আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১০৭৬৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি নিজের চোখ কে হেফাজত করব কিভাবে ?,

২২ নভেম্বর, ২০২১

ওয়েস্ট বেঙ্গল ৭৪৩৩৫১

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم





দোয়া করি আল্লাহ আপনাকে এই ব্যাধি থেকে অতি দ্রুত আরোগ্য দান করুন। আপনার হৃদয়কে সকল পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র করুন। নিশ্চয় আল্লাহই তাওফিকদাতা।

আর আপনাকে এ থেকে পরিত্রাণের দশটি পরীক্ষিত ওষুধ কুরআন-হাদীসের আলোকে পেশ করছি। যাতে পবিত্র ও শালীন জীবনযাপন আপনার জন্য সহজ হয়ে যায়।

এক. কুদৃষ্টির সর্বোত্তম চিকিৎসা হল, নিজের দৃষ্টি অবনত রাখা। সুতরাং পথে-ঘাটে চলতে গিয়ে দৃষ্টিকে অবনত রাখার অভ্যাস গড়ে তুলুন। দৃষ্টি ভুল করে ফেললে ইসতেগফার করুন এবং দৃষ্টি নামিয়ে নিন। এ অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা অব্যাহত রাখুন, এমনকি এটাকে জীবনের অংশ বানিয়ে নিন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,قُلْ لِلْمُؤْمِنِيْنَ يَغُضُّوْا مِنْ اَبْصَارِهِمْ ‘মুমিনদেরকে বলে দিন, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি অবনত রাখে।’ (সূরা নূর ৩০)

দুই. রাস্তাঘাটে চলাফেরার সময় যিকিরের প্রতি গুরুত্ব দিন। সম্ভব হলে তাসবীহ রাখবেন। অন্যথায় মনে-মনে যিকির করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, اِنَّ الذِّيْنَ اتَّقَوْا اِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِّنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوْا فَاِذَا هُمْ مُّبْصِرُوْنَ ‘নিশ্চয় যারা আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে যখন তাদেরকে শয়তানের কোনো দল ঘিরে ধরে তখন তারা আল্লাহর যিকির করে। সুতরাং তাদের অনুভূতি ফিরে আসে।’ (সূরা অা’রাফ ২০১)

তিন. যখনই পরনারীর প্রতি তাকানোর ইচ্ছা করবে তখনই এ কল্পনা করুন যে, আল্লাহ আমাকে দেখতে পাচ্ছেন। এতে দৃষ্টির হেফাজত করা সহজ হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, اَلَمْ يَعْلَمْ بِّاَنَّ اللهُ يَرى ‘সে কি জানে না যে আল্লাহ দেখতে পাচ্ছেন।’ (সূরা আলাক : ১৪)

চার. আল্লাহ তাআলা বলেন-

اَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِيْنَ آمَنُوْا اَنْ تَخْشَعَ قُلُوْبُهُمْ لِذِكْرِ اللهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ

‘যারা ঈমান আনে তাদের হৃদয় কি আল্লাহর স্মরণে ও যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিগলিত হওয়ার সময় কি আসে নি?’ (সূরা হাদীদ ১৬)

সুতরাং আপনার মন যখনই কুদৃষ্টির গুনাহতে লিপ্ত হওয়ার জন্য ইতিউতি করবে, তখনই নিজেকে সম্বোধন করে বলুন, ‘ঈমানদারের কি এখনও আল্লাহকে ভয় করার সময় হয় নি?’ এতে আল্লাহ তাআলা নিজের ভয় আপনার অন্তরে তৈরি করে দিবেন এবং কুদৃষ্টি থেকে সত্যিকারের তাওবা আপনার নসিব হবে।

পাঁচ. নফস যদি পরনারীকে দেখার জন্য লালসা করে তাহলে সঙ্গে-সঙ্গে নিজের মা-মেয়ের কল্পনা করুন। এ সম্পর্ক দু’টি এতই পবিত্র যে, প্রবৃত্তির তাড়না এমনভাবে মিটে যায় যেমনভাবে আগুনে পানি দিলে আগুন নিভে যায়। তবে এই আমল শালীনতাবোধসম্পন্ন শরীয়ত দ্বারা সমৃদ্ধ লোকদের জন্য অধিক উপকারী।

অথবা এভাবে ভাবুন- ‘যেমনিভাবে আমার নিকটতম কোনো নারীর প্রতি পরপুরুষের লোভাতুর শয়তানিদৃষ্টি আমার কাছে বিরক্তিকর ও আপত্তিজনক মনে হয়, তেমনিভাবে অন্যরাও এটা মোটেও পছন্দ করে না যে, আমি তাদের নিকটতম কোনো নারীর প্রতি লোলুপ দৃষ্টিতে তাকাই।’ এরূপ ভাবনার দ্বারা অন্তর স্থির ও শান্ত হয়ে যাবে। দৃষ্টির হেফাজত সহজ হয়ে যাবে।

ছয়. আশরাফ আলী থানভী রহ. বলতেন, ‘কোনো সুন্দরীর নারীর প্রতি আকর্ষণ হলে সঙ্গে সঙ্গে কোনো কুশ্রীব্যক্তির কল্পনা করুন। এমন ব্যক্তির কল্পনা করুন যার রঙ কালো, চেহারায় দাগ, চোখ অন্ধ, চুল এলোমেলো, দাঁতালো চোয়াল, ঠোঁট মোটা, নাক থেকে পানি বেয়ে ঠোঁট অবধি পৌঁছেছে- যেখানে মাছি বসে আছে। এভাবে কল্পনা করলে রুচিতে একপ্রকার ঘেন্না সৃষ্টি করে, যা আপনার অন্তর থেকে সুন্দরীর প্রতি আকর্ষণকে নষ্ট করে দিবে। কখনও কখনও ভাবুন, কল্পিত সুন্দরীটি মারা গেলে তাকে কবরে রাখা হবে। তার দেহ গলে মাটির সাথে মিশে যাবে। পোকামাকড় দেহটাকে খেয়ে ফেলবে। দুর্গন্ধ বের হবে। সুতরাং একে দেখে নিজের মালিককে অসন্তুষ্ট করব কেন?’

সাত. কুদৃষ্টি থেকে বাঁচার একটি পদ্ধতি হল, নিজেই নিজের জন্য সাজা নির্ধারণ করা যে, কুদৃষ্টি হয়ে গেলে আমি নিজেকে এই শাস্তি দিব। যেহেতু কুদৃষ্টির মজার চাইতে সাজার কষ্টটা বেশি হবে তাই ধীরে ধীরে কুদৃষ্টির অভ্যাস থেকে ফিরে আসা সহজ হয়ে যাবে। যেমন, জনৈক বুযুর্গ বলতেন, মনে কুদৃষ্টির তাড়না তৈরি হলে নির্জনে কাপড় পেঁচিয়ে তৈরি করা চাবুক দিয়ে নিজের পেটে কয়েকটি আঘাত করুন। তারপর ভাবুন, যখন কেয়ামতের দিন ফেরেশতারা চাবুক মারবে তখন কী অবস্থা হবে? এ পদ্ধতিতে কয়েকদিনের মধ্যেই কুদৃষ্টির অভ্যাস খতম হয়ে যাবে।

আট. এটাই সবচেয়ে বড় সতর্কতা যে, যেসব পরিবেশে কুদৃষ্টি হয় সেগুলো থেকে দূরে থাকুন। যেমন, বিয়ে-শাদির অবাধ অনুষ্ঠানগুলোতে মোটেও যাবেন না। ফাসেক ও অসৎপ্রবণ ব্যক্তিদের সঙ্গ ত্যাগ করুন। যারা যৌনউত্তেজক কথাবার্তা বলতে অভ্যস্ত, গুনাহকে যারা তুচ্ছভাবে পেশ করে, ওদেরকে ছেড়ে আপনি সৎলোকদের সঙ্গ নিন, যারা আপনাকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। তাঁর আনুগত্যের ব্যাপারে আপনাকে সহায়তা দেবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, الرَّجُلُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ “মানুষ তার বন্ধুর দীনের উপর থাকে, অতঃপর কার সাথে বন্ধুত্ব করছ তা বিবেচনা করে নাও”। (তিরমিযি ২৩৭৮)

নয়. যদি বিবাহিত হন তাহলে নিজের স্ত্রীর সাথে মধুর সম্পর্ক বজায় রাখুন। তার সব বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখুন। একটু ভেবে দেখুন, ঘরে যখন সুন্দরী স্ত্রী ঝগড়াটে হয় তখন বাইরের কুশ্রী নারীও ‘জান্নাতের হূর’ মনে হয়। এজন্য স্বামী-স্ত্রী উভয়ের চেষ্টা থাকা উচিত, সংসারে যেন প্রেম-ভালোবাসার পরিবেশ থাকে। সাধারণত কুদৃষ্টির শিকার হন তারাই যাদের স্ত্রী নেই কিংবা স্ত্রী থাকলেও জৈবিকচাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে স্ত্রী পরিপূর্ণ তৃপ্তি দিতে পারে না। পবিত্র কুরআনে স্ত্রীর ‘উদ্দেশ্য’ বলা হয়েছে-لِتَسْكُنُوْآ اِلَيْهَا ‘যাতে তাদের কাছে স্বস্তি লাভ কর।’

স্বামী-স্ত্রীর মাঝে এরূপ অকৃত্রিম ভালোবাসা থাকলে স্বামীর দৃষ্টি পরনারীর প্রতি যাবে না।

দশ. কুদৃষ্টিতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে আল্লাহর সান্নিধ্যের অনুভূতি অন্তরে তৈরি করার উদ্দেশে প্রত্যেক নামাযের পর কিছু সময়ের জন্য নিম্নোক্ত আয়াতের বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা করবেন।

هُوَ مَعَكُمْ اَيْنَمَا كُنْتُمْ

‘তোমরা যেখানেই তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন।’ (সূরা হাদীদ ০৪)

এরপর নিজের নফসকে বুঝাবেন যে, দেখো, ‘তুমি আল্লাহর দৃষ্টি থেকে কোনোভাবেই ভাগতে পারবে না। তুমি যখন পরনারীর প্রতি তাকাও তখনও তোমার প্রভু তো তোমাকে দেখেন। এটা তো তার মহান ধৈর্যের পরিচয় যে, তিনি তোমাকে পাকড়াও করেন না। কিন্তু তুমি যদি এভাবে চলতে থাক তবে তিনি কতকাল ধৈর্য ধরবেন!’ এভাবে মুরাকাবা করলে আল্লাহ তাআলার রহমত আপনার সঙ্গী হবে এবং কুদৃষ্টি থেকে তাওবা করার খোশনসিব হবে। ইনশাআল্লাহ।

প্রিয় দ্বীনী ভাই, এছাড়াও এ বিষয়ে আরো ব্যাপকভাবে জানার জন্য ‘কুদৃষ্টি’ নামক পুস্তিকাটি পড়তে পারেন, আশা করি, এ থেকেও উপকৃত হবেন।
আল্লাহ আমাদের সকলকে পবিত্র জীবন দান করুন। আমীন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

১৯০৭১

জাহেরী ইবাদতেও শয়তানের ধোঁকা থেকে সাবধান থাকতে হবে


১৫ জানুয়ারী, ২০২৪

ঢাকা ১২১৬

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৩৬৩৪৮

মনে কুফরি চিন্তা আসলে করণীয়


২২ আগস্ট, ২০২৪

আক্কেলপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy