আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

সন্তানের কল্যাণে মায়ের আমল কেমন হওয়া উচিত?

প্রশ্নঃ ১০৯০৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, সন্তান কুরআন পড়ায় মনযোগী হবার জন্য মা কি আমল করতে পারি? আমাকে সাহায্য করেন।

৫ নভেম্বর, ২০২৩
নরসিংদী

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


যথাসম্ভব সালাতুল হাজত আদায় করার পর এই দোয়া গুলো বেশি বেশি পাঠ করুন ,,
১/
উচ্চারণ : ‘রব্বি হাবলি মিনাস সলিহিন’

অনুবাদ : হে আমার রব! আমাকে সৎ, কর্মপরায়ণ সন্তান দান করুন (সূরা : আস-সাফফাত, আয়াত : ১০০)।

2/
উচ্চারণ : ‘রব্বি হাবলি মিল্লাদুনকা জুররিয়্যাতান ত্বয়্যিবাতান, ইন্নাকা সামিউদ দোয়া’

অর্থ : ‘হে আমার রব! আমাকে আপনার পক্ষ থেকে উত্তম সন্তান দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী (সূরা : আল-ইমরান : আয়াত ৩৮)।

3/
উচ্চারণ : রব্বানা-হাবলানা-মিন আজওয়াজিনা ওয়া জুররিয়্যাতিনা কুররতা আ’ইউনিউ ওজা আলনা লিল মুত্তাকিনা ইমামা।

অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান কর, যারা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয় আর আমাদের মুত্তাকিদের নেতা বানিয়ে দাও (সূরা : ফুরকান, আয়াত : ৭৪)।



সন্তানের জন্য বাবা-মা'র দোয়ার গুরত্ব

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাআলা কখনো তিনটি দোয়াকে প্রত্যাখ্যান করেন না।

> সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া;
>> রোজা রাখা অবস্থায় রোজাদারের দোয়া এবং
>>> (সফর অবস্থায়) মুসাফিরের দোয়া। (তিরমিজি)

প্রিয়নবি বলেছেন, কোনো সন্তান যদি পিতামাতার প্রতি ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকায়, আল্লাহ তাআলা সে সন্তানকে সাদকার সাওয়াব দান করেন।এথেকেই বুঝা যায়, সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়া কতটা কার্যকরী।

মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম যখন প্রাণপ্রিয় সন্তান ও স্ত্রীকে জনমানবহীন মরুভূমি মক্কার সাফা-মারওয়া পাহাড়ের উপত্যকায় রেখে যান। তখন তাদের জন্য কল্যাণের দোয়া করেছিলেন। দোয়াটি মহান আল্লাহ কবুল করেন এবং পছন্দ করেন।

কুরআনুল কারিমে সে দোয়াটি পুনরায় উল্লেখ করে দুনিয়ার মানুষকে তাদের সন্তানদের জন্য এভাবে দোয়া করতে উদ্বুদ্ধ করেন। যাতে মানুষ সন্তানদের জন্য এভাবে দোয়া করেন। দোয়াটি তুলে ধরা হলো-

رَبَّنَا لِيُقِيمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِّنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُم مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ

উচ্চারণ : রাব্বানা লিয়ুক্বিমুস সালাতা ফাঝআল আফ্‌ইদাতাম মিনান নাসি তাহ্‌ওয়ি ইলাইহিম ওয়ারযুক্হুম মিনাছ ছামারাতি লাআল্লাহুম ইয়াশকুরুন। (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৩৭)

অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! তারা (সন্তান-সন্তুতি) যাতে নামাজ প্রতিষ্ঠা করে। কাজেই তুমি মানুষের অন্তরকে তাদের প্রতি অনুরাগী করে দাও। আর ফল-ফলাদি দিয়ে তাদের জীবিকার ব্যবস্থা কর; যাতে তারা (আল্লাহ তাআলার) শুকরিয়া আদায় করতে পারে।’

প্রাণপ্রিয় সন্তানের জন্য পিতামাতার পক্ষ থেকে এ রকম উত্তম দোয়া করা হলে, আল্লাহ তাআলা সে সন্তানকে নামাজি হিসেবে কবুল করবেন। উত্তম বন্ধু ও রিজিক দান করবেন। আল্লাহর পরিপূর্ণ শুকরিয়অ আদায় করবে সন্তান।

পিতামাতা যদি সন্তানের জন্য এভাবে দোয়া করেন, আর আল্লাহ তাআলা পিতামাতার সে দোয়া কবুল করেন, সন্তান যদি নেককার হয়, তবে বংশ পরম্বরায় এসব পিতামাতাকে আল্লাহ তাআলা সাদকায়ে জারিয়া দান করবেন। যা তাদের পরকালের জীবনের মহা পাথেয়।

পবিত্র কাবা শরিফের সম্মানিত ইমাম শাইখ আদিল ইবনে সালেম আল-কালবানি জানিয়েছেন, ‘তিনি তাঁর মায়ের দোয়ার বরকতেই আজ পবিত্র কাবা শরিফের ইমাম হয়েছেন।’

তিনি জানান, তিনি ছোট বেলায় দুষ্ট প্রকৃতির ছিলেন। আর তাঁর মা ছিলেন অত্যন্ত দ্বীনদার মহিয়সী নারী।শাইখ আল-কালবানি যত দুষ্টুমিই করতেন; মাকে যতই জ্বালাতন করতেন; তিনি কখনোই তাঁকে বদ-দোয়া দিতেন না; বরং তাঁর জন্য বেশি বেশি দোয়া করতেন। আর দোয়া করাটা শাইখ আল-কালবানির মায়ের অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল।

তাঁর মা এক বার তাঁর ওপর রাগান্বিত হয়ে আল্লাহর দরবারে আবেদন জানালেন-

‘আল্লাহ তোমাকে হেদায়েত তথা সঠিক পথ দেখান; তোমাকে পবিত্র কাবা শরিফের ইমাম বানান।’

আরবের কালো মানিক শাইখ আদিল ইবনে সালেম আল-কালবানি মায়ের দোয়ায় পবিত্র কাবা শরিফের ইমাম হয়েছেন। লন্ডনের এক স্মৃতি চারণ অনুষ্ঠানে তিনি এ তথ্য জানান এবং প্রিয় সন্তানের পিতা-মাতদেরকে উদ্দেশ্য করে কাবা শরিফের সম্মানিত ইমাম বলেন-

‘আপনার সন্তান যখন খারাপ আচরণ করবে; তখন তাকে গাল-মন্দ বা অভিশাপ করবেন না। এতে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে।’

তিনি তাঁর জানা মতে পিতা-মাতার অভিশাপে বিপর্যয়ের এক ঘটনা উল্লেখ করে বলেন যে-

‘আমি এমন একজন সম্পর্কে জানি; যিনি তার ছেলের ওপর রাগ করে বলেছিলেন, ‘যাও, মর’। ওই ব্যক্তি তার এ কথার জন্য অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছিলেন; যখন সেদিনই তার সন্তান মারা যায়।’

তাইতো তিনি দুনিয়ার সব পিতা-মাতার উদ্দেশ্যে নসিহত পেশ করে বলেছেন- ‘হে প্রিয় সন্তানের মা-বাবাগণ! আপনারা আপনাদের জবানকে হেফাজত করুন। আপনার প্রিয় ছেলে-মেয়ের জন্য উত্তম দোয়া করাকে নিজেদের অভ্যাসে পরিণত করুন। এমনকি আপনি যখন সন্তানের আচরণে অত্যন্ত ব্যথিত হন এবং রেগে যান, তখনও সন্তানের জন্য ভালো দোয়া করুন।’

والله اعلم بالصواب

মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন