প্রবন্ধ

পর্দা নারীর আভিজাত্য ও মর্যাদার প্রতীক

লেখক:মুফতী তাফাজ্জুল হুসাইন গাজীপুরী
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪
১৯৩৯৮ বার দেখা হয়েছে
মন্তব্য

দু'টি চিত্র লক্ষ্য করুন। প্রথমটি ইসলামের স্বর্ণযুগের। আর দ্বিতীয়টি তথাকথিত প্রগতি-যুগের।

চিত্র-১

খলীফা উমর ইবনে আব্দুল আযীযের শাসনামল। ইসলামী খেলাফতকাল পরিধি দূর-দূরান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। সে যুগের সফর আজকালের মতো এত সহজ ছিল না। পথ-ঘাটের চড়াই- উৎরাই, প্রশস্ত মরুভূমি এবং গিরিপথ অতিক্রম করা ছাড়াও গন্তব্যে পৌঁছতে ভয়ংকর সব মৃত্যুপুরী অতিক্রম করতে হত। এক মুসলিম নারী সাহায্যের আশায় দারুল খিলাফায় এসেছে সুদূর ইরাক থেকে। দুর্গম পথ অতিক্রম করতে এ মুসলিম নারীর বুক কাঁপলেও ইজ্জত আব্রুর ব্যাপারে হৃদয়ে তার সামান্যও শঙ্কা জাগেনি। সব নারীর সফর হতো তখন একেবারে নিরাপদ সফর। (আদ- দাওলাতুল উমাবিয়্যাহ ৩/২০৭) 

চিত্র-২

পিচঢালা মসৃণ রাজপথ। যান্ত্রিক উন্নতির বিচিত্র সব সুবিধা ভোগ করে শহরের বাসিন্দারা। যাতায়াত সুবিধার জন্য অসংখ্য উড়াল সেতু তৈরি করা হয়েছে। শহর জুড়ে মেট্রোরেল চলাচলকে আরও সহজ করে দিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার খুব দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি 'ভারতে'র রাজধানী এটি।

শক্তিশালী নিরাপত্তা চাদরে ঘেরা এ শহরটিতে ২০১২ এর ১৬ ডিসেম্বরে ঘটে যাওয়া এক লোমহর্ষক দুর্ঘটনা পুরো বিশ্বকে নাড়া দিয়েছিল। চলন্ত বাসে মেডিকেল কলেজের ছাত্রী-দামিনীর শ্লীলতাহানি এবং এর পরবর্তী আচরণ সত্যিই অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছে। যদিও আজকের আলোর (!) যুগে এমন ঘটনা অহর্ণিশ ঘটছে। বরং আলোর গতির সাথে দিনদিন এমন অঘটন বেড়েই চলছে। 

দুই কালের পার্থক্য; একজন পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য:

সমাজের অপরাধ রোধ এবং তার কারণ চিহ্নিত করে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়া পুলিশ ডিপার্টমেন্টের কাজ। তারা খুব কাছ থেকে সমাজকে প্রত্যক্ষ করেন। সমাজের ভালোমন্দ অত্যন্ত গভীরভাবে উপলব্ধি করেন। বিভিন্ন মহলের চাপে সবসময় প্রকৃত সত্য প্রকাশ করতে না পারলেও কখনও তা প্রকাশ হয়েই যায়। ঘটনার পর অন্ধ্র প্রদেশের পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল দীনেশ বলেন,নারীদের অশালীন পোশাক ধর্ষণ প্রবণতাকে প্ররোচিত করে। 

উক্তিটি সমাজকর্মী(!) এবং কথিত নারীবাদীদের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিল। প্রতিবাদ, সভা-সমাবেশ বহু কিছু হল। কিন্তু প্রবহমান ঘটনায় একটু দৃষ্টি দিলেই স্পষ্ট বুঝে আসে, জেনারেল দীনেশ যথার্থই বলেছেন। এটা তো বহু পরের একটা উক্তি। কিন্তু ইসলাম চৌদ্দশত বছর আগেই আমাদেরকে এ উপলব্ধি দিয়েছে। নারীর ইজ্জত-আব্রু রক্ষার জন্য যে পরিবেশে যে পোশাক শালীন ইসলাম তার জন্য সেই পোশাকই নির্ধারণ করে দিয়েছে। ঘরের অভ্যন্তরে যে পোশাক চলনসই বাইরের পরিবেশে তা ইজ্জত- আব্রু রক্ষার জন্য যথার্থ না হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই কোন প্রয়োজনে বহির্গমনের জন্য ঢিলেঢালা বস্ত্র দ্বারা পূর্ণ শরীর ঢেকে বের হতে আদেশ করা হয়েছে। ইসলামের পরিভাষায় পুরো শরীর ঢিলেঢালা পোশাকে আবৃত করাকেই হিজাব গ্রহণ বলে।


ইসলামী শরীয়তে হিজাব বা পর্দা: 

বিংশ শতাব্দির শ্রেষ্ঠ ফকীহ মুফতী শফী রহ. আহকামুল কুরআনে (৩/৩৯৩) হিজাব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। কুরআন-হাদীসে বর্ণিত এ বিষয়ের প্রায় সকল নুসূস বিশ্লেষণ করে অবস্থা ও পরিস্থিতির ভিন্নতার ভিত্তিতে তিনি হিজাবের তিনটি স্তর বর্ণনা করেছেন।

এক. ঘরে, চার দেয়ালের অভ্যন্তরে বা আবদ্ধ স্থানে স্বাভাবিক পর্দা। এ অবস্থায় গাইরে মাহরামের সামনে বাহ্যিক বা ভিতরগত সৌন্দর্য কোন কিছুই প্রকাশ পায় না। চেহারা, হাত বা শরীরের কোন কিছু প্রকাশ পাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।

দুই. বোরকা বা বড় চাদর যা দ্বারা চেহারা হাতসহ পুরো শরীর আবৃত হয় এমন চাদর দ্বারা হিজাব গ্রহণ। এ পদ্ধতিতে মাথা থেকে পা পুরো শরীর কাপড় আবৃত থাকবে।

তিন. চেহারা, হাত অনাবৃত রেখে সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা। উপরোক্ত তিন প্রকারের মধ্যে মহিলাদের জন্য প্রথম প্রকারের হিজাব হলো মূল। অর্থাৎ মহিলারা বাড়ির আঙ্গিনার ভিতরেই থাকবে। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হবে না। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন,وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ অর্থ : তোমরা নিজেদের গৃহসমূহে স্থিরভাবে অবস্থান করো। (সূরা আহযাব- ৩৩)

মনে রাখতে হবে, এ নির্দেশ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের সাথে সীমাবদ্ধ নয়। অন্য আয়াতে বলেন, 'যখন তোমরা তাদের নিকট কিছু চাইবে তখন পর্দার বাইরে থেকে চাও।' (সূরা আহযাব- ৫৩)

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নারী হলো আওরাত (গোপন থাকার জিনিস) যখন সে বাইরে বের হয় শয়তান তার প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেয়। (সুনানে তিরমিযী; হা.নং ১১৭৩) 

দ্বিতীয় স্তর:

নারীরা কখনও বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে যেতে বাধ্য হয়। সে অবস্থায় তাদের জন্য বাইরে বের হওয়া বৈধ রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে পূর্ণ চেহারা ও হাত পা-সহ পুরো শরীর আবৃত করে তবেই বের হতে পারবে। শরীরের কোন অংশ অনাবৃত রেখে ঘর থেকে বের হওয়ার অনুমতি নেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ অর্থ : হে নবী! আপনার স্ত্রীগণকে ও আপনার কন্যাগণকে এবং অন্যান্য মুমিন নারীদেরকে বলে দিন, তারা যেন স্ব-স্ব চাদরগুলো নিজেদের (চেহারার) উপর (মাথা হতে) নিম্নদিকে ঝুলিয়ে নেয়। (সূরা আহযাব- ৫৯)

হিজাবের এ আয়াতে 'জিলবাব' শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন, 'জিলবাব' হল এমন চাদর যা উপর থেকে নীচ সমস্ত শরীর আবৃত করতে সক্ষম।

আল্লামা ইবনে হাজম রহ. বলেন,والجلباب في لغة العرب التي خاطبنا بها رسول الله صلى الله عليه وسلم ما غطى جميع الجسم لا بعضه. অর্থ: যে জিলবাবের কথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তা হলো সেই চাদর যা সমস্ত শরীরকে আবৃত করে। শরীরের কিছু অংশ আবৃতকারী চাদর উদ্দেশ্য নয়। আরবী ভাষায় জিলবাবের অর্থ এমনই। (মুহাল্লা ৩/২১৭) 

আল্লামা ইবনে সীরীন রহ. বলেন, আমরা আবিদা সালমানিকে يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ আয়াতের ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি তার ওড়না দ্বারা মাথা এবং চেহারা আবৃত করলেন। শুধু বাম চোখ খোলা রেখেছিলেন।

ইমাম যাহেদ কাওসারী রহ. এ বর্ণনার সনদের ব্যাপারে বলেন, বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্যতার দিক দিয়ে পাহাড়সম ভারী।

তৃতীয় স্তর:

হিজাবের তৃতীয় স্তর হলো, নারীরা তাদের চেহারা এবং হাত ছাড়া পুরো শরীর ঢেকে রাখবে। হিজাবের এ পদ্ধতিটি দু'টি শর্তের সাথে অনুমোদিত। (এক) ফেতনার আশঙ্কা না থাকা। (দুই) চেহারা বা হাত খোলা রাখার প্রয়োজন দেখা দেয়া। যেমন প্রচণ্ড ভীড় হওয়ার কারণে চেহারা ঢেকে রাখলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা হওয়া। তবে চিকিৎসার স্বার্থে ডাক্তারের সামনে বা সাক্ষ্য দানের জন্য বিচারকের সামনে ফেৎনার আশঙ্কা হলেও অনেক ফকীহ চেহারা খোলার অনুমতি দিয়েছেন। তবে শর্ত হল, বিকল্প ব্যবস্থা না থাকা। আল্লাহ তা'আলা বলেন,وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ অর্থ: আপনি মুমিন নারীদের বলে দিন, ... তারা যাতে তাদের যীনতসমূহ প্রকাশ না করে, কেবল সেই স্থানসমূহ ব্যতীত যা খোলা থাকে। (সূরা নূর- ৩১) হযরত ফযল ইবনে আব্বাস রাযি.বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে একই সওয়ারীতে পিছনে বসা ছিলাম। এক বেদুঈন তার সুন্দরী কন্যাকে (অনাবৃত চেহারায়) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে বিবাহ দেয়ার উদ্দেশ্যে পেশ করলেন। আমি চেহারা ঘুরিয়ে মেয়েটির দিকে তাকালাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার মাথা ধরে চেহারা (অন্যদিকে) ঘুরিয়ে দিলেন। (মুসনাদে আবু ইয়ালা; হা.নং ৬৭৩১)

এ হাদীসে গ্রাম্য সাহাবী তার কন্যাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বিবাহ দিতে চাচ্ছিল। তাই প্রস্তাব পেশ করার সময় চেহারা খোলা রেখেছিল।

সারকথা, কুরআনে নারীদেরকে যথাসম্ভব ঘরে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া বের না হতে বলেছে। আর যদি বের হতেই হয় তাহলে জিলবাব বা বোরকা দ্বারা চেহারা এবং হাতসহ পুরো শরীর আবৃত করে বের হতে বলা হয়েছে। তবে দুই অবস্থা এর ব্যতিক্রম। 

(এক) বিশেষ প্রয়োজন। যেমন ভীড় হওয়ার কারণে, সাক্ষ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে ইত্যাদি। 

(দুই) কামাই রোজগারের প্রয়োজনে কাজ করতে গিয়ে অনিচ্ছায় হঠাৎ চেহারা আবরণমুক্ত হয়ে পড়লে কোনও গুনাহ হবে না। এ অবস্থায় পুরুষদের কর্তব্য তাদের দৃষ্টি অবনত রাখা।

পর্দা শুধু বস্ত্রাবৃত হওয়ার নাম নয়: 

কাপড় দ্বারা নিজের শরীরকে আবৃত করা আর শরয়ী পর্দা পালন করা এক কথা নয়। মুফাসসিরীনে কেরাম লিখেন, দশটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য করা হলে তখন প্রকৃত হিজাব পালন হবে। ১) শরীরের পর্দা ২) মনের পর্দা ৩) চেহারার পর্দা ৪) কন্ঠস্বরের পর্দা ৫) নামাযের পর্দা ৬) গাইরে মাহরাম পুরুষদের সাথে পর্দা ৭) দৃষ্টির পর্দা ৮) বিপদ কালীন পর্দা ৯) ঘরের ভিতরের পর্দা ১০) শরীরের বাইরের পর্দা।

(ক) শরীরের পর্দা: শরীরের সৌন্দর্য ঢেকে রাখার নিমিত্তে মহান আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, 'হে নবী! আপনি নিজ পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের (ওড়নার) কিয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে, (তারা আযাদ-দীনদার) ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব- ৫৯) 

(খ) মনের পর্দা: মুসলিম নারীদের মনের পর্দা সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন, (অর্থ) 'হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নবীর স্ত্রীগণের নিকট কিছু চাইবে, তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। (সুরা আহযাব-৫৯) 

রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'দুই শ্রেণীর জাহান্নামীদেরকে এখনও আমি দেখিনি, (তারা অতি সত্তর কিয়ামতের পূর্বে আসবে) এক শ্রেণী ঐ সকল লোক,যাদের হাতে ষাড়ের লেজের মত চাবুক থাকবে, যা দিয়ে তারা মানুষদেরকে (অন্যায়ভাবে) প্রহার করবে। দ্বিতীয় শ্রেণী ঐ সকল নারী যারা বস্ত্রাবৃত থেকেও নগ্ন থাকবে। অর্থ্যাৎ এমন পাতলা বা শর্ট জামা পরবে যা পরার পরও শরীর দেখা যাবে। তারা (পর পুরুষকে) আকর্ষণকারিণী এবং নিজেরা ভিন্ন পুরুষদের প্রতি লালায়িত হবে। তাদের চুলের খোপা হবে বুখতী উটের হেলানো কুঁজের ন্যায়। তারা জান্নাতে যাবে না এবং জান্নাতের খুশবুও পাবে না। অথচ জান্নাতের খুশবু এত এত দূর (সত্তর বছরের দুরত্ব) থেকে পাওয়া যায়। (মুসলিম শরীফ; হা.নং ৫৪১৯) 

(গ) চেহারার পর্দা:

চেহারার পর্দা সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'তারা যেন তাদের মাথায় পরা ওড়নাকে (চেহারাসহ) তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশের উপর জড়িয়ে দেয়। (সূরা নুর- ৩১) এ সম্পর্কে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাযি. বলেন, আল্লাহ তা'আলা প্রথম শ্রেণীর মুহাজির নারীদের প্রতি রহম করুন। আল্লাহ তা'আলা যখন এই আয়াত وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ নাযিল করলেন, তখন তারা নিজেদের চাদর ছিড়ে (ওড়না বানিয়ে) তা দ্বারা নিজেদেরকে (চেহারাসহ) ঢেকে নিলেন। (বুখারী শরীফ; হা.নং ২৪৭৬)

উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, 'বিখুমুরিহিন্না' এর অর্থ হল তারা নিজেদের (সীনা আবৃতসহ) মুখমণ্ডল আবৃত করেন। (ফতহুল বারী ৩৪৭) 

(ঘ) কন্ঠস্বরের পর্দা: আল্লাহ তা'আলা বলেন, হে নবী সহধর্মিণীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও। যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় স্বরে (ভঙ্গিতে) কথা বলো না। ফলে সেই ব্যক্তি কু-বাসনা করবে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে। তোমরা স্বাভাবিকভাবে (নিরস ভাষায়) কথা বলবে। (সূরা আহযাব-৩২) 

(ঙ) নামাযের পর্দা: নামাযে নারীদের চেহারা এবং হাতের পাঞ্জা ও পায়ের পাতা ছাড়া আপাদমস্তক ঢেকে রাখা ফরয। এমনকি চুলের কিছু অংশ খোলা থাকলেও নামায হবে না।

(চ) গাইরে মাহরাম পুরুষদের সাথে পর্দা: মাহরাম পুরুষদের সাথে পর্দার নীতিমালা সম্পর্কে মহান রাব্বুল আলামীন বলেন, 'হে নবী! ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক, অধিকারভুক্ত দাস-দাসী, যৌন কামনামুক্ত পুরুষ এবং ঐ বালক যারা নারীদের গোপনীয়তা সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতিত কারও কাছে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে'। (সূরা নূর- ৩১)

উক্ত আয়াতে মাহরাম ১৪ শ্রেণীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তারা ব্যতিত সকল পুরুষের সাথে পূর্ণ পর্দা করা ফরয। 

(ছ) দৃষ্টির পর্দা: দৃষ্টির পর্দা সম্পর্কে কুরআনের সূরা নূরে আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'হে নবী! মুমিন পুরুষদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য অনেক পবিত্রতা আছে। নিশ্চই তারা যা করে আল্লাহ তা'আলা সে সম্পর্কে অবহিত আছেন। হে নবী! ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে, এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। (সূরা নূর- ৩০, ৩১)

উক্ত আয়াত দ্বারা বুঝা যায় পর্দা নর- নারী উভয়ের জন্যই জরুরী। প্রত্যেকে যার যার নির্দিষ্ট সীমানায় পর্দা মেনে চলবে। অন্য হাদীসে হযরত উকবা ইবনে আমের রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, 'তোমরা পর-নারীদের সম্মুখে যাওয়া থেকে বিরত থাকো। এ কথা শুনে এক আনসারী সাহাবী প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! দেবর সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দেবর তো মৃত্যুতুল্য ভয়াবহ ব্যাপার। (সহীহ বুখারী; খণ্ড-৯ পৃ: ২৪২)

অন্যত্র মহান রাব্বুল আলামীন বলেন, 'আল্লাহ তা'আলা ভালো করেই জানেন দৃষ্টিসমূহের খিয়ানত (অপাত্রে নযর) এবং অন্তরসমূহ যা গোপন রাখে। (সূরা মুমিন- ১৯)

হাদীস শরীফে আছে, হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রাযি. হতে বর্ণিত, আমি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হঠাৎ-দৃষ্টির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম, তখন তিনি বললেন তোমার দৃষ্টিকে ফিরিয়ে নাও। (সহীহ মুসলিম; হা.নং ৫৪৮১)

অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করে ঘোষণা করেন,দু-চোখের যিনা হলো অপাত্রে দৃষ্টি করা। জবানের যিনা হল (অবৈধ প্রেমের) কথা বলা। আর অন্তর মন্দ কাজের আশা ও বাসনা রাখে (তাও যিনা) আর লজ্জাস্থান তা সত্যায়িত করে অথবা তা থেকে বিরত থাকে। (সহীহ বুখারী; হা.নং ২৫৭২) 

(জ) বিপদকালীন পর্দা: বিপদাপদে পর্দার বিধান মওকুফ হয়ে যায় না। স্বাভাবিক অবস্থায় যেমন পরিপূর্ণ হিজাব ব্যবহার জরুরী, অস্বাভাবিক অবস্থায়ও তদ্রূপ হিজাব রক্ষা করা জরুরী। হযরত উম্মে খাল্লাদ নাম্নী একজন সাহাবিয়্যার পুত্র-সন্তান কোন এক জিহাদে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে শরীক হয়ে আল্লাহর পথে শহীদ হয়ে যান। তার সংবাদ জানার জন্য তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হলেন। কিন্তু এই চরম দুঃসংবাদ ও বিপদের মুখেও উক্ত মহিলা পর্দা রক্ষা করতে ভুল করেননি। এমন সংকটাপূর্ণ মুহূর্তে তার পর্দা পালন দেখে জনৈক সাহাবী বিস্ময়াভিভূত হয়ে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলেন। উত্তরে এই মহীয়সী নারী বললেন, আমি আমার পুত্র হারিয়ে এক বিপদে পড়েছি। এখন হিজাব ছেড়ে দিয়ে আরেক বিপদে পড়ব? (সুনানে আবু দাউদ; হা.নং ২৪৮০) 

তাই নারীদেরকে বিপদের সময়ও ধৈর্য ধরে পর্দা পালন করতে হবে। কারো বিয়োগ-ব্যথায় কান্নার স্বর উঁচু করবে না। কারণ মহিলাদের আওয়াজও পর্দার অন্তর্ভুক্ত। 

(ঝ) ঘরের ভিতরের পর্দা: মুমিন নারীদের জন্য আপন ঘরের ভিতরেও নিজেকে পর্দায় রাখা অপরিহার্য। যেমনিভাবে তারা পর পুরুষের নজর থেকে আঁড়াল হয়ে ঘরে থাকবে তেমনিভাবে নিজেদের দৃষ্টিও ঘর থেকে পর-পুরুষের প্রতি দেয়া থেকে বিরত থাকবে। নিজ ঘরে ভিন্ন পুরুষের ছবি, ছায়াছবি, উপন্যাস, অশ্লীল ছবি, বইপত্র ইত্যাদি দেখবে না, পড়বে না। অপরিচিত মোবাইল নম্বরে কথা বলবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীগণকে এই বিষয়টি খুব ভালোভাবে তা'লীম দিয়েছেন। হযরত উম্মে সালমা রাযি. বলেন, আমি একবার হযরত মাইমূনা রাযি. এর সাথে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ঘরে বসা ছিলাম। এমন সময় আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রাযি. (অন্ধ সাহাবী) সেখানে আসতে লাগলেন। এটি ছিল পর্দার আয়াত নাজিল হওয়ার পরের ঘটনা। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বললেন, তোমরা পর্দার ভিতরে চলে যাও। আমরা বললাম, তিনি কি অন্ধ নন যে, আমাদেরকে দেখতে পাবেন? রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ধমকের স্বরে) বললেন, তোমরাও কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখতে পাবে না? (তারপর তারা পর্দায় চলে গেলেন) (সুনানে তিরমিযী; হা.নং ২৭৭৯)

উক্ত হাদীস দ্বারা বোঝা যায় নারীরা বিনা প্রয়োজনে পর পুরুষের দিকে তাকাবে না। যেমনিভাবে পুরুষেরা ভিন্ন নারীর দিকে তাকাবে না।

(ঞ) ঘরের বাইরের পর্দা: 

নবী-প্রেমিক নারীদেরকে ঘরের বাইরে একান্ত প্রয়োজনে বের হওয়ার ক্ষেত্রেও পর্দার বহু গুরুত্বপূর্ণ দিক লক্ষ্য রাখা জরুরী। কারণ মা-বোনদের জন্য আসল পর্দাই হল ঘরের ভেতর অবস্থান করা। শরীয়ত-সম্মত একান্ত ওযর যেমন, তার ভরণ-পোষণের জন্য কেউ নেই তাহলে জীবিকা অর্জনের জন্য বা ইসলামী আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার প্রয়োজনে, রোগের চিকিৎসার জন্য, আপন পিতা- মাতার সাক্ষাতের জন্য বা ঘরে টয়লেট- বাথরুমের ব্যবস্থা না থাকলে জরুরত সারতে বাইরে যেতে পারবে। হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী হযরত সাওদা রাযি. সম্পর্কে রাত্রে প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার অনুমতির কথা উল্লেখ রয়েছে।

সূরা আহযাবের ৫৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন, আল্লাহ তা'আলা মুসলিম নারীদেরকে আদেশ করেছেন- তারা যখন প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবে তখন যেন জিলবাব (বড় ওড়না) মাথার উপর দিয়ে টেনে নিজেদের মুখমণ্ডল আবৃত করে। আর চলাফেরা করার জন্য শুধু এক চোখ আবরণমুক্ত রাখে। (ফাতহুল বারী ৮/৫৪)।

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নারী হল আওরাত (পর্দায় থাকার পাত্র)। যখন সে ঘর থেকে বের হয় (লোকালয়ে আসে), শয়তান তার প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। (পুরুষের নজরে আকর্ষণীয় করে তোলে যাতে সে পাপে লিপ্ত হয়)। (সুনানে তিরমিযী হা.নং ১১৭৩)

অন্যত্র রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন নারী নিজের মাহরাম পুরুষ ছাড়া সফর করবে না। (সহীহ বুখারী; হা.নং ১৩৪১) 

সুতরাং মুসলিম নারীগণ একান্ত প্রয়োজনে বাইরে বের হলে ঢিলেঢালা মোটা বোরকা পরবে। চেহারা ঢাকবে, হাত মোজা, পা মোজা ব্যবহার করবে। নযর হেফাযত করবে, সুগন্ধি ব্যবহার করবে না। নিজের সৌন্দর্য দেখাবে না, সজোরে কদম মারবে না। পুরুষের মত পোশাক পরবে না। বিজাতীয়দের পোশাক পরার তো প্রশ্নই ওঠে না। কারণ নারীদের ব্যবহারের কাপড়ে পর্যন্ত পর্দা রক্ষা করার নির্দেশ দেয়া হয়ছে। তাই সর্বদা নিজেকে খোদার বাঁদী মনে করে মনের স্বাধীনতাকে শরীয়তের নিয়ন্ত্রণাধীন লাগামে পরাধীন করতে হবে। তাহলেই অক্ষুণ্ণ থাকবে মাতৃজাতির সতীত্ব।

উল্লিখিত আলোচনার দ্বারা এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত ১০ প্রকার পর্দার সমন্বয়কে শরয়ী পর্দা বলা হয়। উল্লিখিত সবগুলো বিষয়কে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে পালন করলেই ইসলামী পর্দা হবে। শুধু বোরকা পরিধান করার নাম পর্দা নয়; বোরকা হল পর্দার অন্যতম সহায়ক। সুতরাং কাউকে বোরকা পরে অবৈধ প্রণয়ে লিপ্ত দেখলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সে আসলে পর্দা করেনি; পর্দার বাহানা করেছে মাত্র। মনে রাখতে হবে, পর্দা নারীর উন্নতির প্রতিবন্ধক নয়; পর্দা আভিজাত্য ও মর্যাদার রক্ষক। বস্তুবাদী ও ভোগবাদী জীবনের বিরুদ্ধে পর্দা হল নারীত্বের রক্ষাকবচ। কারণ আল্লাহ তা'আলা ইতর প্রাণীর মধ্যে যেমন পানাহার, যৌনাচারের চাহিদা দিয়েছেন তদ্রূপ সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের মধ্যেও এই চাহিদা দিয়েছেন। এখন মানুষ যদি শরীয়তের আওতাধীন হয়ে পানাহার আর যৌনাচার নিয়ন্ত্রণের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারে তাহলে শ্রেষ্ঠ প্রাণী মানুষ আর ইতর প্রাণী কুকুরের মধ্যে তফাৎ থাকল কোথায়? অথচ আভিজাত্য আর সভ্যতার দাবী হল, মানুষ সৎ ও পবিত্র চরিত্র লালন করবে। প্রাণীর মত ভোগ আর যৌন তাড়নায় খেই হারাবে না।

পরিতাপের বিষয় হল, আজ আধুনিকতার ধোঁয়া তুলে নারী জাতিকে শরয়ী পর্দার নিরাপদ ছায়া থেকে টেনে অশ্লীলতা, নগ্নতা ও বেহায়াপনার অতল গহ্বরে নিমজ্জিত করা হচ্ছে। লুণ্ঠিত হচ্ছে তাদের ইজ্জত আব্রু। ভোগ্যপণ্যে পরিণত হচ্ছে মাতৃজাতি। ধিক! এই ফ্যাশনবাদী প্রগতিশীল মানুষের সমাজের প্রতি। বস্তুতঃ ইসলামই নারীকে কাতারে এনে ওয়ারিসী হক, সম্পদের অধিকার এবং যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্ব গঠনে ন্যায়সঙ্গত ও পর্যাপ্ত অধিকার দিয়ে পূর্ণতায় পৌঁছে দিয়েছে, যা বিশ্বের কোন ধর্ম ও জাতি তা দিতে পারেনি। এর পরও যদি মুসলিম নারীরা শুকরিয়া স্বরূপ আল্লাহর বিধান পর্দা পালন না করে তাহলে তা হবে চরম দুঃখজনক।

অতএব জগৎটাকে নৈতিকতাপূর্ণ, পবিত্র, রুচিশীল, সভ্য, আদর্শমণ্ডিত ও শান্তিময় করতে হলে ইসলামের মহান নির্দেশ নারী জাতির আভিজাত্য ও মর্যাদার প্রতীক পর্দা ব্যবস্থার কোন বিকল্প নেই। শিক্ষক, মদীনাতুল উলুম মাদরাসা, শিকদার মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।

মন্তব্য (...)

এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ

লেখকবৃন্দ

সকল লেখক →

মুফতী আতীকুল্লাহ

মাওলানা আইনুল হক ক্বাসেমি

মাওলানা মাসরূর বিন মনযূর

হযরত মাওলানা ইদরীস কান্ধলবী রাহ.

শাইখুল হাদীস যাকারিয়া কান্ধলভী রহ.

আল্লামা ইউসুফ বানুরী রহঃ

মাওলানা মীযান হারুন

আল্লামা আনওয়ার জুনদী রহঃ

মাওঃ আসজাদ কাসেমী

আল্লামা সায়্যিদ সুলাইমান নদবী রহ.

ডঃ নজীব কাসেমী

আল্লামা আতাউল্লাহ শাহ বুখারী রহঃ

মুহাদ্দিছুল আসর আল্লামা হাবীবুর রহমান আ'যমী রহঃ

মাওলানা মুহাম্মাদ আনওয়ার হুসাইন

মাওলানা মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম

আল্লামা সাঈদ আহমাদ পালনপুরী রহঃ

শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহঃ

মুফতী শুআইবুল্লাহ খান দাঃ

আল্লামা আব্দুর রাযযাক ইস্কান্দার রহঃ

আল্লামা ডঃ মুহাম্মাদ হামীদুল্লাহ্‌ রহঃ