রমীর পরিচয়, রমীর ফযীলত, রমী করার পদ্ধতি ও এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসআলা
প্রশ্নঃ ১০১৪১৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, রমী কাকে বলে? রমীর ফযীলত কি? রমী করার পদ্ধতি ও এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসআলা,
৩০ এপ্রিল, ২০২৫
ঢাকা
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
রমী এর আভিধানিক অর্থ হলো- কংকর নিক্ষেপ করা বা ছুঁড়ে মারা।
শরিয়তের পরিভাষায় রমী হলো- হজ্বের মাসে শয়তানের উদ্দেশ্যে জামারাতে কংকর নিক্ষেপ করা।
রমীর ফযীলত
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, তুমি জামারায় রমী করলে তা তোমার জন্য কিয়ামতের দিন নূর হবে। বাযযযার; কাশফুল আসতার, হাদীস : ১১৪০
রমী করার পদ্ধতি ও এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসআলা
১. ছোট ছোট কংকর নিক্ষেপ করা।
২. পাথর মারার সময় হলো ইয়াওমুন নাহার তথা ১০ তারিখ ও তার পরবর্তী তিন দিন তথা ১১, ১২ এবং ১৩ তারিখ। যদি ১৩ তারিখ ফজর উদিত হওয়ার পূর্বে মিনা ত্যাগ না করে থাকে তাহলে ১৩ তারিখেও পাথর মারতে হবে।
৩. পাথর মারার স্থান হলো বাতনুল ওয়াদি থেকে শুরু।
৪. তিনটি জামারায় পাথর মারতে হবে, আর তা হলো- জামারাতুল আকাবা, মসজিদুল খায়ফ তথা জামারায়ে সুগরা ও জামারাতুল উসতা।
৫. প্রতিটি জামারায় ৭টি করে পাথর মারবে।
৬. পাথর নিক্ষেপকারী আরোহী কিংবা পায়ে হেঁটে রমী করবে।
৭. প্রথম দিন তথা ১০তারিখে শুধু জামারাতুল আকাবায় পাথর মারবে। প্রথম পাথর নিক্ষেপের সাথে সাথে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দিবে এবং প্রতিটি পাথর নিক্ষেপের সময় তাকবীর বলবে, তবে যদি তাকবীরের পরিবর্তে তাসবীহ পড়ে তাহলেও জায়েয হবে। আর ৭টি পাথর মারা শেষ হয়ে গেলে জামারাতুল আকাবার সামনে অবস্থান করবে না, সেখান থেকে দ্রুত চলে যাবে। ১১, ১২, ও ১৩ তারিখে তিনটি জামারায় রমী করবে, মসজিদুল খাইফ থেকে তথা জামারায়ে সুগরা থেকে রমী শুরু করবে, এরপর উসতাতে রমী করবে। সর্বশেষ জামারায়ে আকাবাতে রমী করবে৷
এ ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো- যে রমীর পরে রমী আছে, সে রমীর পরে একটু পাশে সরে এসে সেখানে থামবে এবং উভয় হাত তুলে দু‘আ করবে। আর যে রমীর পরে রমী নাই, সেখানে থামবে না, বরং চলে যাবে। জামারার আশপাশ ব্যতিত যেখান থেকে ইচ্ছা পাথর সংগ্রহ করবে, জামারার নিকট থেকে পাথর সংগ্রহ করা মাকরূহ।
৮. পাথর নিক্ষেপের নিয়ম হলো- ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির পিঠে পাথর রাখবে এবং শাহাদাত আঙ্গুলের সাহায্যে নিক্ষেপ করবে, নিক্ষেপকারী ও পাথর পড়ার স্থানের মাঝে কমপক্ষে পাঁচ হাত দূরত্ব হতে হবে। ১০ তারিখ জামারাতুল আকাবায় পাথর মারার পর হজ্বে ইফরাদকারী আগ্রহ থাকলে কুরবানী করবে, আর হজ্বে ক্বিরানকারী ও তামাত্তুকারী দমে শোকর আদায় করবে, এরপর মাথা মুন্ডাবে বা চুল খাটো করবে, এখন তার উপর স্ত্রী সহবাস ব্যতীত সবকিছু হালাল হয়ে যাবে। ১০ তারিখ মিনায় পাথর মারা, মাথা মুণ্ডানো এবং কুরবানী করার পরে ১০ তারিখ কিংবা ১১ তারিখ কিংবা ১২ তারিখে মক্কায় আসবে। এরপর বাইতুল্লাহর সাত চক্কর তাওয়াফে যিয়ারত করবে। আর এই তাওয়াফের সময় হলো ১০ তারিখ ১১ তারিখ ও ১২ তারিখ, এই দিনগুলির পরে তাওয়াফ করলে মাকরুহে তাহরিমি হবে।
বিঃদ্রঃ হজ্বে তামাত্তুকারী এবং হজ্বে ক্বিরানকারীর উপর দমে শোকর (কুরবানী) করা ওয়াজিব, আর হজ্বে ইফরাদকারীর উপর ওয়াজিব নয়, তার আগ্রহ থাকলে সে কুরবানী করতে পারবে, এতে কোন অসুবিধা নেই।
যদি তাওয়াফে ক্বুদূম এর সময় সাফা-মারওয়ায় সায়ী করে থাকে তাহলে তাওয়াফে যিয়ারতের সময় রমল ও সায়ী করবে না। আর যদি প্রথমে তাওয়াফে ক্বুদূমের সময়ে সায়ী না করে থাকে তাহলে তাওয়াফে যিয়ারতের সময় রমল করবে এবং তারপর সায়ী করবে। এই তাওয়াফের প্রথম সময় হলো ১০ তারিখ সূর্য উদয় হওয়ার পর থেকে। তাওয়াফে যিয়ারতের পর (সম্ভব হলে মাকামে ইবরাহীমে এসে) দুই রাকাত নামায আদায় করবে। কেননা প্রতিটি তাওয়াফের সমাপ্তি হবে দুই রাকাত নামাযের দ্বারা। চাই তাওয়াফটা ফরয হোক কিংবা নফল হোক। এখন তার জন্য স্ত্রী সহবাস হালাল হয়ে গেল। তাওয়াফে যিয়ারতের পর আবার মিনায় ফিরে আসবে এবং পাথর নিক্ষেপের রাতগুলো মিনাতে অবস্থান করবে।
৯. অতঃপর ১১ই জিলহজ্বে যখন সূর্য মধ্য আকাশ থেকে পশ্চিম আকাশে হেলে পড়বে তখন তিনটি জামারায় রমী করবে। মসজিদে খায়েফের নিকটতম জামারা থেকে শুরু করবে। সেখানে ৭টি পাথর মারবে। প্রতিটি পাথর নিক্ষেপের সময় আল্লাহু আকবার বলবে এবং সেখানে একটু অবস্থান করবে । অতঃপর তার পরবর্তী জামারায় একইভাবে রমী করবে এবং সেখানেও একটু অবস্থান করবে। অতঃপর জামারাতুল আকাবায় একইভাবে রমী করবে, কিন্তু সেখানে অবস্থান করবে না । প্রথম ও দ্বিতীয় জামারায় ৭টি পাথর মারার পরে সেখানে সামান্য সময় অবস্থান করে নিজের যাবতীয় প্রয়োজনের জন্য কিবলামুখি হয়ে দুই হাত তুলে দু‘আ করবে।
১০. এর পরদিন তথা ১২ই জিলহজ্বেও সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে যাওয়ার পর একইভাবে তিনটি জামারাতে ধারাবাহিকভাবে পাথর মারবে। ১২ই যিলহজ্ব ৩টি জামারায় রমী করার পর মক্কায় ১২তারিখেই চাইলে চলে যেতে পারবে, ১৩তারিখ সূর্য উদয় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ১৩ তারিখ সূর্যোদয়ের পর যদি মিনায় থাকে তাহলে সূর্য হেলে যাওয়ার পর একইভাবে পূর্বের নিয়মে ৩টি জামারায় রমী করবে। অতঃপর মক্কায় চলে যাবে। উত্তম হল ১৩ তারিখ পর্যন্ত মিনায় অবস্থান করা। রাসূলুল্লাহ ﷺ ১৩ তারিখেও পাথর মেরেছেন।
বিঃদ্রঃ ১০ তারিখে সূর্যোদয়ের পর থেকে রমীর সময় শুরু হবে আর শেষ হবে সূর্যাস্তের পর । আর বাকী দিনগুলোতে সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে যাওয়ার পর থেকে রমীর সময় আরম্ভ হবে এবং শেষ হবে সূর্যাস্তের পর।
বিঃদ্রঃ মিনা থেকে মক্কায় আসার সময় মুহাসসাব তথা আবত্বাহ নামক স্থানে অবতরণ করবে। এটা সুন্নত। মিনায় হজ্বের সব কাজ শেষ করার পর যখন মক্কায় আসবে,তখন বাইতুল্লাহর ৭ চক্কর তাওয়াফ করবে। এ তাওয়াফকে طواف الصدر বা طواف الوداع (বিদায়ী তাওয়াফ) বলা হয়। এটা বহিরাগতদের জন্য ওয়াজিব। তাওয়াফ শেষে দুরাকাত নামায পড়ে যমযমের পানি পান করবে। অতঃপর প্রত্যাবর্তনের সময় মুস্তাহাব হলো বাইতুল্লাহর দরজায় আসবে এবং চৌকাঠে চুম্বন করবে। মুলতাযামে আসবে, আর তা হলো বাইতুল্লাহর দরজা ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থান। সেখানে সীনা ও চেহারা লাগাবে এবং কিছু সময় বাইতুল্লাহর গিলাফ ধরে জড়িয়ে কান্না-কাটি করে দু‘আ করবে । এরপর বিদায় নিয়ে চলে আসবে, কাবার থেকে বের হওয়ার সময় বাইতুল্লাহর বিদায়ের বেদনা নিয়ে ফিরবে।
হায়েযওয়ালী (ঋতুবতী) নারীদের এই তাওয়াফ নেই। তারা মসজিদের বাহিরে দাড়িয়ে দু‘আ কান্না-কাটি করে বিদায় নেবে।
والله اعلم بالصواب
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া
খতীব, নবোদয় সি ব্লক জামে মসজিদ, মোহাম্মদপুর
ইমাম, বায়তুল ওয়াহহাব জামে মসজিদ, মোহাম্মদপুর
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
৭৭৬৭৬
মাসজিদুল হারামে ইমাম সাহেব যেখানে দাঁড়ান তাঁর চেয়ে এগিয়ে দাঁড়ানো যাবে?
২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
ঢাকা ১২০৮

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার
২০৩৭৯
৭ জুলাই, ২০২২
ঢাকা 1216

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে