و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

"আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত" নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবাগণকে ভালোবাসেন, তাঁদের প্রশংসা করেন, তাঁদের জন্য দোয়া করেন (রাযি.) এবং তাঁদের জন্য মাগফিরাত কামনা করেন। তাঁরা নবী ও রাসূলদের পরে সমগ্র সৃষ্টির ওপর সাহাবাগণকে শ্রেষ্ঠ মনে করেন। কারণ, সাহাবাদের প্রতি ভালোবাসা হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালোবাসারই অংশ। সাহাবাগণ ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গী ও ঘনিষ্ঠজন, যারা তাঁর উপর ঈমান এনেছেন, তাঁকে সত্যায়ন করেছেন এবং তাঁর সাহায্যে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন।
ইমাম তাহাবী রহ. শরহে আকিদাতুত তাহাভীতে বলেন,
وَقَوْلُهُ: (وَنُحِبُّ أَصْحَابَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم، وَلَا نُفَرِّطُ فِي حُبِّ أَحَدٍ مِنْهُمْ، وَلَا نَتَبَرَّأُ مِنْ أَحَدٍ مِنْهُمْ. ‌وَنُبْغِضُ ‌مَنْ ‌يُبْغِضُهُمْ، ‌وَبِغَيْرِ ‌الْخَيْرِ ‌يَذْكُرُهُمْ. وَلَا نَذْكُرُهُمْ إِلَّا بِخَيْرٍ. وَحُبُّهُمْ دِينٌ وَإِيمَانٌ وَإِحْسَانٌ، وَبُغْضُهُمْ كُفْرٌ وَنِفَاقٌ وَطُغْيَانٌ) .
“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীদের ভালোবাসি। তাঁদের মধ্যে কারো ভালোবাসায় বাড়াবাড়ি করি না, আবার তাঁদের কারো থেকে নিজেদেরকে মুক্তও ঘোষণা করি না (পৃথক হইনা)। যারা সাহাবীদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে কিংবা তাঁদের মন্দভাবে স্মরণ করে, আমরা তাঁদেরকে ঘৃণা করি। সাহাবীদের আমরা কেবল কল্যাণের সাথেই স্মরণ করি। তাঁদের ভালোবাসা হলো দ্বীন, ঈমান ও ইহসান। পক্ষান্তরে তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা কুফর, নিফাক ও সীমালঙ্ঘন।”
শরহে আকীদাতুত তাহাভী: ২/৬৮৯ (শামেলা)

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই! আপনি যেটি উল্লেখ করেছেন তা একটি প্রসিদ্ধ কথা তথা ১০ জন সুসংবাদপ্রাপ্ত জান্নাতি সাহাবী। মূলত ওনারা ছাড়াও আরো অসংখ্য সাহাবীদেরকে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের জীবদ্দশায় জান্নাতি বলেছেন।

সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন সাহাবী:
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَبُو بَكْرٍ فِي الجَنَّةِ، وَعُمَرُ فِي الجَنَّةِ، وَعُثْمَانُ فِي الجَنَّةِ، وَعَلِيٌّ فِي الجَنَّةِ، وَطَلْحَةُ فِي الجَنَّةِ وَالزُّبَيْرُ فِي الجَنَّةِ، وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ فِي الجَنَّةِ، وَسَعْدٌ فِي الجَنَّةِ، وَسَعِيدٌ فِي الجَنَّةِ، وَأَبُو عُبَيْدَةَ بْنُ الجَرَّاحِ فِي الجَنَّةِ»
আব্দুর রহমান ইব্‌ন 'আওফ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: আবু বকর জান্নাতী, উমার জান্নাতী, উছমান জান্নাতী, আলী জান্নাতী, তালহা জান্নাতী, যুবায়র জান্নাতী, আব্দুর রহমান ইবন 'আওফ জান্নাতী, সা'দ (ইবন আবু ওয়াক্কাস) জান্নাতী, সাঈদ (ইবন যায়দ) জান্নাতী, আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ জান্নাতী। (জামে' তিরমিযী, হাদীস নং: ৩৭৪৭) https://muslimbangla.com/hadith/33395
https://muslimbangla.com/hadith/18924

বিভিন্ন সময় সুসংবাদ প্রাপ্ত সাহাবায়ে কেরামরা হলেন:
১- বিলাল ইবনে রাবাহ (রা) রাসূল (ﷺ) তাঁর পায়ের শব্দ জান্নাতে শুনেছেন।
https://muslimbangla.com/hadith/1082
২- হযরত ফাতিমা (রা) সম্পর্কে বলেন, ফাতিমা জান্নাতী নারীদের নেত্রী। https://muslimbangla.com/hadith/33521
৩- হযরত হাসান ও হুসাইন (রা) সম্পর্কে বলেন, হাসান ও হুসাইন জান্নাতী যুবকদের নেতা। https://muslimbangla.com/hadith/33416
৪- হযরত উম্মে হারাম (রা) যিনি নৌবাহিনীতে শাহাদাত পান। রাসূল ﷺ বলেছিলেন: তুমি প্রথম জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।https://muslimbangla.com/hadith/11830
৫- হযরত হারিছা ইবনে মালিক (রা) তাঁর মা জিজ্ঞেস করলে, নবী ﷺ বললেন: সে জান্নাতের বহু স্তরের মধ্যে ‘ফিরদাউস’-এ আছে। https://muslimbangla.com/hadith/1618018
৬- হযরত খাদিজা (রা) কে নবীজি জান্নাতী বলেছেন। https://muslimbangla.com/hadith/13104
৭- ইয়াসীর পরিবারকে নবীজি জান্নাতী বলেছেন। https://muslimbangla.com/hadith/1483926
৮- ইমরাআতে সাওদা (এক কালোকায় মহিলা)কে নবীজি ধৈর্য ধারণে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। https://muslimbangla.com/hadith/13386
৯- আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম। তিনাকেও নবীজি জান্নাতী বলেছেন।
https://muslimbangla.com/hadith/33452
১০- উক্কাশা ইবনে মিহসান (রা) যাকে নবীজি সত্তর হাজার জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। https://muslimbangla.com/hadith/5395
১১- আবু তালহার স্ত্রী (উম্মে সুলাইম আনাস ইবনে মালিকের মাতা) কে নবীজি জান্নাতী বলেছেন। https://muslimbangla.com/hadith/13148
১২- সাবিত ইবনে কায়স (রা)কে নবীজি জান্নাতী বলেছেন। https://muslimbangla.com/hadith/4486
১৩- হারিসা বিনতে সুরাকা (রা)কে নবীজি জান্নাতী বলেছেন।https://muslimbangla.com/hadith/32820
১৪- আমর ইবনে সাবিত (রা)কে নবীজি জান্নাতী বলেছেন। https://muslimbangla.com/hadith/32820
১৫- সকল উম্মাতুল মুমিনীন (নবীজির সম্মানিতা স্ত্রীরা) জান্নাতী। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদামতে। (তাফসীরে ইবনেকাসীর) https://muslimbangla.com/sura/33/tafsir/31

শেষকথা হল, সকল সাহাবায়ে কেরাম জান্নাতী। কেউ অগ্রীম সুসংবাদ শুনেছেন কেউ পরে শুনবেন।
আল্লাহ তাআলা সূরা তাওবায় (১০০ নং আয়াত) বলেন,
وَالسّٰبِقُوۡنَ الۡاَوَّلُوۡنَ مِنَ الۡمُہٰجِرِیۡنَ وَالۡاَنۡصَارِ وَالَّذِیۡنَ اتَّبَعُوۡہُمۡ بِاِحۡسَانٍ ۙ رَّضِیَ اللّٰہُ عَنۡہُمۡ وَرَضُوۡا عَنۡہُ وَاَعَدَّ لَہُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ تَحۡتَہَا الۡاَنۡہٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَاۤ اَبَدًا ؕ ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ
মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা ঈমানে প্রথমে অগ্রগামী হয়েছে এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ তাদের সকলের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আল্লাহ তাদের জন্য এমন উদ্যানরাজি তৈরি করে রেখেছেন, যার তলদেশে নহর বহমান। তাতে তারা সর্বদা থাকবে। এটাই মহা সাফল্য।

والله اعلم بالصواب