প্রবন্ধ

ইসলাম স্বভাবজাত ধর্ম

লেখক:মুফতি জাওয়াদ তাহের
৩ জানুয়ারী, ২০২৪
২৫৪৯ বার দেখা হয়েছে
মন্তব্য
ইসলাম স্বভাবজাত ধর্ম। স্বভাব বিরুদ্ধ কোনো কিছুর কথা ইসলাম শিক্ষা দেয়নি। একটি ছোট শিশু এই স্বভাব নিয়ে মায়ের পেট থেকে জন্ম লাভ করে। সত্যকে গ্রহণ করা, মিথ্যাকে ঘৃণা করা তার ভিতরে প্রোথিত থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সুতরাং তুমি নিজ চেহারাকে একনিষ্ঠভাবে এই দ্বিনের অভিমুখী রাখ। আল্লাহর সেই ফিতরত অনুযায়ী চল, যে ফিতরতের উপর তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টিতে কোনো পরিবর্তন সাধন সম্ভব নয়। এটাই সম্পূর্ণ সরল দ্বিন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। (সুরা : রোম, আয়াত : ৩০)

 

অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা প্রতিটি মানুষকে এমন যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, সে ইচ্ছে করলেই আপন সৃষ্টিকর্তা ও মালিককে চিনতে পারবে। নবী-রাসুলদের বাতানো পথ সহজেই অনুসরণ করতে পারবে। মানুষের মজ্জাগত এই যোগ্যতাকেই কোরআনে কারিমে ফিতরতশব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে।

 

আর এই যে মজ্জাগত যোগ্যতা আল্লাহ তাআলা প্রতিটি মানুষকে দান করেছেন। এই যোগ্যতা সম্পূর্ণরূপে বিলোপ করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। মানুষ পরিবেশ-পরিস্থিতির প্রভাবে সাময়িকভাবে পথ হারিয়ে ফেলতে পারে। কিন্তু তাকে আল্লাহ তাআলা তাকে জন্মগত যে স্বভাব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন তা শেষ হবে না।

 

আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) ইরশাদ করেন, প্রত্যেক নবজাতক ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। এরপর তার মাতাপিতা তাকে ইহুদি বা খ্রিস্টান অথবা অগ্নি উপাসকরূপে রূপান্তরিত করে, যেমন চতুষ্পদ জন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে (জন্মগত) কানকাটা দেখেছ? (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৩০২)

 

এজন্য কোনো মানুষ যদি ফিতরত তথা স্বভাব পরিপন্থী চলাফেরা করে, তাহলে তার ভেতরে এক ধরণের  অস্বস্থিবোধ কাজ করে, তার ভিতরে অপরাধবোধ কাজ করে। আল্লাহ তাকে যেভাবে সৃষ্টি করেছেন সে তা বিপরীত চলতে চায়। তখন তার জীবন পরিক্রমা স্বাভাবিকভাবে চলে না।

 

নখ চোট রাখা :

একজন মুসলমানের বাহ্যিক বেশভষা এবং অভ্যন্তরে সবকিছুই হবে পরিমার্জিত, পরিচ্ছন্ন ও রুচিসম্পন্ন। প্রিয় নবী (সা.) এমনটাই চাইতেন যে, মুসলমানদের ভিতর ও বাহির একই রকম হবে। আমার বাহ্যিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ভেতরে প্রভাব ফেলবে। এবং আমার এই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও মানুষের মাঝে ইসলামের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলবে। এজন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) নখ বড় হলে কেটে ফেলতে আদেশ করেছেন। বড় বড় নখ রাখা চতুষ্পদ প্রাণীর স্বভাব। এজন্য যাদের নখ বড় থাকে তাদের ভিতরে সূ²ভাবে একটা হিংস্রতা ভাব চলে আসে। আর নখ যদি পরিষ্কার থাকে তখন নিজের কাছেও আরাম লাগে, স্বস্তিবোধ অনুভব হয়। নখ বড় বড় রাখার আরেকটি সমস্যা আছে। নখের মাঝে ময়লা জমে নিজের অজান্তেই সে নখের দিকে বারবার দৃষ্টি যায়। এটা নিজের জন্য যেভাবে অস্বস্তিকর আমার সম্মুখে যদি কেউ এটা দেখে তার জন্য অস্বস্তিকর। বারবার তখন সেই ময়লাযুক্ত নখের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ হতে থাকে। কেমন জানি এটা তার মাথায় বারবার বিঁধে। সেজন্য প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম আদেশ করেছেন, নখ কাটার জন্য। নখ বড় হলেই যেন নিজে থেকে কেটে নেয়। চিকিৎসকরা ও অকপটে একথঅ স্বীকার করেন। এজন্য তারা নখ বড় রাখতে নিষেধ করেন। কেননা নখের নিচে লুকিয়ে থাকা নোংরা ও জীবাণু মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। তাই এই বিধান শুধু মুসলমানের জন্যই নয় প্রত্যেক মানুষের জন্যই এই বিধান। সে নখ ছোট করলে তার ভিতরে ভালো লাগা কাজ করবে। নিজেকে ফুরফুরে ও নির্ভার মনে হবে।

 

শরীরের অবাঞ্চিত লোম পরিষ্কার করা

মানুষের স্বভাব, তার সুগন্ধি ভালোলাগে, দুর্গন্ধকে ঘৃণা করে, অপছন্দ করা। গোসল করলে স্বস্তিবোধ করে, আর গোসল না করলে অস্বস্তি বোধ করে। এগুলো মানুষের স্বভাবসিদ্ধ বিষয়। শরীরের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করাও মানুষের স্বভাবসুলভ বিষয়। দীর্ঘদিন কেউ যদি শরীরের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার না করে, নাভির নিচের পশম কর্তণ না করে, এর কারণে তার ভেতর খারাপ লাগে অনুভব হয়। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এক্ষেত্রে আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা যেন এগুলো সুন্দরভাবে পরিষ্কার করে রাখি। তেমনি গোঁফ বড় হলেও অস্বস্তি লাগে। রাসুল (সা.) মোচ ছোট করার জন্য ও দাড়ি বড় করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

 

আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের জন্য গোঁফ ছাটা, নখ কাটা, বগলের পশম উপড়ে ফেলা এবং নাড়ির নীচের পশম কাটার সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে যে, চল্লিশ দিনের অধিক যেন না রাখি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৯২)

 

চল্লিশ দিনের অধিক না রাখার অর্থ এই নহে যে, এর সর্বোাচ্চ সময় চল্লিশ দিন। চল্লিশ দিনের বেশি যেন না হয়। প্রিয় নবী (সা.) প্রত্যেক জুমুআর দিন নখ ও গোঁফ কাটিতেন। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম হলো, প্রত্যেক সপ্তাহে এই কাজগুলো করা। তা সম্ভব না হলে অন্তত পনর দিন পর। আর চল্লিশ দিনের অধিক যেন কোনোভাবেই অতিবাহিত না হয়।

 

অন্তিম মুহূর্তেও সাহাবাদের অভ্যাস :

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বনু-হারিছ ইবনে আমির ইবনে নওফল খুবাইব (রা.) কে ক্রয় করেন। আর খুবাইব (রা.) হারিছ ইবনে আমিরকে বদরের যুদ্ধে হত্যা করেন। এরপর (ঘটনাক্রমে) খুবাইব (রা.) তাদের হাতে বন্দী হন, তখন তারা তাকে হত্যা করার জন্য একত্রিত হয়। তখন খুবাইব (রা.) হারিছের কন্যার কাছে তার লজ্জাস্থানের লোম পরিষ্কার করার জন্য একখানা ক্ষুর চান। তখন সে (মহিলা) তাঁকে একখানা ক্ষুর প্রদান করে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩০৯৮)

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য (...)

এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ

...

আল্লামা মনযুর নোমানী রহঃ
১০ নভেম্বর, ২০২৪
১৬১৫৭ বার দেখা হয়েছে

ঝাড়ফুঁক-তাবীয : একটি দালীলিক বিশ্লেষণ (১ম পর্ব)

...

মাওলানা ইমদাদুল হক
৯ নভেম্বর, ২০২৪
২৩৭১ বার দেখা হয়েছে