প্রবন্ধ
শিক্ষার জন্য শিক্ষকের বিকল্প নেই
আল্লাহ তা'আলা সকল নর-নারীর জন্য ইলম অর্জন ফরজ করেছেন। ইলম আল্লাহ তা'আলার একটি সিফাত। আল্লাহ ত'আলা তাঁর সৃষ্টির মাঝে একমাত্র মানব ও দানবকেই এ গুনে গুনান্বিত হওয়ার যোগ্যতা দান করেছেন। ইলম অর্জনের জন্য আল্লাহ তা'আলা তিনটি মাধ্যম বা উপায় সৃষ্টি করেছেন। ১. শ্রবণ শক্তি, ২. দৃষ্টি শক্তি, ৩. বিবেক। কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে,
وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا
অর্থ: (হে মানুষ) তুমি যা জান না তার অনুসরণ কর না। নিশ্চয় শ্রবণ শক্তি, দৃষ্টি শক্তি ও অন্তরসমূহ এর প্রত্যেকটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৬)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,
وَهُوَ الَّذِي أَنْشَأَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ قَلِيلًا مَا تَشْكُرُونَ
অর্থ: তিনিই সে সত্তা যিনি তোমাদের জন্য কর্ণ, চক্ষু, ও অন্তঃকরণ সৃষ্টি করেছেন। তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক। (সূরা মু'মিনূন- ৭৮)
আরো ইরশাদ হয়েছে,
وَاللَّهُ أَخْرَجَكُمْ مِنْ بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ لَا تَعْلَمُونَ شَيْئًا وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
অর্থ : আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরকে তোমাদের মাতৃগর্ভ থেকে এ অবস্থায় নির্গত করেছেন যে, তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণ শক্তি, দৃষ্টি শক্তি ও হৃদয় যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও। (সূরা নাহল- ৭৮)
আল্লাহ তা'আলা প্রদত্ত ইলম হাসিলের উল্লিখিত তিন মাধ্যম এর কৃতজ্ঞতা হবে এটাই যে এগুলোর সঠিক ব্যবহার করে আল্লাহ তা'আলাকে চিনতে ও জানতে চেষ্টা করা। আল্লাহ তা'আলার দীন শিখতে, বুঝতে ও সে অনুযায়ী আমল করার ফিকির করা। যখন এ তিন মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে কেউ চেষ্টা করবে তখন সে এর মাধ্যমে ইলমের গুণে গুণান্বিত হতে পারবে। ফলে অর্জন করতে পারবে সার্বিক কল্যাণ ও বর্জন করতে সক্ষম হবে সকল অকল্যাণ।
তিন মাধ্যম ব্যবহার করে ইলম অর্জন বিজ্ঞ ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে হতে হবে
ইমাম মুসলিম রহ. সহীহ মুসলিমের ভূমিকায় উল্লেখ করেন যে,
عن محمد بن سيرين قال: إن هذا العلم دين فانظروا عمن تأخذون دينكم.
অর্থ: হযরত মুহাম্মাদ ইবনে সিরীন রহ. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নিশ্চয় এ ইলম; দীন। সুতরাং তোমরা চিন্তা কর কার নিকট থেকে তোমরা তোমাদের দীনকে গ্রহণ করবে।
এবং এ বিষয়টিও লক্ষ্য রাখতে হবে যে, আমি যার কথা শ্রবণের ইচ্ছা করছি কিংবা যার থেকে দীনী জ্ঞান আহরণ করতে চাচ্ছি তার ইলমের কোন সূত্রপরম্পরা আছে কি না? কারণ সনদ বা বর্ণনাসূত্র দীনেরই অংশ। এই সূত্রের ধারা শুরু হয়েছে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন থেকে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার রব আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দীন শিখেছেন সাহাবয়ে কেরাম রাযি.। এভাবে ধারাবাহিকভাবে দীন এবং দীনী ইলম আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে। ইমাম মুসলিম রহ. মুসলিম শরীফের ভূমিকায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. থেকে উদ্ধৃত করেছেন,الإسناد من الدين، ولولا الإسناد لقال من شاء ما شاء অর্থ: সূত্রপরম্পরা দীনেরই অংশ। যদি সূত্র না থাকত তাহলে (দীনের ব্যাপারে) যার যা ইচ্ছা তাই বলত। অন্যান্য ধর্মের ধর্মীয় বিষয়ের বিকৃতির কারণও এটিই যে, এক পর্যায়ে তারা দীন শিখেছে পণ্ডিতের কাছে গিয়ে। ফলে আল্লাহর নাযিলকৃত ধর্ম এবং ধর্মজ্ঞান বাকি থাকেনি।
দুনিয়াবী কোন জ্ঞানে পাণ্ডিত্য অর্জনের পর অনেক ভদ্রলোককে দেখা যায়, দীনী জ্ঞানে পারদর্শী কারো তত্ত্বাবধান ছাড়াই কুরআন-হাদীস রিসার্চ শুরু করে দেয় এবং সে কোন মৌলবীর দারস্থ হওয়াকে নিজের জন্য অপমানের কাজ মনে করে। ফলে সে ব্যক্তির নিয়ত ভালো থাকা সত্ত্বেও বিভ্রান্ত হয়ে যায়। ইলম তো আল্লাহর দান, আল্লাহ তা'আলা যাকে ইচ্ছা এই সম্মানে ভূষিত করবেন। ইলম শিখতে হলে আলেমের মুখাপেক্ষী হয়েই শিখতে হবে। অন্যের প্রজ্ঞা এবং জ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হওয়া কিংবা নিজের জ্ঞানের অহংকারে প্রান্তিকতার শিকার হওয়া আল্লাহ পছন্দ করেন না। আল্লাহ তা'আলা যাকে যে মর্যাদা দিয়েছেন তা স্বীকার করাই হল ইসলামের শিক্ষা। ইরশাদ হয়েছে,
وَهُوَ الَّذِي جَعَلَكُمْ خَلَائِفَ الْأَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ
অর্থ: তিনিই সে সত্তা যিনি তোমাদেরকে ভূপৃষ্ঠের প্রতিনিধি করেছেন এবং তোমাদের একজনকে অপরজনের উপর মর্যাদায় উন্নিত করেছেন, তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তাতে পরীক্ষা করার জন্য। (সূরা আন'আম- ১৬৫)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, وَلَا تَتَمَنَّوْا مَا فَضَّلَ اللَّهُ بِهِ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ অর্থ: তোমরা সে জিনিসের কামনা কর না যার দ্বারা আল্লাহ তা'আলা একজনকে অপর জনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন। (সূরা নিসা- ৩২) সুতরাং বুঝা গেল যে, চোখ, কান আর বিবেক ঠিক থাকলেই যথেষ্ঠ হবে না বরং এগুলোর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে কোন নির্ভরযোগ্য আলেমের তত্ত্বাবধানে দীন শিখতে হবে।
আমাদের সমাজে এক শ্রেণী 'আই থিংক' এর রোগে আক্রান্ত। কুরআন- হাদীসের কিছু বাংলা, ইংরেজি অনুবাদগ্রন্থ পড়ে নিজের রায় বা ব্যাখ্যা প্রকাশ করতে এবং নিজেকে এ কাজের যোগ্য মনে করতে পছন্দ করে। এমন ব্যক্তি থেকে দীন শেখা এবং দীনী বক্তব্য শোনা সর্বসাধারণের জন্য নাজায়েয।
উলামায়ে কেরাম বলেছেন, কুরআন- হাদীসের কোন বিষয়ে কিছু বলার অধিকার সেই ব্যক্তির রয়েছে, যার মধ্যে নিম্নোক্ত বিষয়ের জ্ঞান বিদ্যমান।
১. ইলমুল লুগাহ (আরবী ভাষাজ্ঞান)। কেননা এর দ্বারাই একক শব্দগুলোর অর্থ জানা যায়। হযরত মুজাহিদ রহ. বলেন,
لا يحل لأحد يؤمن بالله واليوم الآخر أن يتكلم في كتاب الله إذا لم يكن عارفا بلغات العرب
অর্থ : আল্লাহ তা'আলা ও পরকালে বিশ্বাসী কারো জন্য আরবী ভাষা জ্ঞান অর্জন করা ব্যতীত কিতাবুল্লাহ সম্পর্কে কথা বলা বৈধ নয়।
২. ইলমুন নাহব (আরবী ব্যকরণ শাস্ত্র)। কেননা, ই'রাবের পরিবর্তনে অর্থের মারাত্মক পরিবর্তন ঘটে আর ইলমুননাহব জানার দ্বারা সেই ত্রুটি থেকে বেঁচে থাকা যায়। ড. মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ আবু শাহবাহ প্রখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে রুহুল মা' আনীর উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করেন যে, ইলমুন নাহব না জানার ফলে এমন মারাত্মক ভুলের সম্মুখীন হতে হয়, যা কখনো কুফরী পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। এ ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য- أَنَّ اللَّهَ بَرِيءٌ مِنَ الْمُشْرِكِينَ وَرَسُولُهُ অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুশরিকদের থেকে দায়মুক্ত। কিন্তু কেউ যদি وَرَسُولُهُ এর পরিবর্তে رَسُولِه তিলাওয়াত করে, তাহলে তিলাওয়াতকারী নিজের অজান্তেই কুফরীতে পতিত হবে। কারণ তখন আয়াতের অর্থ হবে 'নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা মুশরিকদের থেকে ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দায়মুক্ত' নাউযুবিল্লাহ। আর এ আয়াত সম্পর্কে এ ধরনের মারাত্মক ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ইলমুন নাহব তথা আরবী ব্যাকরণ শাস্ত্র সংকলনের সূত্রপাত হয়।
৩. ইলমুল ইশতিক্বাক (মূলধাতু হতে শব্দগঠন শাস্ত্র)। কেননা একই শব্দ যখন দুটি ধাতু হতে নির্গত হয়, তখন মূলধাতুর ভিন্নতার কারণে নির্গত শব্দের অর্থেও মারাত্মক পরিবর্তন সাধিত হয়। যেমন 'মাসীহ্' (হযরত ঈসা আ. এর একটি নাম) এ শব্দটি 'সিয়াহাতুন' ও 'মাসহুন' দুই ধাতু হতে উৎসারিত হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। যদি 'সিয়াহাতুন' ধাতু থেকে উদগত হয় তাহলে 'মাসীহ' অর্থ হবে অধিক ভ্রমনকারী। আর মাসহুন ধাতু থেকে নির্গত হলে অর্থ হবে কাউকে হাতের স্পর্শ দেয়া।
৪. ইলমুস সরফ (শব্দ গঠন ও রূপান্তর শাস্ত্র)। অর্থাৎ এর দ্বারা শব্দের মূল রূপ সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়। যেমন আল্লামা যামাখশারী রহঃ তার কৃত তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে কাশশাফে উল্লেখ করেছন, يَوْمَ نَدْعُو كُلَّ أُنَاسٍ بِإِمَامِهِمْ 'যেদিন আমি সকল মানুষকে তাদের আমলনামাসহ আহ্বান করব অথবা যেদিন আমি প্রত্যেক দলকে তাদের নেতা সহ আহ্বান করব।' আয়াতের মাঝে উল্লিখিত إِمَامِ শব্দটি সম্পর্কে এক শ্রেণীর লোক ধারণা পোষণ করে যে, এটা ام এর বহুবচন। সে হিসাবে উক্ত আয়াতের অর্থ হয় সেদিন আমি সকল মানুষকে, সকল দলকে তাদের মাতা সহ আহ্বান করব, পিতা সহ নয়। এটা এমন অজ্ঞতা যা ইলমুস সরফ না জানার কারণে সৃষ্টি হয়েছে। কেননা ام এর বহুবচন তো امام ব্যবহার হয় না আর আল্লামা যামাখশারী রহ. যথার্থই বলেছেন যে, এটা বিদ'আতী তাফসীর।
৫-৭. ইলমুল মা'আনী, ইলমুল বয়ান, ইলমুল বদী'। এ তিন প্রকার ইলমের সমষ্টি হচ্ছে ইলমুল বালাগাহ। কুরআনে কারীমের অলংকারিত্ব ও অলৌকিকত্ব বুঝার জন্য এর বিকল্প নেই।
৮. ইলমূল কিরাআহ্। এমন শাস্ত্র যার দ্বারা কুরআনী শব্দের উচ্চারণ পদ্ধতি জানা যায় এবং এক ক্বিরাআতকে অন্য ক্বিরাআতের উপর প্রাধান্য দেয়ার সম্ভাব্য কারণ জানা যায়।
৯. ইলমু উসূলিদ দীন (আক্বায়িদ শাস্ত্র)। যার মাধ্যমে আকীদাগত বিষয় ও শরীয়তের হুকুম আহকামের মাঝে এবং দীনের মৌলিক বিষয় ও শাখা- প্রশাখাগত বিষয়ের মাঝে পার্থক্য করতে পারে এবং কুরআনের আয়াত দ্বারা প্রমান পেশ করতে পারে।
১০. ইলমু উসূলিল ফিক্বহ (ফিক্বহের মূলনীতি বিষয়ক শাস্ত্র)। এর দ্বারা কুরআন হাদীস হতে নির্গত আহক্বামের উপর দলীল-প্রমাণ পেশ করার পদ্ধতি সম্পর্কেও অবগত হওয়া যায়।
১১. ইলমু আসবাবিন নুযুল ওয়া-ইলমু কুসাসি ওয়াল আখবার (কুরআন অবতরণের প্রেক্ষাপট ও ঘটনা-কাহিনী বিষয়ক জ্ঞান)। কেননা কুরআন অবতরণের প্রেক্ষাপট জানার দ্বারা সহজে আয়াতের উদ্দেশ্য বুঝা যায়। আর ইলমুল ক্বাসাস জানার দ্বারা কোনটি ইয়াহুদী কর্তৃক বর্ণিত অনির্ভরযোগ্য ঘটনা, আর কোনটি সহীহ ও নির্ভরযোগ্য ঘটনা, উভয় প্রকার বর্ণনার মাঝে পার্থক্য করা যায়।
১২. ইলমুন নাসিখি ওয়াল মানসূখ (রহিত আয়াত ও রহিতকারী আয়াত বিষয়ক জ্ঞান)। এ বিষয়টি অর্জন করা মুফাসসিরের জন্য অত্যন্ত জরুরী। এটা না জানার কারনে মুফাসসিরকে মারাত্মক ভুলে নিপতিত হতে হয়।
১৩. ইলমুল ফিক্বহ (ফিরুহ শাস্ত্র)। এর দ্বারা ফুকাহায়ে কিরামের মাযহাব জানা যায় এবং কুরআনী আয়াত বুঝার ও গ্রহণ করার ক্ষেত্রে তাদের গৃহীত পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়।
১৪. ইলমুল হাদীস (হাদীস শাস্ত্র)। এর দ্বারা সংক্ষিপ্ত বর্ণনা সম্বলিত আয়াতের বিশ্লেষণ ও অস্পষ্ট বর্ণনা সম্বলিত আয়াতের অস্পষ্টতা দূরীকরণ সহ বিভিন্ন বিষয় জানা যায়।
১৫. ইলমুল মাওহিবাহ (আল্লাহ প্রদত্ত ইলম)। যে ব্যক্তি ইলম অনুযায়ী আমল করে তাকেই আল্লাহ তা'আলা এই জ্ঞান দান করেন। (আল-ইতকান ফী উলুমিল কুরআন; অধ্যায় ৭৮, আল- ইসরাঈলিয়্যাত ওয়াল-মউযূআত ৪৬৫,মানাযিলুল ইরফান ফী উলূমিল কুরআন ২২৯) মৌলিকভাবে উপরোক্ত বিষয়ের জ্ঞান ব্যতীত আরো কতিপয় গুণ থাকতে হবে। যেমন ইলমী আমানতদারী, পরিচ্ছন্ন রুচি ইত্যাদি।
মনগড়া তাফসীরের কিছু নমুনা
উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী না হয়ে তাফসীরের পথে পা বাড়ানোর পরিণতি হল গোমরাহী। এখানে কয়েকটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হল-
১. লা-মাযহাবী বক্তা (আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসূফ সাহেব) দাবী করেন যে, না জানলে জিজ্ঞেস করতে হবে দলীল- প্রমাণসহ। তিনি তার দাবীর স্বপক্ষে দলীল পেশ করেছেন সূরা নাহলের আয়াত,
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُوحِي إِلَيْهِمْ فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ . بِالْبَيِّنَاتِ وَالزُّبُرِ
এ আয়াত সম্পর্কে তার আবিস্কৃত তরজমা হল, 'যদি তোমরা না জান তাহলে জিজ্ঞেস কর। দলীল প্রমাণসহ।' তার এ বিভ্রান্তিকর তরজমা শুনে মনে হয় তিনি আরবী গ্রামার পরিপূর্ণভাবে জানেন না বা এর প্রয়োগ করতে পারেননি। কারণ আয়াতের সঠিক অর্থ হল, আমি আপনার পূর্বে কেবল মানুষকেই রাসূল করে পাঠিয়েছি-যাদের নিকট ওহী প্রেরণ করতাম। সুতরাং যদি তোমরা না জান তাহলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর। (সে নবীদেরকে প্রেরণ করেছি) মু'জিযা ও কিতাবসমূহ দিয়ে। 'দলীল-প্রমাণসহ জিজ্ঞেস করা' এটি ভূল ও বিভ্রান্তিমূলক অনুবাদ।
২. একই ব্যাক্তি الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ حَاشِعُونَ এ আয়াতের তরজমা করলেন যারা ভয়-ভীতি নিয়ে সালাত আদায় করবে। সালাত আদায়ের ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলার একটি ভয়-ভীতি থাকতে হবে যেটা হবে মানুষের সফলতার কারণ। তার এ তরজমা শুনে মনে হয় তিনি ইলমে ইশতিক্বাক জানেন না কারণ তিনি خاشِعُون এর তরজমা করেছেন ভয়-ভীতি এ শব্দ خ- ش-ع মূলধাতু হতে উদগত যার অর্থ বিনয় ও নম্রতা। আর ভয়-ভীতি অর্থে ব্যাবহৃত শব্দ হল خاشِیون যা মূলত خ- شِ- ی মূলধাতু থেকে উদগত। সুতরাং পূর্বোল্লিখিত বিষয়ের জ্ঞান আহরণ না করেই কুরআন কিংবা হাদীসের কোন বিষয়ে মন্তব্য করার আগ্রহ পরিহার করা আবশ্যক।মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
আলোকময় কুরআন
আজ জুমু'আর দিন। এ দিনে সূরা কাহাফ তিলাওয়াতের বিশেষ ফযীলত রয়েছে। এটা পনের পারায় শুরু হয়ে ষোল পারায় শে...
মাযহাবের মহান ইমামগণের উপর আরোপিত অপবাদের অপনোদন
মূল আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ. কুরআন হাদীসের জটিল ও দ্বিমুখী অর্থবহ বিষয়াদির সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাধান ...
শান্তি সম্প্রীতি ও উদারতার ধর্ম ইসলাম
নামে যার শান্তির আশ্বাস তার ব্যাপারে আর যাই হোক, সন্ত্রাসের অপবাদ দেয়ার আগে তার স্বরূপ উদঘাটনে দু'দণ...
শরয়ী বিধানে প্রাণীর ছবি (পর্ব এক)
প্রথমদিকে মানুষ তাদের সমাজের নেক ও সৎ লোকদের ভাস্কর্য বানাতো, চিত্র তৈরি করতো। কালক্রমে সেটাই তাদের ...