প্রবন্ধ
সাহাবা যুগে কিয়াস-ইজতিহাদ ও তাকলীদ
সাহাবাযুগে কিয়াস ও ইজতিহাদের নমুনা
নমুনা-১
মৃত ব্যক্তির পিতা জীবিত নেই কিন্তু দাদা বেঁচে আছেন, এমতাবস্থায় মৃত ব্যক্তির ভাই তাঁর দাদার বর্তমানে ওয়ারিশী সম্পত্তি লাভ করবেন কি না এ নিয়ে জটিলতা দেখা দিল। কুরআন বা হাদীসে এর কোনো স্পষ্ট বিধান না থাকায় ফকীহ সাহাবীগণ থেকে এ ব্যাপারে দু’ধরনের মতামত পাওয়া গেল। একদল বললেন, মীরাস পাবে। আর অপর দল না পাওয়ার পক্ষে রায় দিলেন। পাওয়ার পক্ষে মত দিলেন হযরত আলী রা., হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. ও হযরত যায়েদ ইবনে সাবেত রা. প্রমুখ সাহাবী। সমস্যা নিরসনে হযরত উমর ফারুক রা. হযরত আলী রা. ও হযরত যায়েদ ইবনে সাবেত রা. এর সাথে পরামর্শ করলেন।
হযরত আলী রা. তার মতের স্বপক্ষে কিয়াস পেশ করলেন, ইয়া আমীরুল মুমিনীন! ধরুন একটি বৃক্ষ থেকে একটি শাখা বের হল। তারপর শাখাটি থেকে আরও দুটি প্রশাখা উদগত হল। এক্ষেত্রে আপনার মতে প্রথম শাখাটির কে অধিক নিকটবর্তী? স্বয়ং বৃক্ষটি না তার উদ্গত প্রশাখাদ্বয়? হযরত উমর ফারুক রা. বললেন উভয়ে সমান, অর্থাৎ স্বয়ং বৃক্ষ ও উদগত প্রশাখাদ্বয় উভয়-ই প্রথম শাখাটির সমান নিকটবর্তী। হযরত আলী রা. বললেন, আমীরুল মুমিনীন! ভাই আর দাদার সম্পর্কও মৃতব্যক্তির সঙ্গে অনুরূপ। সুতরাং এক্ষেত্রে ভাই দাদার সঙ্গে মীরাস লাভ করবে।
হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত রা. কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, আমীরুল মুমিনীন! বলুন তো কোনো নদী থেকে একটি নালা বের হল, অতঃপর সেই নালা থেকে আরও দুটি উপনালা সৃষ্টি হল। এক্ষেত্রে নালাটির কে অধিক নিকটবর্তী। নদীটি না উপনালা দুটি? আমীরুল মুমিনীন বললেন, উভয়ই সমান নিকটবর্তী। এবার যায়েদ রা. বললেন, মাইয়েতের সঙ্গে ভাই আর দাদার অবস্থাও অনুরূপ। সাহাবীদ্বয়ের কিয়াস দর্শনে হযরত উমর রা. এর নিকট স্পষ্ট হয়ে গেল যে, উপযুক্ত ক্ষেত্রে ভাই দাদার সঙ্গে মীরাস লাভ করবে।
লক্ষ্যণীয় হল, হযরত আলী রা. এবং হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত রা. দুজনেই আমীরুল মুমিনীনকে কিয়াসের মাধ্যমে জবাব দিলেন। আর আমীরুল মুমিনীনও তা মেনে নিলেন। শুধু তিনি কেন সকল সাহাবীই তাদের এ কিয়াস মেনে নিলেন। কেউ একথা বললেন না যে, শরী‘আতের ব্যাপারে কিয়াস কেন সরাসরি কুরআন হাদীস পেশ করুন। কেননা তাদের জানা ছিল যে, সহীহ কিয়াস শরী‘আতেরই একটি দলীল। (জামিউল মাসানিদ খাওয়ারেজমী কৃত ২/৩৩৮)
নমুনা-২
মদ পানকারীকে কত বেত্রাঘাত করা হবে এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ ছিল। কারো বক্তব্য ছিল ৪০টি আর কারো মত ছিল ৮০টি। হযরত উমর রা. এ ব্যাপারে হযরত আলী রা. এর সঙ্গে পরামর্শ করলেন। হযরত আলী রা. বললেন, আমার মতে তাকে আশিটি বেত্রাঘাত করা হোক। কারণ যখন সে পান করে নেশাগ্রস্ত হয়। নেশাগ্রস্ত হলে প্রলাপ বকতে থাকে। আর প্রলাপ বকতে বকতে কারও প্রতি অপবাদ আরোপ করে বসে। (আর অপবাদ আরোপের শাস্তি ৮০ বেত্রাঘাত) তারপর হযরত উমর রা. মদপানকারীকে ৮০টি বেত্রাঘাত করার সিদ্ধান্ত দিলেন। (মুয়াত্তা ইমাম মালিক হাদীস নং ৯৯৫)
দেখা যাচ্ছে, হযরত উমর রা. হযরত আলী রা. এর কিয়াসের ভিত্তিতে শরয়ী দণ্ডবিধি প্রয়োগ করলেন।
নমুনা-৩
একবার এক গোত্রের কিছু লোক এসে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর নিকট জানতে চাইল, জনাব! আমাদের এক ব্যক্তি বিবাহ করেছে, কিন্তু মহর নির্ধারণ করেনি। তারপর সে তার স্ত্রীর সঙ্গে সহবাসের পূর্বেই ইন্তিকাল করেছে। এখন তার মহরের ব্যাপারে কি ফায়সালা হবে? হযরত আবদুল্লাহ রা. বললেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর আমার নিকট এর চেয়ে জটিল কোনো সমস্যা উপস্থিত হয়নি। তোমরা এ ব্যাপারে অন্যদেরকেও জিজ্ঞাসা কর। তারপর ব্যাপারটি নিয়ে সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে একমাস পর্যন্ত আলোচনা চলতে থাকে। পরিশেষে তাঁরা আবারও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর দারস্থ হয়। তিনি তাদেরকে বললেন, আমি আমার রায় দ্বারা ইজতিহাদ করে সমাধান দিচ্ছি। সঠিক হলে তা আল্লাহ ও তার রাসূলের পক্ষ হতে আর ভুল হলে আমার ও শয়তানের পক্ষ হতে। এ ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল দায়মুক্ত। অতঃপর তিনি সকলের সামনে তাঁর ইজতিহাদ তুলে ধরলেন যে, এ মহিলা মহরে মিছিল পাবে, তার মৃত স্বামীর ওয়ারিশ হবে এবং চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করবে। এ ফায়সালা শোনার পর তৎক্ষণাৎ এক ব্যক্তি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনার সিদ্ধান্ত আল্লাহ ও রাসূলের সিদ্ধান্তের সঙ্গে মিলে গেছে। আমাদের গোত্রীয় বিরওয়া বিনতে ওয়াসিক নাম্নী এক মহিলার ব্যাপারে স্বয়ং নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. স্বীয় কিয়াস সহী হওয়ার দলীল জানতে পেরে এত বেশী খুশি প্রকাশ করলেন যে, ইসলাম গ্রহণের পর তিনি এতোটা আনন্দ কখনো প্রকাশ করেন নি। (উসুলুল জাসসাস ২/২৩০)
নমুনা-৪
ইসলামের প্রথম খলীফা হযরত আবূ বকর সিদ্দিক রা. এর খলীফা নিযুক্ত করণের বিষয়টিও সাহাবায়ে কেরামের ইজতিহাদ দ্বারা হয়েছিল। কেননা কুরআন হাদীসের কোথাও একথা নেই যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর তিনিই সর্বপ্রথম খলীফা হবেন। (উসুলুল জাসসাস ২/২৩০)
শরী‘আতে ইসলামিয়ায় এ জাতীয় আরও বহু মাসআলা রয়েছে যেগুলো সাহাবায়ে কেরামের কিয়াস ও ইজতিহাদ দ্বারা গৃহীত হয়েছে।
নিম্নবর্ণিত সাহাবায়ে কেরাম কিয়াস ও ইজতিহাদের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন:
১.হযরত উমর রা. ২. হযরত আলী রা. ৩. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. ৪. উম্মুল মুমিনীন আয়িশা রা. ৫. যায়েদ ইবনে সাবিত রা. ৬. আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. ৭. আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.।
এদের পরবর্তী ছিলেন, ১. হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রা. ২. হযরত উম্মে সালামা রা. ৩. উসমান ইবনে আফফান রা. ৪. আনাস ইবনে মালেক রা. ৫. আবূ সাইদ খুদরী রা. ৬. আবূ হুরায়রা রা. ৭. আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. ৮. আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. ৯. আবূ মুসা আশআরী রা. ১০. সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রা. ১১. সালমান ফারসী রা. ১২. মুআয ইবনে জাবাল রা. ১৩. তালহা রা. ১৪. যুবাইর রা. ১৫. আবদুর রহমান ইবনে আউফ রা. ১৬. মুআবিয়া রা. প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।
সাহাবাযুগের কিয়াস ও ইজতিহাদ সংক্রান্ত উপর্যুক্ত প্রামাণ্য আলোচনা থেকে স্পষ্ট হল, কিয়াস ও ইজতিহাদ ভূঁইফোড় কোনো বিষয় নয়। বরং তা শরী‘আতের দলীল চতুষ্টয়ের অন্যতম। এ ব্যাপারে সংশয় পোষণ করা গোমরাহী ও ইলমী দৈন্যের পরিচায়ক।
সাহাবাযুগে তাকলীদঃ
সাহাবায়ে কেরাম রা. উম্মতের জন্য দ্বীন পালনের নমুনা ও মাপকাঠি। তারা যেভাবে কুরআন, সুন্নাহর উপর আমল করেছেন, সফলতা পেতে হলে উম্মতকে সেভাবে পথ চলতে হবে। বলা বাহুল্য, সাহাবায়ে কেরাম সকলে ইলমে দ্বীন চর্চাকে নিজের পেশা বানাননি। তারা বিভিন্ন ধরনের দ্বীনী ও দুনিয়াবী কাজে ব্যস্ত থাকতেন। অল্পসংখ্যক সাহাবায়ে কেরামই ইলম চর্চাকে নিজের পেশার মত বানিয়ে নিয়েছিলেন। সাধারণ নিয়মও এই যে, সকল মানুষ একই ধরনের পেশা ও কাজ অবলম্বন করেন না। প্রয়োজন অনুপাতে বিভিন্নজন বিভিন্ন কাজে মশগুল হয়। যাতে দ্বীন দুনিয়ার যাবতীয় বৈধ কাজের ধারা সচল থাকে। এজন্যই দেখা যায় পৃথিবীতে সকলেই এক জাতীয় পেশা গ্রহণ করে না। একেক জন একেক বিষয়ে জ্ঞানার্জন করে ও বিশেষজ্ঞ হয়। আর অন্যরা সে ব্যাপারে তাকে মেনে চলে ও তার থেকে উপকৃত হয়। এটা এমন এক নিয়ম যার কোনো ব্যত্যয় নেই।
সাহাবায়ে কেরামও এই নিয়মের আওতার বহির্ভূত ছিলেন না। সে হিসেবে সাহাবায়ে কেরামের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক সাহাবী ইলমে দ্বীন চর্চায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। তারা কুরআনে কারীম এবং নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাজার হাজার হাদীস মুখস্ত করেছিলেন। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে তারা কারী, হাফেজে কুরআন, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও মুফতী নামে পরিচিত ছিলেন। সাহাবায়ে কেরামের সার্বিক ব্যাপারে তারাই সিদ্ধান্ত দিতেন। যে ব্যাপারে কুরআন হাদীসে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা থাকতো তারা সে ক্ষেত্রে সরাসরি কুরআন হাদীস থেকে ফায়সালা দিতেন। কুরআন হাদীসে পাওয়া না গেলে নিজ নিজ ইজতিহাদ ও কিয়াস দ্বারা তার সমাধান দিতেন। অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম বিনাবাক্যে তাদের সিদ্ধান্ত অনুসরণ (তাকলীদ) করতেন। সকল ক্ষেত্রে তাদেরকে ফায়সালাকারী মানতেন এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতেন।
লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ফিকহী মাযহাব সাহাবায়ে কেরামের যুগেই বিদ্যমান ছিল। তবে তা শাস্ত্র আকারে সংকলিত ছিল না। মনে রাখতে হবে কোনো বিষয় শাস্ত্র আকারে সংকলিত না হওয়া তার অস্তিত্বহীনতার প্রমাণ নয়। উদাহরণত: কুরআন অবতরণের যুগে আরবী ব্যাকরণ শাস্ত্র আকারে সংকলিত ছিল না। কিন্তু কুরআন নাযিলের শত শত বছর পূর্ব থেকেই আরবগণ ব্যাকরণসম্মত আরবীতে কথা বলে ও সাহিত্য চর্চা করে এসেছেন। যাহোক কিছু সংখ্যক সাহাবী ছিলেন মাযহাবের ইমাম। আর অন্যান্যরা তাদের ফিকহী মতামত অনুসরণ করে চলতেন। অর্থাৎ তারা ইমাম সাহাবীদের তাকলীদ করতেন। এ ব্যাপারে ইমাম বুখারী রহ. এর বিশিষ্ট উস্তাদ ইমাম আলী ইবনুল মাদীনী রহ. এর বর্ণনা দেখুন। তিনি তার এক রচনায় সেসব ফকীহ সাহাবীর আলোচনা করেছেন যাদের শিষ্যগণ তাদের মতামত ও সিদ্ধান্তগুলো সংরক্ষণ করেছেন। আর তাদের মাযহাব ও তরীকার উপর আমল ও ফাতাওয়া চালু ছিল। তিনি বলেছেন, সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে এ ধরনের ব্যক্তি ছিলেন ১. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. ২. যায়েদ ইবনে সাবেত রা. ৩. আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.। এরপর হযরত আলী ইবনুল মাদীনী রাহ. তাদের প্রত্যেকের মাযহাব অনুসরণকারী ও সে মোতাবেক ফাতাওয়া প্রদানকারী ফকীহ তাবেঈদের নাম উল্লেখ করে বলেছেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. এর যে শিষ্যগণ তার কিরাআত অনুযায়ী লোকদেরকে কুরআন শিখাতেন তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফাতাওয়া দিতেন এবং তার মাযহাব অনুসরণ করতেন, তারা হলেন, ১. হযরত আলকামা রহ. ২. হযরত আসওয়াদ রহ. ৩. হযরত মাসরূক রহ. ৪. হযরত আবীদাহ রহ. ৫. হযরত আমের ইবনে শুরাহবীল রহ. ৬. হযরত হারিস ইবনে কায়েস রহ. প্রমুখ। অতঃপর ইবনুল মাদীনী রহ. বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. এর ফকীহ শিষ্যদের সম্পর্কে ও তাদের মাযহাব বিষয়ে পরবর্তীদের মধ্যে সর্বাধিক বিজ্ঞ ছিলেন, ইবরাহীম নাখায়ী ও আমের ইবনে শুরাহবীল রহ.। তারপর তিনি হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত রহ. এর মাযহাবের অনুসারী ও তার সিদ্ধান্তসমূহ সংরক্ষণকারী ও তদানুযায়ী ফাতাওয়া প্রদানকারী বারোজন ফকীহর নাম উল্লেখ করে বলেন, এদের মধ্যে যায়েদ ইবনে সাবিতের মাযহাব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ছিলেন ইবনে শিহাব যুহরী, ইয়াহইয়া ইবনে যায়দ আনসারী, আবূ যিনাদ ও আবূবকর ইবনে হাযম। অতঃপর তিনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর মতামত সংরক্ষণকারী ও তার প্রচার প্রসারকারীদের নাম উল্লেখ করেন। (কিতাবুল ইলাল ১৩৫-১৫৭)
সহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে, একবার মদীনা শরীফ থেকে কিছু লোক হজ্ব করতে মক্কা শরীফ এসেছিল। বিদায়ের সময় তাদের এক মহিলা বিদায়ী তওয়াফের পূর্বেই ঋতুমতী হয়ে পড়ে। তারা মক্কার মুফতী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর নিকট ফাতাওয়া জানতে চান। তিনি ফাতাওয়া দিলেন, এই মহিলার বিদায়ী তাওয়াফ মাফ হয়ে যাবে। তারা বলল, আমাদের মদীনার মুফতী যায়েদ ইবনে সাবিত তো বলেন, এ ধরনের মহিলা পবিত্র হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে অতঃপর বিদায়ী তওয়াফ করে দেশে ফিরে যাবে। আমরা তার মতামত কিভাবে উপেক্ষা করব? হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. তাদেরকে বললেন, তোমরা মদীনার উম্মে সুলাইমকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর। নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী হযরত সাফিয়্যা রা. এ অবস্থার সম্মুখীন হলে তিনি তাকে আমার মতই সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। (সহীহুল বুখারী, কিতাবুল হজ্ব হাদীস নং ১৭৫৮, ১৭৫৯)
মদীনা শরীফের উক্ত হাজীদের এ মন্তব্য সবিশেষ লক্ষণীয় যে, আমরা কিভাবে যায়েদ ইবনে সাবিতের মতামত উপেক্ষা করব। এই মন্তব্য একথার সুস্পষ্ট প্রমাণ যে, তারা সর্ব ব্যাপারে হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত রা. এর মাযহাবের (সিদ্ধান্তসমূহ) তাকলীদ করতেন।
এ আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট হল, তাকলীদের বিষয়টি সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে পুরোপুরি বিদ্যমান ছিল। আর থাকবে নাই বা কেন, তারাতো নিজেদেরকে ডক্টর আর আযহারী মনে করতেন না। তারা চাইতেন যে ব্যাপারে নিজেদের জানা নেই তা বিজ্ঞ ও জ্ঞানী ব্যক্তিদের থেকে জেনে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করি। এভাবে আমল করাকে তারা সৌভাগ্য জ্ঞান করতেন। কারণ তারা ছিলেন প্রকৃতই সত্যের অনুসন্ধানী। আর বর্তমানের গাইরে মুকাল্লিদ ভাইদের কাণ্ড-কারখানা নিয়ে তাদের প্রখ্যাত ইমাম নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান কত সুন্দর বলেছেন, (বর্তমান যামানায় গাইরে মুকাল্লিদ (আহলে হাদীস) ভাইদের না আছে সঠিক পথ লাভ করার চিন্তা-ভাবনা, আর না আছে সঠিক জ্ঞানের অনুসন্ধান। তারা শুধু সরলমনা সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে দু’চারটি ফিকহী মাসআলা প্রচার করে তাদের বিভ্রান্ত করছেন। (আল হিত্তাহ ফি যিকরিস সিহাহ সিত্তাহ এর ভূমিকা পৃ: ১৫৩)
আল্লাহই ভালো জানেন এতে তাদের কি লাভ? মুসলমানদের ইজতিমায়ী জীবনে ফাটল ধরানো তো দ্বীনের মারাত্মক ক্ষতি।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
প্রসঙ্গ মুয়াবিয়া রাজিআল্লাহু আনহুঃ সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কিত ইতিহাস পাঠের মূলনীতি
...
কুরআনে কারীম ও সাহাবায়ে কেরাম রাযিয়াল্লাহু আনহুম কিছু দিক কিছু দৃষ্টান্ত
সাহাবায়ে কেরামের তিলাওয়াত কুরআনেরঅন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হক হল অধিক পরিমাণে তিলাওয়াত করা। কোনো কোনো দিক ...
হযরত উসমান রাঃ সম্পর্কে উত্থিত আপত্তির স্বরূপ সন্ধানে
হযরত উসমান রাঃ এর উপর স্বজনপ্রীতিমূলক আপত্তি সমূহের তাহকিকঃ হযরত উসমান রাঃ সম্পর্কে স্বজনপ্রীতিমূলক ...