প্রবন্ধ

স্ত্রীর তারবিয়ত করা স্বামীর দায়িত্ব

লেখক:মুফতি জাওয়াদ তাহের
৭ মার্চ, ২০২৪
৭৭৭৬ বার দেখা হয়েছে
মন্তব্য

নিজ স্ত্রীকে ভালোবাসা, তাঁর সঙ্গে খোশগল্প করা, কৌতুক করা ইত্যাদি শরিয়ত কর্তৃক প্রশংসিত বিষয়। পাশাপাশি একজন আদর্শ স্বামী হিসেবে তাঁর দায়িত্ব স্ত্রীকে বিভিন্ন জিনিস সুন্দরভাবে শিক্ষা দেওয়া, বুঝিয়ে দেওয়া। তাঁর ভুল-ত্রুটি শুধরে দেওয়া। দাম্পত্যজীবনে স্বামীর এটি গুরুদায়িত্ব।

একজন আদর্শ স্বামীর কর্তব্য, নিজে ভালো কাজ করা এবং স্ত্রীকেও ভালো কাজের দিকে অগ্রসর হতে চেষ্টা করা। স্ত্রীকে বলা হয়, সহধর্মিণী। একে অন্যকে ইবাদত ও আমলের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে, স্বামী স্ত্রীকে দ্বিনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবেন। তবে স্বামীর তাঁর স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব একটু বেশি।

আল্লাহ তাআলা বলেন, পুরুষ নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, যেহেতু আল্লাহ তাদের একের ওপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু পুরুষরা নিজেদের অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৪)

 

স্বামী-স্ত্রী একে অন্যকে নামাজে সহযোগিতা

আবু হুরায়রা (রা.) হতে বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ ওই ব্যক্তির ওপর রহম করুন, যে রাত জেগে নামাজ আদায় করে; অতঃপর সে তার স্ত্রীকে ঘুম হতে জাগ্রত করে। আর যদি সে ঘুম থেকে উঠতে না চায় তখন সে তার চোখে পানি ছিটিয়ে দেয় (নিদ্রাভঙ্গের জন্য)। আল্লাহ ওই নারীর ওপর রহম করুন যে রাতে উঠে নামাজ আদায় করে এবং স্বামীকে জাগ্রত করে।

যদি সে ঘুম থেকে উঠতে অস্বীকার করে, তখন সে তার চোখে পানি ছিটিয়ে দেয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৩০৮)

 

রাতে নামাজের জন্য জাগানো

আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার এক অনন্য মাধ্যম শেষ রাতের নামাজ। স্বামীর দায়িত্ব স্ত্রীকে এই নামাজে অভ্যস্ত করা। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রাতে নামাজ আদায় করতেন। বিতর আদায় করার সময় হলে বলতেন, হে আয়েশা! উঠো বিতর আদায় করো।

(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৬০৭)

 

লোক-দেখানো ইবাদতে বাধা প্রদান

লোক-দেখানো ইবাদত থেকে বাধা প্রদান করা। নবীজি (সা.) স্ত্রীদের লোক-দেখানো ইবাদত থেকে বাধা প্রদান করেছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি রমজানে ইতিকাফ করতেন। ফজরের নামাজ শেষে ইতিকাফের নির্দিষ্ট স্থানে প্রবেশ করতেন। আয়েশা (রা.) তাঁর কাছে ইতিকাফ করার অনুমতি চাইলে তিনি অনুমতি দিলেন। আয়েশা (রা.) মসজিদে (নিজের জন্য) একটি তাঁবু করে নিলেন। হাফসা (রা.) তা শুনে (নিজের জন্য) একটি তাঁবু তৈরি করে নিলেন এবং জয়নাব (রা.)-ও তা শুনে (নিজের জন্য) আরেকটি তাঁবু তৈরি করে নিলেন। রাসুল (সা.) ফজরের নামাজ শেষে এসে চারটি তাঁবু দেখতে পেয়ে বলেন, একি? তাঁকে তাঁদের ব্যাপারে জানানো হলে তিনি বলেন, নেক আমলের প্রেরণা তাদের এ কাজে উদ্বুদ্ধ করেনি। সব খুলে ফেলা হলো। তিনি সেই রমজানে আর ইতিকাফ করলেন না। পরে শাওয়াল মাসের শেষ দশকে ইতিকাফ করেন। (সহিহ বুখারি : ১৯১৩)

 

বিপদাপদে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা

দুনিয়ায় আল্লাহর পক্ষ থেকে নানা রকম বিপদাপদ আসেএটি স্বাভাবিক। এই বিপদাপদে অধৈর্য না হয়ে মানুষের কাছে সাহায্য না চেয়ে, আল্লাহর কাছে বিপদাপদ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা।

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত যে নবী (সা.) একবার চাঁদের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। পরে বলেন, হে আয়েশা! এর অকল্যাণ থেকে আল্লাহর পানাহ চাও। কেননা এটি হলো (কোরআনে সুরা ফালাকে বর্ণিত) গাসিক (আঁধারের বস্তু, যা আঁধারে নিমজ্জিত হয়)। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৬৬)


নবীপত্নী জুওয়াইরিয়া (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রত্যুষে তাঁর কাছে থেকে বের হলেন। যখন তিনি ফজরের নামাজ আদায় করলেন তখন তিনি নামাজের জায়গায় ছিলেন। এরপর তিনি চাশতের পরে ফিরে এলেন। তখনো তিনি বসেছিলেন। তিনি বলেন, আমি তোমাকে যে অবস্থায় রেখে গিয়েছিলাম তুমি সে অবস্থায়ই আছো। তিনি বলেন, হ্যাঁ। নবী (সা.) বলেন, আমি তোমার কাছ থেকে যাওয়ার পর চারটি কালেমা তিনবার পাঠ করেছি। আজকে তুমি এ পর্যন্ত যা বলেছ তার সঙ্গে ওজন করলে এই কালেমা চারটির ওজনই বেশি হবে। কালেমাগুলো এই

উচ্চারণ : সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি আদাদা খালকিহি, ওয়ারিদা নাফসিহি, ওয়াজিনাতা আরশিহি, ওয়ামিদাদা কালিমাতিহি।

অর্থ : আমি আল্লাহর প্রশংসা-পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি তার অগণিত সৃষ্টির সমান, তাঁর সন্তুষ্টি, তাঁর আরশের ওজনের পরিমাণ ও তাঁর কালেমার (কালির) সংখ্যার পরিমাণ। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৬৬৫)

 

দানের প্রতি উৎসাহ

স্ত্রীদের দান-সদকার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা উচিত। যেন তাদের ভেতর দান করার স্বভাব চলে আসে। একবার রাসুল (সা.) অয়েশা (রা.) বললেন, হে আয়েশা! এক টুকরা খেজুর দিয়ে হলেও আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা করো। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৩৯৮০)

ঘরে কোনো কিছু না থাকলেও অতি সামান্য জিনিস দিয়ে হলেও দান-সদকা করার কথা বলা হয়েছে। অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে সমর্থ, এক টুকরা খেজুর দিয়ে হলেও সেটা তার করা উচিত। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২১৯) কারণ দান-সদকা জাহান্নাম থেকে বাঁচার একটি অন্যতম উপায়। কাজেই যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব দান-সদকা করা উচিত।

 

নম্রতা ও ভদ্রতা শিক্ষা

নম্রতা মানুষের ভূষণ। নম্রতাকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন। প্রিয় নবী (সা.) স্ত্রীদের নম্রতা শিখিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, হে আয়েশা! নম্রতা অবলম্বন করো। কারণ আল্লাহ তাআলা যখন কোনো পরিবারের জন্য কল্যাণের ইচ্ছা করেন, তখন তাদের নম্রতার পথ দেখান। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৩৯০৬)

অন্য হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.)-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, নম্রতা যেকোনো বিষয়কে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে। আর যেকোনো বিষয় থেকে নম্রতা বিদূরিত হলে তাকে কলুষিত করে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৩৬৬)

এভাবেই আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) তাঁর স্ত্রীদের দ্বিন শিখিয়েছেন। এবং এর মাধ্যমে আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন।

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য (...)

এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ

লেখকবৃন্দ

সকল লেখক →