প্রবন্ধ

ইয়াহুদী-খ্রিস্টানদের বহুমুখী ষড়যন্ত্র মুসলিম উম্মাহর করণীয়

লেখক:মুফতী তাফাজ্জুল হুসাইন গাজীপুরী
১৩ অক্টোবর, ২০১৪
২৫৩৭৫ বার দেখা হয়েছে
মন্তব্য

কুরআন-হাদীসে ইয়াহুদী-খ্রিস্টানের পরিচয়

ইয়াহুদী জাতি পৃথিবীর প্রাচীনতম জাতি। আল্লাহ তা'আলা হযরত নূহ আ. এর পর হযরত ইবরাহীম আ. কে সর্বপ্রথম সারাবিশ্বে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানোর জন্য নির্বাচন করেছিলেন। তারই দুই সন্তান থেকে পৃথিবীর ঐতিহাসিক দু'টি জাতির সৃষ্টি হয়। হযরত ইসহাক আ. থেকে সৃষ্ট হয় হাজার হাজার নবী এবং বনী ইসরাঈল তথা ইয়াহুদী জাতি। তার অপর সন্তান হযরত ইসমাঈল আ. থেকে সৃষ্ট হয় হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মুসলিম জাতি। কুরআন যেহেতু কিয়ামত পর্যন্ত মানব জাতির জীবন ব্যবস্থা এবং পূর্ববর্তী সকল আসমানী গ্রন্থের সারাংশমূল, তাই কুরআনুল কারীমে দুনিয়ার প্রবীণ জাতি ইয়াহুদীদের ঘটনা সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে। যেন এসব জাতির ইতিহাস শুনে উম্মতে মুহাম্মদী ভুল পথ থেকে বেঁচে থাকে। যেমন সূরা বাকারার ৪০ নং আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'হে বনী ইসরাঈল! তোমরা স্মরণ কর আমার সে অনুগ্রহের কথা, যা আমি তোমাদেরকে দান করেছি এবং তোমরা আমার সাথে কৃত অঙ্গীকার পূরণ কর, তাহলে আমিও তোমাদেরকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ করবো। আর তোমরা আমাকেই ভয় কর'। অন্যত্র আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'হে বনী ইসরাঈল! আমার অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যা আমি তোমদেরকে দিয়েছি এবং স্মরণ কর আমি তোমাদেরকে বিশ্ববাসীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। (সূরা বাকারা; আয়াত-৪৭/১১২) বনী ইসরাঈল মূলত হযরত ইয়াকুব আ. এর বংশধর। হযরত ইয়াকুব আ. এর হিব্রু উপাধি ছিল ইসরাঈল, যার অর্থ আল্লাহর বান্দা। এ কারণে তার সন্তানদেরকে বলা হয় বনী ইসরাঈল বা ইসরাঈলের সন্তান। বনী ইসরাঈলের ধর্মীয় নাম ইয়াহুদী বা আহলে কিতাব। উক্ত আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ তা'আলা ইয়াহুদীদের প্রতি সর্ব প্রকার নেয়ামত প্রদানের কথা উল্লেখ করেছেন। যথা, তাদের বংশে অধিকাংশ নবী পাঠানো, নবীর আওলাদ হওয়া, অজস্র ধন-সম্পদের মালিক বানানো, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দান, আসমানী কিতাব তাওরাত প্রদান আসমানী খানা মান্না-সালওয়ার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। বোঝা গেল, দুনিয়া-আখেরাতের সকল নেয়ামত ও সুখ-শান্তি দিয়েই আল্লাহ তাদেরকে পরীক্ষা করেছিলেন। কিন্তু সকল ব্যাপারেই তারা নেয়ামতের নাশোকরী করেছে। এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা'আলা বলেন, যারা গোবৎসকে প্রভু রূপে গ্রহণ করেছে তারা অচিরেই তাদের প্রতিপালকের ক্রোধের পাত্র হবে এবং দুনিয়ার জীবনে লাঞ্চিত অপমানিত হবে। আর এভাবেই আমি মিথ্যারোপকারীদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। (সূরা আ'রাফ- ১৫২) 

তাফসীরে কুরতুবীতে একটি হাদীস বর্ণিত আছে, হযরত হুযাইফা রাযি. একবার রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বাইতুল মাকদিসের সেই মনি-মুক্তা ও স্বর্ণ- রৌপ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন যেগুলো জিনদের মাধ্যমে সংগ্রহ করে হযরত সুলাইমান আ. বাইতুল মাকদিস নির্মাণ করেছিলেন- সেগুলো এখন কোথায় আছে? হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, যখন বনী ইসরাঈল আল্লাহর অবাধ্য হল, পাপ কাজে লিপ্ত হল, নবীদেরকে হত্যা করে ফেলল, আল্লাহ তা'আলা তাদের উপর বুখতে নছর বাদশাহকে চাপিয়ে দিলেন। সে তাদের পুরুষদেরকে হত্যা করল, আর মহিলা ও শিশুদেরকে দাস- দাসীতে পরিণত করল এবং বাইতুল মাকদিসের সমস্ত সম্পদ এক লক্ষ সত্তর হাজার উট বোঝাই করে আপন দেশ বাবেলে নিয়ে গেল। একশত বছর পর্যন্ত বনী ইসরাঈলদেরকে নিজেদের গোলাম বানিয়ে লাঞ্ছনাদায়ক কষ্টকর কাজ নেয়া হল। (তাফসীরে কুরতুবী ১০/২২২ শামেলা সংস্করণ) উল্লেখিত হাদীস দ্বারা বোঝা যায়, ইয়াহুদীরা সর্বপ্রথম ঈমানদার জাতি ও আল্লাহর বন্ধু ছিল। কিন্তু চরম নাফরমানীর কারণে তারা উক্ত নেয়ামত থেকে বঞ্চিত এবং চির জীবনের জন্য অভিশপ্ত হয়েছে। আল্লাহ তা'আলার এই অভিশাপ তাদেরকে হীনমন্য ও নিকৃষ্ট জাতিতে রূপান্তরিত করেছে। অতঃপর শয়তান যেমন অভিশপ্ত হয়ে কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর বান্দাদের শত্রুতার লাইসেন্স গ্রহণ করেছে ইয়াহুদীরাও আল্লাহর বান্দা মুসলমানদের স্থায়ী শত্রুতার মিশন হাতে নিয়ে মুসলিম নিধনের বিভিন্ন অপকৌশল চালিয়ে আসছে। তাদের ষড়যন্ত্রের কিছু পরিকল্পনা নিম্নে আলোচনা করা হল-

ঈমান-আমল ধ্বংসের ষড়যন্ত্র বনাম ধর্মান্তরিত করার অপকৌশল

ইয়াহুদী ধর্ম একটি ঐতিহাসিক বংশীয় ধর্ম। তাদের মধ্যে বংশীয় আভিজাত্য এতটাই প্রকট যে, নিজেদের ঔরসজাত সন্তান ব্যতীত অন্যদেরকে তারা ইয়াহুদী বলতে নারাজ। এজন্য এ ধর্মে অন্যকে ধর্মান্তরিত করার সুযোগ ও অনুমতি নেই। এ কারণেই সারা দুনিয়ায় তাদের দুরভিসন্ধির বিস্তৃত নেটওয়ার্ক দেখা গেলেও তাদের জনসংখ্যা বা ধর্মানুসারী খুবই কম। তাদের সকল অপকৌশল বাস্তবায়নের মুখপাত্র হল খ্রিস্টান ও মুশরিক জাতি। ইয়াহুদীরা নিজেরা কাউকে ধর্মান্তরিত না করলেও ধর্মান্তর কাজে খ্রিস্টান মিশনারীদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের নীলনকশা তারাই প্রস্তুত করে দেয় 

এবং তা বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতা ও সমর্থন প্রদান করে। (সূত্র: ইহুদী জাতি ও ইসরাঈল রাষ্ট্র) দেখা যায়, সারা বিশ্বে যেখানেই মুসলমানগণ একটু সচেতন, ইসলাম অনুযায়ী জীবন যাপনে কিছুটা সচেষ্ট-সেখানেই এরা নিজেদের লোক তৈরির লক্ষ্যে সেবার নামে, চিকিৎসার আড়ালে ধর্মান্তরের কাজ আঞ্জাম দেয়। আমাদের দেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট, নেত্রকোণা এবং সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো নিয়ে ইয়াহুদী-খ্রিস্টানদের প্ল্যান-প্রোগ্রাম ও ষড়যন্ত্রের কথা শোনলে বিবেকবান মানুষের ঘুম উড়ে যাওয়ার কথা। বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক রিপোর্টের ভিত্তিতে ১০ আগস্ট ২০১১ তারিখে দৈনিক ইনকিলাব-এ 'খ্রিস্টান বানানো হচ্ছে উপজাতিয়দের' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। উক্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৪৫টি উপজাতির অস্তিত্ব রয়েছে। এর মধ্যে তিন পার্বত্য জেলায় রয়েছে ১৪টি উপজাতি। উক্ত উপজাতিদের মধ্যে ৩০.৫৭ ভাগ চাকমা, ১৬.৬০ ভাগ মারমা, ৭.৩৯ ভাগ ত্রিপুরা, ৬.১৬ ভাগ অন্যান্য উপজাতি। আর অবশিষ্টরা হল বাঙ্গালী। পার্বত্যাঞ্চলের এ তিনটি প্রধান উপজাতির মধ্যে প্রথাগতভাবে বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী বেশি ছিল। আর তার পরের স্থান ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের। বলতে গেলে খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীদের অস্তিত্বই ছিল না। গত দুই দশকে উল্লিখিত জেলাসমূহে খ্রিস্টান ধর্মের বিস্তার ঘটেছে অবিশ্বাস্য হারে। যার একটি পরিসংখ্যান গত ৬ জুন ২০১১ তারিখে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের রিপোর্ট থেকে জানা যায়। বান্দরবান জেলায় এখন মুসলমানের সংখ্যা ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬২ জন। খ্রিস্টানের সংখ্যা ১ লাখ ৩ হাজার ৭৯৬ জন। দু'দশক পূর্বে এ জেলায় বৌদ্ধদের অবস্থান দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও এখন তারা সংখ্যায় তৃতীয়। মাত্র বিশ বছরের ব্যবধানে এখন খ্রিস্টানরা অনেক অগ্রগামী।

ইফাবার প্রতিবেদনটিতে আরো উল্লেখ রয়েছে যে, বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার গেলাইঙ্গা, রেমাকৃপাংশা, ফাইন্দু ইউনিয়নে এক সময় খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও কিছু হিন্দু পরিবার বাস করত। অথচ মারমা ও বোম উপজাতি অধ্যুষিত রুমা উপজেলার এখন ৬০ ভাগ জনসংখ্যাই খ্রিস্টান। রুমা বাজার থেকে ৫ কি.মি. দূরে আশ্রম পাড়ায় একবার ৪/৫টি ত্রিপুরা পরিবার পবিত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। পরবর্তীতে তারা আর্থিক দৈন্যদশায় পড়ে মুসলমানদের থেকে নিরাশ হয়ে এক খ্রিস্টান মিশনারী চার্চের দারস্থ হয়। খ্রিস্টান মিশনারীরা এসব নওমুসলিমদেরকে বিভিন্ন সেবা ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে কৌশলে খ্রিস্টান বানিয়ে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা যদি কোনভাবে কোন উপজাতির মুসলমান হওয়ার কথা শোনে সাথে সাথে নিজেদের বাহিনী দিয়ে তাদেরকে খ্রিস্টান বানিয়ে ফেলে। এটা শুধু একটি ঘটনা নয়; এমন হাজারো-লাখো ঘটনা অহরহ ঘটছে। (সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব; ৪ জুন ২০১৪ খ্রি.)

তারা তাদের নীলনকশা বাস্তবায়নে পাহাড়ী বিভিন্ন সংগঠন এমনকি সরকারী বাহিনীকেও প্রয়োজনে কাজে লাগাতে তৎপর। গত ২ জানুয়ারী ২০১৩ তারিখে ঢাকা শহরের বাসাবো এলাকার এক মাদরাসায় তল্লাশী চালিয়ে পুলিশ ৫ জন উপজাতিয় নওমুসলিম অভিভাবক এবং তাদের ১৬ জন সন্তানকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। তারপর তাদের ইসলাম গ্রহণের এফিডেভিট ও অন্যান্য কাগজ-পত্র দেখে ১১ জন শিক্ষার্থী ও ৫ জন অভিভাবককে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু ৫ জন ছাত্র পূর্ব থেকেই মাদরাসায় পড়াশোনা করত তাই তাদের অভিভাবক ছিল না। অভিভাবক আসা পর্যন্ত তাদেরকে তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়। পরবর্তীতে অভিভাবকরা তাদের আনতে গেলে ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরামের সদস্য পরিচয়ে কতিপয় উপজাতিয় লোক থানার সামনে থেকে তাদেরকে জোর করে নিয়ে খ্রিস্টান এন.জি.ও'র কাছে সোপর্দ করে। কত বড় স্পর্ধা! 

শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে নওমুসলিমদেরকে মাদরাসা থেকে ধরে এনে খ্রিস্টান চার্চে দিয়ে দেয়া আমাদের জন্য কতোটা লজ্জাকর বিষয়। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে খ্রিস্টান মিশনারীরা এখন এতোটাই অপ্রতিরোধ্য যে, গত ১৫ মার্চ ২০১৪ তারিখে বান্দরবান ফাতিমা রানী চার্চে মহিলা হোস্টেলের মেয়েদেরকে মিশনের ফাদার ও ব্রাদার কর্তৃক যৌন হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে। এরা সবাই বান্দরবান ডনবাস্কো উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম থেকে ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী। গত ১৫ মার্চ ৭১ জন ছাত্রী নদীতে গোসল করার নামে হোস্টেল থেকে বের হয়ে পালিয়ে গেলে ঘটনাটি স্থানীয়রা জানতে পারে। ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এমনকি এই সংবাদ বাংলাদেশের কোন জাতীয় দৈনিকে আর ছাপা হয়নি এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়নি। (সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব; ৪ জুন ২০১৪ খ্রি.)

খ্রিস্টান মিশনারীরা কেমন অপ্রতিরোধ্য গতিতে ধর্মান্তরিত করার কাজ করছে লক্ষ করুন। এক জরিপ অনুযায়ী ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এদেশে খ্রিস্টানের সংখ্যা ছিল ৫০ লক্ষ। আর ২০০০ খ্রিস্টাব্দে তা দাঁড়িয়েছে ১ কোটিতে। বর্তমানে এই সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখে পৌঁছেছে।

বাংলাদেশে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের জন্য আগত ড. উইলিয়াম কেরি, রিগর্ড হলওয়ে ও বিশ্বের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব ড. আলসেনের মত লোকদের পদচারণায় বাংলাদেশের এন.জি.ও এবং খ্রিস্টান মিশনারীরা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। তারা বাংলা ভাষা রপ্ত করে 'ইতিহাস মালা', 'কথোপকথন' নামে বই রচনা করে তা খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারের জন্য প্রচার করছে। তারা ক্রুশ ছুয়ে জীবনপণ ধর্মীয় প্রচারে ওয়াদাবদ্ধ হয়। এ কাজে তারা ব্যক্তিগত ভোগ-বিলাস ভুলে বিস্ময়কর কষ্ট ও ত্যাগ-তিতীক্ষা স্বীকার করে। তারা এদেশের ২০ লাখ আদিবাসী ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

ড. ভিগাবি আলসেনের পরিচালনায় চার্চ অব বাংলাদেশ নামে একটি সংস্থা কক্সবাজার মালুমঘাটে একটি মেমোরিয়াল হাসপাতাল পরিচালনা করেছে। এ প্রতিষ্ঠানটি গত ৩৮ বছর ধরে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের কাজে বিশ্বের বুকে ইতিহাস গড়েছে। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে মালুমঘাটে একজন লোকও খ্রিস্টান ছিল না। কিন্তু ড. ভিগাবি আলসেনের দীর্ঘ সময়ের আমরণ প্রচেষ্টায় ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে সেখানে খ্রিস্টানের সংখ্যা ৪০ হাজারে উন্নীত হয়। যার ভিত্তিতে তারা পার্শ্ববর্তী এলাকার জমি ক্রয় করে এসব নব খ্রিস্টানদের পূনর্বাসন এলাকা তৈরি করছে। তারা চট্টগ্রামের দৌলতপুরে মরিয়ম আশ্রমের পাশেও বিশাল খ্রিস্টান আবাসিক এলাকা গড়ে তুলেছে।

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে বৃটেনের এক কনফারেন্সে তাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও পরিচালকবৃন্দ এদেশের ব্যাপারে তাদের অভিসন্ধি নির্ধারণ করে যে, প্রকৃতি ভারতীয় উপমহাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলটি এ জন্য বৃটেনের কাছে সোপর্দ করেছে, যেন এতদঞ্চলের এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত মিশনারীদের বিজয় পতাকা উড্ডীন হয়। তাই আমাদেরকে এতদঞ্চলের লোকদের ধর্মান্তরিত করে খ্রিস্ট রাজ্যে পরিণত করার আপ্রাণ চেষ্টা করা উচিত। (সূত্র: তারীখে পাকিস্তান)

বর্তমানে হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও সিলেটে ৩০ হাজার খাসিয়া জনগোষ্ঠী বসবাস করে। তার মধ্যে ৯০ ভাগ খাসিয়া জনগোষ্ঠী বর্তমানে খ্রিস্টানে পরিণত হয়ে গেছে। বাংলাদেশের সীমান্তের ওপারে মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ইত্যাদি পাহাড়ী অঞ্চল রয়েছে, যার অধিকাংশ জনগোষ্ঠী খ্রিস্টানে পরিণত হয়েছে। এখন সেখানে গড়ে উঠেছে সুদৃশ্য গীর্জা ও সুরম্য প্রাচীর। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার সাজেক এলাকাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে তারা প্রায় ১০ হাজার উপজাতিকে ধর্মান্তরিত করেছে। শুধু তাই নয়, সেখানে মিশনারীরা হাসপাতাল, ক্লিনিক, বিনোদন কেন্দ্র, চার্চ প্রতিষ্ঠা করে নীরবে ধর্মান্তরের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ থেকে বোঝা যায় ইউরোপীয় দাতাগোষ্ঠীরা সুদূর প্রসারী কোন টার্গেট নিয়ে সামনে এগোচ্ছে। শুধু ইউ.এন.ডি.পি (UNDP) বৎসরে ২০ লাখ মার্কিন ডলার বাজেট করে উক্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যয় করে যাচ্ছে। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী মি.টরবেন ভি পিটারসনের নেতৃত্বে ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দ হতে আর.ডি.আর.এস (RDRS) সংস্থা নীরবে বৃহত্তম দিনাজপুর ও রংপুর জেলার সীমান্ত অঞ্চলের আদিবাসী ও সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে ধর্ম প্রচারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি উপজাতি রাখাইন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মি. উসিথ মং বলেন, গত ৩৫ বছরে পটুয়াখালীতে প্রায় ৯০ শতাংশ রাখাইনকে নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে এবং তাদেরকে খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত করা হয়েছে। বর্তমানে পাশ্চাত্য দুনিয়ার শ্যেন দৃষ্টি পড়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপর। পূর্বতিমুরের পর তারা এই অঞ্চলকেও পৃথক খ্রিস্টরাজ্য বানাতে চায়। এ উদ্দেশ্যে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত বিভক্তির সময় দু'টি স্বাধীন দেশের পাশাপাশি আরো দু'টি স্বাধীন ভূখণ্ডের দাবিতে তারা সোচ্চার ছিল। একটি হল শিখদের খালিস্তান প্রতিষ্ঠার দাবী। অপরটি দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে খ্রিস্টানদের একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবী। সেই লক্ষ্য অর্জনে তারা আজ সাফল্যের সঙ্গে বহুদূর এগিয়ে গেছে। কিন্তু আমরা আমাদের দায়িত্ব ভুলে গিয়েছি, যার মাশুল একদিন আমাদের দিতেই হবে। (সূত্র: পাক্ষিক দেশ জগত; ২০০৭ খ্রি.)


অর্থনৈতিক আগ্রাসনের বেড়াজাল 

উন্নত অর্থনীতি একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের মেরুদণ্ড। পুঁজিবাদীদের মূল শ্লোগান হল চাহিদা এবং যোগান। অর্থের পূর্ণ মালিকানা মালিকের। এতে অন্য কারও সামান্য অধিকারও নেই। এ অর্থব্যবস্থার উদ্যোক্তা হল ইয়াহুদী-খ্রিস্টান, যা আজ সারা দুনিয়ার অর্থব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এর ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে অনেকেরই সঠিক ধারণা নেই। এ অর্থব্যবস্থার মারাত্মক দু'টি ক্ষতি হল, শুধু চাহিদা অনুযায়ী যোগান দিলে হালাল- হারামের কোন ভেদাভেদ থাকবে না। 

ব্যবসায়ীরা অন্ধের মত যে জিনিসের চাহিদা পাবে সে জিনিসই সাপ্লাই দেয়া শুরু করবে। উদাহরণত বিবেক-বুদ্ধি, মানবতা ও মনুষ্যত্ব বিনাশী মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল, আফিম, বিয়ার, ইয়াবার চাহিদা বেশি থাকলে এগুলোরই যোগান দেয়া হবে। যদিও এগুলোর কারণে মানবজাতি ধ্বংস হয়ে যাক না কেন। দ্বিতীয় ক্ষতি পুরো সমাজে সুদের সয়লাব। সুদী লেনদেন ব্যাপক হলে ধনী ব্যক্তি রাতারাতি আরো ধনী আর অসহায় গরীব দিনের পর দিন আরো নিঃস্ব হয়ে যায়। কিন্তু শান্তির ধর্ম ইসলাম যে অর্থনীতি পেশ করেছে তার মধ্যে এ সব লাগামহীন বরবাদীর কোনটিই নেই। বর্তমানে সারা দেশে শত শত সুদী ব্যাংক আছে। এগুলো টিকিয়ে রাখতে ব্যাংকিং ট্রেনিং সেন্টার, হিসাব শেখার কোর্স, সুদ কষার বই-পত্র স্কুল-কলেজ থেকে নিয়ে ইউনিভার্সিটি সব পর্যায়েই ব্যবস্থা আছে। শুধু তাই নয়, বিশ্বব্যাপী সুদের কাজ নিয়মিত তদারকির জন্য খ্রিস্টানরা বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে। বিশ্ববাসীকে ধোঁকা দিতে সুদী মহাজনকে নোবেল পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। সুদের প্রচার-প্রসারের জন্য তারা এদেশে ৫৫ হাজার এন.জি.ও কাজে লাগিয়ে রেখেছে, যারা বিভিন্ন পদ্ধতিতে চড়া সুদে মানুষের নিকট সুদী ঋণ বিলাচ্ছে। এই প্রতারকেরা এতটুকুতেই ক্ষ্যান্ত নয়, এদেশের মুসলমানেরা যেহেতু সরাসরি 'সুদ' নাম শুনলে আল্লাহর ভয়ে আৎকে ওঠে, তাই তারা কৌশলে সুদের নামই পরিবর্তন করে দিয়েছে। ইন্টারেস্ট, বখশিশ, ইনআম, মুনাফা ইত্যাদি নামে সুদী টাকা হাজী গাজী নামাযীর ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে। এমনকি সুদী ব্যাংকের গায়ে ইসলামী ব্যাংকিং এর সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে মুসলমানকে সুদে ডুবিয়ে দিচ্ছে।

আরও আশ্চর্যের বিষয় হল, দুনিয়ার অধিকাংশ অভিজাত ব্যবসায়ী পণ্যের আষ্কিারক ও মালিক হল ইয়াহুদী। তদ্রূপ ইউ.এস.এ -এর স্বীকৃত কসমেটিক্সসহ দামী দামী সব ওষুধ, রাসায়নিক অস্ত্র ও দ্রব্যের স্বত্ত্বাধিকারীও মানবতার এই দুশমনেরা। আফসোস! আখেরাত বর্জনের ফলে আল্লাহর লা'নতে আজ আখেরাতের পাশাপাশি দুনিয়াও আমাদের হাতছাড়া হয়েছে। জগদ্বিখ্যাত দার্শনিক ও মুফতী আল্লামা শফী রহ. তার বিখ্যাত গ্রন্থ তাফসীরে মা'আরিফুল কুরআন -এ অত্যন্ত দুঃখ করে বলেন, হায়! মুসলমান আজ সারা বিশ্বে অমুসলিমদের কৃষ্টি-কালচার, খাওয়া-দাওয়া, পড়া-শোনা, পোশাক-আশাক, উঠা-বসা, চুল-দাড়ি সবকিছুই পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ করে। কিন্তু অমুসলিমদের কর্তব্যপরায়ণতা, কর্ম-অনুরাগ, পরিশ্রম-প্রিয়তা এবং শিল্প ও বাণিজ্যে উন্নতি লাভের বিষয়গুলো অনুসরণ করে না। মুসলমানদের বৃহৎ শ্রেণী এমন রয়েছে যারা পরকালের কাজও করে না, দুনিয়ার কাজও করে না। যারা শুধু পরকাল নিয়ে ব্যস্ত তারা অবশ্যই সৌভাগ্যবান। কিন্তু যারা কোনটাই করল না তারা যদি অমুসলিমদের ন্যায় কর্মঠ হয়ে বৈধভাবে উন্নতির কাজ করত, তাহলে অবশ্যই দুনিয়ার উন্নতি মুসলমানের হাতে থাকত। কারণ দুনিয়ার প্রতিটি কাজের বৈশিষ্ট্য ভিন্ন ভিন্ন। যেমন, চাষাবাদের দ্বারা ফসল হবে, কিন্তু ঘরের ফার্নিচার অর্জিত হবে না। ফার্নিচার ক্রয় বা তৈরির জন্য মিস্ত্রী বা মার্কেটের প্রয়োজন হবে। ক্ষেতে বসে তা হবে না। আবার মার্কেটে বসে ফসল পাওয়া যাবে না। তার জন্য ক্ষেতে বা কৃষকের নিকট যেতে হবে। ঠিক তদ্রূপ সারা দুনিয়ার মুসলমান যদি ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রযুক্তি, আবিষ্কার ও গবেষণা ছেড়ে মসজিদ-মাদরাসায় ইবাদাতে মশগুল থাকে তাহলে তা অবশ্যই ভালো। কিন্তু এর দ্বারা তাদের দুনিয়ার উন্নতি ও প্রযুক্তি হাতে আসবে না।

এই দুনিয়ায় আল্লাহ তা'আলার সাথে কারো আত্মীয়তা নেই। ন্যায়-নিষ্ঠা, প্রচেষ্টা, কর্ম, গবেষণা, প্রযুক্তি, শিল্পোন্নতির অবিরাম মেহনত করলে চাই সে যে ধর্মেরই হোক তা তাকে দুনিয়াতে দান করা হবে। শুধু ধর্মের নামের কারণে দুনিয়াতে কোনদিন অভাব বা স্বচ্ছলতা আসে না। এমন মনে করা ভুল যে, মুসলমান হলেই ইসলামের নামের কারণে বিজয় অথবা ধন-সম্পদ আসবে। বরং তা অবশ্যই আসবে ঈমান আমলের মজবুতি ও কাজের ন্যায়-নিষ্ঠা ও আখলাকের দ্বারা। অলসতা দিয়ে কখনও নয়। আবার অমুসলিম হলেই ইয়াহুদী নামের কারণে পরাজয় বা দারিদ্র আসবে না। আসবে বদ আমল ও ন্যায়-নিষ্ঠা বর্জন ও কাজে অলসতার কারণে। অলসতা কোন ধর্মেই ইবাদত নয়। এমনকি ইসলামেও নয়। তাহলে প্রয়োজন মাফিক দীন-ধর্ম শিক্ষা যেমন ফরয তেমনিভাবে অর্থ-সম্পদ ও হালাল রুজি অন্বেষণও ফরয। তাহলে আজ সারা দুনিয়ার মুসলমান এ বাস্তব সত্যটুকু কিভাবে ভুলে গেল! (সূত্র: সংক্ষিপ্ত তাফসীরে মা'আরিফুল কুরআন; পৃষ্ঠা ৫৬, সূরা বাকারা- ১১৩) অর্থনৈতিক আগ্রাসনের উপমা হিসেবে ইয়াহুদী-খ্রিস্টান কর্তৃক নির্মিত দু'টি প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক ও ব্র্যাকের কথা উল্লেখ করা যায়। গ্রামীণ ব্যাংক ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত একটি প্রতিষ্ঠান। ২০০৮ ইং পর্যন্ত এটি মানুষের মধ্যে ৭০৬ কোটি ডলার ঋণ প্রদান করেছে। ২০০৬ সন পর্যন্ত সারা দেশে তার শাখা ছিল ২১ হাজার। ঋণের উপর গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার ২০%। গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যদের মধ্যে ৯৭ ভাগই হল মহিলা। বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংক ১২ হাজার কোটি ৪৩৫ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকার মালিক। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ সুদের ভিত্তিতেই জমা হচ্ছে এবং বণ্টন হচ্ছে। (সূত্র: ওয়েব সাইট গ্রামীণ ফাউন্ডেশন ইন্টারনেট)

ব্র্যাক একটি অমুনাফাভোগী এন.জি.ও সংস্থা। ২০১২ সনের তথ্য অনুযায়ী তারা এ দেশের ৬৪ টি জেলায় কার্যক্রম ও অফিস চালু করে ব্যবসা নিয়মিত করেছে। তাদের কর্মীর সংখ্যা এক লক্ষ দুই হাজার দুইশত একাশি জন। যার মধ্যে ৭০% কর্মী মহিলা। ২০১১ সনে সংস্থাটির ব্যবসায়িক আয় হয়েছে ত্রিশ হাজার একাশি কোটি একষট্টি লক্ষ ছিয়াত্তর হাজার আটশত আটচল্লিশ টাকা। বর্তমানে উক্ত সংস্থাটির পরিধি দেশ ছেড়ে বিদেশের ১৪টি দেশে তার শাখা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েছে। ব্র্যাকের অন্যতম উদ্দেশ্য হল অর্থনৈতিক উন্নয়ন। যার ভিত্তিতে তারা সারা দেশের ব্যবসা- বাণিজ্যের এক বিরাট অংশ দখল করে নিয়েছে। তাদের উল্লেখযোগ্য পণ্য হল- আড়ং দুধ, ঘি, দধি, তৈরি পোষাক, শাড়ী, থ্রি পিছ, জামা, পাঞ্জাবী, উন্নত মানের মার্কেট, শপিং মল। এছাড়া গার্মেন্ট, মিল-কারখানাও তাদের রয়েছে। তাছাড়া এই প্রতিষ্ঠানের ব্র্যাক ব্যাংক, বিকাশ, হাসপাতাল, ক্লিনিকসহ বহু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড রয়েছে। তাদের আরেকটি লক্ষ্য হল শিক্ষা বিস্তার করা। সে লক্ষ্যে তারা এ দেশের মূল মূল পয়েন্টে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিসহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। এমনকি বাংলাদেশের চার হাজার চারশত একান্নটি ইউনিয়নের প্রায় সবগুলোতে তাদের ব্র্যাক স্কুল রয়েছে। এছাড়াও ব্র্যাক সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অবদান রাখায় এ পর্যন্ত দেশে-বিদেশে পাঁচ বার জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত হয়েছে। (সূত্র: brac.net)

অমুসলিমদের দানে পরিচালিত আরেকটি সংস্থার নাম আশা। আশা মূলত ক্ষুদ্র ঋণ দানকারী একটি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে আশার সদস্য সংখ্যা ২০,২০,০০০ জন এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা মোট ৮০০০ জন। ২০০৭ সনের তথ্য অনুযায়ী বিখ্যাত ফোবর্স ম্যাগাজিনের জরিপে বিশ্বের সেরা ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আশা প্রথম স্থান অধিকার করে। ঐ সময় গ্রামীণ ব্যাংকের অবস্থান ছিল ১৬তম। ২০০৯ সন পর্যন্ত আশা ৪০ লক্ষ গ্রাহকের মাঝে চৌদ্দ হাজার দুইশত একান্ন কোটি চল্লিশ লক্ষ টাকা ঋণ প্রদান করেছে। বাংলাদেশে তার ৩২৩৬টি শাখা রয়েছে। যারা নিরবচ্ছিন্নভাবে সুদ ও বেপর্দার সয়লাব দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। (সূত্র: ওয়েব সাইট)

এছাড়াও তাদের রয়েছে গ্রামীণ ফোনের বিশাল ব্যবসা। এ সকল ব্যবসায় তারা আমাদের দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশ নিয়ে যাচ্ছে। এই এক দুটি সংস্থাই নয়, হাজার হাজার সংস্থা মুসলমানদের ধন-সম্পদ, ইজ্জত- আব্রু, ঈমান-আমল ধ্বংস করার জন্য অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে। সুতরাং অর্থনৈতিক উন্নতির ক্ষেত্রে মুসলমানদেরও সজাগ থাকা দরকার এবং শত্রু থেকে হুশিয়ার হওয়া প্রয়োজন। 


সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা বিনষ্টের ধ্বংসাত্মক কারসাজি

প্রত্যেক জাতির আদর্শ-নমুনা, চিন্তা- চেতনা, সভ্যতা প্রকাশ পায় তাদের সাংস্কৃতিক স্বকীয়তার মাধ্যমে। এক জাতি অন্য জাতির সংস্কৃতি গ্রহণ করার অর্থ হল সে নিজের জাতিসত্তা অন্যের কাছে বিকিয়ে দিল। এ জন্যই কেয়ামত পর্যন্ত মুসলিম জাতির সংস্কৃতি কী হবে তা নিরূপণ করে আল্লাহ তা'আলা ঘোষণা করেছেন, لقد كان لكم في رسول الله أسوة حسنة. অর্থ : তোমাদের জন্য মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ। [উত্তম সংস্কৃতি, উত্তম নমুনা।] (সূরা আহযাব- ২১)

সংস্কৃতি শব্দটি সংস্কার থেকে নির্গত। যার অর্থ হল শুদ্ধায়ন, পবিত্র করণ, সংশোধন। পরিভাষায়, জীবনাচারের সংশোধিত পরিমার্জিত চলাফেরা, উঠা-বসা, আহার-বিহার, আনন্দ- আহ্লাদ ইত্যাদি অবস্থার বিকাশকে বলা হয় সংস্কৃতি। সুতরাং কোন জাতির সংস্কৃতি হল সে জাতির চিন্তা- চেতনা, বিশ্বাস ও অনুভূতির আলামত।

সংস্কৃতির তিনটি দিক রয়েছে। (এক) বিশ্বাসগত সংস্কৃতি, (দুই) ব্যবহারিক জীবনের সংস্কৃতি ও (তিন) মননগত সংস্কৃতি। আজ অমুসলিমরা আমাদের উক্ত সব ধরণের সংস্কৃতিকে নষ্ট করে দিয়েছে। আকীদা ও বিশ্বাসগত সংস্কৃতি নষ্ট করে দিয়েছে। পূজা, মাজারপূজা, দরগাহভক্তি, উরস শরীফ, ঈদে মীলাদুন্নবী, জন্ম বার্ষিকী, মৃত্যু বার্ষিকীকে মুসলিম সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশে রূপ দেয়ার প্রয়াস পেয়েছে। ব্যবহারিক জীবনে মুসলমান নিজ সংস্কৃতি বর্জন করে বিজাতীয় অপসংস্কৃতির আগ্রাসনের অক্টোপাসে আবদ্ধ। সীমানার ওপারের মঙ্গল-প্রদীপ থেকে নিয়ে পশ্চিমাদের এক মিনিটের বোবা (নীরবতা পালন) সংস্কৃতিও আমাদের মাঝে বিদ্যমান। 

বিকৃত যৌনাচার এখন আমাদের দুলাল-দুলালীদের বিবাহের পূর্বেই দুলহা-দুলহানে পরিণত করেছে। টিভি, সিনেমা, ইন্টারনেট, ব্লুফিল্মসহ বিনোদনের নামে মুসলিম জাতিসত্তা আজ কলুষিত।

লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, সারা দুনিয়ার মানুষ বিশ্বকাপ খেলার শিরোনামে এমন কোন অশালীন কাজ নেই যা তারা করছে না। আজ বিশ্বকাপ মানে বিশ্বপাপ। মননগত সংস্কৃতির ধ্বংসলীলা বলার অপেক্ষা রাখে না। ভালোবাসা,, সহিষ্ণুতা, বদান্যতা, বিনয় এগুলো পালনীয়। হিংসা, বিদ্বেষ, রাগ, আক্রোশ সব বর্জনীয়। কিন্তু আজ প্রেম- ভালোবাসার নামে কী জঘন্য বেহায়াপনা, নগ্নতা, অশ্লীলতা বৈধ করে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া বর্ষবরণ, নবীন বরণ, সাংস্কৃতিক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান তো বেহায়াপনা আর জৈবিক ভোগ বিলাসিতারই অপর নাম। (সূত্র: ৩০সালা স্মারক, মালিবাগ) 

এছাড়াও সামাজিকতা রক্ষা করতে আমরা এতটাই উদার যে, বলে ফেলি 'ধর্ম যার যার, উৎসব সবার'। মুসলমান হিন্দুকে পূজার আশীর্বাদ জানায় আর হিন্দু মুসলমানকে ঈদের শুভেচ্ছা জানায়। ফুল দিয়ে কবরে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, কালো পোশাকে শোক পালন, একেক উৎসবে একেক পোশাক পরিধান ইত্যাদি সবই অপসংস্কৃতি, যা একান্ত বর্জনীয়। কিন্তু এগুলো মুসলমানদের নিত্যদিনের জীবনে কৌশলে ঢুকিয়ে দেয়াই দুশমনের কারসাজি।


পারিবারিক বন্ধন ও পর্দার বিধান লঙ্ঘনের প্রতারণা

বিদেশী কিছু কিছু এন.জি.ও'র মুখরোচক শ্লোগান হল, 'কিসের বর কিসের ঘর', 'ঘরের ভিতর থাকব না, স্বামীর কথা মানব না', 'আমার মন আমার দেহ, যাকে খুশি তাকে দেব', 'নিজের হাতে নিজের কামাই, অন্যের হাতের ভিক্ষা না খাই' ইত্যাদি জাতীয় উদ্ভট যৌন স্বাধীনতা উদ্দীপক শ্লোগান শিক্ষা দিয়ে আমাদের সরলমনা মা- বোনদেরকে স্বামীর নিরাপত্তা থেকে বের করে ভোগ্য পণ্যে পরিণত করছে। ফলে মুসলিম সমাজের পারিবারিক বন্ধনের ঐতিহ্য নষ্ট হওয়ার পথে। ঘুণ যেমন কাঠের ভেতরটা খেয়ে শুধু কাঠামোটা রেখে দেয় আজকের মুসলিম পরিবারগুলোও তেমন অন্তঃসার শুন্য হয়ে পড়েছে। ভাবতেও কষ্ট হয় যে, 'মুসলমানদের বিবাহ-শাদী মসজিদে হওয়া উত্তম' এ সাধারণ বিষয়েও মুসলমান ভাই-বোনেরা অজ্ঞ। ইয়াহুদী-খ্রিস্টানদের এজেন্ট এন.জি.ও-গুলো জনগণকে উলামায়ে কেরাম থেকে বিচ্ছিন্ন করার নিমিত্তে কতগুলো কটুক্তিমূলক শ্লোগান শিখাচ্ছে। যেমন, 'জর্জ-ম্যাজিস্ট্রেট থাকে ঘরে, মোল্লা এখন বিচার করে'। তাছাড়া তারা গ্রামের গরীব সরলমনা মুসলমানের নিকট গিয়ে বলছে, মুসলমান মানেই দরিদ্র আর খ্রিস্টান মানেই ধনী। তারা মানুষকে ধর্ম বিমুখ করার জন্য শুক্রবারের জুম'আসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ব্যাপারে অনাসক্তি, অনাগ্রহ সৃষ্টি করেছে এবং বাহানা করে নামাযের সময় অফিসের কাজের চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এমনকি প্রাইভেট স্কুল ও কোচিং সেন্টারে জুম'আর নামাযের সময় ক্লাস করার ব্যবস্থা রেখেছে। এন.জি.ও-রা পর্দা ব্যবস্থার ঘোর বিরোধিতা করে। তারা বলে 'পর্দা অগ্রগতি ও প্রগতির অন্তরায়'। আবার কাউকে পর্দার ভুল ব্যাখ্যা দেয় যে, জান বাঁচানো ফরয। তাই চাকুরীর জন্য পর্দা লাগে না। বোরকা বা হাফ বোরকা পরে চাকুরী করলে বা পুরুষদের সঙ্গে একসাথে ডিউটি করলেও কোন অসুবিধা নেই ইত্যাদি। (দৈনিক ইনকিলাব) 

বর্তমানে খ্রিস্টানরা নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাবলম্বী ও নারী অধিকারের নামে মুসলিম পরিবার নীতির গোড়ায় কুঠারাঘাত করেছে। তারা সমাজের লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান না করে অতি উৎসাহী হয়ে ৭০% বা ৯০% নারীদেরকে চাকুরীর ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এ সকল চক্রান্ত দ্বারা উদ্দেশ্য মুসলমান দেশগুলোকে নেতৃত্ব শূন্য করে দেয়া এবং মুসলিম সমাজে কোন বুযুর্গ আল্লাহ ওয়ালা তৈরি হতে না দেয়া।যার পরিণতি হল পাশ্চাত্যের নিঃশর্ত গোলামী। (সূত্র: সেবার নামে এন.জি.ওদের ষড়যন্ত্র)


রাজনৈতিক অঙ্গনে ইয়াহুদী-খ্রিস্টানদের কালো থাবা

ভিনদেশী যে কোন সংস্থা বা সংগঠনের মূল কাজ হল, বিদেশী অনুদান নিয়ে মাঠ পর্যায়ে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসার অধিকার আদায়ে কাজ করা এবং কুশল বিনিময় করে প্রয়োজন অনুযায়ী গরীব- দুঃখীদের শিক্ষা-দীক্ষা, কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা, জনসেবা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা। রাজনৈতিক কোন কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়া তাদের কাজ নয়। অথচ এ দেশের খ্রিস্টান এনজিওগুলো শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে। বর্তমানে দেশের সাধারণ নির্বাচনে এনজিওগুলো নিরপেক্ষতা ভঙ্গ করে তাদের স্বার্থ রক্ষাকারী প্রার্থীকে বেআইনীভাবে প্রচুর অর্থ প্রদান করে থাকে এবং নিজেদের কাঙ্ক্ষিত প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বিজয়ের পূর্ণ ব্যবস্থা করে থাকে। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে অনেক এনজিও প্রার্থী বড় তিন দলের টিকেটে জাতীয় সংসদের সদস্যও হয়েছে। এছাড়াও বিদেশী এনজিওগুলো তৃণমূল পর্যায়ে শতকরা ৪৪ ভাগ গ্রামে নিজেদের সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে নিয়েছে। গত উপজেলা নির্বাচনে প্রথমবারের মতো তারা প্রকাশ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। উপজেলা নির্বাচনে তারা ৪০০ প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিল। তার মধ্যে ১০ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিতও হয়েছে। এছাড়াও এনজিও নিয়ন্ত্রিত ভূমিহীন সমিতির অনেক মহিলা উক্ত নির্বাচনে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার নির্বাচিত হয়েছে। শুধু তাই নয় রাজনৈতিক প্রত্যেক ইস্যুতেও তারা নগ্ন হস্তক্ষেপ করে থাকে। যার জ্বলন্ত প্রমাণ হেফাজতে ইসলামের ৫ মে'র ঘটনা। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফার বিরুদ্ধে এই কুচক্রী মহলই ইন্ধন যুগিয়েছে। তারাই হেফাজতের বিরুদ্ধে গার্মেন্ট সেক্টরসহ বিভিন্ন পেশার কর্মজীবী নারীদের গণজোয়ার (!) দেখাতে নারী সমাবেশ, সেমিনার, বক্তৃতা-বিবৃতির আয়োজন করেছে। কেবল তারাই নয়,তাদের গডফাদাররাও হেফাজতে ইসলামের ৪নং ও ৫নং দাবির বিরোধিতা করে আন্তর্জাতিকভাবে বিবৃতি দিয়েছে। এতে স্পষ্ট হয়েছে, মুসলিম জাগরণ বন্ধে কাফের-বেঈমানেরা সকলেই একাট্টা। তারা আমাদের মা-বোনদের সুশিক্ষা ও নিরাপদ কর্মস্থল চায় না। কারণ অধিকার সচেতন সুশিক্ষিত নারীকে তো আর নামমাত্র বেতনে গাধার খাটুনি খাটানো যাবে না, হাজার টাকার শ্রম মাত্র দু'শো টাকায় কেনা যাবে না এবং নারীশ্রমিকের নিরাপত্তা, চিকিৎসা, ইত্যাদি খাতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয়ও যাবে বেড়ে। ফলে এসব সুদী মহাজনের মুনাফার পাহাড়ে ও বিলাসী জীবনে ধ্বস নামবে। কাজেই হেফাজতের ৪ ও ৫ নং ধারা তারা কিছুতেই বাস্তবায়ন করতে দিবে না।

ইয়াহুদীরা নিজেদের শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এবং আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ'র মাধ্যমে সকল মুসলিম রাষ্ট্রে নিজেদের তাবেদার সরকার বানানোর নীলনকশা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। প্রয়োজনে অর্থ, পদ, বাড়ি, গাড়ি, নারীসহ সবকিছু ব্যবহার করে মুসলমানদের মধ্য থেকে উমিচাঁদ আর মীরজাফর তৈরি করে নিচ্ছে। এটুকুই নয়, কোন মুসলিম দেশে ইসলামী দল ক্ষমতায় গেলে সাথে সাথে সেনাপ্রধানকে ক্রয় করে তাদেরকে দিয়ে সে সরকারকে উৎখাত করে দিচ্ছে।

এছাড়াও মুসলিম রাষ্ট্রের ইসলামী দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বিভেদ লাগিয়ে রাখা, চরম বিতর্কিত ব্যক্তিত্বকে জাতীয় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার নিযুক্ত করা এবং এ ইস্যুতে হকপন্থীদের আন্দোলনে নামানো, উসামা বিন লাদেনকে সাইনবোর্ড বানিয়ে মুসলিম রাষ্ট্রের ভূমি ও খনিজ সম্পদ দখল করা, নিজেরা হামলা করলে অপরাধ দমন আর মুসলমান জবাব দিলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সাব্যস্ত করা- ইত্যাকার সকল কর্মকাণ্ডই মুসলমানদেরকে নিশ্চিহ্ন করার গভীর ষড়যন্ত্র যা থেকে কোন মুসলিম জনপদ আজ মুক্ত নয়।


কুরআন-হাদীসের সহীহ তা'লীম তথা কওমী মাদরাসার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের নীলনকশা

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। মুসলমানদের জন্য সেই মেরুদণ্ড হল, কুরআন-হাদীসের শিক্ষা। অথচ আজ বাংলাদেশে নব্বই ভাগ মুসলমান থাকার পরও দেশের সাধারণ শিক্ষায় কুরআন-হাদীস বাধ্যতামূলক নয়। ইয়াহুদী-খ্রিস্টানদের পরামর্শে শিক্ষা-নীতিমালার নামে নৈতিকতা বিবর্জিত ধর্মহীন শিক্ষাসিলেবাস জাতির উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। সত্যিকারার্থে এর মাধ্যমে জাতির মেরুদণ্ডটিই ভেঙে দেয়া হয়েছে। এমনিতেই গোটা বিশ্বজুড়ে সত্যপন্থীদের ওপর দমন-পীড়ন, নির্যাতন-নিপীড়ন, চলছে। কুরআন-সুন্নাহর ধারক-বাহক ও তাদের অনুসারীরা সর্বত্রই তাগুতের সামনে অসহায়। একই সূত্রে কওমী মাদরাসা ও তৎসংশ্লিষ্ট মহলও সর্বদা ভীত সন্ত্রস্ত ও তোপের মুখে নির্বাক। তারপরও ইয়াহুদী লবির মিডিয়াগুলোতে প্রতিনিয়ত এদের বিরূদ্ধে তথ্য-সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে। কখনও বলা হচ্ছে- মাদরাসাগুলো সমাজে বেকার সৃষ্টি করছে; কখনও বলা হচ্ছে- মাদরাসাগুলো জঙ্গিবাদের প্রজনন কেন্দ্র; আবার কখনও চেঁচানো হচ্ছে- কওমী শিক্ষাধারাকে একমুখী শিক্ষার (ধর্মহীনতার) আওতায় আনা হোক। কারণ এই সিলেবাসে কূপমণ্ডুকতা চর্চা হয়; এর দ্বারা সমাজের ভালো কিছু হয় না। ইত্যাদি, ইত্যাদি। বলতে ইচ্ছে হয়, ওদের ধারণা অনুযায়ী ভালো কিছু না হলেও কওমী তলাবাদের দ্বারা কোন রকম খুন-খারাবী, ধর্ষণসেঞ্চুরী, টেন্ডার ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি কোনদিনই সম্ভব নয়। এসব তো ওদের মানস পুত্রদেরই সাজে এবং তারা করেও থাকে। আসল কথা হল, ওরা ভাল করেই জানে যে, কওমী মাদরাসা হচ্ছে এই উম্মাহর জীবনীশক্তি-পাওয়ার হাউজ। তৎকালীন পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন কওমী তলাবাদের হাতে টুকরো টুকরো হওয়ায় এবং ইতোপূবে ব্রিটিশ রাজশক্তি এদের দেখানো পথে ভারতবর্ষ থেকে উৎখাত হওয়ায় বর্তমান পরাশক্তি বুঝে নিয়েছে, আখেরাত প্রত্যাশী, দেশপ্রেমিক এ সরল-সহজ মোল্লাগুলোর অস্তিত্ব যতদিন পৃথিবীর কোন ভূখণ্ডে বিদ্যমান থাকবে-কিছুতেই সে ভূখণ্ড নিরাপদে দখল করা সম্ভব হবে না। শেষ জীবনীশক্তিটুকু অবশিষ্ট থাকতেও এরা তা হতে দিবে না। সাম্রাজ্যবাদী পাশ্চাত্যের কওমী বিরোধিতার এই হল মূল রহস্য। বাংলাদেশের কওমী মাদরাসাগুলোর বিরোধিতায় আজ তারা আদা-জল খেয়ে নেমেছে। অথচ ভারত হিন্দু রাষ্ট্র হয়েও সেখানে প্রায় আট দশ হাজার কওমী মাদরাসা রয়েছে। হিন্দুস্তান সরকার তার কোনটাতেই হস্তক্ষেপ করে না। আর বাংলাদেশে মাত্র সাড়ে চার হাজার কওমী মাদরাসা রয়েছে। এ নিয়েই তাদের যত মাথা ব্যথা।

কিন্তু তাদের এ কথা ভুলে গেলে চলবে না, পৃথিবীর ইতিহাসে কওমী শিক্ষা ধারাটিই সবচেয়ে প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থা। বিগত দেড়শত বৎসরের পোড় খাওয়া কওমী মাদরাসা হাজার বছরের মুসাফির। সত্যের পথে সংগ্রামী এ কাফেলার আছে প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার হাজার বছরের অভিজ্ঞতা। এই শিক্ষা ধারা যেমন হিজায, মিশর, দামেশক, বাগদাদ, সমরকন্দ, বুখারা ও স্পেনের ইসলামী সভ্যতা ও শিক্ষার উত্থান দেখেছে, তেমনি সয়েছে তাতারী সয়লাব, ক্রুসেডের অপঘাত আর ইংরেজ লাল কুকুরের বিষাক্ত দংশন। কাজেই যুগের তাতারী আর ক্রুসেডররা হুশিয়ার! (সূত্র: ৩০ সালা স্মারক গ্রন্থ; মালিবাগ) 

ইয়াহুদীদের ষড়যন্ত্র কওমী মাদরাসার অভ্যন্তরেও চলছে পুরোদমে। বর্তমানে তারা মাদরাসা নামক কিছু প্রতিষ্ঠান বানিয়ে স্টাফদের বেতন-ভাতা, ছাত্রদের খোরাকি ও কিতাবপত্রসহ যাবতীয় খরচের যোগান দিচ্ছে। এদেরকে দিয়ে ভিতরে ভিতরে সারা দেশে খ্রিস্টবাদের তা'লীম ছড়িয়ে দিচ্ছে। ইঙ্গ-মার্কিন হানাদারদের আরেকটি কৌশল হল, সন্ত্রাস দমনের নামে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে প্রবেশের সুযোগ করে নেয়া। এ লক্ষ্যে তারা টাকা-পয়সা ও অস্ত্র-শস্ত্রসহ সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে নতুন নতুন গুপ্ত সংগঠন ও দল তৈরি করে। এসব সংগঠন মুসলমানের ছদ্মাবরণে ইহুদী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে এবং মুসলিম জনপদে নিজেরাই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে মুসলমানদের বিরূদ্ধে সন্ত্রাসের দলীল উপস্থাপন করে। সন্ত্রাসীদেরকে আলেম-উলামার বেশ ধরিয়ে জিহাদের নামে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। তারপর নিজেদের বানানো জিহাদিদের শায়েস্তা করার নামে কাঙ্ক্ষিত দেশটাকে দখল করে নেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে আমাদের দেশের জেএমবির কর্মকাণ্ড ও সাম্প্রতিক সময়ে তালিবানের নামে পাকিস্তানের সেনাস্কুলে হামলা চালিয়ে শতাধিক শিশুহত্যা এ ধরণেরই একটা অপকৌশল। কারণ, ইসলামের সঙ্গে যার 

দূরতম সম্পর্কও রয়েছে তার দ্বারা এ পাপযজ্ঞ কিছুতেই সম্ভব নয়। সুতরাং চোখকান খোলা রেখে সময় থাকতেই আমাদের সাবধান হতে হবে।


মিডিয়া ও তথ্য সন্ত্রাসের কবলে মুসলমান

ইয়াহুদীরা পৃথিবীর সবচেয়ে ধূর্ত ও অভিশপ্ত জাতি। তাদের এই ন্যক্কারজনক অবস্থার মূল ভিত্তি হল, তাদের ধর্মীয় আকীদা-বিশ্বাস। বর্তমান ইয়াহুদীরা তাদের মূল আসমানী কিতাব তাওরাতের স্থলে অন্য একটি কিতাবকে আসমানী কিতাব মনে করে এবং এটাকে তাওরাতের উপর প্রাধান্য দিয়ে এই কিতাবের উপর আমল করে। যার নাম হল তালমুদ। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী এই কিতাবের সংকলনকারী হলেন হযরত উযাইর আ.। তাদের বক্তব্য হল, এই কিতাবে দুনিয়ার শুরু থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত সবকিছুই বর্ণিত আছে। তারা আরো বিশ্বাস করে, যে ব্যক্তি উক্ত কিতাবের বিরুদ্ধাচরণ করবে সে তাৎক্ষণিক আল্লাহর আযাবে নিপতিত হবে এবং মৃত্যুমুখে পতিত হবে। তাওরাতের ন্যায় তাদের এই কিতাবটিও অবিকৃত নেই এবং তার পূর্ণ অংশও তাদের নিকট সংরক্ষিত নেই। তালমুদের বর্তমান কপিগুলোতে কিছু জঘন্য আকীদা-বিশ্বাসের কথা পাওয়া যায়। যথা-

১. ইয়াহুদীরা আল্লাহ তা'আলার কাছে সমস্ত ফেরেশতা অপেক্ষা প্রিয়। আল্লাহর সাথে তাদের সম্পর্ক, পিতা-পুত্রের সম্পর্ক।

২. যদি দুনিয়াতে ইয়াহুদীদের অস্তিত্ব না হত তবে সূর্যের উদয় হত না এবং পৃথিবীতে বৃষ্টি বর্ষণ হত না।

৩. আল্লাহ তা'আলা সমস্ত মানুষের ইচ্ছানুযায়ী ব্যয় করার অধিকার দিয়েছেন।

৪. অ-ইয়াহুদীদের ধন-সম্পদ পরিত্যক্ত সম্পদের ন্যায়। ইয়াহুদীরা যেভাবে ইচ্ছা তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারে এবং যথেচ্ছা ব্যবহার করতে পারে।

৫. আল্লাহ তা'আলা তাঁর মনোনীত সম্প্রদায় ইয়াহুদীদের অধীনে সকল প্রাণী ও মানুষকে (পাশ্চাত্যের খ্রিস্টানকে) অর্পণ করেছেন। কারণ আল্লাহ জানেন যে, ইয়াহুদীদের এই উভয় প্রকার জানোয়ারের প্রয়োজন হবে।

৬. ইয়াহুদীদের জন্য অ-ইয়াহুদীদের ধন-সম্পদ হস্তগত করা ফরয, তা যেভাবেই হোক না কেন। যাতে দুনিয়ার সকল সম্পদ কেবল ইয়াহুদীদের মালিকনায় এসে যায়। 

৭. ইয়াহুদীর জন্য উপকারী হয় কিংবা অ-ইয়াহুদীর ক্ষতিসাধন হয় এমন সকল ক্ষেত্রে মিথ্যা বলা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, ধোঁকা দেয়া শুধু বৈধই নয়, অপরিহার্য। 

৮. অ-ইয়াহুদীর নিরাপত্তা এবং তার কল্যাণ সাধনের ইচ্ছা করাও উচিত নয়। 

৯. কোন ভূখণ্ড (হে ইয়াহুদীগণ!) তোমাদের অধীনে চলে আসলে সেখানকার সকল অ-ইয়াহুদীকে হত্যা করে ফেলবে।

১০. যে ভূখণ্ডের উপর ইয়াহুদীদের আধিপত্য নেই, সে ভূখণ্ড নাপাক- অপবিত্র। কারণ সারাবিশ্বে কেবল ইয়াহুদীরাই পবিত্র আর অন্য সকল লোকেরা অপবিত্র।

পাঠক! বুঝতেই পারছেন, ইয়াহুদীদের দুনিয়াব্যাপী সকল অপকর্মের মূল উৎস তাদের ধর্মীয় ভ্রান্ত বিশ্বাস। এ বিশ্বাস তাদেরকে মানবতার হন্তারক হতে প্ররোচিত করেছে। মানবতার এ নিধনযজ্ঞে তাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হল মিডিয়া।

সংখ্যায় কম হয়েও নিষ্ঠুরতা, টাকা- পয়সা ও মেধার বলে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমগুলোর কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ আজ ইয়াহুদীদের হাতে। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই তারা কীটপতঙ্গের ন্যায় ছড়িয়ে আছে। সত্যকে বিকৃত করা, বস্তুনিষ্ঠুতার কবর রচনা করা এবং ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করায় ইয়াহুদী সাংবাদিকতার জুড়ি নেই। তারা ঘটনাকে নিজেদের সুবিধামত উপস্থাপন করে থাকে, এমনকি গোয়েবলসীয় কায়দায় অসংঘটিত ঘটনাকেও ঘটিত বলে চালিয়ে দেয়। তারা সারা বিশ্বে যে কোন মিত্র ব্যক্তিকে মিডিয়ায় উঁচু করে দেখাতে পারে। আবার শত্রুকে যে কোন মুহূর্তে জনসম্মুখে অপদস্ত করতে পারে। মিথ্যাকে সত্য আর সত্যকে মিথ্যায় পরিণত করতে পারা তাদের গর্ব। এই জঘন্য কর্মগুলো তারা একটি গোপন সংগঠনের মাধ্যমে আঞ্জাম দিয়ে থাকে। তাদের এই গোপন সংগঠনের নাম 'বিল্ডার বার্জ' অন্য বর্ণনামতে 'ফ্রি ম্যাসন'। এই সংস্থা সম্পর্কে জানা যায়, এর সদস্য না হয়ে কেউ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কিংবা ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হতে পারে না। এই ভয়ঙ্কর যায়নবাদী সংগঠন সম্পর্কে প্রসিদ্ধ আরবী সাপ্তাহিক আলমুজতামা লিখেছে, এটি ঐ সংস্থা যা বিশ্বের শাসকদের উপর শাসনের ছড়ি ঘোরায়।

উক্ত সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে। সদস্য সংখ্যা ১১৫ বা ১২০ জন। প্রতিষ্ঠাতা ইয়াহুদী জোসেফ এইচ রোটিঙ্গা। সংস্থাটি সম্পর্কে তুরস্ক থেকে প্রকাশিত আযযামান পত্রিকায় স্থানীয় কিছু রাজনীতিবিদদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়ছে যে, এ সংস্থাটি অতি গোপন থাকার কারণ হল, দুনিয়ার বিভিন্ন স্থানে সক্রিয় গুপ্ত ও প্রকাশ্য সকল প্রকার সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর শিকড় এই আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এক কথায় সারা পৃথিবীর খুন-খারাবী, সন্ত্রাসী আক্রমণ, কোন জাতির জয়- পরাজয়, গডফাদার এবং মাফিয়াচক্রের মূল হোতা হল এ সংস্থাটি।

৫ মে ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে জার্মানীতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক সম্বন্ধে পশ্চিমা গবেষক ব্যাপিস্টার গ্রাফিন লেখেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে ব্যঙ্গ চিত্র রচনা করে এ কথা প্রমাণ হল যে, মুসলমানরা এখনো আমেরিকা ও ইসরাইলকে ঘৃণা করে। গ্রাফিন আরো লেখেন, সিরিয়া, ইরান ও লেবাননের ডেনমার্ক দূতাবাসে অগ্নিসংযোগ- এসব হঠাৎ করে হয়নি। বরং সিআইএ, এমআইসি এবং মোসাদের ভাড়া করা লোকদের মাধ্যমে এগুলো করানো হয়েছে, যারা আন্দোলনকারীদের সাথে মিশে গিয়ে এসব কাজ সম্পাদন করেছে। বিশ্বের বুকে ইয়াহুদীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন 'যায়নিস্ট'। ১৫৫৭ খ্রিস্টাব্দে এর প্রতিষ্ঠা। পরবর্তীতে ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ২৯ ও ৩০ আগস্ট এক সম্মেলনের মাধ্যমে তার প্রাতিষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটে। উক্ত সম্মেলনে সারা দুনিয়াকে কন্ট্রোল করার সুদূর প্রসারী ষড়যন্ত্র এবং নীল নকশা তৈরি করা হয়। বিশ্বের ৩০টি ইয়াহুদী সংগঠনের প্রায় ৩০০ জন ইয়াহুদী নেতা ঐ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে। তারা সকলে মিলে একটি ঐতিহাসিক প্ল্যান তৈরি করে, যা ২৪ প্রটোকল আকারে প্রণীত হয়। উক্ত প্রটোকলের একটি কপি এক খ্রিস্টান মহিলা চুরি করে বিশ্বের সামনে প্রকাশ করে দেয়। সম্মেলনে গৃহিত একটি সিদ্ধান্ত এরূপ- পুরো বিশ্বকে কন্ট্রোল করতে হলে প্রথমত আমাদেরকে পৃথিবীর সকল স্বর্ণ ভাণ্ডার আয়ত্ব করতে হবে। দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যম আমাদের একচ্ছত্র আধিপত্যে নিয়ে আসতে হবে যাতে মিডিয়ার সাহায্যে আমরা বিশ্ববাসীর মগজ ধোলাই করতে পারি এবং এ পথে আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারি। সেই প্রটোকলে আরো উল্লেখ আছে, আমরা ইয়াহুদীরা দুনিয়ার সকল আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমগুলো সংবাদ সংস্থাসমূহের মাধ্যমে কন্ট্রোল করব। যাতে করে বিশ্ববাসীকে আমরা যে চিত্র দেখাতে চাই তারা যেন সে চিত্রটিই দেখতে পায়। আমাদের ইচ্ছার বাইরে বিশ্বের কেউ যেন কোন সংবাদ প্রচার করতে না পারে। সেক্ষেত্রে আমাদের নীতি হবে মুসলিম নিধন। তবে তার প্রকৃত সংবাদ মুসলমানরা কোনদিনই পাবে না। আর মুসলমানদের কোন সাফল্যের চিত্রও আমরা দেখাব না। আর এ লক্ষ্যেই তারা নিজেদের আরাম হারাম করে সকল সংবাদ সংস্থার মালিক হয়েছে। (সূত্র: ইয়াহুদী জাতি ও ইসরাঈল রাষ্ট্র)

রয়টার্স বিশ্বের অন্যতম প্রধান সংবাদ সংস্থা। পৃথিবীর এমন কোন সংবাদপত্র, রেডিও সেন্টার ও টিভি সেন্টার নেই যারা রয়টার্স থেকে সংবাদ সংগ্রহ করে না। বর্তমান বিশ্বের প্রধান দু'টি প্রচার মাধ্যম বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকা। উভয়টির প্রায় নব্বই ভাগ সংবাদ তারা রয়টার্স থেকে সংগ্রহ করে থাকে। বিশ্ব বিখ্যাত এ সংবাদ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়াস রয়টার্স ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে জার্মানীর এক ইয়াহুদী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জীবনের শুরুতে একজন ব্যাংকার ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে সাংবাদিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।

এছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য সংবাদ সংস্থা যেমন এপি, ইউপি, এএফপি ইত্যাদি সবই ইয়াহুদীদের ইঙ্গিতে চলে। ব্রিটেনের প্রচার মাধ্যমগুলোর মধ্যে বিবিসি (ব্রিটিশ ব্রড কাস্টিং কর্পোরেশন) গোটা বিশ্বব্যাপী সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে যে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে তা বলাই বাহুল্য। এই বিবিসির পুরোটাই ইয়াহুদীদের নিয়ন্ত্রণে। আমরা তো বিবিসি শোনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ি, মনে করি এটাই চূড়ান্ত সত্য। কিন্তু বাস্তবতা হল, তারা একদিকে মুসলমানদের হত্যা করবে আর অপরদিকে মুসলমানদের সান্ত্বনা দিবে এবং মলম লাগানোর ফিকির করতে থাকবে। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে তাদের সকল ষড়যন্ত্র থেকে হিফাযত করুন।


আন্তর্জাতিকভাবে ইয়াহুদী-খ্রিস্টানদের চক্রান্ত ও আমরা 

ইয়াহুদী-খ্রিস্টানরা যে মুসলিম জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার লোমহর্ষক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তা গত ২৩ এপ্রিল ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনের ব্লুসবার্গ দফতরের একটি সেমিনারের বক্তৃতা থেকে অনুমান করা যায়। একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক উক্ত সেমিনার সম্পর্কে লেখেন, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার বিশ্বকে এক নতুন যুদ্ধে নামার ডাক দিয়েছেন। তিনি উক্ত সেমিনারে বক্তৃতাকালে বিশ্বব্যাপী ইসলামিস্টদের দমনাভিযানে বিশ্ব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান। সাবেক প্রটেস্ট্যান্ট প্রধানমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রিত্ব শেষে ভ্যাটিকানে রোমান ক্যাথলিক- ফেবকার ক্রুসেডার বলেছেন, ইসলামিস্টরা হল বিশ্বের স্থিতি ও অগ্রগতির পথে প্রধান চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য চীন ও রাশিয়াকে সাথে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর যেসব সরকার ইসলামিস্টদের উপর দমনাভিযান চালাচ্ছে তাদের সমর্থন দিতে হবে, তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। টনি ব্লেয়ারের দৃষ্টিতে বিশ্ব সংকটের মূলে রয়েছে ইসলামের বৈপ্লবিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি। টনি ব্লেয়ার চারটি অজুহাতে ইসলামিস্টদের দমনে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধভাবে উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছেন। প্রথম অজুহাতে তিনি বলেন, এখনো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, মধ্যপ্রাচ্য বর্তমানে বিশ্বের জ্বালানী উৎপাদন ও সরবরাহের প্রধান ক্ষেত্র। দ্বিতীয় কারণ, ইউরোপের ঘরের কাছে মুসলিম দেশগুলো রয়েছে। যেমন বিশেষ করে উত্তর আফ্রিকার প্রভাব স্পেন, ইতালি ইত্যাদি দেশে পড়বে। তৃতীয় কারণ, ইসরাঈলের টিকে থাকা ও নিরাপত্তার জন্যই ইসলামিস্টদের দমন- পীড়ন গুরুত্বপূর্ণ। চতুর্থ কারণ, ইসলামের ভবিষ্যত কী হবে তা নির্ধারিত হবে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি দিয়ে। আর ইসলামের রাজনীতি যেহেতু ধর্ম থেকে উৎসারিত হচ্ছে সেহেতু ধর্মের বিষয় বিবেচনায় আনতে হচ্ছে।

টনি ব্লেয়ারের উক্ত মন্তব্যের উপর বিখ্যাত কলামিস্ট অ্যানসেল পিফার যিনি ইসরাঈলের হার্টজ পত্রিকার সম্পাদক- বলেন, ইয়াহুদী প্রধানমন্ত্রী নেতা নিয়াহুর বক্তব্যের সঙ্গে ব্লেয়ারের বক্তব্যের প্রতিটি শব্দ পর্যন্ত মিলে যায়। অন্যদিকে উক্ত বক্তব্য সম্পর্কে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য অধ্যাপক, ইয়াহুদীবাদের কঠোর সমালোচক, মার্কিন ইয়াহুদী নোয়াম চমস্কি বলেন, যুদ্ধাপরাধের জন্য বুশ জুনিয়র ও টনি ব্লেয়ারকে বিচারের মুখোমুখি করা উচিৎ।

এছাড়াও সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসংঘের বিশ্ব শিক্ষা বিষয়ক বিশেষ দূত যুদ্ধবাজ ক্রুসেডর গর্ডন ব্রাউন তার রিপোর্ট প্রজেক্ট সিন্ডিকেট এভাবে লিপিবদ্ধ করেন যে, নাইজেরিয়ার বুকে মাদরাসা, নতুন আর ঝকঝকে। এখানে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ আছে। জঙ্গিবাদে যারা মদদ দেয় মধ্যপ্রাচ্যের এমন দেশগুলোর অর্থে চলে এ মাদরাসাটি। শিক্ষার্থীরা তাই ছুটছে এখন মাদরাসার দিকে। সেখানে এই শিক্ষার্থীদের বিশেষ আদর্শের ব্যাপারে মগজ ধোলাই করা হয়। জঙ্গিবাদের সমর্থনে প্রচার চালানো হয়। আফ্রিকার বিভিন্ন অংশে যে জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে তা আমার কাছে এজন্যই বিস্ময়কর নয়। উক্ত রিপোর্ট দ্বারাই বোঝা যায় আফ্রিকার সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র নাইজেরিয়া যা এক সময় মুসলিম প্রধান ছিল, তা এখন কেন হাতছাড়া হয়েছে। আর ঝুঁকিতে থাকা দেশ কেবল নাইজেরিয়াই নয়; বরং বিশ্বের প্রতিটি মুসলিম জনপদেরই এরূপ করুণ অবস্থা। (সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব; ২৮ জুলাই ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ)

ব্রিটেনের যুদ্ধবিরোধী সংগঠন স্টপ দ্যওয়ার কোয়ালিশনের আহবায়ক লিন্ডসে জার্মান পশ্চিমাদের আগ্রাসনের সমালোচনা করে লেখেন, আফ্রিকায় পশ্চিমা হস্তক্ষেপ এখন শিকড় গেড়ে বসেছে। বারাক ওবামার শিকারী ড্রোনগুলো পশ্চিম (আফ্রিকার) আকাশে চক্কর দিচ্ছে। নাইজেরিয়ায় ইতিমধ্যে সামরিক বাহিনী ঘাটি গেড়েছে। যার টার্গেট মালির সীমান্ত ও লিবিয়ার সীমান্ত দিয়ে তাদেরকে নিঃচিহ্ন করা। যা তারা ২০১১ খ্রিস্টাব্দে অবিরাম বোমা বর্ষণ করে দেখিয়েছিল। তাছাড়া আফ্রিকার জিবুতি, ইথিওপিয়া ও লোহিত সাগরের অপর পাড়ে ইয়েমেনের আকাশেও মার্কিন ড্রোন বিমান চক্কর দিচ্ছে। আর সোমালিয়াতে তারা যুদ্ধই শুরু করে দিয়েছে। তিনি আরো মন্তব্য করেন, আফ্রিকায় ক্রমবর্ধমান হারে ছড়িয়ে পড়া মুসলমান যদি পশ্চিমাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায় তাহলে সেটা সৃষ্টিতে পশ্চিমারাই মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে। আর এই আধিপত্যবাদের সূত্র ধরেই তারা মিশরের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসিকে উৎখাত করেছে এবং তার দলকে নিষিদ্ধ করেছে। শুধু তাই নয়, বর্তমান সেনা প্রেসিডেন্ট সিসির গর্ভধারিণী একজন ইয়াহুদী মহিলা। যা ইয়াহুদী ষড়যন্ত্রের প্রকাশ্য প্রমাণ। যেমনটি তারা ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে আলজেরিয়ার ইসলামী দলের বেলায়ও করেছিল। বর্তমানে তারা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানকেও উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। কারণ প্রেসিডেন্ট এরদোগানই একমাত্র ইসরাঈলের বর্বর হামলা গাজা ট্রাজেডির প্রতিবাদ করে বলেছেন- ইয়াহুদী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হিটলারের চেয়েও জঘন্য এবং নিকৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এখানেই শেষ নয়, ভূইফোঁড় ইয়াহুদী রাষ্ট্র ইসরাঈল পুরো ফিলিস্তিনই গিলে  ফেলতে চাচ্ছে। কারণ পৃথিবীর ইতিহাসে শত বছর ধরে (১৯১৪ খ্রি.- ২০১৪ খ্রি.) ইয়াহুদীদের সংখ্যা বেড়েই চলছে আশঙ্কাজনক হারে। অথচ ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে ইয়াহুদী ছিল হাতে গোনা কয়েক হাজার। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে তাদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় বিশ হাজারে। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ২ নভেম্বর ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার জেমস বেলফোর এক পত্র মারফত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইয়াহুদীবাদীদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেন। সেই ভিত্তিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইয়াহুদীরা ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপন শুরু করে। ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে ইয়াহুদীরা ব্রিটিশদের সহায়তায় 'হাগানাহ' নামক একটি গুপ্ত সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি করে। তারা গোপনে ফিলিস্তিনিদের ক্ষেত- খামার, দোকানপাট দখল করে সেখান থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়ন শুরু করে দেয়। আর এই সুযোগে ইয়াহুদীদেরকে অন্যান্য স্থান থেকে ধরে ধরে এনে বসতি করার অবাধ সুযোগ করে দেয়। যার ফলে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে যেখানে ইয়াহুদী ছিল মাত্র ৩৫ হাজার। সেখানে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে মাত্র আট বছরের ব্যবধানে তাদের সংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজারে পৌঁছে যায়। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। শেষ হয় ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে। এ সময় নাৎসি জার্মানী ও তার ফ্যাসিস্ট নেতা হের হিটলার যুদ্ধ চলাকালীন লাখ লাখ ইয়াহুদীকে গ্যাস চেম্বারে ও অন্যান্যভাবে হত্যা করেছিল বলে প্রচারণা চালানো হয়। এই মিথ্যা হত্যাযজ্ঞের প্রচারণার মূল উদ্দেশ্য ছিল তথাকথিত মজলুম ইয়াহুদীদের প্রতি বিশ্ববাসীকে সহমর্মী করে তোলা। মূলত সেই কথিত নিরাপত্তাহীনতার অজুহাতেই তারা মিত্র বাহিনীর বিজয়ের পর ইয়াহুদীদের জন্য স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জোর দাবী তুলে ধরে। যার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এক অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে দ্বিখণ্ডিত করে ১৮১ নং প্রস্তাবে স্বাধীন ইয়াহুদী রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয়। ঘোষণায় বলা হয়, মোট ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের ৫৫ শতাংশ পাবে ইয়াহুদী রাষ্ট্র। আর বাকি ৪৫ শতাংশ পাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র। এভাবে ব্রিটিশদের ছত্রছায়ায় ১৫ মে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ইসরাঈল নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। তারপর ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ৪৭ বছরে ইয়াহুদীর সংখ্যা ৬ লাখ থেকে ৫৭ লাখে পৌঁছে যায়। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের ইয়াহুদী শুমারী অনুযায়ী ইসরাঈলে মোট জনসংখ্যা ৮০ লাখ ৫১ হাজার ২০০ জন। ইসরাঈলের রাষ্ট্রীয় ভাষা হিব্রু হলেও তাদের আরো ৩৫টি উপভাষা রয়েছে। উইকিপিডিয়ার হিসেব অনুযায়ী ইসরাঈলের বর্তমান আয়তন ১৮ হাজার ৬৭৩ বর্গমাইল। তবে তার নির্দিষ্ট কোন সীমান্ত নেই।

ফিলিস্তিনে বসবাসরত মুসলিম জনসংখ্যা ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে ছিল ১০ লাখ। উক্ত সংখ্যা ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে হয় সাড়ে ১৭ লাখ। সম্প্রতি প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ফিলিস্তিন বসতির বর্তমান আয়তন দৈর্ঘ্যে ২৪ মাইল, প্রন্থে ৪ মাইল। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ব্যবধান হল ৯২ বছর। উক্ত সময়ে ফিলিস্তিনে মুসলমান সংখ্যা বেড়েছে মাত্র সাড়ে ৭ লাখ। অন্যদিকে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০০৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়ের ব্যবধান ৭৮ বছর। উক্ত সময়ে ইসরাঈলে লোকসংখ্যা বেড়েছে ৭৮ লাখ ৭১ হাজার। (সূত্র: দৈনিক নয়া দিগন্ত; ২২ আগস্ট ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ) 

উল্লিখিত ফিলিস্তিন ভূখণ্ড এবং ইসরাঈল ভূখণ্ডের চলমান দখলকৃত আয়তনের পার্থক্যও জনসংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধির মতোই অত্যন্ত বিস্ময়কর। ইসরাঈলের ভূমির বর্তমান আয়তন ১৮৬৭৩ বর্গমাইল। এই হিসেবে ফিলিস্তিনের আয়তন হওয়া উচিত (৫৫ : ৪৫ অনুপাতে) ১৫২৭৩ বর্গমাইল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ বর্তমান ফিলিস্তিনের আয়তন মাত্র ৯৬ বর্গমাইল। সুতরাং এই ৯৬ বর্গমাইল ভূমিতে অবরুদ্ধ অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে সাড়ে ১৭ লাখ ফিলিস্তিনি। তার মধ্য থেকে গত ৭ জুলাই শুরু হওয়া ইসরাঈলের বর্বর হামলায় ৫০ দিনে প্রায় তিন হাজার মুসলমান নারী-শিশু প্রাণ হারিয়েছে। ইসরাঈল বিশ্বের ৬ষ্ঠ সামরিক শক্তি। তাছাড়া তার রয়েছে অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। পক্ষান্তরে ফিলিস্তিনের রয়েছে শুধু পলায়নের টানেল বা সুড়ঙ্গ পথ আর নিক্ষেপের জন্য রকেট-ক্ষেপণাস্ত্র, যা অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত ইসরাঈলের সামনে হাস্যকর ও খেলনার শামিল।

বোঝা গেল, অচিরেই ইয়াহুদীরা ফিলিস্তিনের নাম মুছে ফেলবে। যে জন্য তারা গাজায় ৫০ দিনের দীর্ঘ আক্রমণে প্রায় ৪৪০ কোটি ডলার পরিমাণ অপূরণীয় ক্ষতি করে এই শহরকে বিরান করে দিয়েছে। যা পূনর্বাসন করতে (দৈনিক নয়া দিগন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী) ৭৭০ কোটি ডলারের প্রয়োজন। আর সময় লাগবে ৫ বছর। অথচ বর্তমানে এই অসহায় মুসলমানদেরকে মুসলিম কোন দেশ উল্লেখযোগ্য সহযোগিতাও করেনি। এমনকি কোন কোন দালাল মুসলিম দেশ নিজেদের গদি ঠিক রাখতে এই বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদও করেনি।

অভিশপ্ত এই ইয়াহুদী জাতি সারা দুনিয়ায় নিজেদের অস্ত্র সন্ত্রাস ও তথ্য সন্ত্রাস অব্যাহত রাখতে তাদের গুপ্তচর বাহিনী-মোসাদ, মাসুনী, ফ্রি ম্যাসন ইত্যাদি সংগঠনকে হরদম কাজে লাগিয়ে রেখেছে। উপরন্ত আরো নতুন নতুন সন্ত্রাসী সংগঠন গড়ে তুলছে যার লেটেস্ট প্রডাক্ট হল, 'শয়তান সম্প্রদায়'। কী ভয়ানক! নিজেরাই নিজেদের নাম রেখছে শয়তান সম্প্রদায়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় আসল শয়তান ইবলিস এখন এদেরকে খিলাফত দিয়ে জান বাঁচাচ্ছে।

শয়তান সম্প্রদায়'র আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে মিশরের কায়রোতে। এ সম্পর্কে ২৫ আগস্ট ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার একটি প্রসিদ্ধ দৈনিকে 'শয়তান সম্প্রদায়' নামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। তাতে উল্লেখ করা হয়, মিশরে শয়তানী সম্প্রদায় এক নতুন ফেতনার জন্ম দিয়েছে। দুই বছর আগে মিশরের একটি সংগঠন কায়রোতে একটি নাটক (ড্রামা) আরম্ভ করেছিল। তাতে কিয়ামতের আগমন, হযরত ঈসা (যীশুখ্রিস্ট) এর অবতরণ সম্পর্কিত সঠিক আকীদা-বিশ্বাস বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়। বিভ্রান্তিকর ধ্যান- ধারণা সম্বলিত এ ড্রামা সারা দেশে গোলযোগ সৃষ্টি করেছিল। ফলে মিসর সরকার তা বাজেয়াপ্ত করে। কিন্তু তারপরও শয়তান সম্প্রদায়ের শয়তানী বাকি থাকে। যারা রীতিমত শয়তানের পূজা-অর্চনা করে আর প্রকাশ্যে খোদাদ্রোহী কাজ করে। তাদের পূজা- পদ্ধতি হল, দুনিয়ার সব অপরাধ-কর্ম সম্পাদন করা তাদের দায়িত্ব। এতে শয়তান তাদের প্রতি খুশি হন। ইত্যাদি... ইত্যাদি। (সূত্র : দৈনিক ইনকিলাব; ২৯ আগস্ট ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ) 

এ পর্যন্ত ইয়াহুদী-খ্রিস্টানদের বহুমুখী ষড়যন্ত্রের কিঞ্চিত আলোচনা করা হল। তা শুনে অনেক দুর্বলমনা মুমিন সন্ত্রস্ত হতে পারেন যে, এমন ভয়ানক ষড়যন্ত্রের অক্টোপাশ থেকে কী করে বাঁচা সম্ভব হবে? আশার বিষয় হল, কুরআনুল কারীমের সূরা আনকাবূতে আমাদের জন্য এক সান্ত্বনা ও সুসংবাদ রয়েছে। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, 'যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্যদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে তাদের দৃষ্টান্ত মাকড়সার জালের ন্যায়।' আল্লাহ তা'আলা এখানে চমৎকার একটি দৃষ্টান্ত দিয়েছেন যে, মাকড়সারা নিরীহ, নিরপরাধ সৃষ্টিজীব শিকারের অসৎ উদ্দেশ্যে জাল বুনতে থাকে। তারপর জাল বোনা শেষে বিকৃত আনন্দে জালে বসে দোল খায়। দু'একটা অসতর্ক শিকার তার ফাঁদে পা-ও দেয়। কিন্তু ঘর-দোর পরিষ্কারের সময় গৃহকর্তা যখন ঝাঁটার একটা মাত্র 'পরশ' বুলিয়ে দেয় মুহূর্তেই তার সব খেল খতম হয়ে যায়। ঠিক তদ্রূপ ইয়াহুদী-খ্রিস্টানদের কাজই হল মুসলমানদের ধবংস করার জন্য অহর্নিশ ষড়যন্ত্রের জাল বোনা। তারপর মুমিন যখন ঈমান-আমলের হাতিয়ার নিয়ে দাঁড়াবে তখন নিমেষেই সব শেষ হয়ে যাবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন, (অর্থ:) তোমরা হীনবল হয়ো না এবং উদ্বিগ্ন হয়ো না, তোমরাই জিতবে, যদি আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থাশীল হও। অন্যত্র ইরশাদ করেন, (অর্থ:) ওরা ষড়যন্ত্র আঁটল আর আল্লাহও এক কৌশল করলেন, বস্তুত আল্লাহই সর্বোত্তম কৌশলী।


মুসলিম উম্মাহর করণীয় 

ইয়াহুদী-খ্রিস্টানদের উল্লিখিত ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করতে হলে মুসলমানদেরকে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে- 

১. আল্লাহ তা'আলার সাহায্য লাভের স্বার্থে দীনদার হক্কানী উলামায়ে কেরামের পরামর্শ মাফিক কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেকে সাচ্চা মুমিনরূপে গড়ে তোলা এবং অধীনস্তদের ঈমান-আমল সংশোধনের নিরন্তর মেহনত চালিয়ে যাওয়া। এ ব্যাপারে কোনরূপ গাফিলতি না করা।

২. সকল প্রকার লোভ ও প্রলোভন এড়ানোর লক্ষ্যে বিলাসী জীবনের রাশ টেনে ধরা এবং সাধারণ ও কষ্টসাধ্য জীবন অভ্যস্ত হওয়া।

৩. সম্পদশালী মুসলমানগণ নিজ নিজ সম্পদের যাকাত সঠিকভাবে আদায়ের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য একটা পরিমাণ নফল দান হিসেবে গরীব-দুঃখিদের মাঝে বিতরণ করা। এতে মুসলমানদের পারস্পরিক সহযোগিতার দ্বার উন্মোচিত হবে এবং ধর্মান্তর ফেতনা রুখে দিবে। 

৪. হালালভাবে অর্থ উপার্জন করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে চেষ্টা করা এবং বেকারত্ব থেকে বেঁচে থাকা। অলসতা ও বেকারত্বের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

৫. দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনতে বেশি থেকে বেশি সম্পৃক্ততার মাধ্যমে নিজেদের ঈমান মজবুত করা এবং জনসাধারণকে দীন মানার গুরুত্ব, ও এর ইহ-পরকালীন লাভ ও বরকত সম্পর্কে অবগত করা এবং তাদেরকে পরিপূর্ণ দীনের ওপর ওঠানোর ফিকির করা।

৫. ইসলামী সংস্কৃতির ব্যাপক প্রচলন ঘটানো। বিজাতীয় সংস্কৃতি বর্জন করা।

৬. প্রতিটি ইউনিয়ন ও গ্রামে, মকতব, মাদরাসা, মসজিদ নির্মাণ ব্যাপক করা এবং এগুলো সুদূর প্রসারী চিন্তা-ভাবনা নিয়ে পরিচালনা করা। যেন এসব প্রতিষ্ঠান দীনের দূর্গে পরিণত হয়।

৭. বিজ্ঞ আলেমগণ জরুরী বিষয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে বই-পুস্তক রচনা করবেন এবং পত্রিকা-ম্যাগাজিন প্রকাশ করত সহজভাবে সর্বসাধারণের হাতে ব্যাপকভাবে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন।

৮. ইয়াহুদী-খ্রিস্টানদের পণ্য যথাসাধ্য বর্জন করা এবং দেশীয় পণ্যের প্রসার ঘটানো।

৯. মানুষ নিজেও জানে না তার ভেতর কোন যোগ্যতা ও দক্ষতা লুকিয়ে আছে এবং আল্লাহ তা'আলা তাকে দিয়ে তার দীনের কোন খিদমত আঞ্জাম দিবেন।

দেখুন, একজন হুসাইন আহমদ মাদানীই কিন্তু সারা ভারতবর্ষ আযাদ করে দেখালেন, একজন আশরাফ আলী থানবীই শত বছরের দীনী সংস্কার সাধন করলেন এবং একজন ইলিয়াস রহ.-এর ফিকিরেই আজ সারা বিশ্বে দাওয়াত- তাবলীগের কাজ নিত্য প্রসারমাণ। এজন্য নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতাকে হেলায়-ফেলায় নষ্ট না করা, যথাসাধ্য তা দীন ও উম্মাহর সেবায় কাজে লাগানো। আর জাতির কর্ণধার উলামায়ে কেরামের কর্তব্য হবে, ধূলোয় লুটোপুটি খাওয়া এ সব প্রতিভাকে বুকে তুলে সযত্নে উজ্জ্বল করে তোলা- তা সে যে ময়দানেরই হোক। কে জানে, হয়তো এদের মাঝেই লুকিয়ে আছে যুগের সালাহুদ্দীন আইয়ুবী যার হাতে আল্লাহ তা'আলা নতুন যুগের ডঙ্কা বাজাবেন, যে যুগ হবে শুধু এবং শুধুই ইসলামের। আল্লাহ তা'আলা সহায় হোন, আ-মীন।

মন্তব্য (...)

এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ

লেখকবৃন্দ

সকল লেখক →