اقرب الخشوع والمراد من قوله عليه السلام الصقواالكعاب بالكعاب اجتماعهما انتهى – [هكذامذكور فى السعاية 2/181]

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৭৫৮০৯

প্রথমে কেরাত শুদ্ধ পড়ে পরে ভুল পড়লে নামায হবে?


২০ অক্টোবর, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৬৬৪৩৯

কয় বছর বয়সে নামাজ ফরজ হয়?


৪ জুলাই, ২০২৪

WFFJ+৭৬৯

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি জাওয়াদ তাহের

৯০৩৩৬

ভালোভাবে ধৌত করার পরও নাপাকির দাগ কাপড়ে লেগে থাকলে সে কাপড়ে নামায হবে কি?


২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

Kaliganj

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৮৮৯৯২

ভুলে প্রথম বৈঠকে সালাম


১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

আড়াইহাজার

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy