আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৬৯- শপথ ও মান্নতের অধ্যায়

হাদীস নং: ৬২৩২
আন্তর্জতিক নং: ৬৬৮৯

পরিচ্ছেদঃ ২৭৭১. কসমের মধ্যে নিয়ত করা।

৬২৩২। কুতায়বা ইবনে সাঈদ (রাহঃ) ......... উমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয়ই প্রতিটি আমলের গ্রহণযোগ্যতা তার নিয়তের উপর নির্ভরশীল। কোন ব্যক্তি তাই লাভ করবে যা সে নিয়ত করে থাকে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলের সন্তুষ্টির জন্য হিজরত করবে, তার হিজরত আল্লাহ ও তার রাসূলের সন্তুটির জন্যই হবে। আর যার হিজরত দুনিয়া হাসিলের জন্য হবে অথবা কোন রমণীকে বিয়ে করার জন্য হবে, তার হিজরত সে উদ্দেশ্যেই হবে যেজন্য সে হিজরত করেছে।

হাদীসের ব্যাখ্যাঃ

পবিত্র এ হাদীছে চারটি বাক্য আছে। প্রথম বাক্য إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّات (সমস্ত আমল নিয়তের সাথে সম্পর্কযুক্ত)। এ বাক্যটি একটি মূলনীতিস্বরূপ। এতে বলা হয়েছে- প্রতিটি আমলের ভালোমন্দ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। নিয়ত ভালো হলে আমলটি ভালো আর নিয়ত মন্দ হলে আমলটি মন্দরূপে গণ্য হবে। কেবল বাহ্যিক রূপ ভালো হওয়াই আমল ভালো হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। বাহ্যিক রূপ ভালো হওয়া সত্ত্বেও নিয়ত যদি মন্দ হয়, তবে সে আমল ভালো বলে গণ্য হবে না। বরং নিয়ত মন্দ হওয়ার কারণে সেই বাহ্যিক ভালো আমলটিও মন্দ সাব্যস্ত হবে। কথাটি এভাবেও বলা যায় যে, আল্লাহর কাছে কোনও কাজ গ্রহণযোগ্য হওয়া বা না হওয়া ইখলাস ও নিয়তের উপর নির্ভরশীল। কাজটি যদি ইখলাসের সাথে অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হয়, তবে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। পক্ষান্তরে উদ্দেশ্য যদি আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভ না হয়ে অন্যকিছু হয়, তবে সে আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। সুতরাং প্রত্যেকের কর্তব্য সমস্ত আমলেই বিশুদ্ধ নিয়ত ও ইখলাসের প্রতি যত্নবান থাকা। দ্বিতীয় বাক্য وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى (প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে, যা সে নিয়ত করে) এ বাক্যটি ওই মূলনীতির ফলাফল। বলা হয়েছে- প্রত্যেকে তাই পাবে, যা সে নিয়ত করে। অর্থাৎ কোনও আমল দ্বারা যদি আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি কামনা করে, তবে সেই আমল দ্বারা সে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ করবে। পক্ষান্তরে যদি উদ্দেশ্য থাকে সুনাম-সুখ্যাতি লাভ করা বা মানুষের সন্তুষ্টি অর্জন করা কিংবা টাকা-পয়সা ও ধন-দৌলত হাসিল করা, তবে ওই আমল দ্বারা সে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবে না। বাহ্যদৃষ্টিতে সে আমল যতই সুন্দর হোক না কেন, তাতে সে কোনও ছওয়াব পাবে না। এবং আখিরাতে তার বিনিময়ে তার কিছুই অর্জিত হবে না। অতঃপর হিজরত দ্বারা ভালোমন্দ নিয়তের দৃষ্টান্ত দেওয়া হয়েছে। হিজরত মানে পরিত্যাগ করা। পরিভাষায় দীন ও ঈমান হেফাজতের উদ্দেশ্যে কুফরের দেশ পরিত্যাগ করে ইসলামী দেশে গমন করাকে হিজরত বলা হয়। যে-কোনও মন্দ কাজ পরিত্যাগকেও হিজরত বলে। যে ব্যক্তি হিজরত করে, তাকে বলা হয় মুহাজির। এক হাদীছে আছে- প্রকৃত মুহাজির সেই; যে আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়াবলী পরিত্যাগ করে চলে। এর মধ্যে শরীআতের সমস্ত আদেশ-নিষেধ এসে যায়। কেননা শরীআতের আদিষ্ট বিষয়াবলী পালন করতে হলে মনের খেয়াল-খুশি পরিত্যাগ করতে হয়। অনুরূপ নিষিদ্ধ বিষয়াবলী থেকে দূরে থাকার জন্যও মনের বিরোধিতা করা অপরিহার্য হয়। সুতরাং ব্যাপক অর্থে হিজরত এমন এক আমল, গোটা শরীআতই যার অন্তর্ভুক্ত। তবে এ হাদীছে হিজরত দ্বারা বিশেষভাবে দেশত্যাগকেই বোঝানো হয়েছে। তো এই হিজরত এমন এক আমল, নিয়তের ভালোমন্দ দ্বারা যার ভালোমন্দ সাব্যস্ত হয়। উভয় অবস্থায় এর বাহ্যিক রূপ একই থাকে। ফলে বাহ্যিক রূপ দ্বারা এর ভালোমন্দ ও শুদ্ধাশুদ্ধ নির্ণয় করা যায় না। তৃতীয় বাক্যে বলা হয়েছে فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ فَهِجْرَتُهُ إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ "যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে (অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তষ্টির উদ্দেশ্যে) হিজরত করে, (বাস্তবিকপক্ষে) তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকেই হয়'। অর্থাৎ এ হিজরত দ্বারা সে কেবল এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বা মক্কা থেকে মদীনার দিকেই যায় না। সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টি ও নৈকট্যের দিকেই গমন করে। ফলে তার হিজরত আল্লাহর কাছে কবুল হয় এবং সে এর বিনিময়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করে ও আখিরাতে প্রভূত ছওয়াবের অধিকারী হবে। এটা ভালো নিয়তের উদাহরণ। চতুর্থ বাক্যে বলা হয়েছে- وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ لِدُنْيَا يُصِيبُهَا أَوِ امْرَأَةٍ يَتَزَوَّجُهَا فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ 'যে ব্যক্তি দুনিয়াপ্রাপ্তির জন্য অথবা কোনও নারীকে বিবাহ করার জন্য হিজরত করে, (বাস্তবিকপক্ষে) তার হিজরত সে যার নিয়ত করেছে তার দিকেই (অর্থাৎ দুনিয়া বা নারীকে পাওয়ার জন্যই) হয়েছে বলে গণ্য হবে। এ হিজরত দ্বারা তার স্থান বদল হয় মাত্র, তার অবস্থার কোনও বদল হয় না। সে তুচ্ছ দুনিয়ার ভোগ-আসক্তির মধ্যেই ঘুরপাক খেতে থাকে। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্যের দিকে অগ্রসর হতে পারে না। বাহ্যদৃষ্টিতে তাকে মুহাজির বলা হয় বটে, কিন্তু এর বিনিময়ে আল্লাহর কাছে সে কিছুই পাবে না। এটা মন্দ নিয়তের উদাহরণ। দুনিয়া বলতে ইহজগতের যাবতীয় বিষয়কেই বোঝায়, যেমন অর্থ-সম্পদ, সুনাম- সুখ্যাতি, পদমর্যাদা ইত্যাদি। পুরুষের জন্য নারী এবং নারীর জন্য পুরুষও এর অন্তর্ভুক্ত। এর সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী ও ধ্বংসশীল। এর বিপরীতে আখিরাত স্থায়ী ও অনিঃশেষ। কোনও আমল দ্বারা দুনিয়ার কোনও কিছু পাওয়ার কামনা করা একজন ঈমানদারের পক্ষে শোভা পায় না। ঈমানদার ব্যক্তি আখিরাতে বিশ্বাস রাখে। সেই বিশ্বাসের ভিত্তিতেই তার যাবতীয় কাজ সম্পন্ন হওয়া উচিত। পার্থিব উদ্দেশ্যে আমল করলে একে তো আখিরাতের জীবনে কিছুই পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না, সেই সংগে দুনিয়ার যেই উদ্দেশ্যে করা হয় তা পাওয়ারও কোনো নিশ্চয়তা থাকে না। কেননা প্রকৃত দাতা তো আল্লাহ তাআলাই । দুনিয়াতেও যা-কিছু দেওয়ার তিনিই দিতে পারেন।। কোনও মানুষের কিছু দেওয়ার ক্ষমতা নেই। ফলে যেই আশায় কাজ করা হয়ে থাকে, তা না পাওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট। বাস্তবে মানুষের কত আশাই না বৃথা চলে যায়। কত প্রচেষ্টা হয় পণ্ডশ্রমে পর্যবসিত। আল্লাহ তাআলা এ সম্পর্কে ইরশাদ করেন- {مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْعَاجِلَةَ عَجَّلْنَا لَهُ فِيهَا مَا نَشَاءُ لِمَنْ نُرِيدُ ثُمَّ جَعَلْنَا لَهُ جَهَنَّمَ يَصْلَاهَا مَذْمُومًا مَدْحُورًا (18) وَمَنْ أَرَادَ الْآخِرَةَ وَسَعَى لَهَا سَعْيَهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَئِكَ كَانَ سَعْيُهُمْ مَشْكُورًا (19)} [الإسراء: 18، 19] অর্থ : কেউ দুনিয়ার নগদ লাভ কামনা করলে আমি যাকে ইচ্ছা, যতটুকু ইচ্ছা, এখানেই তাকে তা নগদ দিয়ে দেই। তারপর আমি তার জন্য জাহান্নাম রেখে দিয়েছি, যাতে সে লাঞ্ছিত ও বিতাড়িতরূপে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি আখিরাত (-এর লাভ) চায় এবং সেজন্য যথোচিতভাবে চেষ্টা করে, সে যদি মু'মিন হয়, তবে এরূপ লোকের চেষ্টার পরিপূর্ণ মর্যাদা দেওয়া হবে।' আয়াতের সারকথা, আখিরাতের উদ্দেশ্যে আমল করলে তা পাওয়ার নিশ্চয়তা শতভাগ, কিন্তু দুনিয়ার উদ্দেশ্যে আমল করলে তা পাওয়ার কোনও নিশ্চয়তা নেই। পাওয়া যেতেও পারে, নাও পাওয়া যেতে পারে। পাওয়া গেলেও তা কেবল ততটুকুই, যতটুকু আল্লাহ ইচ্ছা করেন, তার বেশি নয়। সুতরাং এহেন অনিশ্চিত বিষয়ের আশা একজন ঈমানদার ব্যক্তি কেন করবে? হাদীছের এই চতুর্থ বাক্যে দুনিয়ার বিভিন্ন বিষয়ের মধ্য থেকে বিশেষভাবে নারীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর একটা প্রেক্ষাপট আছে। জনৈক ব্যক্তি উম্মে কায়ছ নামী এক মহিলাকে বিবাহ করার আশায় মদীনায় হিজরত করেছিল। ওই মহিলা শর্ত দিয়েছিল যে, হিজরত করলে তাকে বিবাহ করবে। তো তার এই হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ছিল না, ছিল একজন নারীকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে। তাই তাকে উম্মে কায়ছের মুহাজির বলা হত। এদিকে ইশারা করে বলা হয়েছে, কেউ কোনও মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে হিজরত করলে সে প্রকৃত মুহাজির হবে না এবং এর দ্বারা আখিরাতে সে কোনও প্রতিদান পাবে না। ঘটনা যদি এর বিপরীত হয়, অর্থাৎ কোনও পুরুষকে বিবাহ করার জন্য কোনও নারী হিজরত করে, তবে তার ক্ষেত্রেও একই কথা। হাদীছে বিশেষভাবে নারীপ্রসঙ্গ উত্থাপনের একটা কারণ এও হতে পারে যে, যদিও দুনিয়ার যাবতীয় বিষয়ের প্রতি মানুষের স্বভাবগত আকর্ষণ আছে, কিন্তু তার মধ্যে নারীর প্রতি আকর্ষণ সর্বাপেক্ষা তীব্র, যেমন কুরআন মাজীদে ইরশাদ- {زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالْبَنِينَ وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنْطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْأَنْعَامِ وَالْحَرْثِ ذَلِكَ مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاللَّهُ عِنْدَهُ حُسْنُ الْمَآبِ (14)} [آل عمران: 14] অর্থ : মানুষের জন্য ওই সকল বস্তুর আসক্তিকে মনোরম করা হয়েছে, যা তার প্রবৃত্তির চাহিদা মোতাবেক অর্থাৎ নারী, সন্তান, রাশিকৃত সোনা-রূপা, চিহ্নিত অশ্বরাজি, চতুষ্পদ জন্তু ও ক্ষেত-খামার। এসব ইহজীবনের ভোগ-সামগ্রী। (কিন্তু) স্থায়ী পরিণামের সৌন্দর্য কেবল আল্লাহরই কাছে। এ আকর্ষণ যেহেতু স্বভাবগত, তাই স্বভাবধর্ম ইসলাম একে নির্মূল করার হুকুম দেয়নি। তা করা মানুষের পক্ষে সম্ভবও নয়। বরং একে নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়েছে এবং বৈধ পন্থায় এ চাহিদা পূরণ করার ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং বিবাহের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে- صحيح البخاري (7/ 3) قال النبي صلى الله عليه وسلم: «يا معشر الشباب من استطاع منكم الباءة فليتزوج، ومن لم يستطع فعليه بالصوم فإنه له وجاء» 'হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যার বিবাহ করার সামর্থ্য আছে, সে যেন বিবাহ করে। কেননা এটা চক্ষু সংযত করা ও চরিত্র রক্ষা করার পক্ষে বেশি সহায়ক। আর যার সে সামর্থ্য নেই, সে যেন রোযা রাখে। কেননা রোযা যৌনচাহিদা দমন করে। তো নারীর প্রতি মানুষের যেহেতু স্বভাবজাত আকর্ষণ রয়েছে, তাই সে আকর্ষণ ব্যক্তির ইবাদত-বন্দেগী ও আমলের নিয়তকে প্রভাবিত করতে পারে। নিয়ত যদি তা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যায়, তবে আমল মূল্যহীন হয়ে পড়ে। তাই এ হাদীছে এ সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে যে, তোমার হিজরত এবং দীনী কোনও কাজই যেন কোনও নারীর আকর্ষণে অর্থাৎ কোনও নারীকে খুশি করা ও তাকে পাওয়ার জন্য না হয়। সেজন্য হলে তোমার সেই হিজরত ও দীনী কাজ আল্লাহর কাছে গৃহীত হবে না এবং তার বিনিময়ে আল্লাহর কাছে কোনও বদলা পাবে না। হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ ক. মানুষের উচিত দীনী কাজ দ্বারা দুনিয়া নয়; বরং আখিরাত ও আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা। খ. হাদীছে যেহেতু আমলকে নিয়তের উপর নির্ভরশীল বলা হয়েছে, সেহেতু কেউ যদি দীনি কাজ দুনিয়ার উদ্দেশ্যে করে, তবে তা প্রকৃতপক্ষে দীনী কাজ থাকে না; দুনিয়াবী কাজ হয়ে যায়, বাহ্যদৃষ্টিতে তাকে যতই দীনী কাজ মনে হোক না কেন। গ. দুনিয়াবী জায়েয কাজ যেমন পানাহার করা, বেচাকেনা করা, ঘর-সংসার করা ইত্যাদি যদি কেউ আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করে, তবে তা নিছক দুনিয়াবী কাজ থাকে না, তা ইবাদতেরও মর্যাদা লাভ করে। ঘ. বর্জন করাটাও যেহেতু কাজ, যেমন চুরি না করা, মদপান না করা, দর্প না করা, ঝগড়া না করা, কারও মনে আঘাত না দেওয়া ইত্যাদি, সেহেতু এগুলো না করার ক্ষেত্রে যদি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির নিয়ত থাকে, তবে এর দ্বারাও ছওয়াব পাওয়া যাবে। ঙ. নিয়ত দ্বারা ছোট ও তুচ্ছ কাজও বড় ও মহৎ কাজে পরিণত হয়ে যায়। যেমন কারও সংগে হাসি দিয়ে কথা বলা, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়া, আপাতদৃষ্টিতে এগুলো বিশেষ বড় কোনও কাজ নয়, কিন্তু আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির নিয়তে করলে তাঁর কাছে এসব অনেক মর্যাদাপূর্ণ কাজে পরিণত হয়ে যায়। বিভিন্ন হাদীছ দ্বারা আখিরাতে এসব আমলের অভাবনীয় পুরস্কার লাভের কথা জানা যায়। চ. নিয়ত দ্বারা একই আমল বহু আমলে পরিণত হতে পারে। যেমন কেউ যদি মসজিদে গমন করে আর জামাতে নামায পড়ার সাথে সাথে এই নিয়তও রাখে যে, সে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেবে, মু'মিনদের দেখা পেলে সালাম দেবে, মু'মিনদের খোঁজখবর নেবে, রুগ্ন ব্যক্তির দেখা পেলে তার সেবা করবে ইত্যাদি, তবে বাস্তবে এসব কাজের অবকাশ না আসলেও কেবল নিয়তের কারণেও সে তার ছওয়াব পাবে। কাজ তো হয়েছে একটি অর্থাৎ মসজিদে গমন, কিন্তু নিয়ত যেহেতু ছিল বহুবিধ, তাই সে বহুবিধ আমলেরই ছওয়াবের অধিকারী হয়ে যাবে। ছ. নিয়ত একান্তই মনের বিষয়। প্রত্যেকে কেবল তার নিজ মনের অবস্থাই জানে, অন্যের মনে কি আছে তা কেউ জানে না। সুতরাং আমলের ক্ষেত্রে কর্তব্য নিজ নিয়তের তদারকি করা, অন্যের নিয়ত নিয়ে কথা না বলা। অন্যের নিয়ত নিয়ে কুধারণা করা গুনাহ'র কাজ। এর থেকে বিরত থাকা জরুরি।


tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক নিষ্প্রয়োজন

সহীহ বুখারী - হাদীস নং ৬২৩২ | মুসলিম বাংলা