এক নজরে হজ্ব
প্রশ্নঃ ১০১২৩৪. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, হজ্বের সংক্ষিপ্ত বিবরণ জানতে চাই,
২৯ এপ্রিল, ২০২৫
ঢাকা ১২০৭
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
হজ্ব (حج) এর আভিধানিক অর্থ হলো- ইচ্ছা করা, সংকল্প করা।
শরিয়তের পরিভাষায় হজ্ব হলো- আল্লাহ তা‘আলার রেজামন্দি ও নৈকট্য লাভের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কিছু স্থানে নির্দিষ্ট কিছু আমল সম্পাদন করার সংকল্প করাকে হজ্ব বলে।
হজ্বের ফযীলত
১. হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত যে, নবী ﷺ কে জিজ্ঞাসা করা হল, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা। জিজ্ঞাসা করা হল, তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর পথে জিহাদ করা। জিজ্ঞাসা করা হল, তারপর কোনটি? তিনি বলেনঃ হজ্ব–ই–মাবরূর (অর্থাৎ এমন হজ্ব যার মধ্যে কোন গুনাহ হয় না)। সহীহ বুখারী- হাদীস নং: ১৫১৯
২. হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্ব করলো এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত রইল, সে নবজাতক শিশু, যাকে তাঁর মা এ মুহূর্তে প্রসব করেছে, তার ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে ফিরবে। সহীহ বুখারী- হাদীস নং: ১৫২১
৩. দীর্ঘ একটি হাদীসের অংশ বিশেষ, রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ আমর ইবনুল আস! তুমি কি জানো না যে, ইসলাম পূর্ববর্তী সকল অন্যায় মিটিয়ে দেয়। হিজরত পূর্বেকৃত গুনাহসমুহ মিটিয়ে দেয় এবং হজ্বও পূর্বের সকল গুনাহ মিটিয়ে দেয়। সহীহ মুসলিম- হাদীস নং: ১২১
৪. হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী ﷺ বলেছেন: হাজ্বী এবং হাজ্বী যার জন্য ক্ষমা চায় তাকে মাফ করে দেওয়া হয়। সহীহ ইবনে খুযাইমা- হাদীস নং: ২৫১৬
হজ্বের ফরয তিনটি
১. ইহরাম বাঁধা।
২. ৯ই যিলহজ্ব যুহরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করা।
৩. দশ তারিখে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করা (তাওয়াফে জিয়ারত)।
হজ্বের ওয়াজিব ছয়টি
১. ৯ই যিলহজ্ব দিবাগত রাতে মুজদালিফায় অবস্থান করা।
২. শয়তানের স্তম্ভে জামারায় তিন দিন পাথর মারা।
৩. কুরবানী করা।
৪. মাথা মুণ্ডানো অথবা চুল এক কর পরিমাণ ছেঁটে ছোট করা।
৫. সাফা-মারওয়া সায়ী করা (৭চক্কর দিবে)(শুরু করবে সাফা থেকে এবং মারওয়ায় গিয়ে শেষ করবে)।
৬. افاقي তথা হারাম শরীফের সীমানার বাহির থেকে আগমণকারীদের জন্য বিদায়ী তাওয়াফ করা।
হজ্বের কাজ চার জায়গায়
১. মক্কায়
২. মিনায়
৩. মুজদালিফায়
৪. আরাফায়
হজ্বের কাজ পাঁচ দিন
