প্রবন্ধ
চারদিনা-চল্লিশা শরয়ী বিধান
চারদিনা-চল্লিশা প্রসঙ্গ
মানুষের মৃত্যুর পর তাঁর ‘আমল নামা’ও বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এমন কিছু আমল আছে যা তাঁর মৃত্যুর পরও তাঁর আমল নামায় পৌছতে থাকে। যেমনঃ- মুসলিম শরীফের হাদীসে রয়েছে হযরত আবু-হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ-
اذامات الانسان انقطع عنه عمله الامن ثلثة الامن صدقة جارية اوعلم ينتفع بها وولد صالح يدعوله (روه مسلم.مشكوة )
যখন মানুষ মরে যায়, তখন তাঁর আমল (ও উহার সওয়াব)ও বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমল এবং (ঐগুলোর সওয়াব বন্ধ হয় না) (১) সদকায়ে যারিয়া (২) ইল্ম যাহার দ্বারা (অন্য লোকের) উপকার হাছেল হয় (৩ নেক সন্তান- যে তাহার জন্য দো’আ করে থাকে।(মুসলিম-২/৪১পৃঃ,মেশকাত-৩২)
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত! আরেক হাদীসে আছে-তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন-
عن أبي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إن مما يلحق المؤمن من عمله وحسناته بعد موته علما علمه ونشره وولدا صالحا تركه ومصحفا ورثه أو مسجدا بناه أو بيتا لابن السبيل بناه أو نهرا أجراه أو صدقة أخرجها من ماله في صحته وحياته يلحقه من بعد موته. (رواه بن ماجه والبيهقي في شعب الإيمان.مشكوة)
অর্থাৎ-মুমিনের মৃত্যুর পরও তাঁর আমলও নেক কাজ সমূহের মধ্যে যাহার সওয়াব তাহার নিকট বরাবর পৌছতে থাকে তা হল (১) ইল্ম- যাহা সে শিক্ষা করিয়াছে অতঃপর বিস্তার করিয়াছে। (২) নেকসন্তান-যাকে সে দুনিয়াতে রাখিয়া গিয়াছে।(৩) কুরআন মাজীদ- যাহা সে মিরাস রুপে রাখিয়া গিয়াছে অথবা ওয়াকফ করিয়াছে।(৪) মসজিদ-যাহা সে নির্মাণ করিয়াছে।(৫) মুসাফির খানা-যা সে পথিক মুসাফিরদের জন্য তৈরী করেছে।(৬) খাল- যা সে খনন করে গিয়েছে।(৭) দান- যা সে সুস্থ ও জীবিত অবস্থায় তাঁর মাল হতে করেছে (এসবের সওয়াব) তাহার মৃত্যুর পরও তাহার নিকট পৌছতে থাকে।(ইবনে মাজাহ,বায়হাকি, মেশকাত-১/৩৬পৃঃ)
সুতরাং-বুঝা যাচ্ছে যে, মানুষ যদি পৃথিবীতে নেক সন্তান রেখে যায় বাএমন কোন কাজ করে যায়, যার ফায়দা পরবর্তিতে অন্যরা ভোগ করতে থাকে তাঁর সওয়াব তাঁর নিকট পৌঁছতে থাকে। তেমনি ভাবে তাঁর সন্তান বা অন্য কেউ যদি তাঁর পক্ষ থেকে কোন ভালো কাজ করার পর তাঁর সওয়াব তাঁর রুহে পৌছানোর নিয়ত করে তবে তাঁর নিকট তা পৌছানো হয়, যেমন হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে আছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ-
انالله عزوجلل يرفع الدرجة للعبد الصالح فى الجنة فيقول يارب انى لي هذه فيقول باستغفارلك(احمد.مشكوة)
অর্থাৎঃ-আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে এক নেককার ব্যক্তির মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন, এতে সে (আশ্চার্যন্বিত হয়ে) বলবে হে আল্লাহ! আমার জন্য এতকিছু কোথা হতে হাসেল হলো (আমি তো এত নকে আমল করিনি) আল্লাহ তা’য়ালা বললেন, তোমার জন্য তোমার সন্তানদের ইস্তিগফার এর কারনে।(আহমদ-মেশকাত.১/২৬)
এমনিভাবে হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত! এক হাদীসে রাসুল(সাঃ) ইরশাদ করেন-
ما الميت في القبر إلا كالغريق المتغوث ينتظر دعوة تلحقه من أب أو أم أو أخ أو صديق فإذا لحقته كان أحب إليه من الدنيا وما فيها وإن الله تعالى ليدخل على أهل القبور من دعاء أهل الأرض أمثال الجبال وإن هدية الأحياء إلى الأموات الاستغفار لهم. )رواه البيهقي في شعب الإيمان.مشكوة(
অর্থাৎ-নিশ্চয় মৃৃত ব্যক্তির অবস্থা পানিতে পড়া সাহায্য প্রার্থী ব্যক্তির মত। সে তার বাবা মা,ভাই-বন্ধুর দো’য়া পেীঁছার অপেক্ষায় থাকে। যখন তার নিকট তা পৌছে তখন তা তার নিকট সমগ্র দুনিয়াও তার সামগ্রী অপেক্ষা প্রিয়তর হয়ে থাকে এবং আল্লাহ পাক দুনিয়া বাসীর দো’আর কারনে কবরবাসীদের পাহাড় সমতূল্য রহমত পৌঁছান।আর জীবিতদেরপক্ষ হতে মৃতদের জন্য হাদিয়া(উপটৌকন)হল তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা।(বায়হাকী,মেশকাত-১/২০৬)
তেমনিভাবে হযরত আয়েশা(রাঃ) হতে বর্ণিত এক হাদিসে আছে-
وحدثنا محمد بن عبد الله بن نمير، حدثنا محمد بن بشر، حدثنا هشام، عن أبيه، عن عائشة، أن رجلا أتى النبي صلى الله عليه وسلم فقال: يا رسول الله، إن أمي افتلتت نفسها ولم توص، وأظنها لو تكلمت تصدقت، أفلها أجر، إن تصدقت عنها؟ قال: (نعم)
অর্থাৎ- এক ব্যক্তি রাসূল(স্ঃ)এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল আমার মা হঠাৎ করে মারা গেছেন, আমার ধারণা তিনি সুযোগ পেলে কিছু সদকা করতেন।এখন আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদকা করি,তবে তার সওয়াব হবে কি না? উত্তরে হুজুর (সাঃ) বললেন হ্যাঁ।(মুসলিম-২/৪১পৃঃ)
উপরোল্লেখিত আলোচনা দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে, মৃতের পক্ষ থেকে কেউ কোন নেক আমল বা দান-সদকা করলে তা মৃতের আমল নামায় যোগ হয় ও তাকে কবরে সওয়াব পৌছানে হয়।
সুতরাং ইছালে সওয়াব অর্থাৎ মৃতের পক্ষ থেকে নেক কাজ করা অবশ্যই জায়েয ও খুবই উত্তম একটি ইবাদত। আর প্রত্যেক ইবাদতের জন্যই রয়েছে শরীয়তের পক্ষ থেকে সঠিক নীতিমালা ও দৃষ্টিভঙ্গী, যার থেকে কম বেশী করা বা বাড়া-বাড়ি করা আদৌ ঠিক নয়। বরং তা ঐ নেক আমলের সওয়াব বা উপকার বরবাদ হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ইসালে সওয়াব যেহেতু নতুন কোন বিষয় নয় বরং রাসূল (সাঃ) এর যূগেও ইহার প্রয়োজনীয়তা ও আমল ছিল, তাই ইছালে সওয়াবের ক্ষেত্রে যেমনিভাবে নবী কারীম (সাঃ) এর পক্ষ থেকে রয়েছে উৎসাহ, তেমনিভাবে সাহাবায়ে কেরামের পক্ষ থেকে রয়েছে আদর্শও সঠিক নীতিমালা।
অতএব পরবর্তীরাও যদি তাদের মৃতের উপর ‘ইসালে সওয়াব’ এর আমল করতে চায় তবে সাহাবায়ে কেরামের আদর্শ ও নীতিমালা অনুস্মরণ করেই সেই আমল করতে হবে।নিজের মনগড়া ও ভিত্তিহীন,যা কোরআন-হাদীসের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ নয়, এমন আমল কখনো গ্রহণযোগ্য ও পালনীয় নয়, বরং তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য ও বর্জনীয় বলে বিবেচিত হবে।
ইসালে সওয়াব ও আমাদের সমাজঃ
বর্তমানে আমাদের সমাজেও চলছে ইছালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন নামে হরেক রকম আয়োজন তিনদিনা, চার দিনা, ত্রিশা,চল্লিশা,বিভিন্ন মাজারে চলে মাসিক ওরশ, ত্রৈমাসিক ওরশ ও বাৎসরিক ওরশ ইত্যাদি।
উদ্দেশ্যের বিচারে উক্ত আয়োজন গুলো প্রশংসনীয় হলেও আদর্শ ও নীতির ক্ষেত্রে রয়েছে এতে ব্যাপক আপত্তি। যেগুলোর একটি’ই ঐ আয়োজনগুলো বিদ’আত ওবর্জনীয় হওয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু এত আপত্তি ও শরীয়ী বিরোধী হওয়া সত্বেও তা আমাদের সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপক আকারে এবং সমাজে চলছে ব্যপকভাবে। যা শরীয়তের গন্ডি থেকে বেরিয়ে শুধুমাত্র রীতি-রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।ইসলামের সাথে যার দূরতম সম্পর্কও তো নাই-ই বরং এসব রেওয়ায়েজের স্তুপের নিচে পড়ে দিন দিন মানুষের জীবন থেকে বিদায় নিচ্ছে ইসলাম। আর মানুষ শুধু ধর্মের আবরনে মোড়ানো এসব রেওয়ায়েজ নিয়েই ব্যস্ত হচ্ছে।যার পরিণতিতে মানুষের দ্বীন দুনিয়া উভয়টাই বরবাদ হচ্ছে।মাঝ থেকে কিছু পেট ও পকেট পূজারী ছদ্মবেশী আলেমদের’ই পেট ও পকেট ভরছে। আর জনসাধারণ সেই রীতি ও রেওয়ায়েজের মধ্যেই রয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে কেউ যদি এসব রীতি-রেওয়ায়েজের বিরুদ্ধে ইসলামের সঠিক দৃষ্টিভক্তি তুলে ধরতে চায়।তখন তাকে ওহাবী-কাফের ইত্যাদি বলে গালি দেয়া হয়।
উপরন্তু তাদের নিকট এসব রীতি-রেওয়াজের ক্ষেত্রে শরীয়ী দলীল-প্রমাণাদি তালাশ করলে। ‘আমাদের পুর্ববর্তীরা কি ভূল করেছে?’ বলেই পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চায়।আবার অনেকে এমন এমন কিছু দলীলাদি উপস্থাপন করে থাকে যা শুধু মাত্র কিচ্ছা-কাহিনী বা যুক্তি তর্ক। যার সাথে কোরআন-হাদীস ও শরীয়ী উসূলের কোন সম্পর্ক না থাকার কারণে আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।কেননা যুক্তি-তর্ক তখনই গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে, যখন তাঁর সামর্থনে কোরআন-হাদীসের দলীল পাওয়া যাবে।কিন্তু যে যুক্তি-তর্কের সাথে কোরআন-হাদীসের কোন সম্পর্ক নাই তা শুধু ইবলিস ও তার চেলারাই দিয়ে থাকে এবং তা গ্রহণ যোগ্য তো নয়ই বরং আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ যোগ্য।
সুতরাং বর্তমানে তিনদিনা,চার দিনা ও চল্লিশা নামের এসব রেওয়ায়েজকে শরীয়ত সম্মত বলে প্রমাণ করার জন্য যারা শুধু যুক্তি-তর্কের আশ্রয় নিয়ে থাকে তাদের এসব যুক্তি ও অপব্যখ্যা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়, বরং তা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপযোগ্য।
চারদিনা, চল্লিশা, বিদ’আত হওয়ার কারণ সমূহঃ-
প্রচলিত চারদিনা, চল্লিশা বিদ’আত হওয়ার প্রথম দলিলঃ-
ইসলামী প্রথম তিন স্বর্ণযূগে না থাকাঃ-
ইসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে তিন দিন, চার দিন ও চল্লিশ দিনের মাথায় যে মিলাদ মাহফিল ও খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করা হয়। ইসলামের অনুসরণীয় প্রথম তিন যূগে এর কোন প্রচলন ছিল না। রাসূল (সাঃ) এর চাচা সায়্যিদুস শুহাদা উপাধিতে খ্যত হযরত আমীর হামযা (রঃ) সহ শত শত সাহাবায়ে কেরাম রাসূল (সাঃ) এর বর্তমানে শহীদ হয়ে ছিলেন। কিন্তু তাদের কারো জন্য রাসূল (সাঃ) প্রচলিত নিয়মানুসারে তিনদিনা, চারদিনা বা চল্লিশার আয়োজন করেননি।ঠিক তেমনিভাবে সাহাবায়ে কেরাম,তাবেয়ীন ও তাবে-তাবেয়ীনগণের কেউ’ই প্রচলিত নিয়মানুসারে তিন দিনা,চার দিনা, বা চল্লিশা’র আয়োজন করেননি। অথচ ইসালে সওয়াবের প্রয়োজনীয়তা ও তার আমল তখন ও ছিল।কিন্তু তা সত্বেও তারা এরুপ ভাবে যেয়াফত করে তা পালন করেন নি।তাই পরবর্তীদের জন্য এরুপ ভাবে তিন দিনা,চার দিনা বা চল্লিশার আয়োজন করা ও তা পালন করা জায়েয হবে না,বরং তা হবে সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
সুতরাং বর্তমানে প্রচলিত নিয়মে তিন দিনা,চার দিনা, চল্লিশার আয়োজন করা ও তা পালনকরা নাজায়েয ও সম্পূর্ণপরিত্যাজ্য।
তিন/চার দিনা বা চল্লিশা বিদ’আত হওয়ার দ্বিতীয় দলীলঃ-
শরীয়া কর্তৃক স্বাধীন বিষয়কে স্বীয় প্রচেষ্টায় শৃঙ্খলিত করা।
ইসালে সওয়াব যদিও একটি শরীয়ত সম্মত ভালো কাজ,কিন্তু তা ফরয বা ওায়াজিব নয় বরং মুস্তাহাব আর শরীয়তে এই প্রকার মুস্তাহাব বা নফল কোন আমলের ক্ষেত্রে কোন প্রকার দিন-ক্ষণ নির্দিষ্ট করা হয়নি,বরং তা সম্পূর্ণ স্বাধীন অবস্থায় রাখা হয়েছে, অথচ ইসালে সওয়াবের নামে তিন দিনা/চার দিনা ও চল্লিশাকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়েছে যা শরীয়ত সমর্থিত নয়। আর যা শরীয়ত সমর্থিত নয় তা অবশ্যই বিদ’আত ও পরিতাজ্য।
সুতরাং বর্তমানের তিন দিনা,চার দিনা এবং চল্লিশাও বিদআত ও পরিত্যাজ্য।
চারদিনা-চল্লিশা বিদ’আত ও বর্জনীয় হওয়ার তৃতীয় দলীল ঃ
শরীয়া কর্তৃক মুস্তাহাব আমলকে জরুরী মনে করা-
উদ্দেশ্যের বিচারে ইসালে সওয়াব যদিও মুস্তাহাব ও নেক-কাজ সমূহের অন্তর্ভূক্ত, কিন্তু শরীয়তে তার স্থান নফলের পর্যায়ে। যার জন্য শরীয়ত কর্তৃক এর ওপর কোন প্রকারবাধ্য-বাধকতা বা চাপা-চাপি নেই,এবং তা না করলেও কোন প্রকার ক্ষতি বা দোষ নেই।কিন্তু বর্তমানের(পরিস্থিতি দৃষ্টে স্পষ্ট ভাবেই এটা প্রতিয়মান হয় যে) মানুষ এই চারদিনা,চল্লিশার মাধ্যমে ইছালে সওয়াব করাকে জরুরী ও অলঙ্গণীয় আমল মনে করে থাকে।আর যখন মানুষকোনমুস্তাহাব আমলকে জরুরী মনে করতে থাকে তখন ঐ মুস্তাহাব আমলকে ছেড়ে দেয়া জরুরী।
সুতরাং প্রচলিত নিয়মে যিয়াফতের আমলকে পরিত্যাগ করা জরুরী।
ঈসালে সওয়াব নয় লোকিকতা’ই এর উদ্দেশ্যঃ-
বর্তমানে প্রচলিত চারদিনা/চল্লিশা বিদআত হওয়ার অন্যতম আরেকটি কারণ হল আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ঈসালে সাওয়াবের পরিবর্তে লোকিকতা ও সমাজের লোকের সমালোচনা থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে’ই চারদিনা/চল্লিশার আয়োজন করা হয়ে থাকে এর কয়েকটি লক্ষণ এই যে-
১/উক্ত আয়োজন করার সামর্থ না থাকার পরও সুদে, লোনে ও চাঁদা তুলে উক্ত আয়োজন করার প্রবনতা
২/এটা যদি আল্লাহর ওয়াস্তে ও ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যেই করা হত তবে সদকা গোপনে করাই উত্তম অথচ এটা করা হয় অধিক প্রচারনার মাধ্যমে।
৩/সদকা টাকা দ্বারা দেয়া উত্তম যাতে করে যাকে দেয়া হবে সে তার প্রয়োজন অনুযায়ী খরচ করতে পারে অথচ চারদিনা/চল্লিশা করা হয় খাবারের আয়োজনের মাধ্যমে।
৪/ঈসালে সওয়াবের নিয়তে সদকা করা হলে গরিব-মিসকিনদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া হত অথচ বর্তমানে চারদিনা/চল্লিশায় অধিকাংশই ধনী-বিত্তবান, নেতৃস্থানিয় ও নিকটাতœীয়দেরকেই দাওয়াত করা হয় ।
সুতরাং উল্লেখিত সুরতসমূুহের কারণে সুষ্পষ্টভাবেই প্রতিয়মান হয় যে, বর্তমানের চারদিনা/চল্লিশা ঈসালে সওয়াব নয়, লৌকিকতাই এর মুখ্য উদ্দেশ্য।
চারদিনা/চল্লিশার পক্ষপাতিরা অবশ্য আমাদের দাবি না মেনে এ যুক্তি পেশ করতে পারে যে, নিয়ত মানুষের অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত, সুতরাং এটা আপনি কিভাবে দাবি করতে পারেন যে, লৌকিকতার জন্য’ই সে এটা করছে? উত্তরেআমরা বলব যে, যদি সত্যি’ই আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে, ইসালে সওয়াবের নিয়তে চারদিনা/চল্লিশার আয়োজন করেথাকেন, তবে সহিহ পদ্বতীতেই করেন, যাতে করে সওয়াবও বেশি পাওয়া যাবে আর মতানৈক্যও থাকবে না । আর যদি তা না পারেন তবে লৌকিকতাই এর উদ্দেশ্য যার লক্ষণসমূহ আমরা উল্লেখ করেছি। আর এরূপ ইবাদতের ক্ষেত্রে লৌকিকতা সুষ্পষ্ট শিরক।
সুতরাং প্রচলিত চারদিনা /চল্লিশা নামক লোক দেখানো বিদ’আত থেকে বেচে থাকা অত্যান্ত জরুরী।
প্রচলিত চারদিনা-চল্লিশার ক্ষতিকর দিক সমূহঃ-
এতিমের মাল ভক্ষণ।
আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন ঘোষনা করেনঃ
وما ياكله الاالنار
অর্থাৎ-(যারাএতিমের মাল ভক্ষণ করে)বস্তুত তারা আগুন-ই ভক্ষণ করে।
এতিমের মাল ভক্ষণের ক্ষেত্রে বড় ধমকি ও হুঁশিয়ারী থাকা সত্ত্বেও ইসালে সওয়াবের নামে ব্যপকভাবে আমাদের সমাজে চলছে এতিমের মাল ভক্ষনের প্রবণতা, যা আমাদের পরকালীন জীবনের জন্য বিরাট বিপদের কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। অনেকের মনে এ প্রশ্ন উকি দিতে পারে যে, মৃতের যেয়াফতের সাথে এতিমের মাল ভক্ষণের সম্পর্ক কি? এর উত্তর হল-মৃতের রুহের মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে লোকদের খুশি করার জন্য খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করাই হচ্ছে যেয়াফতের মূল ও মূখ্যউদ্দেশ্য। আর এইখাবারের আযোজন অধকাংশই করা হয়, ঐ মৃতের মাল থেকে,যার মালিক তখন সে থাকে না বরং তারওয়ারিশ তথা ছেলে-মেয়েরা ঐ মালের মালিক হয়ে যায়। আর প্রায়ই দেখা যায় যে ঐ ছেলে-মেয়েদের মধ্যে দু-একজন নাবালেগ থেকে থাকে।আর যেহেতু সময় সংক্ষিপ্ততার কারণে তিন/চার দিনের আগেই সম্পদ বন্টন করা হয় না সেহেতু তিন দিনা বা চার দিনা যিয়াফতের খরচের মধ্যে অনেক সময় চল্লিশার মধ্যেও এতিমের মালের অংশ থাকে। আর অন্যান্য ওয়ারিশদের মালের সাথে এতিমের মালও ঐ যিয়াফতের জন্য খরচ করা হয় যা আদৌ ঠিক নয। বরং এতিমের মাল এভাবে খরচ করা ও এহেন খাওয়া দাওয়া থেকে অবশ্যই বেঁচে থাকা জরুরী।
অসহায় ব্যক্তিদের উপর বোঝা স্বরূপঃ-
কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার আত্মীয়-স্বজনরা ধনী-সম্পদশালী হলে তিন দিনা, চার দিনা বা চল্লিশার সময় মহা ধুমধামের সাথে যেয়াফতের আয়োজন করে থাকে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, মৃতের আত্মীয়-স্বজন নেহায়েত গরীব-অসহায় থাকে।কিন্তু সমাজে প্রচলিত এই রেওয়ায়েজের কারণে অনিচ্ছা সত্বেও বাধ্য হয়ে তাকে দু-তিন দিনের মধ্যে খাওয়া-দাওয়ার এক বিশাল আয়োজন করতে হয়।যে কারণে তাকে খুবই পেরেশানী ভোগ করতে হয়।অনেক সময় তাকে ব্রাক, আশা,গ্রামীণ ব্যাংক ইত্যাদি থেকে সুদে টাকা নিতে হয়।অনেক ক্ষেত্রে চাঁদা তোলা হয়,আবার ভিক্ষা বৃত্তি করেও এই চারদিনা আয়োজনের দৃষ্টান্ত রয়েছে।এভাবে কেউ কেউ কষ্ট পেরেশানীতে ভূগে,সুদে টাকা নিয়ে গোশত-পোলাও এর আয়োজন করবে, আর কেউ কেউ মজা মেরে তা দিব্বি আরামে খেয়ে মোচে তেল মাখবে, যাকে বলে কারো পৌষ মাস-কারো সর্বনাশ,এটা কোন ইসলামের বিধান হতে পারে না। যা সুস্থ-বিবেকবান কোন মানুষ একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবে,স্পষ্ট হয়ে উঠবে তার সামনে হক্ব ও বাতিলের পাথর্ক্য,আলো ও আধাঁরের ব্যবধান।
অন্যদিকে এই রেওয়ায়েজের মধ্যে খাওয়া-দাওয়ার মহা ধুমধাম ও আয়োজনের মধ্যে ব্যস্ত থেকে মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনরাও তার কথা ভূলে যায়। যেয়াফতের আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে মৃতের জন্য মনের মধ্যে যতটুকু মহব্বত ও কষ্ট ছিল ততটুকুই ব্যস্ততার কারণে দূর হয়ে যায়।যার কারণে যেয়াফতের পর মৃতের প্রতি আরো কিছুকর্তব্য রয়েছে বলে মনে করে না। আর যারাও কিছু করতে চায়,চার দিনার পরবর্তীতে চল্লিশাকে আরো ধুম ধামের সাথে আদায় করা আর মসজিদের হুজুরকে দিয়ে একটু কবর যিয়ারত করিয়ে দেয়া। এছাড়া নিজের পক্ষ থেকে নামাজ পড়ে দোয়া করা বা নিজেই গিয়ে মাঝে মাঝে কবর যিয়ারত করার আমল একেবারে বিলুপ্ত প্রায়। আর এই সব শরীয়ত সম্মত সুন্নাত আমল সমূহ বিলুপ্ত হওয়ার প্রধান কারণই হল বিদ’আতের প্রবণতা। সুতরাং যে সব কর্ম সমূহের কারণে শরীয়ত সম্মত সহীহ আমল বিলুপ্ত প্রায় তা থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেকের জন্য জরুরী ও ঈমানী দায়িত্ব।
সুতরাং এই সব বিদ’আত থেকে বেঁচে থাকতে সুন্নাতকে জানা ও বিদ’আতিদের থেকে দূরে থাকা অত্যন্ত জরুরী।
]]]
ইসালে সওয়াবের সুন্নাত তরিকাঃ-
[[[[[[
প্রচলিত চারদিনা-চল্লিশা বিদ’আত হওয়া সংক্রান্ত আলোচনার পর আমরা ইসালে সওয়াবের ঐ সুন্নাত সমূহকে তুলে ধরার চেষ্টা করছি, যে গুলো এই চারদিনা-চল্লিশা নামক বিদ’আতের স্তুপের নিচে চাপা পড়ে আজ আমাদের জীবন থেকে বিলুপ্তপ্রায়। চারদিনা, চল্লিশা নামক বিদ’আতের কারণে যে সুন্নাতটি হারিয়ে যাচ্ছে তা হলো ‘ইসালে সওয়াবে’র সুন্নাত। অর্থাৎ-জীবিতদের পক্ষ থেকে মৃতের জন্য দো’য়া-ইস্তেগফার বা অন্য কোন নেক আমল করে তার সওয়াব মৃতের রুহের মাগফিরাতের জন্য তার আমল নামায় পৌছিয়ে দেয়ার নিয়ত করা। মৃত ব্যক্তি ইহার প্রতি যেমনিভাবে মুখাপেক্ষী, তেমনিভাবে ইসালে সওয়াবকারীর জন্যও ইহা অত্যন্ত উপকারী।
মানুষের মৃত্যুর পর দুনিয়ার সাথে সকল সম্পর্ক বিছিন্ন হয়ে যায় শুধু তিনটি আমল ব্যতিত। এর একটি হল “ইসালে সওয়াব” তথা তার জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করা। কবরের কঠিন অবস্থায় দো’য়াই তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু। দুনিয়াও দুনিয়ার সবকিছু হতে এটাই তার নিকট অধিক মূল্যবান, এবং সে সর্বদা দুনিয়াবাসীর পক্ষ থেকে দো’য়া-ইস্তেগফার এর অপেক্ষা করতে থাকে। কবরবাসীর উক্ত অবস্থা বর্ণনা করে’ই হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত! এক হাদীসে রাসুল(সাঃ) ইরশাদ করেন-
ما الميت في القبر إلا كالغريق المتغوث ينتظر دعوة تلحقه من أب أو أم أو أخ أو صديق فإذا لحقته كان أحب إليه من الدنيا وما فيها وإن الله تعالى ليدخل على أهل القبور من دعاء أهل الأرض أمثال الجبال وإن هدية الأحياء إلى الأموات الاستغفار لهم. (بيهقي .مشكوة)
অর্থাৎ-নিশ্চয় মৃৃত ব্যক্তির অবস্থা পানিতে পড়া সাহায্য প্রার্থী ব্যক্তির মত। সে তার বাবা মা,ভাই-বন্ধুর দো’য়া পেীঁছার অপেক্ষায় থাকে। যখন তার নিকট তা পৌছে তখন তা তার নিকট সমগ্র দুনিয়া ও তার সামগ্রী অপেক্ষা প্রিয়তর হয়ে থাকে এবং আল্লাহ পাক দুনিয়া বাসীর দো’আর কারনে কবরবাসীদের পাহাড় সমতূল্য রহমত পৌঁছান। আর জীবিতদেরপক্ষ হতে মৃতদের জন্য হাদিয়া হল তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা।(বায়হাকী,মেশকাত-১/২০৬)
উক্ত হাদীসের মাধ্যমে প্রতিয়মান হয় যে, দো’য়া-ইস্তেগফার ও নেক-আমলের মাধ্যমে মৃতের জন্য ইসালে সওয়াব করা যায়। তবে এই সওয়াবের জন্য হাদীসশরীফে শুধু মাত্র উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোন বাধ্য-বাধকতা আরোপ করা হয়নি। ঠিক তেমনিভাবে এর জন্য কোন দিন-ক্ষণ নির্ধারণের উপরও জোর দেয়া হয়নি। বরং সে যখনই পারে তখনই মৃতের জন্য দো’য়া-ইস্তেগফার সহ, দান-সদকা করা, ফকির-মিসকিনকে খাবার খাওয়ানো, মাঝে মাঝে তার কবর যিয়ারত করা সহ যে কোন নেক কাজ করে তার সওয়াব মৃতের রুহে পৌছানের নিয়ত করা যেতে পারে।তেমনিভাবে মৃত ব্যক্তির সন্তানেরা পিতা-মাতার,আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সদ্ব্যব্যবহার করা ও সাধ্যনুযায়ী তাদের নিকট হাদীয়া (্উপটোকন) পাঠানো, মাঝে মাঝে তাদের দাওয়াত করে খাওয়ানো ইত্যাদি সন্তানের উপর পিতা-মাতার হক্ব।
যেমন আবু-উসায়দ বদরী (রাঃ) বর্ণনা করেন! আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে বসা ছিলাম, ইতি মধ্যে এক আনসার সাহাবী এসে প্রশ্ন করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! পিতা-মাতা ইন্তেকালের পরও তাদের কোনো হক্ব আমার জিম্মায় আছে কি না? তিনি বললেন, হ্যাঁ তাদের জন্য দো’য়া ও ইস্তেগফার করা, তারা কারো সাথে অঙ্গীকার করলে তা পূরণ করা, তাদের বন্ধু বর্গের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং তাদের এমন আত্মীয়দের সাথে আত্মীয়তা বজায় রাখা, যাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক শুধু তাদেরই মাধ্যমে।
তবে ইসালে সওয়াবের ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির জন্য তার সন্তানদের দো’য়াই সবচেয়ে বেশী উপকারী। কারণ পিতা-মাতার জন্য সন্তান যেভাবে অন্তর থেকে প্রাণ খুলে দো’য়া করতে পারবে, অন্যদের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। তাছাড়া কালামে পাকে পিতা-মাতার জন্য দো’য়া করার আদেশ করে বলা হয়েছে-
وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
অর্থাৎ- (তুমি তোমার পিতা-মাতার জন্য প্রার্থনা করে) বল! হে আমার পালন কর্তা তাদের উভয়ের প্রতি রহম করুন, যেমন তারা আমাকে শৈশব কালে লালন-পালন করেছেন।(সূরা-বনী ইসরাঈল-২৪)
কালামে পাকের উক্ত আদেশেরমাধ্যমে ইহাই প্রতিয়মান হয় যে, পিতা-মাতার জন্য সন্তানদের দো’য়াই সবচেয়ে বেশি উপকারী। অথচ আফসোসের বিষয় এই যে, বর্তমানে অধিকাংশ লোকেরাই কেবল মসজিদের ইমাম সাহেবের দো’য়ার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে। মৃতের নিজের ছেলে নিজের জানাযা দিবে বা নামায পড়ে সহীহ ভাবে উক্ত দো’য়া করবে, মাঝে মাঝে কবর যিয়ারত করবে এর কোনো যোগ্যতা বা শিক্ষা’ই আমরা আজ নিজের সন্তানদের দেই না। তেমনিভাবে আমরা নিজেরাও আমাদের মা-বাবা ও পূর্ব-পুরুষদের কবর যিয়ারত না করার কারণে আমাদের সন্তানেরা তা দেখেওনা-শিখেও না। যাতে করে পরবর্তীতে তারাও আর আমাদের কবর যিয়ারত করবে না। এভাবেই আমরা প্রকৃত সুন্নাত থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। আর এর অন্যতম কারণ হল বিদ’আতের প্রবণতা।
সুতরাং-প্রচলিত এসব বিদ’আতকে বর্জন করে সুন্নাত জানা ও তদানুযায়ী আমল করা প্রত্যেকের জন্য অত্যান্ত জরুরী।
ইসালে সওয়াব সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত সমূহঃ-
উপরে ইসালে সওয়াবের সহিহ পদ্ধতি আলোচনার পর নি¤েœ ইসালে সওয়াব সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত সমূহ উল্লেখ করা হল-
প্রথম শর্ত- মৃত ব্যক্তি এবং ইসালে সওয়াবকারী ব্যক্তি উভয়ই মুসলমান হতে হবে, কেননা ঈমান ব্যতিত কোনো আমল’ই গ্রহণযোগ্য নয়।
দ্বিতীয় শর্ত-নিয়ত সহীহ হতে হবে, কেননা আমলের প্রতিদান নিয়তের উপর’ই নির্ভর করে।
সুতরাং-ইসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে যে, আমল’ই করুক না কেন! তা এক মাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশেই হতে হবে। কোন পীরের সন্তুষ্টি, লোক দেখানো, নাম কামানো, সম্মান কামানো, লোক লজ্জা, চক্ষু লজ্জা বা সমাজের লোকের ভয়ে যে, ইহা না করলে সমাজের লোক তাকে খারাপ বলবে বা তার সমালোচনা করবে (যেমনিভাবে বর্তমানে আমাদের সমাজে চারদিনা, চল্লিশার ক্ষেত্রে হয়ে থাকে, অনেকে ইহাকে শুধুমাত্র লোক দেখানো ও মানুষের সমালোচনা থেকে বাঁচার জন্যেই করে থাকে) ইত্যাদি আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতীত এরৃপ অন্য কোনো উদ্দেশ্য হলে তা হারাম ও শিরক হবে।
তৃতীয় শর্ত- সদকাহকৃত মাল হারাম না হতে হবে। কেননা হারাম মাল থেকে সদকা করলে আল্লাহ তা কবুল করেন না।
চতুর্থ শর্ত- ইবাদতের মাধ্যমে ইসালে সওয়াব করলে তার বিনিময় আদান-প্রদান না করতে হবে। যেমন-ইসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কোরআন তেলাওয়াত করা, কবর যিয়ারত করা ইত্যাদি। কেননা এরুপ ইবাদতের ক্ষেত্রে টাকা নেয়া জায়েয নেই।
পঞ্চম শর্ত- কোন দিন-ক্ষণকে এভাবে নির্ধারিত করা যাবে না, যে এই দিন’ই তা করতে হবে।কেননা“ ইসালে সওয়াব” একটি মুস্তাহাব আমল। আর মুস্তাহাব আমলের ক্ষেত্রে দিন-ক্ষণ নির্ধারণ করা নিষেধ।
ষষ্ঠ শর্ত- এমন গুরুত্বের সাথে আদায় করা যাবে না, যা দেখে সেটিকে ওয়াজিব বা ফরযের পর্যায়ে মনে হয়, অথবা- মুস্তাহাব নিয়ে বাড়া বাড়ির পর্যায়ে শামিল হয়। কেননা মুস্তাহাব আমলকে মুস্তাহাবের পর্যায়ে না রেখে তা নিয়ে বাড়া-বাড়ি করলে তা ছেড়ে দেয়া জরুরী হয়ে পড়ে। যেমন-অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, মৃতের পরিবার পরিজনের লোকেরা নেহায়াত গরীব হওয়া সত্বেও টাকা ধার করে, লোন নিয়ে বা চাঁদা তুলে অনেক ক্ষেত্রে ভিক্ষা-বৃত্তি করে প্রচলিত যেয়াফতের আয়োজন করা হয় যা কোন ভাবে’ই ঠিক নয়।
সপ্তম শর্ত- এতিমের মাল থেকে খরচ না করা-অর্থাৎ- মৃতের সন্তানদের মধ্যে না’বালেগ থাকলে তাদের মাল থেকে ইসালে সওয়াবের জন্য খরচ না করতে হবে। কেননা এতিমের মাল এরুপ ভাবে খরচ করা জায়েয নেই।
ইসালে সওয়াব মূলত মাইয়্যেতের রুহের মাগফেরাত ও কবরে তার শান্তির জন্য’ই করা হয়। আর দুনিয়াবাসীর পক্ষ থেকে দো’য়া ইস্তেগফার ও বিভিন্ন নেক আমলের মাধ্যমে মাইয়্যেতের উপকার করার এই একটাই মাত্র পথ। তবে এটাও তখন’ই ফলপ্রসূ হবে যখন তা আল্লাহর হুকুম ও নবীর তরীকানুযায়ী করা হবে। সুতরাং ইসালে সওয়াবের ক্ষেত্রে উল্লেখিত শর্ত সমূহের প্রতি লক্ষ্যরেখে, হাদীসানুযায়ী সহীহ ভাবে আমল করতে হবে। অন্যথায় সকল অর্থ ও শ্রম’ই পর্যবসিত হবে।(আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সহীহভাবে আমল করার তাওফিক দান করুন-আমীন)
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
সীরাতুন্নবী-মীলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
[প্রদত্ত বয়ান থেকে সংগৃহীত] দু'টি শব্দের সমন্বয়ে সীরাতুন্নবী শব্দটি গঠিত। একটি হল 'সীরাত' অপরটি 'আন...
টাই এর কথা কুরআনে আছে?
...
আজানে নবীজী সাঃ এর নাম শুনে আঙ্গুল চুম্বন বিদআত!
ইদানিং আজানের সময় “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ” শব্দ শুনে আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মোছা বিষয়ে...
সহীহ জিকির ও গলত জিকির | পর্ব ২
জিকরে খফীর ন্যায় জিকরে জলী বা জেহেরী জিকিরের পক্ষে পবিত্র কুরআনের আয়াত ও হাদীসের অকাট্য দলীল পূর্বের...