প্রবন্ধ

নামায পড়তে জানলে পড়াতে জানব না কেন?

লেখক:শাঈখুল ইসলাম হযরত আব্দুল মালেক
১১ আগস্ট, ২০২৪
১৯৫৯ বার দেখা হয়েছে
মন্তব্য

গত জুমার আগের জুমাটি ছিল ঈদের পরের জুমা। সে জুমায় আমাকে আলোচনা করতে হয়েছিল। সেদিন যে কথা বলা হয়েছিলমূলকথাটা আজও আবার বলছি-

ঈদের পরে সংগত কারণেই ইমাম সাহেবগণের বাড়িতে যেতে হয়। কারণ অধিকাংশ ইমাম সাহেবের বাড়ি দূর-দূরান্তের জেলায়। যেমন বরিশালপটুয়াখালী বা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়।

ইমাম সাহেবগণের ইকরাম করার বিষয়টা তো অনেক এলাকার লোক জানেই না। কীভাবে আলেমের ইকরাম করতে হয়কীভাবে ইমাম-খতীবের ইকরাম করতে হয়- এটা শেখা যে আবশ্যকএকথা অনেকেই জানে না।

যাইহোকএই এলাকার ইমাম সাহেবগণ হয়তো বছরের এক ঈদ বা দুই ঈদে বাড়িতে যান। কারো যেতেই এক-দেড় দিন লেগে যায়। এবার কুরবানীর ঈদের প্রথম দিন ছিল সোমবার। গিয়েই কি কেউ আবার জুমাবারে চলে আসতে পারেফলে দেখা যায়অধিকাংশ মসজিদে জুমার দিন জুমার নামায পড়ানোর লোক নেই। এজন্য জুমার ইমাম নেওয়ার জন্য এখানে চলে আসে।

মারকাযুদ দাওয়াহ এখানে এসেছে প্রায় পনেরো বছর। তার আগে এমন পরিস্থিতিতে কী হতজানি না! কিন্তু পনেরো বছর যাবৎ এটাই দেখছি!

এসে বলে, ‘হুজুরএকজন হুজুর দেন!’ অনেকে তো এটাও বলতে জানে না। বরং বলে, ‘একটা হুজুর দেন!

কী করবেন একটা হুজুর’ দিয়ে?

বলেতাদের ইমাম সাহেব ছুটিতে গিয়েছেন।

আমি বললামএখানেও তো ছুটি। এখানের লোকদেরও তো ঈদের সময় বিরতি। ঈদের পরের জুমায় এখানে মাত্র দুজন তালিবুল ইলম ভাই ছিলেন।

ওই জুমার বয়ানে বলা হয়েছিলজুমার নামায যে পড়তে জানেসে পড়াতে জানে না কেন?!

যোহর নামায আমি পড়তে জানিকিন্তু পড়াতে জানি না- এ কেমন কথা! ফজরের নামায পড়তে পারিপড়াতে পারি না- এ কেমন কথা! এটা মুসলিম সমাজ। আমরা তো মুসলিম। আমাকে তো জানতে হবে। আমাকে শিখতে হবেজুমার নামায কীভাবে পড়াতে হয়! প্রত্যেক মুসল্লির ঈমান-আমল এবং ইলমের হালত এমন হতে হবে যেসে যেমন নামায পড়তে পারেতেমনি নামায পড়াতেও পারে। এটা জরুরি। বরং এটা ফরয ইলমের অন্তর্ভুক্ত।

মহিলাদের জন্য ইমামতির বিষয় নেই এবং নিয়মও নেই। কিন্তু প্রত্যেক পুরুষকে তো এগুলো শিখতে হবে। যে নিয়মতান্ত্রিক মুআয্যিন নয়তারও আযান শেখা জরুরি নয় কিকেবল যে দু-একজন আযান দেনতারাই আযান শিখবেনবাকিরা শিখবে নাএ কেমন কথা!

আযানের জওয়াব দেওয়ার জন্যও তো আযান শিখতে হয়। আযানের জওয়াব যদি দিতে জানিতো আযান দিতে জানি না কেনদুটো তো একই। কানে হাত দিয়ে কেবলামুখী হয়ে শুধু একটু আওয়াজ করে বলতে হবে আর কী!

এজন্য প্রত্যেক মুসল্লিকে আযান এবং ইমামতি পারতে হবে।

মুসল্লী বলতে প্রত্যেক মুমিন মুসলিমকে বোঝানো হয়েছে। কারণ মুমিন মুসলিম যিনি তিনি মুসল্লি হবেন না কীভাবে?

প্রত্যেক মুমিন মুসলিমকে মুনফারিদ অবস্থায় এবং মুক্তাদী হয়ে সালাত আদায়ের নিয়ম যেমন শেখা ফরযতেমনি সালাতের ইমামতিও শেখা কর্তব্য। জুমা ও ঈদের নামাযের ইমামতি শেখাও কর্তব্য। এমন যেন না হয়সমাজে যতগুলো মসজিদ থাকবেকেবল ততজন লোকই খতীব হবেন বা জুমার ইমামতি করতে পারবেনবাকিরা কিছুই পারবে না। বরং প্রত্যেককেই শিখতে হবে এবং পারতে হবে। এটা যদি না করি বা না শিখিতাহলে আমার একটি যিম্মাদারি অনাদায় থেকে গেল।

তবে মনে রাখতে হবেকোনো মসজিদের খতীব বা ইমাম হওয়া এক কথাইমামের অনুপস্থিতিতে ইমামতির কাজ চালিয়ে নিতে পারা ভিন্ন কথা। ইমামতি ও খেতাবাত শতভাগ আলেমদের কাজ।

একজন ইমাম ও খতীব হওয়ার জন্য অনেক যোগ্যতার প্রয়োজন। ইলম-আমল-তাকওয়া-ত্বহারাত ইত্যাদি বিষয়ে তাঁর অনেক উঁচু মাপের হওয়া জরুরি। কারণ ইমামতি ও খেতাবাত তো নবীর প্রতিনিধিত্ব। আলেমগণ নবীর ওয়ারিস ও প্রতিনিধি হিসেবে এই দায়িত্ব পালন করেন।

অনেকে মনে করেএটা হালকা জিনিস। হুজুররা কেবল এটুকুই জানে- পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়িয়ে দেবেজানাযা পড়িয়ে দেবেঈদ আর জুমা পড়িয়ে দেবেকেবল এটুকুই জানে!

আরেহুজুররা যদি কেবল এটুকুই জেনে থাকেএটাও কম কীসেরকারণ এটা সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী এবং বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিনিধিত্ব। তাঁর ওয়ারিস ও উত্তরসূরিদের এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কেউ হয়তো এটা নিয়ে কটাক্ষ করতে পারেকিন্তু হুজুররা এটাকে নিজেদের জন্য সৌভাগ্য ও গৌরবের বিষয় মনে করেন।

যাহোকহুজুররা যে ইমামতি করেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযজুমাঈদ এবং জানাযার নামাযে- ওই ইমামতির কথা আপনাকে এখন বলা হচ্ছে না। কারণ সেই ইমামতি সবার পক্ষে সম্ভব নয়। সেটি তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিনিধিদের কাজ। এটা নসীবের বিষয়। কারণ এটা আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের বৈশিষ্ট্য এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিনিধিত্ব। যা সবাই  পারবেও না এবং সবাইকে সেটা করতে হবেÑ তাও বলা হচ্ছে না।

আপনাকে এখন বলা হচ্ছেঅন্তত এতটুকু যোগ্যতা নিজের হাসিল করাযেন ঠেকার সময় কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়।

যদিও এটা আলেমদের কাজ। তার মানে তো এই নয় যেঅন্যরা সেটি শিখতেই পারবে না। বরং শিখতে হবে। নামায যেমন নিজে আদায় করতে পারেতেমনি কখনো কেনো প্রয়োজনে যেন নামায পড়িয়েও দিতে পারে। এই প্রাথমিক বিষয়টা সবাইকে জানতে হবে। হাঁইমামত ও খেতাবতের মূল যোগ্যতাযেটা আলেমগণ অর্জন করে থাকেনসেটা অর্জন করা সময় সাপেক্ষ বিষয়। তবে এর প্রাথমিক স্তরটি অর্জন করা কঠিন কিছু নয়।

ঠেকার সময় নামায পড়িয়ে দেওয়ার কৌশল

ঠেকার সময় নামায পড়িয়ে দেওয়ার কৌশলটা একটু শিখে নিন!

পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের বিষয়টা একেবারেই সহজ। পড়তে পারলে পড়াতেও পারতে হবে। আপনি যদি বলেনআমি তো সূরা-কেরাত পড়তে পারি নাতাহলে তো প্রশ্ন আসবেআপনার নিজের নামায সঠিক হচ্ছে কি নাআপনার সূরা-কেরাত যদি সহীহ-শুদ্ধ না থাকেতাহলে তো আপনার নিজের নামাযই সঠিক হচ্ছে না।

যদি বলেননা হুজুরআমার তিলাওয়াত এত অশুদ্ধ নয়বরং মোটামুটি চলেতাহলে আপনাকে বলবইমাম সাহেব নেইআপনার তিলাওয়াত এখন সামনের জায়নামাযেও চলবে! কারণ মোটামুটি চললে ঠেকার সময় সামনের জায়নামাযেও কাজ চালানো যাবে।

কিন্তু যদি সূরা-কেরাতের মধ্যে একেবারে লাহনে জালী অর্থাৎ অর্থ পরিবর্তন হয়ে সব বরবাদ হয়ে যাওয়ার মতো ভুল থাকেতাহলে আপনার জন্য আগে নিজের নামায শেখাই ফরয। নামায শিখতে হলে কুরআন শিখতে হবে। সহীহ-শুদ্ধ তিলাওয়াত শিখতে হবে। কিন্তু পাঁচ ওয়াক্ত নামায সহীহ হওয়ার মতো কেরাত যার শুদ্ধ আছেসে পেছনে পড়তে পারলে সামনে দাঁড়িয়েও পড়তে পারবে।

থাকল জুমা আর ঈদ। সেখানে খুতবার একটা বিষয় আছে। কারণ জুমার নামায সহীহ হওয়ার জন্য খুতবা শর্ত। খুতবা ছাড়া জুমার নামায সহীহ হয় না। আর ঈদের নামাযে খুতবা দেওয়া সুন্নত। ঈদের নামাযের খুতবা নামাযের পরে হয়জুমার খুতবা নামাযের আগে হয়।

কেউ দেখে দেখে খুতবা পড়েসেটাও পারি না। কেউ লিখে নিয়ে এসে পড়েসেটাও পারি না। কেউ মুখস্থ করে এসে শোনায়সেটাও পারি না। আর কেউ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নগদ খুতবা দিচ্ছেসেটা তো পারার প্রশ্নই আসে না। তাহলে আমি জুমার নামায পড়িয়ে দেব কীভাবেচলুনআপনাকে ওই রহস্যও বলে দিই!

এটা বলে দিলে কিন্তু বিষয়টা হালকা হয়ে যাবেএমন নয়। হালকা হবে যারা বিচক্ষণ নয় তাদের কাছে। বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান লোকেরা ঠিকই বিষয়ের তাৎপর্য ধরতে পারবেন। কাজেই বিষয়টা বোঝা দরকারসাথে কারো যদি ভুল বোঝাবুঝি হওয়ার আশঙ্কা থাকেসেটিরও সংশোধন করে দিতে হবে।

আমার আফসোস হয়। আমি এসব কথা বলা শুরু করেছি আজ থেকে ২৬/২৭ বছর আগের একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে। সম্ভবত কোনো ঈদের সময় হবে। এরকম এক গ্রাম এলাকার ঘটনা । সেখানে মসজিদের ইমাম সাহেব বাড়িতে গিয়েছেন আর মুসল্লিরাও নামায পড়ানোর জন্য তালাশ করে কাউকে পায়নি।

সেজন্য মসজিদভর্তি মুসল্লি থাকা সত্ত্বেও তারা জুমা পড়েনি। কারণ জুমা পড়ানোর জন্য কাউকে তারা পায়নিতাই তারা যোহরের নামায আদায় করেছে।

إِنَّا لِلهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعونَ.

হায় আফসোস! অথচ ফরয ছিল জুমার নামায। জুমা ফরয হয় না- একেবারে এমন এলাকা এখন এদেশে খুব কমই পাওয়া যাওয়ার কথা। কারণ সেটি হতে হবে এমন বিচ্ছিন্ন জনবসতিযেখানে শহরের কোনো সুবিধাই পৌঁছে না। কারণ জুমার জন্য একটু শহর শহর ভাব হতে হয়।

ওই ধরনের গ্রাম এখন নেই বললেই চলেযেই গ্রামে গ্রাম হওয়ার কারণে জুমার বিধান প্রযোজ্য হবে না।

যাইহোকওই মসজিদে রীতিমতো জুমা হয়কিন্তু জুমা পড়ানোর মতো কাউকে না পাওয়ার কারণে সেদিন তারা যোহর আদায় করল। তখন থেকে আমি এটা বলা শুরু করেছি যেএমন ঠেকায় যদি কখনো আপনি পড়েনতখন খুতবার মূল কাজ হয়ে যাওয়ার জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। কারণ জুমার নামায সহীহ হওয়ার জন্য যতটুকু খুতবা দরকারততটুকু সহজ এবং সেটা যে কোনো মুসল্লিই পারবেন। যে নিজের নামায আদায় করতে পারেসেই পারবে। কারণ জুমার দুই রাকাত ওই ব্যক্তি পড়াতে পারবেনযিনি দুই রাকাত ফজর পড়তে পারেন। ফজরের কেরাতও আওয়াজ করে পড়তে হয়জুমার কেরাতও আওয়াজ করে পড়তে হয়। ইমাম সাহেব যে লম্বা সুন্নত কেরাত পড়েনসেটা তো এই ঠেকার অবস্থায় প্রয়োজন নেই। ইন্না আতাইনা’ আর কুল হুওয়াল্লাহু’ (সূরা কাউসার ও সূরা ইখলাস) দিয়ে পড়লেও নামায আদায় হয়ে যাবে।

খুতবার জন্য আপনি প্রথমে দাঁড়াবেন। কিছু পারেন আর না পারেন সূরায়ে ফাতেহা ও কালিমায়ে শাহাদাত তো পারেন। দাঁড়িয়ে সেগুলোই পড়ে ফেলুন। পারলে আরেকটা সূরাও পড়ুন বা আপনার মুখস্থ থেকে কোনো একটি আয়াত পড়ুন। না পারলে কোনো সমস্যা নেই। এরপর আপনি বসে পড়ুন! ব্যসপ্রথম খুতবা হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ জুমা সহীহ হওয়ার জন্য যে খুতবা জরুরিসেটা জরুরত পরিমাণ আদায় হয়ে গিয়েছে। এতটুকু হলেও ফরযটা আদায় হয়ে যায়। কিন্তু  খুতবার ভয়ে যোহর পড়তে হবে- এমন কথা নয়।

যাইহোকএবার আবার দ্বিতীয় খুতবার জন্য দাঁড়িয়ে যান! আবারো সূরা ফাতেহা পড়ুন! সূরা ফাতেহা  পুরো না পড়ে শুরুর এক-দুই আয়াত পড়লেও হবে। উদাহরণস্বরূপ-

اَلْحَمْدُ لِلهِ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَ، اَلرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ، مٰلِكِ یَوْمِ الدِّیْنِ.

এরপর কালিমায়ে শাহাদাত পড়ুন। এরপর ওই প্রসিদ্ধ আয়াত পড়ুন-

اِنَّ اللهَ وَ مَلٰٓىِٕكَتَهٗ یُصَلُّوْنَ عَلَی النَّبِیِّ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَیْهِ وَ سَلِّمُوْا تَسْلِیْمًا.

যদি পারেন পড়ুন! সবসময় শুনতে শুনতে এতদিনে মুখস্থ হয়ে যাওয়ারও কথা। তাও যদি না পারেনতাহলে কালিমায়ে শাহাদাত পড়ে নামাযে যে দরূদ শরীফটা সাধারণত পড়েনসেটাই পড়ে ফেলুন!

ব্যসআপনার দ্বিতীয় খুতবাও হয়ে গেল। এরপর আপনি দুই রাকাত নামায পড়িয়ে দিন! যে নিজের নামায পড়তে পারে সে এভাবে জুমার নামাযও পড়াতে পারবে।

তার মানে এই নয় যেশুধু এতটুকু পারলেই তাকে আপনাদের মসজিদের খতীব হিসেবে নিয়োগ দেবেন! কখনো নয়। এখন আমি ঠেকার কাজ সারানোর কথা বলছি।

তার পরও খতীব পাওয়া যাচ্ছে না বলে জুমার বদলে যোহর পড়ে নেওয়ার অবকাশ নেই। এই মাসআলা যদি আমার জানা থাকে যেঠেকার সময় এভাবেও জুমার নামায পড়ানো যায়তাতে কী দোষ আছে?

হাঁজুমার নামায পড়ানো এবং খুতবা দেওয়া পরহেযগার-মুত্তাকী যোগ্য আলেমদেরই কাজ। কিন্তু ঠেকার কাজ যে কোনো মুসল্লিই সারতে পারেন।

নামাযে যাদেরকে ইমাম মানছি তাদেরকেই যিন্দেগীর সবকিছুর ইমাম বানাতে হবে

এই এলাকার মানুষ আগে আমাদের খোঁজ করত কেবল জানাযা পড়ানোর জন্য। মারকাযের হুজুররা জানাযা পড়াবে!’ কারণ তারা মনে করেহুজুরদের কাজ কেবল জানাযা পড়ানো। আর মাসআলার জন্য হলে কেবল তালাকের মাসআলা!

এখন ধীরে ধীরে অনেকের ভুল ভেঙেছে- নাহুজুরদের থেকে জানার মতো অনেক কিছু আছে। বরং পুরো যিন্দেগীর সবকিছুই জানতে হবে হুজুরদের থেকে।

জুমা-জানাযায় হুজুরদের ইমাম হওয়ামসজিদের মেহরাবে-মিম্বরে তাঁদের খতীব হওয়াএটা তো অন্য জিনিস! এই বিধান আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে এই সুন্নত আল্লাহ তাআলা জারি করেছেন।

এর মাধ্যমে পুরো মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহ তাআলা এই বার্তা দিয়েছেন যেযাদের পেছনে তুমি সর্বোচ্চ আমল ফরয নামায আদায় করছতাদেরকে তোমার যিন্দেগীর সবকিছুর ইমাম বানাতে হবে।

তোমার ব্যবসা-বাণিজ্যের বিষয়ে হুজুররা যেভাবে বলেন সেভাবে কর। তাঁরা বলছেনএটা সুদ হয়ে যায়ওটা নাজায়েযএটা হারাম হয়ে যায়ওটা সন্দেহযুক্ততুমি সব ছেড়ে দাও এবং হালাল তরিকায় চল!

তোমার ঘরটা মুমিনের ঘরের মতো সাজাতে হুজুরদের পরামর্শ গ্রহণ কর। তোমার সন্তানদের লেখাপড়া ও তালীম-তরবিয়তের বিষয়ে হুজুরদের সঙ্গে আলোচনা কর।

অফিসে চাকরির বিষয়টা হুজুরের সামনে পেশ কর। মোটকথাজীবন-জীবিকার জন্য তুমি যে উপায় বা মাধ্যম গ্রহণ করেছসেটা সম্পর্কেই তুমি হুজুরদের জিজ্ঞেস কর।

হুজুরদেরকে নামাযের ইমাম বানিয়ে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের এই বার্তা দিয়েছেনÑ যেই ইবাদতটি একমাত্র খালেস আল্লাহর জন্যযেখানে অন্য কাউকে শরীক করলে তাওহীদ শেষ হয়ে যায়মানুষ শিরকে লিপ্ত হয়ে যায়সেখানে আল্লাহ তাআলা যাকে তোমার ইমাম বানিয়ে দিয়েছেনতার অনুসরণ করেই তুমি ইবাদতের প্রতিটা আমল পুরো কর। তোমাকে বুঝতে হবেযিন্দেগীর সকল ক্ষেত্রেও তাকে ইমাম বানাতে হয়।

সাহাবায়ে কেরাম এমনই বুঝেছিলেন। আবু বকর রা.-কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইমাম বানিয়ে দিয়েছিলেন। ইন্তেকালের সময় যখন খুব অসুস্থতা বেড়ে গেলনিজে আর নামায পড়াতে যেতে পারছিলেন নাবললেনযাও! আবু বকরকে গিয়ে বল নামায পড়াতে।

এখান থেকে সাহাবায়ে কেরাম কী বুঝেছিলেনসাহাবায়ে কেরাম বুঝেছিলেননামাযের ইমাম হিসেবে যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে নির্ধারণ করে দিয়েছেনতাহলে দ্বীন-দুনিয়াজাগতিক সবকিছুর ক্ষেত্রে তিনি আমাদের ইমাম। তিনিই হবেন খলীফাতুল মুসলিমীন। তিনিই হবেন খলীফাতু রাসূলিল্লাহ। 

বোঝা গেলআমাদের শাসকদেরও যিম্মাদারিরাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়ে শরীয়তের বিধি-বিধানগুলো উলামায়ে কেরামের কাছ থেকে জেনে নেওয়া এবং সে অনুযায়ী আমল করা।

আল্লাহই একমাত্র তাওফীকদাতা।

وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.

মাসিক দ্বীনী মজলিসজুমাবার,

২৮ যিলহজ্ব ৪৫ হি. /৫ জুলাই ২৪ ঈ.

মারকাযুদ দাওয়াহ জামে মসজিদহযরতপুরকেরানীগঞ্জঢাকা

পত্রস্থকরণ : মুহাম্মাদুল্লাহ মাসুম

মন্তব্য (...)

এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ

হাদীস ও আছারের আলোকে বিতর নামায – ২য় পর্ব

...

আল্লামা ইউসুফ লুধিয়ানভী রহঃ
৮ নভেম্বর, ২০২৪
১৮০৪ বার দেখা হয়েছে

ফজরের জামাত চলা অবস্থায় সুন্নত পড়ার বিধান!

...

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রহমান
১০ নভেম্বর, ২০২৪
২৯৫১ বার দেখা হয়েছে

নামাযের গুরুত্ব ও প্রভাব

...

আল্লামা মনযুর নোমানী রহঃ
১০ নভেম্বর, ২০২৪
৫৫৬২ বার দেখা হয়েছে

লেখকবৃন্দ

সকল লেখক →

আল্লামা শাব্বীর আহমাদ উসমানী রহঃ

শাহ আব্দুল আযীয দেহলভী রহঃ

শাইখুল ইসলাম আল্লামা কাসেম নানুতুবী রহঃ

মাওঃ উবাইদুল্লাহ সিন্ধী রহঃ

সায়্যিদ সাবেক রহঃ

আল্লামা আব্দুল মজীদ নাদীম রহঃ

মাওলানা আসলাম শাইখুপুরী

শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমাদ মাদানী রহঃ

মাওঃ আবু আম্মার যাহেদ রাশেদী

মাওঃ নুরুল হাসান রাশেদ কান্ধলভী

মুফতী হাবীবুর রহমান খাইরাবাদী

আল্লামা আবুল কালাম আযাদ রহঃ

মাওলানা সাঈদ আহমদ

মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দীন দাঃ

হযরত মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী রহঃ

মাওলানা হাবীবুর রহমান খান

মাওলানা সাঈদ আহমাদ বিন গিয়াসুদ্দীন

মাওঃ আবু বকর সিরাজী

শায়েখ আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ইবনে উমার [রহ.]

মাওঃ এনামুল হাসান