আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১০২২৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মরার উপলক্ষে মিলাদ, মাহাফিল দেওয়া ও খানা খাওয়া শরিয়ত সম্মত কি?

১৭ নভেম্বর, ২০২১
Maharashtra ৪১২১১৪

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم





১.
আখেরি নবী ও শ্রেষ্ঠ রাসূল হযরত মুহাম্মদ সা. এর প্রতি ভালবাসা ও গভীর মহব্বত রাখা ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রিয় নবীজী সা. এর জন্মলগ্ন থেকে তিরোধানের পূর্ব পর্যন্ত তার পবিত্র জীবনাদর্শ ও কর্ম-কাণ্ডের আলোচনা এবং পূর্ণ অনুসরণ ও অনুকরণ আল্লাহর রহমত প্রাপ্তির বড় মাধ্যম এবং গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতও বটে। তবে উক্ত ইবাদত অবশ্যই সে পদ্ধতিতে করতে হবে, যে পদ্ধতি স্বয়ং নবীজী সা., সাহাবায়ে কেরামকে শিক্ষা দিয়েছেন। তারপর সাহাবায়ে কেরাম রা. তাবেঈনদের শিক্ষা দিয়েছেন এবং তাবেঈনগণ পরবর্তীদের শিখিয়ে গেছেন। সে পদ্ধতি হচ্ছে, দিন-ক্ষণ ও সময় নির্ধারণ এবং আনুষ্ঠানিকতা ব্যতিরেকে রাসূল সা.-এর জীবনী আলোচনা এবং দুরূদ শরীফ পাঠ করা। মনগড়া বা ভিত্তিহীন কোনো তরীকায় করলে তা ইবাদত বলে গণ্য হবে না। এ জন্যই রাসূল সা. এর জীবনাদর্শ আহকামে দীন ও শরীয়ী বিধি-বিধান সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ।
সুতরাং রাসূল সা.-এর জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা করা সওয়াব ও বরকতের বিষয় এবং মহান দীনী কাজ হলেও দেশের শরীয়তের নিয়ম-নীতি সম্পর্কে কোনো কোনো শ্রেণীর লোকেরা ‘মীলাদ শরিফ’ নামে সম্মিলিত সুরে গদভাধা কিছু পাঠের অনুষ্ঠান এবং কিয়ামের যে রীতি চালু করেছে, তার কোনো ভিত্তি কুরআন-হাদীসে, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনের সোনালী যুগে পাওয়া যায় না। অথচ সর্বস্বীকৃত সত্য হলো, তারাই ছিলেন প্রকৃত নবীপ্রেমী খাঁটি আশেকে রাসূল এবং নবীজী সা. এর আদর্শের পরিপূর্ণ অনুসারি ও বাস্তব নমুনা।
প্রচলিত এই মিলাদ ও কিয়ামের উদ্ভব ঘটে ৬০৪ হিজরি সনে। ইরাকের মাসূল শহরের বাদশা আবু সাঈদ মুজাফ্ফর কাকরী এবং তার দরবারি আলেম আবু খাত্তাব উমর ইবনে দিহইয়া এদু’জন মিলে এর প্রচলন ঘটায়। এরা উভয়ে দীনের ব্যাপারে খুবই উদাসীন এবং ফাসিক প্রকৃতির লোক ছিল। পরবর্তীতে অজ্ঞতা, মূর্খতা ও জাহালতের অন্ধকারে নিমজ্জিত শ্রেণীর লোকদের মাধ্যমে আরো অনেক কুসংস্কার, শরীয়ত বিরোধী বিশ্বাস ও কার্যাবলী এতে সংযোজিত হতে থাকে। যার সবকিছুই কুরআন-হাদিস, ইজমা-কিয়াস তথা শরীয়তের মূল প্রমাণ পরিপন্থী। তা ছাড়া মিলাদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সা.কে হাজির-নাজির মনে করে কিয়াম করা তো রীতিমতো শিরক। হাজির-নাজির মনে না করলেও শরীয়তে এর ভিত্তি নেই।
এ সকল কারণে প্রচলিত মিলাদ, কিয়াম না জায়েজ ও বিদআতের অন্তর্ভুক্ত বলেই সকল হক্কানী ওলামায়ে কেরাম একবাক্যে ফতওয়া দিয়ে থাকেন। এজন্য প্রচলিত মীলাদের আয়োজন না করে ‘বিশেষ দোয়া’ করা যেতে পারে। এতে দোয়া কবুললের উদ্দেশ্য নিয়মানুযায়ী কিছুক্ষণ দরূদ শরিফ, তাসবীহ-তাহলীল, ওজীফা, সূরা ফাতেহা, সূরা ইখলাস ইত্যাদি যার যা জানা আছে প্রত্যেকে নিজস্বভাবে পড়বে। সম্মিলিত সুরে নয়। এরপর মুনাজাত করবে। এ পদ্ধতিতে আমল করার অবকাশ রয়েছে। এটি সর্বোতভাবে শরীয়তসম্মত। এ সম্পর্কে কোনো বিতর্ক বা কারো দ্বিমত নেই। আর ইয়া নাবী সালাম আলাইকা বলে দরূদ শরীফ রাসূলে পাক সা. কে হাজির-নাজির মানে করে পাঠ করলে তো শিরক হবে। তবে যদি এই বিশ্বাস নিয়ে পা ঠ করে যে, এটি নবী করীম সা. এর কাছে পৌঁছানো হয়-তাহলে শিরক হবে না।
[ফাতাওয়া শামী ১/৫২৪,এমদাদুল ফাতাওয়া ৬/৩২৭ আহসানুল ফাতাওয়া ১/৩৪৭]

২.
শরীয়তের বিধান হলো মিলাদের তাবারুকের পশু যদি পীরের নামে জবাই করা হয় তাহলে এই পশুর গোশত খাওয়া অকাট্যভাবে হারাম এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
আর যদি মিলাদ উপলক্ষে তবাররুকের পশু আল্লাহর নামেই জবাই করা হয়, বাকি সওয়াব কোন বান্দার জন্য নিয়ত করা হয়, তাহলে মৌলিকভাবে তা খেতে কোন সমস্যা নেই। তবে এর মাধ্যমে বিদআতকে সমর্থন দেয়া হয়, এ হিসেবে তা বর্জন করাই উচিত।

সুতরাং মিলাদের জিলাপি, খুরমা মৌলিকভাবে খেতে কোন সমস্যা নেই।
তবে কাজটি যদি বিদআত হয়ে থাকে, তাহলে এর মাধ্যমে বিদআতকে সমর্থন দেয়া হয়, এ হিসেবে তা বর্জন করাই উচিত।

والله اعلم بالصواب

ইসহাক মাহমুদ মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন