আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

ইয়াবা ব্যবসায়ীর দান এবং তার দাওয়াত গ্রহন প্রসঙ্গ

প্রশ্নঃ ১০৭০৬. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, সম্মানিত হুজুরের কাছে আমার প্রশ্ন হল:১. একজন মানুষ ইয়াবা ব‍‍্যাবসা করে, সে ঐ টাকা কি মসজিদে দান করতে পারবে? ২. দান করলে কি উক্ত দানের সাওয়াব পাবে?৩. তার বাড়িতে দাওয়াত খাওয়া কি হালাল হবে? তাড়াতাড়ি জানালে উপকৃত হব।,

৩০ অক্টোবর, ২০২৩

টেকনাফ

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


এ ব্যাপারে প্রথমেই এ কথা জানা থাকতে হবে যে মসজিদ আল্লাহর ঘর। আর আল্লাহ তাআলা পবিত্র, সুতরাং তাঁর ঘরও পবিত্র। মক্কার কুরাইশরা যখন আল্লাহর ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করল এক পর্যায়ে তাদের হালাল অর্থ শেষ হয়ে যায়, তখন তারা হাতিমকে বাহিরে রেখে কাজ সম্পন্ন করল।

কাফের হয়েও তারা অবৈধ অর্থ আল্লাহর ঘরে ব্যয় করেননি। এখন জেনে নেই এ ব্যাপারে শরিয়ত কি বলে? অবৈধ টাকা মসজিদে লাগানো হারাম। এতে মসজিদকে অপবিত্র করা হয়। অতএব দানকৃত বস্তু হারাম একথা নিশ্চিত জানা থাকলে সেই মাল মসজিদে ব্যয় করা যাবে না।

আর যদি দানকৃত বস্তু সম্পর্কে জানা না যায় তাহলে দেখতে হবে দাতার অধিকাংশ আয় হালাল কি না। যদি অধিকাংশ অর্থ হালাল হয় তাহলে তার প্রদত্ত বস্তু নেওয়া যাবে এবং মসজিদেও ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু দাতার অধিকাংশ আয় যদি হারাম হয় তাহলে ওই ব্যক্তির দান গ্রহণ করা বৈধ হবে না এবং ওই বস্তু মসজিদে লাগানোও জায়েজ হবে না। (ইমদাদুল ফাতওয়া)

কেবল সৎকাজই মন্দকাজকে নির্মূল করে। খারাপ আমল কখনো অন্য বদ আমলকে নির্মূল করতে পারে না। এটি ইসলামের সুস্পষ্ট ঘোষণা। অর্থাৎ আমরা দান-সদকা, জাকাত-ফিতরা আদায় করি যাতে আমাদের পাপমোচন হয় এবং সম্পদ পবিত্র হয়। কিন্তু এ কাজ পাপের পথে অর্জিত সম্পদ দ্বারা সম্ভব নয়। কারণ অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করাই একটি পাপ; সুতরাং সেই পাপের মাধ্যমে অন্য পাপ মাফ হতে পারে না। তেমনই অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ অপবিত্র, সুতরাং তা দ্বারা নিজের সম্পদ পবিত্র করাও অসম্ভব।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘এমন হবে না যে, কোনো বান্দা হারাম পন্থায় সম্পদ উপার্জন করবে; অতঃপর তা থেকে (বৈধ ও নেক কাজে) খরচ করবে, আর তাতে বরকত দান করা হবে। সে তা থেকে সদকা করবে, আর তা কবুল করা হবে। বরং ওই ব্যক্তি সেই সম্পদ (মিরাছ হিসেবে) তার মৃত্যুর পর রেখে গেলেও তা তাকে আরও বেশি করে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা পাপ দ্বারা অপর পাপকে নির্মূল করেন না। তবে নেক আমল দ্বারা পাপকে নির্মূল করেন। নিশ্চয়ই অপবিত্র বস্তু অপর অপবিত্র বস্তুর অপবিত্রতা দূর করতে পারে না।

হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহতায়ালা পবিত্রতা ছাড়া নামাজ কবুল করেন না। এবং আত্মসাৎকৃত সম্পদের সদকা কবুল করেন না।’

বিপরীতে হালাল ও বৈধ সম্পদ সদকা করার ব্যাপারে মহানবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা কেবল (হারামের মিশ্রণ থেকে) পবিত্র বস্তুই কবুল করেন। যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে এক মুষ্টি খেজুরও দান করে, আল্লাহ তা নিজ হাতে গ্রহণ করেন। অতঃপর তা ওই ব্যক্তির জন্য প্রতিপালন করতে থাকেন। যেমন তোমাদের কেউ উটের বাচ্চা প্রতিপালন করে। বৃদ্ধি পেতে পেতে এক সময় ওই সামান্য খেজুরমুষ্টি পাহাড়সম হয়ে যায়।’

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন তুমি তোমার সম্পদের জাকাত আদায় করলে; তখন তুমি এ সম্পদের ব্যাপারে তোমার অবশ্যকরণীয় বিধান পালন করলে। যে ব্যক্তি হারাম সম্পদ উপার্জন করবে, অতপর তা সদকা করবেÑ সেই সদকায় তার কোনো সওয়াব হবে না; বরং অবৈধ উপার্জনের পাপের বোঝা তার ঘাড়ে চেপেই থাকবে।’

তাবেই কাসেম বিন মুখায়মিরাহ (রহ.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো পাপের পথে সম্পদ উপার্জন করল; অতঃপর তা আত্মীয়তা রক্ষায় খরচ করল বা সদকা করল অথবা তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করল; তাহলে (কেয়ামতের মাঠে) এসব কিছুই একত্রিত করা হবে; অতঃপর তা জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।’

বিখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-কে একবার জিজ্ঞাসা করা হলো, যে ব্যক্তি এখন নেক আমল করছে; তবে আগে জুলুম-অত্যাচার করত এবং হারাম গ্রহণ করত। এখন সে নেক দিলে তওবা করে আগের সেই সম্পদ দিয়ে হজ করল, গোলাম আজাদ করল এবং আল্লাহর রাস্তায় দান-সদকা করল (তার ব্যাপারে কী বলেন?)। জবাবে তিনি বললেন, ‘নিশ্চয়ই অপবিত্রতা আরেকটি অপবিত্রতা দূর করতে পারে না।’ (মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস : ৯৩২)

সুতরাং যারা হারাম পথে সম্পদ উপার্জন করে; আর মনে মনে ভাবে, এখান থেকে কিছু সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় দান করে দেব; ব্যস, সাত খুন মাফ, তাদের উচিত, মহানবী (সা.)-এর এই বাণীগুলো ভালোভাবে স্মরণ রাখা।


হারাম সম্পদ দু প্রকার। যথা:

১) মূল সম্পদটাই হারাম।
যেমন, চুরি-ডাকাতি বা ছিনতাই করা করা জিনিস বা টাকা পায়সা, সুদ ও ঘুষের মাধ্যমে প্রাপ্ত টাকা ইত্যাদি। কেউ যদি সরাসরি সেই জিনিসটা উপহার দেয়া বা সেই টাকা দ্বারা উপহার কিনে দেয় তাহলে তা গ্রহণ করা জায়েয নাই।
অনুরূপভাবে চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই করা খাদ্যদ্রব্য খাওয়া জায়েয নয়।
অনুরূপভাবে মদ ও নেশাদার বস্তু, হারাম প্রাণীর গোস্ত ইত্যাদিগুলো মূলত:ই হারাম। তাই এগুলো উপভোগ করা, উপহার দেয়া ও নেয়া সবই হারাম।।

২) মূল সম্পদটা হালাল কিন্তু তা উপার্জনের পদ্ধতি হারাম
অথবা, যে সম্পদে হালাল ও হারামের মিশ্রণ রয়েছে।
যেমন, সুদী ব্যাংক, বীমা ইত্যাদিতে চাকুরী করে প্রাপ্ত বেতন, এমন ব্যবসা যাতে হালাল-হারামের মিশ্রণ রয়েছে ইত্যাদি।

এ প্রকার সম্পদ থেকে যদি উপহার দেয়া হয় বা এমন ব্যক্তি যদি দাওয়াত খাওয়ায় তাহলে সে উপহার গ্রহণ করা বা তার বাসায় দাওয়াত খাওয়া জায়েয।
কেননা, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে,

ﺃﻧﻪ ﺳﺌﻞ ﻋﻤﻦ ﻟﻪ ﺟﺎﺭ ﻳﺄﻛﻞ ﺍﻟﺮﺑﺎ ، ﻭﻳﺪﻋﻮﻩ ﺇﻟﻰ ﻃﻌﺎﻣﻪ ؟

ﻓﻘﺎﻝ : " ﺃﺟﻴﺒﻮﻩ ؛ ﻓﺈﻧﻤﺎ ﺍﻟﻤﻬﻨﺄ ﻟﻜﻢ ، ﻭﺍﻟﻮﺯﺭ ﻋﻠﻴﻪ " . ﺍﻧﺘﻬﻰ . ﺟﺎﻣﻊ ﺍﻟﻌﻠﻮﻡ ﻭﺍﻟﺤﻜﻢ ‏( 71

“তকে জিজ্ঞেস করা হল, সুদ খায় এমন প্রতিবেশী যদি দাওয়াত দিলে তাতে অংশ গ্রহণ করা যাবে কি না?

তিনি বলেন, দাওয়াতে অংশ গ্রহণ কর। এটা তোমাদের জন্য স্বাচ্ছন্দে গ্রহণীয় জিনিস। গুনাহ তার উপর বর্তাবে।”
(জামেউল উলুম ওয়াল হেকাম)

তবে উত্তম হল,
উপহার গ্রহণ না করা বা সে সম্পদ থেকে উপকার গ্রহণ না করা। বিশেষ করে তা যদি গ্রহণকারীর অন্তরে কুপ্রভাব সৃষ্টি করতে পারে এমন সম্ভাবনা থাকে। আল্লাহু আলাম।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯১০৫৯

মৃত্যুর পর কি শরীর এর কোনো অঙ্গ মানুষকে দান করা যাবে


২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

Sylhet ৩১০০

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৬৫৮২১

ডিমের বিনিময়ে ডিম কম বেশি করে বিক্রি করার হুকুম


২ জুলাই, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ আবু সাঈদ

৯০৪৯৪

হারাম টাকায় পোষাক বানিয়ে তা পরে ইবাদত করলে ইবাদত কবুল হবে?


২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

G৯FW+M৫W

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৫৭৩১৭

নেশামুক্ত অ্যালকোহল মিশ্রিত পারফিউম, বডি স্প্রে, আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করার মাস'আলা


১১ মে, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy