আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

অমুসলিম উস্তাদের সেবা করা যাবে কি?

প্রশ্নঃ ১০৩২১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি মুহাম্মদ উসমান আলী সিলেট থেকে বলছি। আমার একজন বিধর্মী উস্তাদ আছেন। খ্রিস্টান। আমি কি উনার খেদমত করতে পারব? আর আমার উপরে উনার কি কি হক আছে? আমি কি উনার থেকে দোয়া চাইতে পারি যেহেতু উনি আমার উস্তাদ! এ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?

৭ ডিসেম্বর, ২০২৩
সিলেট

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


উস্তাদ যদি অমুসলিমও হয় তবুও তিনি উস্তাদ হিসেবে যথাযথ মর্যাদা প্রাপ্তির অধিকার রাখে।

উস্তাদের হক বা শিক্ষকের প্রতি ছাত্রের দায়িত্ব।

উস্তাদের জন্য ছাত্রের করনীয় তথা উস্তাদের হক রয়েছে। নিচে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলঃ
১। উস্তাদের আদব রক্ষা করাঃ কথা বার্তা, শব্দ প্রয়োগ, আচার-আচারন, উঠা-বসা, চলা-ফেরা ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই আদব রক্ষা করতে হবে। যেমনঃ উস্তাদের আগে বেড়ে কথা না বলা, উস্তাদের সামনে প্রয়োজনের অতিরিক্ত জোরে কথা না বলা, তাঁদের দিকে পিছন দিয়ে না বসা, এক সঙ্গে চলার সময় তাঁদের সামনে না চল, তাঁদের সামনে বেশি না হাসা, বৃথা কথা না বলা ইত্যাদি।

২। উস্তাদের প্রতি ভক্তি রাখাঃ উস্তাদের সাথে ভক্তি সহকারে কথা বলা, ভক্তি সহকারে তাঁদের দিকে দৃষ্টি দেয়া এবং হাবভাব ভক্তি প্রকাশ করা কর্তব্য।

৩। উস্তাদকে আজমত ও শ্রদ্ধা করাঃ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করে শ্রদ্ধা ও আজমতের সাথে তাঁদের সামনে হাজির হওয়া কর্তব্য।

৪। উস্তাদের সাথে তাওয়াজু ও বিনয়ের সাথে থাকাঃ কথা-বার্তা ও আচার-আচরণ সবকিছুইতেই বিনয় থাকতে হবে। দুনিয়ার সব ক্ষত্রেই খোশমোদ তোষামোদ নিন্দনীয়; একমাত্র উস্তাদের বেলায় তা প্রশংসনীয়।

৫। উস্তাদের খেদমত করাঃ এই খেদমতের মধ্যে উস্তাদ অভাবী এবং ছাত্র স্বচ্ছল হলে উস্তাদের বৈষয়িক সহযোগিতা করা এবং তাঁদেরকে হাদিয়া-তোহফা প্রদান করাও অন্তর্ভক্ত।

৬। উস্তাদে হক অনেকটা পিতার মত। বস্তুত উস্তাদ হলেন রুহানী পিতা, তাই পিতার ন্যায় উস্তাদের হকও তাঁর মৃত্যুর পরও বহাল থাকে। এ জন্যই উস্তাদের মৃত্যুর পরও সর্বদা তাঁর জন্য দুয়া করা কর্তব্য।
( উল্লেখ্য অমুসলিমের জন্য মাগফেরাতের দোয়া করা জায়েজ নাই।)
উস্তাদের নিকটাত্নীয়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা, তাঁদের খেদমত করা, এমনিভাবে উস্তাদের বন্ধু-বান্ধব ও সমসাময়িক অন্যান্য শিক্ষকদের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং প্রয়োজনে তাঁদের খেদমত করা কর্তব্য।

৭। উস্তাদের খেদমতে লিপ্ত হলে আদব হল তাঁর অনুমতি ব্যতীত চলে না যাওয়া। (অনুমতি প্রকাশ্যে হোক বা লক্ষণ থেকে বুঝ হোক।)

৮। কোন কারনে উস্তাদ অসন্তুষ্ট হলে বা উস্তাদের মেজাযের পরিপন্থী কোনো কথা বলে ফেললে সাথে সাথে নিজের ত্রুটির জন্য ওজরখাহী করা এবং উস্তাদকে সন্তুষ্ট করা জরুরি।

৯। ছাত্রের কোনো অসংগত প্রশ্ন বা অসংগত আচরনের কারনে উস্তাদ রাগ করলে, বকুনি দিলে বা মারধর করলে ছাত্রের কর্তব্য সেটা সহ্য করা। এমনকি অন্যায়ভাবে কিছু বললেও তাঁর নিন্দা-শেকায়েত না করা এবং মন খারাপ না করা উচিত।

১০। ছাত্রের কর্তব্য মনোযোগের সাথে উস্তাদের বক্তব্য ও ভাষণ শ্রবন করা, অন্যমনষ্ক না হওয়া এবং উস্তাদের কথা ভাল করে ইয়াদ/মুখস্ত করা।

১১। উস্তাদ কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করতে নিষেধ করলে তা মান্য করা উচিত এবং কখনো তাঁকে অসুবিধায় ফেলতে চেষ্টা না করা উচিত। কোনো বিভ্রান্তিমূলক প্রশ্ন করাও নিষেধ। নিজের মেধার গৌরব প্রদর্শনের জন্য প্রশ্ন করা বা সস্পষ্ট কিংবা অর্থহীন প্রশ্ন করাও উচিত নয়।

১২। উস্তাদের কোনো বক্তব্য বোধগম্য না হলে সে জন্য উস্তাদের প্রতি কুধারনা পোষন করবে না বরং বুঝতে না পারাকে নিজের বোধশক্তির ত্রুটি মনে করবে।

১৩। উস্তাদের মতের বিপরীত অন্য কারও মত তাঁর সামনে বয়ান করবে না।

১৪। পাঠ দানের সময় সম্পূর্ণ নীরব থাকা উচিত। এদিক-সেদিক তাকানো, কথা-বার্তা বলা বা হাসি তামাশায় লিপ্ত হওয়া সম্পূর্ণ বর্জনীয়।

১৫। নিজের কোন ত্রুটি হলে উস্তাদের সামনে অকপটে তা স্বীকার করে নেয়া কর্তব্য। অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমানিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত না হওয়া উচিত।
অমুসলিমের কাছে দোয়া চাওয়া না জায়েজ। কাজেই তাঁর কাছে আপনি দোয়া চাইবেন না। কেননা দোয়া কবুলের মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। কিন্তু তিনি তো আল্লাহ একত্ববাদে বিশ্বাসী নন। কাজেই তার কাছে দোয়া চাওয়া যাবে না।

والله اعلم بالصواب

মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন