আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

অমুসলিম দেশে স্থায়ী ভাবে বসবাস কারার বিধান

প্রশ্নঃ ১০৭৭৬. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, অমুসলিম দেশে অভিবাসনের যেমন কানাডা আমেরিকা এখানে স্থায়ী ভাবে বসবাসের মাসআলা বা শরিয়তের বিধান কি ? বিষয় টা জরুরি ভাবে জানার দরকার,

১৩ জুন, ২০২৪

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


অমুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে স্থায়ীভাবে বসবাস করা ,

: কোন অমুসলিম রাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করা, সে দেশের ন্যাশনালিটি বা নাগরিকত্ব গ্রহণ করা এবং সে দেশের নাগরিকদের সমান আবাসন সুযোগ এবং সমান নাগরিক সুবিধা গ্রহণ করে স্বতন্ত্রভাবে নিজের আবাসস্থল গড়ে তোলা, এমন একটি বিষয় যার হুকুম স্থান-কাল-পাত্রভেদে এবং বসবাসকারীদের উদ্দেশ্য এবং চিন্তাধারার ভিন্নতার কারণে বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন

১.
যদি কোন মুসলমানের ওপর স্বদেশে কোন অন্যায় অভিযোগ ও অপরাধ ছাড়াই অত্যাচার নির্যাতন চালানো হয়, বেআইনিভাবে কারাগারে অন্তরীণ করে রাখা হয় অথবা তার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নেয়া হয়; এমতাবস্থায় কোন অমুসলিম রাষ্ট্রে আশ্রয় গ্রহণ করা ছাড়া এসব জুলুম অত্যাচার থেকে রেহাই পাওয়ার যদি কোন পথ খোলা না থাকে, তাহলে এই অবস্থায় ওই ব্যক্তির জন্য অমুসলিম রাষ্ট্রে বসবাস করা এবং সেই দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে তথায় অবস্থান করা নিঃসন্দেহে জায়েয হবে। তবে শর্ত হল এই যে, তাকে এ ব্যাপারে প্রথমে নিশ্চিত হতে হবে যে, সে সেখানে গিয়ে তার জীবন চলার পথে ধর্মীয় অনুশাসন পুরোপুরি মেনে চলবে। সেখানকার প্রচলিত যাবতীয় মন্দকাজ ও কুসংস্কার থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবে।
,
এর দলিল হল, সাহাবাগণ মক্কায় কুরাইশদের কাছে নিগৃহীত ও নির্যাতিত হয়ে হাবশায় হিজরত করেছিলেন। তখন হাবশায় কাফেরদের রাজত্ব চলছিল। তখন সাহাবায়ে কেরাম সেখানে অবস্থান করেছেন। এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় হিজরত করে যাওয়ার পরও কোন কোন সাহাবী সেখানে অবস্থান করেছিলেন। হযরত আবু মুসা আশআরী (রাযি.) খায়বার যুদ্ধের সময় ফিরে এসেছিলেন। তখন ছিল হিজরী সপ্তম বছর। আর মানুষের আত্মিক অধিকার হল যে, সে তার নফস বা আত্মাকে যে কোন ধরনের অন্যায় ও জুলুম থেকে নিরাপদে রাখবে। সুতরাং যদি সে কোন কাফের রাষ্ট্র ছাড়া নিজের জন্য কোন নিরাপদ স্থান না পায় তাহলে তার জন্য সেখানে হিজরত করাতে কোন বাধা-প্রতিবন্ধকতা নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার ধর্মীয় দায়িত্বসমূহ যথাযথভাবে পালন করতে সচেষ্ট হবে এবং হারাম ও নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবে।

২/
. এমনিভাবে যদি কোন ব্যক্তি অর্থনৈতিকভাবে চরম সঙ্কটে নিপতিত হয়; এবং বহু চেষ্টা-প্রচেষ্টার পরও যদি নিজের মুসলিম রাষ্ট্রে জীবিকানির্বাহের কোন সুযোগ সৃষ্টি না হয়, এমনকি এখানে সে এক মুঠো খাবারেরও মুখাপেক্ষী হতে হয়। এমতাবস্থায় যদি কোন অমুসলিম রাষ্ট্রে তার বৈধ কোন চাকরির ব্যবস্থা হয়ে যায়, আর এই সুযোগে যদি সে সেই অমুসলিম দেশে বসবাস শুরু করে দেয়, তাহলে [এক নম্বর উত্তরে বর্ণিত দুইটি শর্তের সাথে] তার জন্য সেখানে বসবাস করা জায়েয হবে। কেননা অন্যান্য ফরয সমূহের মধ্যে হালাল উপার্জন ও একটি অন্যতম ফরয। যার জন্য শরীয়ত কোন স্থান বা কোন জায়গাকে সীমাবদ্ধ করে। দেয়নি; বরং এর জন্য রয়েছে ব্যাপকতর সাধারণ অনুমতি। পবিত্র কুরআনের আয়াতে হালাল জীবিকা উপার্জনের জন্য যে কোন স্থানে গমণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে :

هو الذي جـعـل لـكـم الارض ذلـولا فـامـشـوا فـي مـنـاكـبـهـا وكـلـوا مـن رزقـه واليه النشور

‘তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে সুগম করেছেন। অতএব তোমরা তার কাঁধে বিচরণ কর এবং তাঁর দেয়া রিযিক আহার কর এবং তাঁরই কাছে পুনরুজ্জীবন হবে।' (সূরা মূলক : আয়াত ১৫)

৩/
. এমনিভাবে যদি কোন ব্যক্তি কোন মুসলিম রাষ্ট্রে এই নিয়তে বসবাস করে যে, সে দেশে অবস্থানরত অমুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছাবে, তাদেরকে মুসলমান বানাবে অথবা সেখানে অবস্থানরত মুসলমানদের দ্বীন ও শরীয়তের সহীহ তালিম দেবে। দ্বীনের ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য এবং শরীয়তের আহকাম ও বিধিবিধান অনুযায়ী আমল করার জন্য তাদেরকে উৎসাহিত করবে। এ জাতীয় নিয়তে অমুসলিম রাষ্ট্রে বসবাস করা শুধু জায়েযই নয় বরং এটি একটি বিরাট সওয়াব ও পুণ্যময় কাজ। অসংখ্য সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন এই মহৎ উদ্দেশ্য ও সৎ নিয়ত নিয়ে বিভিন্ন অমুসলিম দেশে বসবাস করেছেন। পরবর্তীকালে এগুলো তাদের জীবনে উত্তম ও সৎকর্ম এবং তাদের বর্ণাঢ্য জীবনের সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

৪/
. যদি স্বদেশে কোন ব্যক্তির এই পরিমাণ জীবিকার বন্দোবস্ত থাকে, যার মাধ্যমে সেই শহরের অবস্থানরত অন্যান্য মানুষের জীবন চলার মান অনুযায়ী সেও চলতে সক্ষম হয়। কিন্তু তারপরও শুধু জীবন চলার মান আরো উন্নত করার উদ্দেশ্যে, সম্পদ বৃদ্ধি এবং আরাম-আয়েশ ও ভোগ-বিলাসের জীবন যাপনের লক্ষ্যে অমুসলিম রাষ্ট্রে হিজরত করে থাকে, তাহলে এ জাতীয় হিজরত মাকরুহর আওতাভুক্ত হবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। কেননা কোনরূপ ধর্মীয় বা পার্থিব প্রয়োজন ছাড়া সেই রাষ্ট্রে বসবাস তাদের প্রচলিত অপসংস্কৃতির স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে দেয়ারই নামান্তর হবে। বিনা প্রয়োজনে নিজের দ্বীন-ধর্ম এবং আখলাক-চরিত্রকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়া কোনক্রমেই ঠিক হবে না। কেননা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে একথা প্রমাণিত হয়েছে যে, যে ব্যক্তি কেবল আরাম-আয়েশ, ভোগ-বিলাস এবং সুখ-স্বর্গের জীবন যাপনের লক্ষ্যে অমুসলিম রাষ্ট্রে বসবাস করে থাকে, তার মাঝে ধর্মীয় অনুভূতি দুর্বল হয়ে যায় এবং খুব দ্রুতই এ ধরনের মানুষ বিধর্মীদের আচার-আচরণের জোয়ারে নিজেদের ভাসিয়ে দেয়।

এ কারণেই হাদীস শরীফে তীব্র প্রয়োজন ছাড়া মুশরিকদের সঙ্গে বসবাস করার নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এ সম্পর্কে আবু দাউদ শরীফে হযরত সামুরা ইবনে জুন্দুব (রাযি.) থেকে একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন :

من جامع المشرك وسـكـن مـعـه فـإنـه مثله

'যে ব্যক্তি মুশরিকদের সঙ্গে মেলামেশা করে এবং তাদের সঙ্গে বসবাস করে, সে তাদেরই মত।' (আবু দাউদ)

হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ (রাযি.) থেকে বর্ণিত আছে যে, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম ইরশাদ করেছেন :
أ
نـا بـربـي مـن كـل مـسـلـم يـقـيـم بـيـن أظـهـر الـمـشـركـيـن، قـالـوا يـا رسـول الله لم؟ قال لا ترى أي نـاراهما .

‘আমি ওইসব মুসলমানদের থেকে দায়মুক্ত যারা মুশরিকদের সঙ্গে বসবাস করে। সাহাবায়ে কেরাম প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এর কারণ কী? জবাবে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- ইসলামের অগ্নি আর কুফুরের অগ্নি একই সঙ্গে থাকতে পারে না। তোমরা এটি পৃথক করতে পারবে না যে, এটি কি মুসলমানদের অগ্নি না মুশরিকদের অগ্নি।' (আবু দাউদ, তিরমিযী)

আল্লামা খাত্তাবী (রহ.) এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে। বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের অনেকে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই ইরশাদের ব্যাখ্যা করেছেন বিভিন্নভাবে। যেমন কোন কোন বিজ্ঞ আলেমের কাছে এর অর্থ হল এই যে, হুকুমের ক্ষেত্রে মুসলমান আর মুশরিক সমকক্ষ হতে পারে না। উভয়ের আহকাম ভিন্ন ভিন্ন। আবার কোন কোন আলেম বলেছেন, এই হাদীসটির সারমর্ম হল এই যে, আল্লাহ তাআলা দারুল ইসলাম এবং দারুল কুফরকে ভিন্ন ভিন্ন করে দিয়েছেন। সুতরাং কোন মুসলমানের জন্য কাফেরদের রাষ্ট্রে তাদের সঙ্গে একত্রে বসবাস করা জায়েয নেই। কেননা যখন মুশরিকরা তাদের (বিজয়ের) মশাল সমুজ্জল করবে, আর তাদের সঙ্গে মুসলমানরা নীরবতা অবলম্বন করে থাকবে, তখন বাহ্যিক দৃষ্টিতে এটিই মনে হবে যে, তারা (মুসলমানরা) এদেরই অন্তর্ভুক্ত। ওলামায়ে কেরামের এই ব্যাখ্যা দ্বারা একথাও পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে যে, যদি কোন মুসলমান ব্যবসা

বাণিজ্যের উদ্দেশ্যেও কাফেরদের রাষ্ট্রে গমণ করে, তাহলে তার জন্য সেখানে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় অবস্থান করা মাকরূহ।' (মাআলিমুস সুনান লিল-খাত্তাবী : [আবু সুলায়মান আল খাত্তাবী, মৃত্যু : ৩৮৮ হি.] খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৪৩৭)

হযরত মাকহুল (রাযি.) থেকে সুনানে আবু দাউদের মারাসিলে বর্ণিত হয়েছে যে, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম ইরশাদ করেছেন :

لا تتركوا الذرية ازاء الـعـدو.

‘নিজের সন্তানদের মুশরিকদের মধ্যে বিচরণ করতে দেবে না।

এ কারণেই ফুকাহায়ে কেরাম অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, কেবলমাত্র চাকরি করার উদ্দেশ্যে কোন মুসলমানের অমুসলিম রাষ্ট্রে বসবাস করা এবং তাদের জনসংখ্যা বর্ধিত করার কারণ হওয়া এমন একটি (ধিকৃত) কাজ, যার দ্বারা তার বিশ্বস্ততা ক্ষুণ্ন হয়ে যায় ।

৫/
. কোন ব্যক্তি যদি লোক সমাজে সম্মানিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় কিংবা অন্য মুসলমানের ওপর নিজের বড়ত্ব এবং শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে অমুসলিম রাষ্ট্রে বসবাস করে কিংবা দারুল কুফরের নাগরিত্ব এবং জাতীয়তাকে দারুল ইসলামের ওপর অগ্রাধিকার দিয়ে তাকে শ্রেষ্ঠ ও উন্নত মনে করে তাদের ন্যাশনালিটি গ্রহণ করে থাকে অথবা তার পার্থিব জীবনের থাকা-খাওয়া ও চাল-চলনে তাদের নীতি গ্রহণ করে বাহ্যিক জীবনে তাদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করার জন্য এবং তাদের মত হয়ে যাওয়ার জন্য বসবাস করে থাকে তাহলে এ জাতীয় যে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে অমুসলিম রাষ্ট্রে বসবাস করা সম্পূর্ণরূপে হারাম হিসেবে গণ্য হবে। এই বিষয়টি এমন সুস্পষ্ট যে, এর জন্য কোন দলিল পেশ করা প্রয়োজন নেই।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৬৯৪২৮

সন্দেহযুক্ত/ হারাম টাকায় নির্মিত মসজিদে নামাযের বিধান কি?


২৪ নভেম্বর, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৮৭২৭৪

আনসার বাহিনীতে চাকুরিরত ব্যক্তির জন্য বিশেষ লোন নেওয়া কি জায়েয?


২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়া

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

৫৬৫৩৯

দাঁতের ফাঁক বন্ধ করা যাবে কি?


৫ মে, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৫৪৬৩০

সরকারী চাকুরী কি জায়েয?


২ মে, ২০২৪

হাটহাজারী

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy