আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

অমুসলিমদের মসজিদে প্রবেশ

প্রশ্নঃ ১০৯১৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, কোন হিন্দু ব্যক্তি কি মসজিদে ঢুকতে পারবে বা রাত্রি যাপন করতে পারবে আমার এক বড় ভাই তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার্থী তার কোথাও জায়গা না হয় তিনি মসজিদে অবস্থান করেছেন তার সাথে আরেক হিন্দু ভাই তারও কোথাও জায়গা না হওয়ায় তিনিও মসজিদে অবস্থান করেছেন

৩০ জুলাই, ২০২৫
VVJ৫+৫২৬

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


২৮. তোমরা যদি দারিদ্র্যের আশঙ্কা করো, তবে আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাঁর নিজ করুণায় তোমাদের অভাব মুক্ত করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। [সুরা তাওবা, আয়াত : ২৮ (শেষাংশ)]

তাফসির : হজের মৌসুমে মক্কা শরিফে বিভিন্ন গোত্রের সমাবেশ হতো। এতে খাদ্যশস্যের আমদানি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ-সুবিধা তৈরি হতো। অমুসলিমদের হজ-ওমরাহ পালনে নিষেধাজ্ঞা জারি করার ফলে মরুময় মক্কায় খাদ্যের অভাব হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এ আয়াতে মুসলমানদের অভয় দেওয়া হয়েছে যে আল্লাহ চাইলে তোমাদের অভাব মুক্ত করে দেবেন। মক্কা বিজয়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন গোত্রের লোকদের দলে দলে ইসলাম গ্রহণ এবং অতি অল্প সময়ে আরবের সীমারেখা অতিক্রম করে ইসলামের বিস্তৃতি লাভের ফলে মক্কাবাসীর অভাবগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দূরীভূত হয়ে যায়। সেখানে ব্যাপক হারে খাদ্যশস্যের আমদানি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়।
অমুসলিমদের মসজিদুল হারামে প্রবেশের বিধান : এই আয়াতের প্রথম অংশে বলা হয়েছে, 'এ বছরের পর মুশরিকরা যেন মসজিদুল হারামের কাছেও না আসে।' এখানে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় যে আদৌ অমুসলিমরা মসজিদুল হারামে প্রবেশ করতে পারবে কি না? এর উত্তর হলো, হানাফি মাজহাব মতে, এ আয়াতে আক্ষরিক অর্থে মসজিদুল হারামে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি; বরং তাদের ওই বছর তথা নবম হিজরির পর থেকে হজ পালনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সুতরাং অমুসলিমদের মসজিদুল হারামে প্রবেশে কোনো বাধা নেই। হিদায়া গ্রন্থকার লিখেছেন, 'আহলে জিম্মি বা ইসলামী রাষ্ট্রের আইনকানুন মেনে সেখানে অবস্থানকারী অমুসলিমরা মসজিদুল হারামে প্রবেশ করলে কোনো অসুবিধা নেই।' (হিদায়া : কিতাবুল কারাহিয়্যা) হানাফি মাজহাব ছাড়া অন্য মাজহাব মতে, অমুসলিমরা কিছুতেই মসজিদুল হারামে প্রবেশ করতে পারবে না। (নেহায়াতুল মুহতাজ : ৮/৮৬; দুররে মুখতার : ৩/২৭৫)

অমুসলিমদের মসজিদে প্রবেশের বিধান : আমাদের হানাফি মাজহাব মতে, অমুসলিমরা কোনো প্রয়োজন হলে মুসলমানদের অনুমতি নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে। ইমাম শাফেয়ি (রহ)-এর মতে, অমুসলিমরা মসজিদুল হারামে প্রবেশ করতে পারবে না, তবে অন্য যেকোনো মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে। ইমাম আহমদ (রহ.)-এর মতে, অমুসলিমরা হেরেম শরিফে প্রবেশ করতে পারবে না, তবে অন্য যেকোনো মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে। ইমাম মালেক (রহ)-এর মতে, অমুসলিমদের মসজিদুল হারামসহ কোনো মসজিদেই প্রবেশ করা বৈধ নয়। কেননা কাবা শরিফ ও মসজিদুল হারামকে কেন্দ্র করেই অন্য সব মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

'এই বছরের পর অমুসলিমরা যেন মসজিদুল হারামের কাছেও না আসে।' এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পরও মহানবী (সা.)-এর যুগে বহু অমুসলিম মসজিদে প্রবেশের ঐতিহাসিক বহু প্রমাণ পাওয়া যায়। তাই দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলা যায়, এখানে আক্ষরিক অর্থে তাদের মসজিদুল হারামে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়নি; বরং অমুসলিমদের জন্য হজ ও ওমরাহ পালন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আল্লামা রশিদ রেজা (রহ.) লিখেছেন, 'ইসলামের ইতিহাস ও মহানবী (সা.)-এর জীবনচরিত সম্পর্কে বোদ্ধা মহল ভালোভাবেই জানে যে মুসলমানরা
লেনদেন ও সামাজিকতার ক্ষেত্রে অমুসালমদের সঙ্গে মিলেমিশেই থাকত। বিশেষত হুদাইবিয়ার সন্ধির পর বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে অমুসলিমদের কষ্ট দেওয়া, তাদের সঙ্গে যুদ্ধ নিষিদ্ধ করা হয়। সেই সময় তাদের প্রতিনিধিরা মহানবী (সা.)-এর কাছে আসত এবং মসজিদে নববীতে প্রবেশ করত। একইভাবে নাজরানের ইহুদি-খ্রিস্টানরাও এসেছে। তাদের সঙ্গে কখনো 'অপবিত্র' আচরণ করা হয়নি। তাদের দেহ মিলিত হওয়ার দরুন কোনো কিছু ধৌত করতেও বলা হয়নি।' (তাফসিরে মানার : ১/২৪২)

প্রতিনিধিরা নবী করিম (সা.)-এর কাছে এলে তাদের মসজিদে নববীতে অবস্থান করতে দেওয়া হয়। অথচ তারা তখনো অমুসলিম ছিল। (মা'আরেফুল কোরআন)

والله اعلم بالصواب

মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন