প্রবন্ধ

একটি সুন্নাহকে বাঁচাবো বলে (১৫তম পর্ব) – কবর জিয়ারত

লেখক:শাইখ মুহাম্মাদ আতীক উল্লাহ
২১ মে, ২০২৪
৯৭৭ বার দেখা হয়েছে
মন্তব্য

বর্তমানে চারপাশে পূণ্যের চেয়ে পাপের উপকরণ বেশি। ইচ্ছায় অনিচ্ছায় গুনাহ হয়েই যায়। গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা বড় কঠিন। আল্লাহর একান্ত প্রিয় বান্দাগনের পক্ষেই গুনাহমুক্ত থাকা সম্ভব। যতই সতর্কতা অবলম্বন করি, কোন ফাঁকে গুনাহ হয়েই যায়। তবে চেষ্টা করলে, গুনাহের মাত্রা কমিয়ে আনা যায়।

গুনাহমুক্ত থাকার জন্যে নাফসকে সচেতন রাখতে হয়। নাফসকে সচেতন রাখাতে হলে, মৃত্যুর স্মরণ, আখেরাতের স্মরণ, হাশর-নশরের স্মরণের কোনও বিকল্প নেই। আমি যতবেশি মৃত্যুকে স্মরণ করব, নাফস ততবেশি পাপকে ভয় করবে। আখেরাতের হিশেব-নিকেশের কথা স্মরণে রাখলে, মনে গুনাহভীতির অনভূতি জাগরূক থাকে। আমি গুনাহ করলে, শেষবিচারের দিন রাবের সামনাসামনি দাঁড়াতে হবে,

فَأَمَّا مَن طَغَىٰ وَآثَرَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا فَإِنَّ الْجَحِيمَ هِيَ الْمَأْوَىٰ وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَىٰ فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَىٰ

যে ব্যক্তি অবাধ্যতা করেছিল এবং পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিয়েছিল, জাহান্নামই হবে তার ঠিকানা। আর যে ব্যক্তি নিজ প্রতিপালকের সামনে দাঁড়ানোর ভয় পোষণ করত এবং নিজেকে মন্দ চাহিদা হতে বিরত রাখত, জান্নাতই হবে তার ঠিকানা (নাযি‘আত ৩৭-৪১)।


নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সব সময় আখেরাতকে স্মরণ করতেন। সাহাবায়ে কেরামকেও আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন। স্মরণ করতে উদ্বুদ্ধ করতেন। আখেরাতের স্মরণ আমাদেরকে পাপে পা দেয়া থেকে রক্ষা করে। তাওবা করতে উদ্বুদ্ধ করে। এখনই তাওবা করব নাকি পরে, এই দ্বিধা দূর করে।

আখেরাতকে স্মরণে রাখার জন্যে নবীজি কিছু বিশেষ আমল নিয়মিত করতেন। কবর জিয়ারত তার অন্যতম আমল ছিল। প্রথম প্রথম নবীজি কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করতেন। নবীজির জন্যেও আল্লাহর পক্ষ থেকে কবর জিয়ারতের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ছিল। পরে নবীজিকে অনুমতি দেয়া হয়। তখন তিনি ঘোষণা দেন,

ققَدْ كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ القُبُورِ، فَقَدْ أُذِنَ لِمُحَمَّدٍ فِي زِيَارَةِ قَبْرِ أُمِّهِ، فَزُورُوهَا فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الآخِرَةَ

আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করতাম। মুহাম্মাদকে তার মায়ের কবর জিয়ারত করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরাও (এখন থেকে) কবর জিয়ারত করবে। কারণ কবর জিয়ারত আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয় (বুরাইদা রা.। তিরমিযি)।


কবর জিয়ারত করা চমৎকার এক সুন্নাত। এটা একটা সার্বজনীন কাজ। অন্যধর্মেও কবর জিয়ারতের প্রথা আছে। তারাও কবরে গিয়ে মৃতআত্মার স্মরণে ফুল দেয়। মোমবাতি জ্বালায়। নানা পূজোআচ্চা করে। আমরা মুসলমান। আমাদের রয়েছে কবর জিয়ারতের সুন্নত তরীকা। কবর জিয়ারত করলে, মৃত ও জীবিত উভয় পক্ষের জন্যে লাভ।

ক. কবরের সামনে গেলে, জীবিত ব্যক্তির আখেরাতের কথা মনে পড়ে। মন নরম হয়। আমলের প্রতি মনোযোগ বাড়ে। পাপের পরিমাণ কমে আসে। চারিত্রিক উন্নতি ঘটে।

খ. কেউ কবর জিয়ারত করলে, মৃত ব্যক্তি কিছু দু‘আ লাভ করে। সওয়াব হাসিল করে। তার আযাব হালকা হয়। আমলনামা ভারী হয়।


নবীজি নিয়মিত জান্নাতুল বাকী‘তে যেতেন। অন্য কবরস্থানেও যেতেন। সাহাবায়ে কেরামও নবীজির দেখাদেখি কবর জিয়ারত করতেন। আমরাও নিয়মিত কবর জিয়ারত করতে পারি।

মন্তব্য (...)

এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ

নিজের যিন্দেগীতে ফাতেমী সুন্নত যিন্দা করুন

...

শাঈখুল ইসলাম মুফতি তাকী উসমানী
১০ নভেম্বর, ২০২৪
১৭৬১ বার দেখা হয়েছে

লেখকবৃন্দ

সকল লেখক →

আল্লামা শাব্বীর আহমাদ উসমানী রহঃ

শাহ আব্দুল আযীয দেহলভী রহঃ

শাইখুল ইসলাম আল্লামা কাসেম নানুতুবী রহঃ

মাওঃ উবাইদুল্লাহ সিন্ধী রহঃ

সায়্যিদ সাবেক রহঃ

আল্লামা আব্দুল মজীদ নাদীম রহঃ

মাওলানা আসলাম শাইখুপুরী

শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমাদ মাদানী রহঃ

মাওঃ আবু আম্মার যাহেদ রাশেদী

মাওঃ নুরুল হাসান রাশেদ কান্ধলভী

মুফতী হাবীবুর রহমান খাইরাবাদী

আল্লামা আবুল কালাম আযাদ রহঃ

মাওলানা সাঈদ আহমদ

মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দীন দাঃ

হযরত মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী রহঃ

মাওলানা হাবীবুর রহমান খান

মাওলানা সাঈদ আহমাদ বিন গিয়াসুদ্দীন

মাওঃ আবু বকর সিরাজী

শায়েখ আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ইবনে উমার [রহ.]

মাওঃ এনামুল হাসান