এক নজরে উমরা
প্রশ্নঃ ১০১৬৬৪. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, উমরার সংক্ষিপ্ত বিবরণ জানতে চাই,
১ মে, ২০২৫
ঢাকা
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
শরিয়তের পরিভাষায় উমরা বলা হয়
আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে শরীয়ত-প্রদত্ত নিয়ম অনুসারে মক্কা মুকাররমায় উপস্থিত হয়ে বিশেষ কিছু কাজ করাকে উমরা কাকে বলে।
উমরার ফযীলত
১. হযরত আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, এক উমরার পর আরেক উমরা করলে মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। সহীহ বুখারী, হাদীস ১৭৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩৪৯
২. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমরা একাধারে হজ্ব ও উমরা করতে থাকো। কেননা হজ্ব-উমরা পাপ ও দরিদ্রতাকে এমনভাবে মিটিয়ে দেয়, যেমন কামারের হাপর লোহার ময়লা দূর করে দেয়। সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং: ৮১০, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং: ২৮৮৭
৩. হযরত বারা ইবনে আযিব রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল ﷺ বলেন, রমাযানে একটি উমরা আদায় (সওয়াবের বিবেচনায়) হজ্বের সমতুল্য। সহীহ বুখারী, হাদীস নং: ১৭৮২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং: ১২৫৬-১
অপর এক বর্ণনায় আছে, রমাযানে উমরা আদায় আমার সাথে হজ্ব করার সমতুল্য। আবু দাউদ ১৯৯০, মুসতাদরাকে হাকেম ১৭৭৯
৪. হযরত জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, হজ্ব ও উমরা আদায়কারীগণ আল্লাহর প্রতিনিধি। তিনি তাদেরকে ডেকেছেন এবং তারা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছেন। তারা আল্লাহর কাছে চেয়েছেন আর তিনি তাদেরকে দান করেছেন। মুসনাদে বাযযার (কাশফুল আসতার) ১১৫৩
উমরার ফরয ২ টি
১. বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করা।
২. সাফা-মারওয়া সায়ী করা।
উমরার ওয়াজিব ২টি
১. ইহরাম বাঁধা।
২. মাথা মুণ্ডানো বা ছেঁটে ছোট করা।
উমরাতে চারটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয়
১. মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধা।
২. বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করা।
৩. সাফা-মারওয়া সায়ী করা।
৪. চুল মুণ্ডানো বা ছাঁটা।
তাওয়াফ করার পদ্ধতি
তাওয়াফ করার পদ্ধতিঃ- শরীয়তের ভাষায় বাইতুল্লার চতুর্দিকে সাত বার ঘুরাকে তাওয়াফ বলে। তাওয়াফের জন্য নিয়ত করা ফরয। নিয়ত ব্যতীত যতই ঘুরা হবে তাওয়াফ আদায় হবে না। তাওয়াফের নিয়ত এভাবে করবে যে, হে আল্লাহ আমি তোমার সন্তুষ্টির জন্য তাওয়াফের ইচ্ছা করছি তা আমার জন্য সহজ করে দাও এবং কবুল কর। অন্তরে এই নিয়ত করা ফরয এবং মুখে উচ্চারণ করাও উত্তম। এ নিয়তের সাথে সাথে বাইতুল্লাহ্ শরীফের সামনে যেখানে হাজরে আসওয়াদ রয়েছে সেখানে এভাবে দাঁড়াবে যে, হাজরে আসওয়াদ যেন ডান দিকে থাকে। এরপর তাওয়াফের নিয়ত করে এমনিভাবে একটু ডান দিকে যাবে যেন হাজরে আসওয়াদ সম্পূর্ণ সামনে থাকে। হাজরে আসওয়াদের সামনে দাঁড়িয়ে এভাবে হাত উঠাবে যেমনি নামাযে তাকবীর তাহরীমার সময় উঠাতে হয় এবং এভাবে তাকবীর বলবে-
بِسْمِ اللهِ اَللهُ أَكْبَرُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَلِلّٰهِ الْحَمْدُ ، وَالصَّلٰوةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ الله - اَللّٰهُمَّ إِيمَانًا بِكَ، وَتَصْدِيقًا بِكِتَابِكَ، وَوَفَاءً بِعَهْدِكَ، وَاتِّبَاعًا لِسُنَّةِ نَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
যদি সম্পূর্ণ স্মরণ না থাকে অথবা ভীড়ের কারণে অসুবিধা হয় তাহলে শুধু 'বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ্' পাঠ করলেই চলবে। এরপর হাত ছেড়ে হাজরে আসওয়াদকে এভাবে চুমা দেবে যে, উভয় হাত হাজরে আসওয়াদের উপর এভাবে রাখবে যেমনি সিজদার মধ্যে রাখা হয় এবং হাজরে আসওয়াদকে আদবের সাথে চুমা দেবে।
ভিড়ের কারণে চুমু দেয়া সম্ভব না হলে হাত দ্বারা হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করে হাতে চুমু দেবে। তাও সম্ভব না হলে কোন লাঠি থাকলে তা দ্বারা স্পর্শ করে তাতে চুমু দেবে। তাও সম্ভব না হলে দুই হাতের তালু দিয়ে হাজরে আসওয়াদের দিকে ইশারা করে দুই হাতেই চুমু খাবে। হাত দ্বারা ইশারা করার সময় হাত এতটুকু উঠাবে যে, হাতের তালু হাজরে আসওয়াদের দিকে থাকবে এবং হাতের পিঠ চেহারার দিকে থাকবে।
হাজরে আসওয়াদ চুমা দেওয়ার পর ডান দিকে কা'বা শরীফের দরওয়াজার দিকে যাবে এবং বাইতুল্লাহ্ চতুর্দিকে তাওয়াফ করবে। যখন রুকনে ইয়ামানীর নিকট পৌঁছবে তখন উভয় হাতে অথবা ডান হাতে রুকনে ইয়ামেনী স্পর্শ করা সুন্নত। এটা চুমা দেওয়া বা বাম হাতে স্পর্শ করা সুন্নতের খেলাফ বা বিরোধী। যদি হাতে স্পর্শ করার সুযোগ না পাওয়া যায় তবে এভাবেই চলে যেতে হবে।
বায়তুল্লাহর চারটি কোন রয়েছে। প্রত্যেকটি কোণকে রোকন বলা হয়। হাজরে আসওয়াদ হলো একটি রোকন। এর বিপরীত পশ্চিম দিকের কোণকে বলা হয় রোকনে ইয়ামানী। অপর দু'টি রোকনে শামী ও রোকনে ইরাকী নামে প্রসিদ্ধ। কিন্তু তাওয়াফে এ দু'টি রোকনের সাথে শরীয়তের কোন বিধান জড়িত নয়।
রুকনে ইয়ামানী থেকে হাজরে আসওয়াদের কোণে যাওয়া পর্যন্ত নিম্নোক্ত দু‘আ পড়া মোস্তাহাব। প্রত্যেক চক্করেই এই স্থানে এ দু‘আটি পড়তে হয়।
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ يَا عَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا رَبَّ الْعَلَمِيْنَ
তারপর হাজরে আসওয়াদ বরাবর পৌঁছলে তখন বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে আবার পূর্বের নিয়মে হাজরে আসওয়াদে চুমু খাবে বা হাতে স্পর্শ করে বা ইশারা করে হাতে চুমু খাবে। এভাবে একটি চক্কর পূর্ণ হবে। এরপর হাজরে আসওয়াদ থেকে শুরু করে পূর্বের ন্যায় হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত সাতবার চক্কর দিতে হবে। সাত চক্কর পূর্ণ করার পর অষ্টম বারে পূর্বের ন্যায় হাজরে আসওয়াদকে চুমা দেবে। তাহলে তাওয়াফ পূর্ণ হবে।
যদি যায়গা পাওয়া যায় তাহলে মাকাম্ ইবরাহীমের পিছনে নতুবা মসজিদে হারামে যেখানে সুযোগ হয় দুই রাকাত ওয়াজিব নামায পড়ে নিবে। নামায শেষে খুশুখুজুর সাথে দু‘আ করবে।
মুলতাযাম
তাওয়াফের নামাযের পর দু‘আ শেষে সক্ষম হলে মুলতাযামে আসবে। যা হাজরে আসওয়াদ ও কাবার দরজার মাঝের স্থান। এটি দু‘আ কবুলের একটি স্থান। এখানে এসেও দু‘আ করবে। এ দু‘আ করা সুন্নত। কিন্তু যদি ভীড় বেশি হয়, তাহলে মুলতাযামে না আসলে ক্ষতি নেই।
আবে যমযম
তারপর আবে যমযমের কাছে আসবে। কিবলামুখী হয়ে বিসমিল্লাহ বলে তিন শ্বাসে যমযমের পানি পান করবে। তারপর আলহামদুলিল্লাহ বলে এ দু‘আ পড়বে-
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا، وَرِزْقًا وَاسِعًا، وَشِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ
যমযমের পানি পান করে হাজরে আসওয়াদের সামনে আসবে। সক্ষম হলে হাজরে আসওয়াদ চুমু খাবে। সক্ষম না হলে হাত দিয়ে ইশারা করে চুমু খেয়ে সাফা পাহাড়ের দিকে রওয়ানা হবে।
সাফা-মারওয়া সায়ী
সাফা পাহাড়ের দিকে যাবে এবং তাতে আরোহন করবে। আর বাইতুল্লাহর দিকে মুখ করে আল্লাহু আকবার ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলবে। এরপর মারওয়ার দিকে আস্তে আস্তে আসবে এবং স্বাভাবিকভাবে চলবে। আর বাতনুল ওয়াদীতে সবুজ বাতির এলাকায় আসার পর সাধারণভাবে দৌঁড়াবে। অতঃপর সাফায় যা যা আমল করা হয়েছে, মারওয়াতেও তা করবে। এ হলো ১ চক্কর। এভাবে ৭ চক্কর দিবে। সাফা থেকে শুরু করবে, মারওয়ায় গিয়ে শেষ করবে। আর প্রতি চক্করে বাতনুল ওয়াদীতে দৌঁড়াবে।
সায়ীর সময় অজু থাকা জরুরী নয়। তবে উত্তম। হায়েয নেফাস থাকা অবস্থায়ও মহিলারা সায়ী করতে পারবেন।
কিন্তু তাওয়াফ নাপাক অবস্থায় জায়েয নয়।
সায়ী শেষ করার পর মাতাফ বা মসজিদে হারামের যেকোন স্থানে দুই রাকাত নামায পড়ার কথা কেউ কেউ বলে থাকেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবী থেকে এটা প্রমাণিত নয়।
তারপর পুরুষেরা মাথা মুণ্ডাবে আর মহিলারা চুলের গোছার নিচ থেকে এক ইঞ্চি পরিমাণ কিছু অংশ কেটে ফেলবে। এভাবে উমরা পূর্ণ হয়ে যাবে।
এখন ইহরাম খুলে ফেলা, সেলাই করা জামা ব্যবহার করা সবই জায়েয হয়ে যাবে।
والله اعلم بالصواب
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর ঢাকা
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
২৫১৭৪
স্বামী বিদেশ থাকায় নাবালক বাচ্চাকে নিয়ে ওমরায় গমন
২৭ নভেম্বর, ২০২২
রুপগঞ্জ

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী সিরাজুল ইসলাম
২৪৯৬৭
হজ্বে দোয়া কবুলের স্থানগুলো কয়টি এবং কি কি?
১১ নভেম্বর, ২০২২
চট্টগ্রাম

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি মোহাম্মদ আমীর হোসাইন
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে