আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৬৯- শপথ ও মান্নতের অধ্যায়
৬২৩১। কুতায়বা ইবনে সাঈদ (রাহঃ) ......... আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একদা আবু তালহা (রাযিঃ) উম্মে সুলায়ম (রাযিঃ) কে বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর দুর্বল আওয়াজ শুনতে পেলাম, যার মাঝে আমি ক্ষুধার আভাষ পেলাম। তোমার কাছে কি কিছু আছে? উম্মে সুলায়ম (রাযিঃ) বললেন, হ্যাঁ। তখন তিনি কয়েকটি যবের রুটি বের করলেন। এরপর তার ওড়নাটি নিলেন এবং এর কিছু অংশে রুটিগুলো পেঁচিয়ে নিলেন। আনাস (রাযিঃ) বলেন, এরপর তিনি আমাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট পাঠিয়ে দিলেন। আমি গিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে মসজিদে পেলাম; এবং কতিপয় লোক তাঁর সঙ্গে রয়েছে। আমি তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তোমাকে কি আবু তালহা পাঠিয়েছে? আমি বললাম, জ্বী হ্যাঁ।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর সঙ্গীদেরকে বললেনঃ উঠ (আবু তালহার কাছে যাও)। তখন তাঁরা আবু তালহার নিকট চললেন। আমি তাদের আগে আগে যেতে লাগলাম। অবশেষে আবু তালহার কাছে এসে উপস্থিত হলাম এবং তাকে এ সম্পর্কে খবর দিলাম। তখন আবু তালহা (রাযিঃ) বললেন, হে উম্মে সুলায়ম! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তো আমাদের কাছে তাশরীফ এনেছেন আরো মেহমান সহ, অথচ আমাদের নিকট তো এমন কোন খাদ্যই নেই যা তাদের খেতে দিতে পারি। উম্মে সুলায়ম (রাযিঃ) বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূলই এ ব্যাপারে সবচেয়ে ভাল জানেন।
আবু তালহা (রাযিঃ) বেরিয়ে এলেন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে সাক্ষাত করলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও আবু তালহা (রাযিঃ) উভয়ই সামনাসামনি হলেন এবং উভয়ই একত্রে ঘরে প্রবেশ করলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ হে উম্মে সুলায়ম! তোমার কাছে যা আছে তাই নিয়ে এসো। তখন উম্মে সুলায়ম (রাযিঃ) ঐ রুটিগুলো তার সামনে পেশ করলেন। রাবী বলেনঃ এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ঐ রুটিগুলো ছিড়ার জন্য হুকুম করলেন। তখন রুটিগুলো টুকরা টুকরা করা হল।
উম্মে সুলায়ম (রাযিঃ) তার ঘি এর পাত্র থেকে ঘি নিংড়ে বের করলেন এবং তাতে মিশ্রিত করে দিলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার উপর আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী কিছু পাঠ করলেন এবং বললেনঃ দশজন লোককে অনুমতি দাও। তিনি তাদেরকে অনুমতি দিলেন। তখন তারা সকলেই আহার করলেন, এমনকি সবাই পরিতৃপ্ত হয়ে সেখান থেকে বের হলেন। এরপর তিনি আবার বললেনঃ (আরও) দশজনকে অনুমতি দাও। তখন তাদেরকে অনুমতি দেয়া হল। এভাবে তারা সকলেই আহার করলেন, এমনকি সবাই পরিতৃপ্ত হয়ে সেখান থেকে বের হলেন। এরপর আবারো তিনি বললেনঃ আরো দশজনকে আসতে দাও। এভাবে দলের সকলেই পরিতৃপ্ত হল। দলের লোকসংখ্যা ছিল সত্তর বা আশিজন।
হাদীসের ব্যাখ্যাঃ
এই হাদীসটি বিভিন্ন বর্ণনায় বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে। বর্ণনাগুলোর মাঝে ঘটনার বিবরণে বাহ্যত বিরোধ পরিলক্ষিত হয়। তাছাড়া কোন কোন বর্ণনা, সংক্ষিপ্ত আবার কোন কোন বর্ণনা বিস্তারিত। নিম্নে সকল বর্ণনার আলোকে ব্যাখ্যা পেশ করা হল। এ হাদীছে বর্ণিত ঘটনাটি খন্দকের যুদ্ধকালীন। এ যুদ্ধের সময় একটি অস্থায়ী নামাযের স্থান তৈরি করা হয়েছিল। নামাযের সময় হলে সেখানে এসে সকলে নামায পড়তেন। এ সময়েরই ঘটনা যে, হযরত আবু তালহা আনসারী রাযি. সে নামাযের স্থানে প্রবেশ করে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারার দিকে তাকালেন, তখন তাঁর চেহারায় ক্ষুধার ছাপ লক্ষ করলেন। কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, তাঁকে ক্ষুধার্ত অবস্থায় দেখতে পেয়েছিলেন হযরত আনাস রাযি.। তিনি বাড়িতে গিয়ে হযরত আবূ তালহা রাযি.-কে তা অবহিত করেন। কোনও বর্ণনায় আছে, হযরত আবূ তালহা রাযি.-এর কাছে কোনও সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্ষুধার্ত অবস্থার সংবাদ পৌঁছেছিল। তবে এসব বর্ণনার মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। হযরত আনাস রাযি.-এর সূত্রেই হোক বা অন্য কোনও সূত্রে, সংবাদ পেয়েই হযরত আবূ তালহা রাযি. দ্রুত মসজিদে ছুটে আসেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা দেখে নিজেও উপলব্ধি করতে পারেন যে, তিনি খুবই ক্ষুধার্ত। অমনি তিনি বাড়িতে ছুটে গেলেন এবং হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি.-কে বললেন- قد سمعت صوت رسول الله ﷺ ضعيفا أعرف فيه الجوع (আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুর্বল কন্ঠস্বর শুনেছি। আমি তাতে ক্ষুধা অনুভব করেছি)। তিনি হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর কাছে যদিও দুর্বল কন্ঠস্বরের কথা বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে তিনি তাঁর ক্ষুধার্ত অবস্থার কথা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন নানাভাবে। এক তো ক্ষুধায় তাঁর কণ্ঠস্বর দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। এক বর্ণনায় আছে, তখন তিনি সাহাবীদেরকে সূরা নিসা পড়াচ্ছিলেন। দ্বিতীয়ত চেহারায় ক্লান্তির ছাপ দেখা যাচ্ছিল, তৃতীয়ত তখন তাঁর পেটে পাথর বাঁধা ছিল। হাদীসে আছে, হযরত উম্মে সুলায়ম রাযি, হযরত আনাস রাযি.-কে দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কিছু খাবার পাঠিয়েছিলেন। হযরত আনাস রাযি. সে খাবার নিয়ে তাঁর নিকট উপস্থিত হলে পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী করেছিলেন সে সম্পর্কে হযরত আনাস রাযি. বলেন- فقال لي رسول الله صلى الله صلى الله عليه وسلم: أرسلك أبو طلحة؟ فقلت: نعم! فقال: للطعام؟ فقلت: نعم! فقال رسول الله صلى الله عليه لمن معه: قوموا! فانطلقوا (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তোমাকে আবু তালহা পাঠিয়েছে? বললাম, হাঁ। তিনি বললেন, খাবার দিয়ে? বললাম, হাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা ওঠো। তারা (উঠে আমাদের বাড়ির দিকে) চললেন)। পাঠানো হল খাবার দিয়ে, অথচ তিনি নিজেই চলে আসলেন। এর কারণ কী? অন্য বর্ণনা দ্বারা এটা স্পষ্ট হয়। তাতে আছে, হযরত আবূ তালহা রাযি. বলেছিলেন, হে আনাস! তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে দাঁড়াবে। তিনি যখন মজলিস থেকে উঠবেন এবং লোকজন তাঁর থেকে সরে যাবে, তখন তুমি তাঁর পেছনে পেছনে চলবে। তিনি নিজ বাড়ির দরজায় পৌঁছলে তাঁকে বলবে যে, আব্বা আপনাকে যেতে বলেছেন। অপর এক বর্ণনায় আছে, তাঁর মা তাঁকে বলেছিলেন, তুমি তাঁকে বলবে ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি যদি মনে করেন আমাদের ওখানে গিয়ে খাবেন, তবে তাও করতে পারেন। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবূ তালহা আনসারী রাযি.-এর বাড়িতে চলে এসেছেন। হযরত আনাস রাযি. বলেন- وانطلقت بين أيديهم حتى جئت أبا طلحة فاخبرته (আমি তাদের আগে আগে চললাম। আবূ তালহার কাছে এসে এ খবর তাকে দিলাম)। এক বর্ণনায় আছে, হযরত আনাস রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে অনেক লোক আসায় আমি চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। খাবার সামান্য। এত বেশি লোক আসছেন। এখন কী উপায় হবে? এ কারণেই তিনি আগে আগে এসে পিতাকে তাঁদের আগমনের খবর দেন। অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন, আমি ভীত-বিহ্বল অবস্থায় উম্মু সুলায়মের কাছে প্রবেশ করলাম। আরেক বর্ণনায় আছে, হযরত আবূ তালহা রাযি. তাঁকে বলেছিলেন, হে আনাস! তুমি তো আমাদের অপদস্থ করলে! বস্তুত হযরত আবূ তালহা রাযি. খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি নিজ ব্যাকুলতার কথা হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর কাছে প্রকাশ করলে হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি. বললেন الله ورسوله اعلم (আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন)। অর্থাৎ খাবারের পরিমাণ এত অল্প হওয়া সত্ত্বেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সঙ্গে অনেক লোক নিয়ে এসেছেন, তখন ধারণা করি তিনি বুঝেশুনেই এটা করেছেন। হয়তো ওহী মারফত তাঁকে জানানো হয়েছে যে, এ খাবারের ভেতর তাঁর মু'জিযা প্রকাশ পাবে। ফলে অল্প খাবারেই এত সংখ্যক লোক পরিতৃপ্ত হয়ে যাবে। এর দ্বারা বোঝা যায় হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি. একজন বুদ্ধিমতী মহিলা ছিলেন। আল্লাহ তা'আলার প্রতি তাঁর যথেষ্ট নির্ভরশীলতা ছিল। নবুওয়াতের মর্যাদা ও মহিমা সম্পর্কেও তিনি সচেতন ছিলেন। তারপর হযরত আবূ তালহা রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সংবর্ধনা জানানোর জন্য বের হয়ে পড়লেন। হযরত আনাস রাযি. বলেন- فانطلق ابو طلحة حتى لقي رسول الله ﷺ (তারপর আবূ তালহা রাযি. এগিয়ে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে মিলিত হলেন)। বোঝা গেল সামনে এগিয়ে গিয়ে অতিথিকে স্বাগত জানিয়ে নিয়ে আসা চাই। এক বর্ণনায় আছে, হযরত আবূ তালহা রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাত করে বলেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আনাসকে পাঠিয়েছিলাম একা আপনাকে নিয়ে আসার জন্য । আমাদের কাছে খাবার আছে সামান্য। যাদের দেখছি তাদের সকলকে তা দ্বারা আপ্যায়ন করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঘরে ঢোক। তোমার কাছে যে খাবার আছে তাতে আল্লাহ তা'আলা বরকত দেবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে ঢুকে কতটুকু খাবারের ব্যবস্থা আছে তা জেনে নিলেন। তারপর বললেন- هلمي ما عندك يا ام سليم (হে উম্মু সুলায়ম! তোমার কাছে যা আছে বের করো)। উম্মু সুলায়ম রাযি, তাঁর তৈরি করা রুটিগুলো নিয়ে আসলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশে সেগুলো টুকরো টুকরো করা হল। তারপর উম্মু সুলায়ম রাযি, তার উপর একটা কৌটা (থেকে ঘি) ঢেলে দিয়ে তরকারি বানালেন। এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করেছিলেন, একটুও ঘি আছে কি? উত্তরে আবূ তালহা রাযি. বলেন, একটা কৌটায় কিছুটা ঘি ছিল। তারপর তিনি সেটি নিয়ে আসলেন এবং দু'জনে অনেক ঝেড়েমুছে খানিকটা বের করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা করলেন সে সম্পর্কে হযরত আনাস রাযি. সংক্ষেপে বলেন ثم قال فيه رسول الله ﷺ ما شاء الله أن يقول (তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে আল্লাহ তা'আলার যা ইচ্ছা ছিল তাই বললেন)। এ সংক্ষিপ্ত কথার বিস্তারিত বিবরণ অন্যান্য বর্ণনায় পাওয়া যায়। যেমন এক বর্ণনায় আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিসমিল্লাহ বলে নিজ শাহাদাত আঙ্গুলে তা লাগালেন। তারপর তা রুটির টুকরোগুলোয় ছোঁয়ালেন। অমনি সেগুলো ফুলে উঠল। তিনি এরকম কয়েকবার করতে থাকলেন। রুটির টুকরোগুলোও ফুলতে থাকল। এমনকি যে ডিশে সেগুলো ছিল তা ভরে উপচে পড়ার উপক্রম করল। অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে সেগুলো আনা হলে তিনি পাত্র খুলে বলেছিলেন- بسم الله، اللهم أعظم فيها البركة "আল্লাহর নামে। হে আল্লাহ! আপনি এতে বিপুল বরকত দান করুন।" অতঃপর হযরত আনাস রাযি বলেন- ثم قال : ائذن لعشرة فأذن لهم (তারপর বললেন, দশজনকে অনুমতি দাও। তিনি তাদেরকে অনুমতি দিলেন)। বাহ্যত এর দ্বারা বোঝা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাই ঘরে ঢুকেছিলেন, বাকি সকলে বাইরে ছিলেন। এক বর্ণনায় স্পষ্টই তা আছে। তাতে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাড়ির দরজায় পৌছে সঙ্গীদের বললেন, তোমরা এখানে বসো। তারপর নিজে প্রবেশ করলেন। দশজন করে প্রবেশ করতে বলা হয়েছিল সম্ভবত ঘর ছোট হওয়ায়। অধিকাংশ বর্ণনায় দশ-দশজন করে প্রবেশের কথা বলা হয়েছে। এক বর্ণনায় আছে আটজন করে। হতে পারে সেটি ভিন্ন ঘটনা। আবার কোনও রাবীর দ্বারা বিভ্রমও ঘটতে পারে। সে দশজন পরিতৃপ্ত হয়ে খাবার খেলেন। এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুটির টুকরোগুলোর মাঝখানে হাত রাখলেন। তারপর বললেন, তোমরা বিসমিল্লাহ বলে খাও। তারা চারপাশ থেকে খেতে থাকলেন। এমনকি পরিতৃপ্ত হয়ে গেলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা উঠে যাও এবং তোমাদের স্থানে অপর দশজন আসুক। এভাবে দশ-দশজন করে এসে খেতে থাকলেন। সর্বমোট লোক ছিল সত্তর বা আশিজন। তারপরও সে খাবার আগে যেমন ছিল তেমনি থেকে গেল। তারপর পরিবারের লোকজন খেলেন। তারপর আরও বেঁচে থাকল। তাঁরা তা প্রতিবেশীদের মধ্যে বিতরণ করলেন। হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ ক. এ হাদীছ দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের অভাব-অনটন সম্পর্কে ধারণা লাভ হয়। খ. আরও জানা যায় সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেবাযত্নে কেমন আন্তরিক ও তৎপর থাকতেন। গ. ঘরে সামান্য খাবার থাকলেও তা দ্বারা অভুক্তের ক্ষুধা মেটানোর চেষ্টা করা উচিত। ঘ. ঘরের ছোটদেরকেও মেহমানের সেবাযত্নে অভ্যস্ত করে তোলা উচিত। ঙ. মেহমানদারিতে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক পরামর্শ থাকা বাঞ্ছনীয়। স্ত্রীর উচিত মেহমানদারিতে স্বামীর পূর্ণ সহযোগিতা করা। চ. গৃহকর্তার উপর পূর্ণ আস্থা থাকলে আমন্ত্রিত ব্যক্তি সঙ্গে অতিরিক্ত লোক নিয়ে আসতে পারে। ছ. খাবার সাদামাটা বা অল্প পরিমাণ হলে তাতে মেহমানদের অসন্তুষ্ট হওয়া উচিত নয়। বরং আল্লাহর নামে ও দু'আর সঙ্গে তা-ই সন্তুষ্টিভরে গ্রহণ করা চাই। জ. প্রয়োজনে আমন্ত্রিত ব্যক্তি মেহমানদারির কাজে গৃহকর্তার সহায়তা করবে। ঝ. বাড়ি থেকে বের হয়ে মেহমানকে সংবর্ধনা দিয়ে আনা চাই। ঞ. গৃহে স্থান সংকুলান না হলে অতিরিক্ত মেহমান বাইরে অপেক্ষা করতে বিরক্তি বোধ করবে না। ট. মু'জিযা ও কারামাত সত্য। তাতে বিশ্বাস রাখা চাই। ঠ. খাদ্যে বরকত হওয়ার বিষয়টি কুরআন-হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ড. মেহমানদারির পর অবশিষ্ট খাবার সম্ভব হলে প্রতিবেশীদের মধ্যে বিতরণ করবে, বিশেষত তার মধ্যে যদি বরকতেরও প্রকাশ ঘটে। ঢ. এ হাদীছ দ্বারা হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায়।

তাহকীক:
তাহকীক নিষ্প্রয়োজন