বিঃদ্রঃ নিয়ম হলো- প্রথমে গোসল করবে বা ওজু করবে। এরপর মক্কাবাসীরা হুদুদে হারাম থেকে আর افاقي তথা বহিরাগতরা মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধবে। নতুন বা ধৌত করা ২টা কাপড় পরবে। ১টি ازار তথা তহবন্দ বা লুঙ্গি, যেটা দিয়ে সতর ঢাকবে। আরেকটি رداء তথা সিনাবন্দ বা চাদর, যেটা শরীরে জড়াবে। তারপর দুই রাকাত নামায আদায় করবে। তারপর এ দু‘আ পড়বে- اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أُرِيْدُ الْحَجَّ فَيَسِّرْهُ لِيْ وَتَقَبَّلْهُ مِنِّيْ নামাযের পরে তালবিয়া পড়বে এবং হজ্বের তিন প্রকারের মধ্যে যে হজ্ব পালন করতে ইচ্ছুক তার নিয়ত করে নিবে।
তালবিয়া- لَبَّيْكَ اَللّٰهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ، وَالنِّعْمَةَ، لَكَ وَالْمُلْكَ، لاَ شَرِيْكَ لَكَ
সকল নামাযের পর তালবিয়া পড়বে এবং উঁচু আওয়াজে পড়বে।
নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করার সাথে সাথে সে মুহরিম বলে বিবেচিত হবে। আর মুহরিম অবস্থায় স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন যাপন, শৌখিনতা, সাজ-সজ্জা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। সহবাস, পাপাচার, ঝগড়া-বিবাদ ইত্যাদি বিষয় পরিহার করে চলবে। কোন প্রাণী শিকার করবে না, শিকারের প্রতি ইশারা করবে না এবং শিকার দেখিয়েও দিবে না। পাঞ্জাবি-পায়জামা পাগড়ি ও মোজা পরিধান করবে না। তবে যদি জুতা না পায় তাহলে টাখনু থেকে নিচের দিকে মোজা কেটে দিবে। চেহারা ও মাথা ঢাকবে না। সুগন্ধি ও তেল ব্যবহার করবে না। মাথা মুন্ডন করবে না। শরীরের কোন পশম কাটবে না এবং উপড়াবেও না। দাড়ি খাটো করবে না। হলুদ, জাফরান ও ورس (ওরস) আরবের এক জাতীয় ঘাস, যা থেকে রং করা যায়। রঙ্গে রাঙ্গানো কাপড় পরিধান করবে না। মাথা ও দাড়ি খিতমী (এক প্রকার সুগন্ধিময় ঘাস সাবানের মত) দ্বারা ধৌত করবে না। কোমরে টাকার থলে বাঁধাতে কোন অসুবিধা নেই। সকল নামাযের পর তালবিয়া পড়বে। এবং যখনই কোন উঁচু স্থানে আরোহন করবে কিংবা কোন উপত্যকা থেকে নামবে,তখনই বেশি বেশি তালবিয়া পাঠ করবে। কোন কাফেলার সাথে দেখা হলে তালবিয়া পড়বে। শেষ রাতে সাহরির সময়ও বেশি বেশি তালবিয়া পড়বে। কেননা সাহাবায়ে কেরাম এ সকল অবস্থায় তালবিয়া পড়তেন। ইহরামের ক্ষেত্রে তালবিয়া হলো নামাযের ক্ষেত্রে তাকবীরের মতো। সুতরাং এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তনের সময় তালবিয়া পড়বে। আর পুরুষ তালবিয়া উঁচু আওয়াজে পড়বে।
মক্কায় প্রবেশ করে গোসল করা মুস্তাহাব। এরপর প্রথমে মসজিদে হারামে যাবে। ইহরামের চাদরকে اضطباع (ইযতেবা) করে নিবে। ইযতেবা হলো- চাদরকে ডান বগলের নিচ দিয়ে নিয়ে বাম কাঁধের উপর রাখা। এটা সুন্নত। হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফে কুদূম শুরু করবে এবং তার মুখোমুখি হয়ে উভয় হাত উপরে উঠিয়ে আল্লাহু আকবার ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলবে। কোন মুসলমানকে কষ্ট না দিয়ে সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করবে। যদি লাঠি দিয়ে হাজরে আসওয়াদকে স্পর্শ করে তারপর সেটাকে চুম্বন করে তাহলেও হবে। অতঃপর বাইতুল্লাহকে নিজের বামে রেখে ডান দিকে বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করবে। প্রথম তিন চক্করে রমল করবে। রমল হলো- হাঁটার সময় উভয় কাঁধ (স্কন্ধন) ঝাঁকি দিয়ে চলা বা দুলানো, (যুদ্ধের ময়দানে দুই সারির মাঝখানে বীরত্ব প্রকাশ করা ব্যক্তির ন্যায়)। শেষ চার চক্করে স্বাভাবিকভাবে তাওয়াফ করবে। প্রতি চক্করে হাজরে আসওয়াদের পাশ দিয়ে যখনই যাবে সম্ভব হলে الله أكبر বলে তা চুম্বন অথবা দু’হাত তুলে চুম্বনের ইশারা করবে । রুকনে ইয়েমানী স্পর্শ করবে। (তবে রুকনে শামী ও ইরাকী স্পর্শ করবে না)। তাওয়াফ শেষ করবে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বনের মাধ্যমে। এরপর মাকামে ইবরাহীমের পিছনে এসে দুই রাকাত নামায আদায় করবে। কিংবা মসজিদে হারামের যেখানে সুযোগ পাবে সেখানেই নামায পড়বে। এরপর হাজরে আসওয়াদের কাছে আবার আসবে এবং তা চুম্বন করবে। (মক্কাবাসীদের জন্য তাওয়াফে কুদূম নাই।)
এরপর সাফা পাহাড়ের দিকে যাবে এবং তাতে আরোহন করবে। বাইতুল্লাহর দিকে মুখ করে আল্লাহু আকবার ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলবে। দু’হাত তুলে দু‘আ করবে। এরপর মারওয়ার দিকে আস্তে আস্তে আসবে এবং স্বাভাবিকভাবে চলবে। বাতনুল ওয়াদীতে তথা সবুজ বাতির এলাকায় সাধারণভাবে দৌঁড়াবে। অতঃপর সাফায় যা যা আমল করা হয়েছে, মারওয়াতেও তা করবে। এ হলো ১ চক্কর। এভাবে ৭ চক্কর দিবে। সাফা থেকে শুরু করবে, মারওয়ায় গিয়ে শেষ করবে। আর প্রতি চক্করে বাতনুল ওয়াদীতে দৌঁড়াবে। সায়ী শেষ করার পর মাতাফ বা মসজিদে হারামের যেকোন স্থানে দুই রাকাত নফল নামায পড়ার কথা বলে থাকেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবীগণের কারো আমল থেকে সায়ী শেষে দু’রাকাত নামায প্রমাণিত নয়।
এরপর হজ্বে ইফরাদকারী ও ক্বেরানকারী ইহরাম অবস্থায় মক্কায় অবস্থান করবে এবং হজ্বে তামাত্তুকারী হালাল হয়ে যাবে এবং হজ্বের সময়ে হজ্বের নিয়তে হজ্ব পালন করবে। আর যখনই সুযোগ পাবে তখনই তারা বাইতুল্লাহর নফল তাওয়াফ করবে।
৭ই যিলহজ্ব ইমাম সাহেব একটা খুতবা দিবে, যার মাধ্যমে মানুষকে মিনায় যাওয়া, আরাফায় অবস্থান করা এবং মুজদালিফায় অবস্থান করার নিয়মাবলী শিক্ষা দিবে।
হজ্বে ইমাম সাহেব মোট তিনটা খুতবা দিবে- (১) প্রথম খুতবা ৭ই যিলহজ্ব মক্কায় যুহরের নামাযের পরে। (২) ২য় খুতবা ৯ই যিলহজ্ব আরাফায় যুহরের নামাযের পূর্বে। (৩) ৩য় খুতবা ১১ই যিলহজ্ব মিনায় যুহরের নামাযের পর। আরাফাতেই শুধু দুইটা খুতবা দিবে এবং দুই খুতবার মাঝে বৈঠক করবে। আর বাকী দিনগুলোতে ১টি খুতবা দিবে এবং বৈঠক হবে না।
১. ইয়াওমুত তারবিয়া তথা ৮ই যিলহজ্ব মক্কায় ফজরের নামায আদায় করে মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে এবং মিনায় ৯ই যিলহজ্ব আরাফার দিনের ফজরের নামায আদায় করা পর্যন্ত অবস্থান করবে। অর্থাৎ মিনায় মোট ৫ ওয়াক্ত নামায তথা ৮ তারিখের যুহর, আসর,মাগরিব,এশা এবং ৯ তারিখের ফজরের নামায আদায় করবে। (উল্লেখ্য: বর্তমানে সৌদি ব্যবস্থাপনার কারণে এই নিয়মে ব্যত্যয় ঘটতে পারে।
২. ইয়াওমে আরাফা তথা ৯ই যিলহজ্ব মিনায় ফজরের নামায আদায় করে সুর্যোদয়ের পর আরাফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করবে। ৯ই যিলহজ্ব সূর্য মধ্য আকাশ থেকে সামান্য পশ্চিম আকাশে হেলে যাওয়ার পর যুহরের (শুরু) সময়ে আরাফার ময়দানে ইমাম সাহেব লোকদেরকে নিয়ে এক আযান ও দুই ইকামতসহ যুহর ও আসরের নামায আরাফার ময়দানের মসজিদে নামিরাতে একত্রে আদায় করবে। পদ্ধতি হবে-প্রথমে ইমাম সাহেব খুতবা দিবে। আর খুতবায় লোকদেরকে আরাফা ও মুজদালিফায় অবস্থান, জামারাতে পাথর নিক্ষেপ করা, কুরবানী করা, মাথা মুন্ডন ও তাওয়াফে জিয়ারত করার নিয়মাবলী শিক্ষা দিবে। আর জুমার খুতবার ন্যায় দুটি খুতবা দিবে। উভয় খুতবার মাঝখানে জুমার মত বসবে। এরপরে প্রথমে যুহরের জন্য আযান দিবে। অতঃপর ইকামত দিবে। এরপর আসরের জন্য ইকামত দিবে। কেননা আসরের নামাযকে তার নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে আদায় করা হচ্ছে। আর লোকজনও উপস্থিত আছে। এজন্য উপস্থিত লোকদের অবগতির জন্য আলাদা শুধুমাত্র ইকামতই যথেষ্ট হবে। আযানের প্রয়োজন নেই। ইমাম বা মুক্তাদি কেউ এ দু নামাযের মাঝে কোন নফল নামায পড়বে না। আরাফায় দুই ওয়াক্ত নামায একত্রে আদায় করার পর সকলেই উকূফের স্থানের দিকে যাবে এবং কিবলামুখী হয়ে উকূফ করবে। বাতনে উরানা ছাড়া আরাফার ময়দান পুরাটাই উকূফের স্থান। তবে জাবালে রহমত নামক পাহাড়ের কাছাকাছি অবস্থান করা উত্তম। উকূফের স্থানে কিছুক্ষণ পরপর তালবিয়া পাঠ করবে। জামারাতুল আকাবায় পাথর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত এই আমল জারি থাকবে এবং জামারাতুল আকাবায় প্রথম পাথরটি মারার সাথে সাথে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দিতে হবে। আরাফায় ইমাম সাহেব দু‘আ করবে এবং মানুষ কে হজ্বের আহকাম শিক্ষা দিবে। আরাফায় উকূফের পূর্বে গোসল করা সুন্নত।
এবং ৯ই যিলহজ্ব সূর্য অস্ত যাওয়ার পর মাগরিবের নামায আদায় না করেই সকলে ধীর-স্থিরভাবে যাত্রা করে মুজদালিফার উদ্দেশ্যে গমন করবে, মুজদালিফায় আসার পর মুস্তাহাব হলো জাবালে কুযাহ নামক পাহাড়ের কাছাকাছি অবস্থান করা। ওয়াদীয়ে মুহাসসার ছাড়া মুজদালিফা পুরোটাই উকূফের স্থান। ইমাম সাহেব মুজদালিফায় লোকদেরকে নিয়ে এশার নামায (শুরুর) সময়ে এক আযান ও এক ইকামতে মাগরিব ও এশার নামায একত্রে আদায় করবে। এ দুই নামাযের মাঝে কেউই কোন নফল নামায পড়বে না। এ স্থানে সকলে দু‘আ করবে। মুজদালিফায় এশার নামায তার নিজ ওয়াক্তে আদায় করা হচ্ছে, সুতরাং লোকদেরকে অবহিরত করার জন্য আলাদা ইকামতের কোন প্রয়োজন নেই। পক্ষান্তরে আরাফার মাঠে আসরের নামায কে তার নির্দিষ্ট ওয়াক্তের পূর্বে আদায় করা হয়, তাই লোকদেরকে অতিরিক্ত সতর্ক করার জন্য সেক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার আসরের ইকামত দেওয়া হয় । এরপর ৯ তারিখ দিবাগত রাতে মুজদালিফাতেই অবস্থান করবে এবং সেখানে অবস্থানকালে ছোট ছোট পাথর কুড়িয়ে সংরক্ষণ করে রাখবে যেন পরবর্তী দিন পাথর মারতে সুবিধা হয়। মুজদালিফায় রাত্রে ঘুমানো নবীজির সুন্নত।
৩. (ইয়াওমুন নাহার) কুরবানির দিনে তথা ১০ই যিলহজ্ব যখন ফজর উদিত হবে তখন অন্ধকার থাকতেই ইমাম লোকদেরকে নিয়ে ফজরের নামায আদায় করবে এবং সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বেই পূর্বাকাশ ফর্সা হয়ে গেলে সকলে যাত্রা করে মিনায় গমন করবে। অতঃপর শুধুমাত্র জামারাতুল আকাবায় ৭টি পাথর মারবে।
পাথর নিক্ষেপ সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
১. ছোট ছোট কংকর নিক্ষেপ করা।
২. পাথর মারার সময় হলো ইয়াওমুন নাহার তথা ১০ তারিখ ও তার পরবর্তী তিন দিন তথা ১১, ১২ এবং ১৩ তারিখ। যদি ফজর উদিত হওয়ার পূর্বে মিনা ত্যাগ না করে থাকে তাহলে ১৩ তারিখেও পাথর মারতে হবে।
৩. পাথর মারার স্থান হলো বাতনুল ওয়াদি থেকে শুরু।
৪. তিনটি জামারায় পাথর মারতে হবে, আর তা হলো- জামারাতুল আকাবা, মসজিদুল খায়ফ তথা জামারায়ে সুগরা ও জামারাতুল উসতা।
৫. প্রতিটি জামারায় ৭টি করে পাথর মারবে।
৬. পাথর নিক্ষেপকারী আরোহী কিংবা পায়ে হেঁটে রমী করবে।
৭. প্রথম দিন তথা ১০তারিখে শুধু জামারাতুল আকাবায় পাথর মারবে। প্রথম পাথর নিক্ষেপের সাথে সাথে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দিবে এবং প্রতিটি পাথর নিক্ষেপের সাথে সাথে তাকবীর বলবে, তবে যদি তাকবীরের পরিবর্তে তাসবীহ পড়ে তাহলেও জায়েয হবে। আর ৭টি পাথর মারা শেষ হয়ে গেলে জামারাতুল আকাবার সামনে অবস্থান করবে না, বরং সেখান থেকে দ্রুত চলে যাবে। ১১ ও ১২ তারিখে তিনটি জামারায় রমী করবে, মসজিদুল খাইফ থেকে তথা জামারায়ে সুগরা থেকে রমী শুরু করবে, এরপর উসতাতে রমী করবে। সর্বশেষ জামারায়ে আকাবাতে রমী করবে৷
এ ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো- যে রমীর পরে রমী আছে, সে রমীর পরে সেখানে থামবে এবং উভয় হাত তুলে দু‘আ করবে। আর যে রমীর পরে রমী নাই, সেখানে থামবে না, বরং চলে যাবে। জামারার আশপাশ ব্যতিত যেখান থেকে ইচ্ছা পাথর সংগ্রহ করবে, তবে জামারার নিকট থেকে পাথর সংগ্রহ করা মাকরূহ।
৮. পাথর নিক্ষেপের নিয়ম হলো- ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির পিঠে পাথর রাখবে এবং শাহাদাত আঙ্গুলের সাহায্যে তাচ্ছিল্যের সাথে নিক্ষেপ করবে, নিক্ষেপকারী ও পাথর পড়ার স্থানের মাঝে কমপক্ষে পাঁচ হাত দূরত্ব হতে হবে। ১০ তারিখ জামারাতুল আকাবায় পাথর মারার পর হজ্বে ইফরাদকারী আগ্রহ থাকলে কুরবানী করবে, আর হজ্বে ক্বিরানকারী ও তামাত্তুকারী দমে শোকর আদায় করবে। এরপর মাথা মুণ্ডাবে বা চুল খাটো করবে, এখন তার উপর স্ত্রী সহবাস ব্যতীত সবকিছু হালাল হয়ে যাবে। ১০ তারিখ মিনায় পাথর মারা, মাথা মুণ্ডানো এবং কুরবানী করার পরে ১০ তারিখ কিংবা ১১ তারিখ কিংবা ১২ তারিখে মক্কায় আসবে। এরপর বাইতুল্লাহর সাত চক্কর তাওয়াফে যিয়ারত করবে। আর এই তাওয়াফের সময় হলো ১০ তারিখ ১১ তারিখ ও ১২ তারিখ, এই দিনগুলির পরে তাওয়াফ করলে মাকরুহে তাহরিমি হবে।
বিঃদ্রঃ হজ্বে তামাত্তুকারী এবং হজ্বে ক্বিরানকারীর উপর কুরবানী করা ওয়াজিব, আর হজ্বে ইফরাদকারীর উপর ওয়াজিব নয়, তার আগ্রহ থাকলে সে কুরবানী করতে পারবে, এতে কোন অসুবিধা নেই।
যদি তাওয়াফে ক্বুদূম এর সময় সাফা-মারওয়ায় সায়ী করে থাকে তাহলে তাওয়াফে যিয়ারতের সময় রমল ও সায়ী করবে না। আর যদি প্রথমে তাওয়াফে ক্বুদূমের সময়ে সায়ী না করে থাকে তাহলে তাওয়াফে যিয়ারতের সময় রমল করবে এবং তারপর সায়ী করবে। এই তাওয়াফের প্রথম সময় হলো ১০ তারিখ সূর্য উদয় হওয়ার পর থেকে। তাওয়াফে যিয়ারতের পর (সম্ভব হলে মাকামে ইবরাহীমে এসে) দুই রাকাত নামায আদায় করবে। কেননা প্রতিটি তাওয়াফের সমাপ্তি হবে দুই রাকাত নামাযের দ্বারা। চাই তাওয়াফটা ফরয হোক কিংবা নফল হোক। এখন তার জন্য স্ত্রী সহবাস হালাল হয়ে গেল। তাওয়াফে যিয়ারতের পর আবার মিনায় ফিরে আসবে এবং পাথর নিক্ষেপের রাতগুলো মিনাতে অবস্থান করবে।
৯. অতঃপর ১১ই জিলহজ্বে যখন সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়বে তখন তিনটি জামারায় রমী করবে। মসজিদে খায়েফের নিকটতম জামারা থেকে শুরু করবে। সেখানে ৭টি পাথর মারবে। প্রতিটি পাথর নিক্ষেপের সময় আল্লাহু আকবার বলবে এবং সেখানে একটু অবস্থান করবে । অতঃপর তার পরবর্তী জামারায় একইভাবে রমী করবে এবং সেখানেও একটু অবস্থান করবে। অতঃপর জামারাতুল আকাবায় একইভাবে রমী করবে, কিন্তু সেখানে অবস্থান করবে না । প্রথম ও দ্বিতীয় জামারায় ৭টি পাথর মারার পরে সেখানে সামান্য সময় অবস্থান করে নিজের যাবতীয় প্রয়োজনের জন্য দুই হাত তুলে দু‘আ করবে।
১০. এর পরদিন তথা ১২ই জিলহজ্বেও সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে যাওয়ার পর একইভাবে তিনটি জামারাতে ধারাবাহিকভাবে পাথর মারবে। ১২ই যিলহজ্ব ৩টি জামারায় রমী করার পর মক্কায় ১২তারিখেই চাইলে চলে যেতে পারবে, ১৩তারিখ সূর্য উদয় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ১৩ তারিখ সূর্যোদয় হওয়ার পরে যদি মিনায় থাকে তাহলে সূর্য হেলে যাওয়ার পর একইভাবে পূর্বের নিয়মে ৩টি জামারায় রমী করবে। অতঃপর মক্কায় চলে যাবে। উত্তম হল ১৩ তারিখ পর্যন্ত মিনায় অবস্থান করা।
বিঃদ্রঃ ১০ তারিখে সূর্যোদয়ের পর থেকে রমীর সময় শুরু হবে আর শেষ হবে সূর্যাস্তের পর । আর বাকী দিনগুলোতে সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে যাওয়ার পর থেকে রমীর সময় আরম্ভ হবে এবং শেষ হবে সূর্যাস্তের পর।
বিঃদ্রঃ মিনা থেকে মক্কায় আসার সময় মুহাসসাব তথা আবত্বাহ নামক স্থানে অবতরণ করতে পারে। রাসূলুল্লাহ ﷺ এখানে অবতরণ করেছিলেন। মিনায় হজ্বের সব কাজ শেষ করার পর যখন মক্কায় আসবে,তখন বাইতুল্লাহর ৭ চক্কর তাওয়াফ করবে। এ তাওয়াফকে طواف الصدر বা طواف الوداع (বিদায়ী তাওয়াফ) বলা হয়। এটা বহিরাগতদের জন্য ওয়াজিব। অতঃপর যমযমের নিকট এসে যমযমের পানি পান করবে। অতঃপর প্রত্যাবর্তনের সময় মুস্তাহাব হলো বাইতুল্লাহর দরজায় আসবে এবং চৌকাঠে চুম্বন করবে। এরপর মুলতাযামে আসবে, আর তা হলো বাইতুল্লাহর দরজা ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থান। সেখানে সীনা ও চেহারা লাগাবে এবং কিছু সময় বাইতুল্লাহর গিলাফ ধরে জড়িয়ে থাকবে। এরপর বিদায় নিয়ে চলে আসবে। কাবার থেকে বের হওয়ার সময় বাইতুল্লাহর দিকে মুখ করে পিছন দিকে হেঁটে বেরিয়ে আসা রাসূলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবীগণ থেকে প্রমাণিত নয়।
والله اعلم بالصواب
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর ঢাকা
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
৭৭৬৭৬
মাসজিদুল হারামে ইমাম সাহেব যেখানে দাঁড়ান তাঁর চেয়ে এগিয়ে দাঁড়ানো যাবে?
২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
ঢাকা ১২০৮

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার
৬৩৫০৩
কোনো গরীব ব্যক্তি হজ করার পর, সম্পদশালী হলে পুনারায় হজের বিধান কী?
৭ জুন, ২০২৪
টঙ্গী

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি জাওয়াদ তাহের
৬০৭১০
মাসিক বা হায়েজ অবস্থায় হজের ফ্লাইট থাকলে তামাত্তু হজ পালনকারী মেয়েলোক কিভাবে তামাত্তু হজের উমরাহ করবে?
৮ মে, ২০২৪
Dhaka, Bangladesh

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ
২৩৪৭৬
ইহরাম অবস্থায় সেলাইযুুক্ত বেল্ট ব্যবহার করা
১০ অক্টোবর, ২০২৪
রংপুর ৫৪০০

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে