প্রবন্ধ
খেলাধুলার শরয়ী বিধান
১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ। আকরাম খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কেনিয়াকে হারিয়ে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন হল। দেশব্যাপী সে কী আনন্দ-উল্লাস! সে কী রঙ মাখামাখি! রাস্তায় বেরিয়ে সেদিন 'রংবাজ'দের কবলে পড়েনি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া ভার। পুরো দেশ যেন ক্রিকেট-নেশায় মাতাল। সে দিনের আনন্দ-উল্লাস যে আজকের দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশের পটভূমি হবে তা বোঝার সাধ্য কার ছিল!
মুহাম্মদপুরের বাসিন্দা হওয়ায় আবাহনী মাঠ হয়ে প্রায়ই এদিক সেদিক যাওয়া হয়। বিকেল তিনটার পর থেকে মাঠটি সরগরম হতে থাকে। পাঁচ থেকে পঁয়ত্রিশ বিভিন্ন বয়সের ক্রিকেটপ্রেমীদের তরঙ্গ সৃষ্টি হয় মাঠ জুড়ে। সকলেই ব্যাট-বল হাতে প্র্যাক্টিসে মত্ত। জানা গেছে, এখানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ছাত্র ভর্তি করা হয়। তাদেরকে দক্ষ কোচ দ্বারা প্র্যাক্টিস করানো হয়। দৈনিক আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা প্র্যাক্টিসের নিয়ম রয়েছে। ভর্তি ফি চার হাজার টাকা। মাসে মাসে নেয়া হয় নির্দিষ্ট পরিমাণ কোচিং ফি। বাচ্চাদেরকে নিয়ে আসে সাধারণত তাদের মায়েরা। মায়ের আদরের ধনটি যখন প্র্যাক্টিস করে মা তখন বেঞ্চিতে বসে পা দোলান। কল্পনায় সন্তানের ভবিষ্যতের ছবি আঁকেন। সাঙ্গাকারা, টেন্ডুলকার, মালিঙ্গা, সাকিব আল হাসান কত্তো ছবি জমা হয় তার বুকে!। বলের পশ্চাতে সন্তানের প্রতিটি পিটুনিতে মায়ের স্বপ্নের ভিত মজবুত হতে থাকে- বিশ্বজোড়া খ্যাতি, ৩০০ কোটি প্লাস ব্যাংক- ব্যালেন্স, আরো কত্তো কী!
খেলা নিয়ে এই যে উন্মাদনা এর পেছনে রয়েছে মিডিয়ার ব্যাপক অনুদান। কেউ যখন দেখে একটা ছক্কা হাঁকলেই হাজার হাজার টাকা পুরষ্কার, সেঞ্চুরি করলে লক্ষ টাকার হাতছানি, তখন বৈষয়িক উন্নতিকামীরা আর কীভাবে নিশ্চেষ্ট বসে থাকে। তারা দেখে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর বাৎসরিক আয় আশি মিলিয়ন ডলার, মেসির আয় তেহাওর মিলিয়নেরও বেশি। বড় বড় ঘাগু বিজনেস-ম্যানরাও বহু কষ্টের পর যা কামাতে পারে না। তাহলে এমন সফল পেশা গ্রহণ না করার কী যৌক্তিকতা থাকতে পারে! ইদানিং আবার এ শ্রেণীটির মনের প্রসাদরূপে বাজারজাত করা হয়েছে বিপিএল টুর্নামেন্ট। বিপিএলে একেকজন খেলোয়াড়কে কেনা হয় কোটি টাকা খরচ করে। আর ম্যাচ প্রতি ভিন্ন ফি লক্ষ লক্ষ টাকা তো আছেই। গরিবরা এসব দেখে দেখে স্বপ্ন বুনে। বিত্তবানরা সন্তানকে নিয়ে যায় ক্লাব ও ক্রীড়া কোচিং সেন্টারে। খেলাধুলার পাশাপাশি বর্তমানে খেলা দেখার প্রবণতাও বেড়েছে ব্যাপক হারে। গত বিপিএলের ৩৪ ম্যাচে মাঠের দর্শকই ছিল সাত লক্ষ বিয়াল্লিশ হাজার। পথে-ঘাটে, অফিস-আদালতে টিভির সামনে জটলা পাকানোদের তো হিসেবই নেই। কী বুড়ো, কী শিশু-গোল-ছক্কায় কেউ চেঁচাতে ভুল করে না। এখন পুরো দেশটাই যেন খেলার মাঠ, মানুষগুলো সব খেলোয়াড়। আর খেলাধুলাই জীবনের চরম লক্ষ্য, খেলাধুলাই জীবন।
খেলাধুলার প্রাচীন রূপ
খেলাধুলা আমাদের সমাজে নতুন কিছু নয়, আগেও ছিল। কিন্তু এখনকার উগ্র উন্মাদনা সেকালে ছিল না। বয়স্ক পাঠকগণ অবগত আছেন- সেকালে ঈদসহ বিভিন্ন পালা-পর্বণে পাড়ার ছেলেরা বাড়ি আসতো। বহু দিনের অদেখা বন্ধুদের কাছে পেয়ে জমে উঠতো আড্ডা-মাস্তি। কথায় কথায় কেউ একজন বলতো, আর কয়েকটা দিন বাড়ি আছি, এর মধ্যে ছোটখাটো একটা টুর্নামেন্ট দেয়া যায় না! ব্যস, শুরু হয়ে গেল টুর্নামেন্ট, কয়েক দিনের মৌজ-মাস্তি, হৈ-হুল্লোড়। এরপর আবার সবাই যার যার কর্মস্থলে। অর্থাৎ একসময় খেলাধুলা ছিল অবসরের সীমিত বিনোদন। ক্রীড়া শব্দটির সৃষ্টিও মানুষের এই সরল অনুভূতি থেকে। শব্দটি এসেছে প্রাচীন ফরাসী শব্দ ডিস্পোর্টস অর্থাৎ অবসর থেকে। বস্তুত অতীতে খেলা কোন পেশা ছিল না এবং মানুষ এমন 'অর্থ'হীন কাজকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার কল্পনাও করতো না। খেলাধুলা ছিল তখন সাময়িক চিত্তবিনোদনের উপাদান; কাজের ক্লান্তি ও কর্মযজ্ঞের একঘেয়েমি দূর করার উপায়। কালক্রমে খেলাধুলা পেশার রূপ ধারণ করে এবং মানুষের বিনোদনের নির্মল আবহকে নষ্ট করে দেয়। কারণ অভিভাবক যখন তার বাচ্চাটিকে ক্রীড়া কোচিং-এ ভর্তি করেন তখন সে নিজের মতো করে খেলাধুলার পরিবর্তে বিভিন্ন নিয়ম মেনে খেলতে বাধ্য হয়। ফলে সে খেলার নির্মল আনন্দ লাভে ব্যর্থ হয় এবং কিছুক্ষণের জন্য নিয়মতান্ত্রিকতার আবহ থেকে মুক্তি লাভের যে আশা তার মনে জেগেছিল তা দুরাশাই রয়ে যায়। বাংলা উইকিপিডিয়ায় এ বিষয়ে সুন্দর একটি বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে, 'এককালে খেলাধুলার মূল উদ্দেশ্যই ছিল চিত্তবিনোদন। কিন্তু গণমাধ্যম অবসর কাটানোর উপায়কে পেশায় রূপান্তরিত করেছে। ফলে খেলোয়াড়দের মধ্যে অর্থ উপার্জনই মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। পেশাগত খেলায় বিনোদন নয় বরং আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া এবং ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তাই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে,যা প্রাচীন রীতি-নীতি হিসেবে ক্রীড়াচর্চার নির্মল বিনোদনকে নষ্ট করে দিচ্ছে।'(Wikipedia.org)
খেলাধুলার ইসলামী দর্শন
বাংলা উইকিপিডিয়ায় খেলাধুলার ইতিহাস আলোচনায় বলা হয়েছে, 'চীনের নাগরিকেরা খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ বছর আগে থেকে খেলাধুলার সাথে জড়িত।' কিন্তু মানুষের সত্তাবৈশিষ্ট্যের প্রতি লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, ক্রীড়া- কৌতুক মানুষের সৃষ্টিগত স্বভাব। শিশু যখন কথা বলতে শিখেনি তখনো সে মায়ের আঁচল নিয়ে খেলতে জানে। এতে বোঝা যায়, যেদিন থেকে মানুষের সৃষ্টি সেদিন থেকেই বিনোদনের সূচনা। ইসলাম যেহেতু স্বভাবধর্ম, তাই খেলাধুলার বিনোদনকে সে অস্বীকার করেনি। বরং এর জন্য কিছু মৌলিক নীতিমালা প্রণয়ন করে দিয়েছে। ইসলাম বলে, খেলাধুলা মানবজীবনের মূল লক্ষ্য এবং চূড়ান্ত কাম্য বস্তু হতে পারে না। মানবজীবনের মূল লক্ষ্য হল, আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে তার হুকুম-আহকামের পাবন্দির মাধ্যমে আখেরাতের পাথেয় সংগ্রহ করা। সুতরাং খেলাধুলা কিছুতেই আল্লাহর হুকুম পালনে প্রতিবন্ধক হতে পারবে না। বরং কর্মের একঘেয়েমি যেন মানবমনকে বিষাদগ্রস্ত না করে এবং আল্লাহর হুকুমের প্রতি অনীহা সৃষ্টি না করে ইসলাম এ উদ্দেশ্যে খেলাধুলাকে বৈধতা দিয়েছে। ইসলামী দর্শনে খেলাধুলা নিছক খেলার জন্য নয়; প্রফুল্ল মনে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হওয়ার জন্য। বিনোদনের প্রশ্নে ইসলামের সঙ্গে অন্যান্য দৃষ্টিভঙ্গির এটাই পার্থক্য। অন্যান্যদের দৃষ্টিতে নিছক খেলার জন্য খেলাধুলা করা দোষের কিছু নয়। বিনোদনের জন্য বিনোদন তাদের দৃষ্টিতে প্রশংসাযোগ্য। এর জন্য তারা আন্তর্জাতিক পুরষ্কার ও সম্মাননার ব্যবস্থা পর্যন্ত রেখেছে। ইসলাম বলে, যে খেলা ও বিনোদন শুধুই বিনোদনের জন্য তা অবৈধ এবং যে খেলার মত্ততায় মানুষ উন্মত্ত হয়ে দীনবিমুখ হয়ে যায় তা হারাম। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন,
مَا يَأْتِيهِمْ مِنْ ذِكْرٍ مِنْ رَبِّهِمْ مُحْدَثٍ إِلَّا اسْتَمَعُوهُ وَهُمْ يَلْعَبُونَ لَاهِيَةً قُلُوبُهُمْ
অর্থ : তাদের নিকট তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যখন নতুন উপদেশ আসে তখন তারা তা খেলার ছলে শ্রবণ করে, তাদের অন্তর থাকে খেলায় মত্ত। (সূরা আম্বিয়া- ২, ৩)
মুমিনের বৈশিষ্ট্য আলোচনায় আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ.
অর্থ: আর তারা ঐ সকল ব্যক্তি যারা অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকে। (সূরা মুমিনূন-৩)
অন্যত্র বলেন, যদি তারা অনর্থক কথা- কাজের সংশ্রবে গিয়ে পড়ে তাহলে ভদ্রভাবে এড়িয়ে যায়। (সূরা ফুরকান- ৭৩)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 'মানুষের সুন্দর ইসলাম হল, সে অনর্থক বিষয়াবলী পরিহার করবে।'
খেলাধুলা এবং বিনোদন যখন জীবনের লক্ষ্য হবে এবং ব্যক্তিকে তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে বিমুখ করে তুলবে তখন তা অনর্থক কাজ বলে গণ্য হবে। কারণ, শরীয়তের পরিভাষায় অনর্থক কাজ তা-ই যা মানুষকে লক্ষণীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী থেকে অমনোযোগী করে দেয়। উদ্দেশ্যবিহীন খেলা শরীয়তের পরিভাষায় খেল-তামাশা। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন,
قُلْ مَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ مِنَ اللَّهْوِ وَمِنَ التَّجَارَةِ.
অর্থ: বলুন, আল্লাহর কাছে যা আছে, ব্যবসা-বাণিজ্য, খেল-তামাশা থেকে অনেক উত্তম। আল্লাহ উত্তম রিযিকদাতা। (সূরা জুমু'আ- ১১)
সাহাবায়ে কেরাম খেলাধুলা করতেন। কিন্তু খেলাধুলা তাদেরকে দীন থেকে বিমুখ করতে পারত না। ইমাম বুখারী রহ. সংকলিত বিখ্যাত গ্রন্থ 'আল- আদাবুল মুফরাদ' এর হাদীসটি লক্ষ্য কন,
كان أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم يتبادحون بالبطيخ فإذا كانت الحقائق كانوا هم الرجال.
অর্থ: সাহাবায়ে কেরাম খরবুজা নিয়ে লোফালুফি করতেন। কিন্তু যখন দীনের কোন প্রসঙ্গ আসত, মনে হতো তারা এ ময়দানেরই লোক (খেলাধুলার সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই)। (আল- আদাবুল মুফরাদ; হা.নং ২৬৬)
হাদীসের পাতায় খেলাধুলা-বিনোদন
আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেন, 'তিনি ধর্মের মাঝে তোমাদের উপর কোন সঙ্কীর্ণতা রাখেননি। (সূরা হজ্জ- ৭৮) হাদীসের ভাষ্যে কুরআনের এ বাণীর প্রচ্ছন্নতা প্রস্ফুটিত হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
خذوا يا بني أرفدة حتى تعلم اليهود والنصارى أن في ديننا فسحة. صححه الألباني.
অর্থ: হে হাবশী বালকেরা! তোমরা খেলাধুলা করো, যেন ইহুদী নাসারা জানতে পারে, আমাদের ধর্মে প্রশস্ততা রয়েছে। (মুসনাদে হারেস; হা.নং ৮৫৫) অন্য হাদীসে এসেছে,
الهوا والعبوا فإني أكره أن يرى في دينكم غلظة. قال البيهقي: هذا منقطع.
অর্থ: (বৈধ) খেলাধুলা করতে পারো। কেননা আমি তোমাদের ধর্মে কঠোরতা করতে পছন্দ করি না। (শুআবুল ঈমান; হা. নং ৬৫৪২)
হযরত আলী রাযি. বরেন,
أجموا هذه القلوب واطلبوا لها طرف الحكمة فإنها تمل كما تمل الأبدان
অর্থ: হৃদয়কে প্রশান্ত কর এবং এর জন্য কৌশল অবলম্বন কর। কেননা মন তেমনই ক্লান্ত হয় যেমন শরীর ক্লান্ত হয়। (জামিউল উলূমি ওয়াল হিকাম- ৪০৮)
হযরত কাসামাহ ইবনে যুহাইর বলেন,
روحوا القلوب ساعة فساعة.
অর্থ: অন্তরকে মাঝে মধ্যে প্রফুল্ল কর। (জামিউ বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাযলিহ; হা.নং ৪৮৩)
শরীয়তে নিষিদ্ধ খেলা
কিছু খেলার ব্যাপারে কুরআন-হাদীসে সরাসরি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এখানে সংক্ষেপে তার বিবরণ তুলে ধরা হল।
১. জুয়া
আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسَ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
অর্থ: হে মুমিন সকল! নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্যনির্ধারক শরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কাজ। অতএব এগুলো থেকে বেঁচে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হতে পারো। (সূরা মায়িদা- ৯০)
২. পাশা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
من لعب بالنرد فقد عصى الله ورسوله.
অর্থ: যে ব্যক্তি পাশা খেলল, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করল। (সুনানে আবূ দাউদ; হা.নং ৪৯৪০)
অন্য হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি পাশা খেলল, সে যেন তার হাতকে শুকরের রক্ত, মাংস দ্বারা রাঙিয়ে নিল। (সহীহ মুসলিম; হা.নং ২২৬০)
পাশার সাথে লুডুর কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে, তাই এমন খেলা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।
৩. দাবা
হযরত আলী রাযি. সম্পর্কে বর্ণিত আছে,
أنه مر على قوم يلعبون بالشطرنج فقال: ما هذه التماثيل التي أنتم عاكفون؟
অর্থ: হযরত আলী রাযি. কিছু লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন যারা দাবা খেলায় মত্ত ছিল। তিনি (অসন্তুষ্ট হয়ে) তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, এগুলো কিসের মূর্তি যেগুলোর প্রতি তোমরা ঝুঁকে আছো?
ইমাম মালেক রহ. বলেন, দাবা খেলা পাশা খেলার মধ্য থেকে। (আসসুনানুস সুগরা লিলবাইহাকী; হা.নং ৪৬৫১)
ইমাম ইবনে কুদামা রহ. বলেন, দাবা খেলা হারাম হওয়ার দিক দিয়ে পাশা খেলার মতই। তবে পাশা খেলা হারাম হওয়ার বিষয়টি অধিক শক্তিশালী দলীল দ্বারা প্রমাণিত। যারা দাবা খেলা হারাম মনে করেন তাদের কয়েকজনের নাম কাযী আবূ হুসাইন উল্লেখ করেছেন। তারা হলেন, আলী ইবনে আবী তালেব রাযি., ইবনে উমর রাযি., ইবনে আব্বাস রাযি., সাঈদ ইবনে মুসাইয়িব এবং আরো অনেকে। ইমাম আবূ হানীফা রহ.-ও দাবা খেলা হারাম হওয়ার কথা বলেছেন। (আলমুগনী ১২/৩৬)
৪. মোরগ, ষাড়ের লড়াই:
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن التحريش بين البهائم.
অর্থ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাণীদের লড়াতে নিষেধ করেছেন। (তিরমিযী শরীফ: হা. নং ১৭৬১)
৫. কবুতরবাজী:
কিছু লোকের কবুতরের প্রতি অত্যধিক নেশা থাকে। অন্যের কবুতর চুরি করা, যার তার ছাদে উঠে যাওয়া ইত্যাদি অন্যায় কাজ তারা নিত্যই করে থাকে। হাদীসে এ ব্যাপারে সতর্কতা এসেছে। বর্ণিত হয়েছে,
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم رأى رجلا وراء حمام فقال شيطان يتبع شيطانة.
অর্থ : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে একটি কবুতরের পেছনে দৌড়াতে দেখে বললেন, এক শয়তান আরেক শয়তানের পেছন পেছন যাচ্ছে। (আল আদাবুল মুফরাদ: হা. নং ১৩০০)
অন্যান্য খেলাধুলার শরয়ী বিধান
পূর্বের আলোচনায় কুরআন-হাদীসে যে সকল খেলাধুলার স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে তার উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য খেলাধুলার বৈধ- অবৈধের বিষয়টি মৌলিক কয়েকটি নীতিমালার উপর আবর্তিত।
(১) যে খেলাধুলা কোন হারাম এবং গুনাহের কাজ সংবলিত, সে খেলা নাজায়েয। যেমন কোন খেলায় সতর খোলা হয়, কিংবা তাতে জুয়াবাজি থাকে, কিংবা নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা হয়, অথবা তাতে গান- বাদ্যের আয়োজন থাকে, বা যে খেলায় কাফেরদের অনুসরণ করা হয়।
(২) যে খেলাধুলা ফরয, ওয়াজিব ইত্যাদির ব্যাপারে উদাসীনতা সৃষ্টি করে, সে খেলাধুলা নাজায়েয। কেননা যে কাজ মানুষকে তার ফরয, ওয়াজিব দায়িত্ব থেকে উদাসীন করবে তাই 'অনর্থক' কাজের অন্তর্ভুক্ত। ইমাম বুখারী রহ. সহীহ বুখারীর ৬০০৩নং হাদীসের শিরোনামে বলেছেন,
كل لهو باطل إذا شغله عن طاعة الله.
অর্থ: যে ক্রীড়া আল্লাহর আনুগত্যের ব্যাপারে উদাসীন করে তা নাজায়েয।
হাফেয ইবনে হাজার রহ. বলেন,
أن المنهي عنه ما فيه إفراط أو مداومة عليه ما فيه من الشغل عن ذكر الله والتفكر في مهمات الدين.
অর্থ : নিষিদ্ধ বিনোদন হল, যে বিনোদনে সীমালঙ্ঘন করা হয় বা ধারাবাহিক চলতে থাকে যার পরিণতিতে আল্লাহর বিধান পালনে উদাসীন হয়ে পড়ে এবং দীনী বিষয়ে গাফেল প্রমাণিত হয়। (ফাতহুল বারী ১০/৫২৯)
(৩) যে খেলাধুলা উদ্দেশ্যহীন, শুধু সময় কাটানোর জন্য হয়, শরীয়তে সে খেলাও নাজায়েয। কেননা এতে জীবনের মহামূল্যবান সময়কে অনর্থক কাজে নষ্ট করা হয়।
(8) উপরোক্ত বিষয়গুলোর অনুপস্থিতিতে যদি খেলা দ্বারা দীনী বা দুনিয়াবী কোন উপকার উদ্দেশ্য হয়, তাহলে সে খেলা বৈধ হবে।
ইসলামে পছন্দনীয় কয়েকটি খেলা
১. তীর চালনা:
তীর চালনা ইসলামে পছন্দনীয় একটি খেলা। কারণ এর মাধ্যমে খেলোয়াড়ের শারীরিক উৎফুল্লতা লাভের পাশাপাশি সে দেশ ও জাতির অনেক কল্যাণ সাধনের যোগ্যতা অর্জন করে।
২. অশ্ব চালনা:
অশ্ব চালনা ইসলামে অতি পছন্দনীয় খেলা। এতে সাহসিকতা ও দূরদর্শিতা অর্জিত হয়।
৩. সাঁতার শেখা বা শেখানো:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
كل شيء ليس من ذكر الله لهو ولعب إلا أن يكون أربعة ملاعبة الرجل امرأته وتأديب الرجل فرسه ومشي الرجل بين الغرضين وتعليم الرجل السباحة.
অর্থ : চারটি জিনিস ছাড়া আল্লাহ তা'আলাকে স্মরণ করার সাথে সম্পর্ক রাখে না এমন সব কিছুই অনর্থক খেল-তামাশা। (১) নিজ স্ত্রীর সাথে খেলাধুলা করা, (২) নিজের ঘোড়াকে প্রশিক্ষণ দেয়া, (৩) লক্ষ্যভেদ করার প্রশিক্ষণ নেয়া ও (৪) সাঁতার শেখা। (সুনানে নাসায়ী; হা.নং ৮৯৩৯)
অন্য হাদীসে এসেছে,
أحب اللهو إلى الله إجراء الخيل والرمي. قال المناوي: إسناده ضعيف.
অর্থ: আল্লাহ তা'আলার নিকট সবচেয়ে প্রিয় খেলা হচ্ছে অশ্ব চালনা ও তীরন্দাযী। (ইবনে আদী ৬/১৭৬)
এ সকল খেলা যদি উদ্দেশ্যপূর্ণ হয়, দেশ, জাতি ও ইসলাম রক্ষায় জিহাদের ময়দানে এ যোগ্যতা প্রয়োগের নিয়ত থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হাদীসের প্রয়োগক্ষেত্র বিবেচিত হবে। হযরত খলীল আহমাদ সাহারানপুরী রহ. বলেন, বর্তমানে তীরন্দাযীর পরিবর্তে আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র প্রশিক্ষণ হাদীসের প্রয়োগস্থল হবে, যেমন বন্দুক, কামান ইত্যাদির নিশানা। (বাযলুল মাজহুদ ১১/২৪২)
৪. স্ত্রীর সাথে খেলাধুলা করা:
স্ত্রীর সাথে খেলাধুলা করা শরীয়তের দৃষ্টিতে পছন্দনীয় এবং প্রশংসনীয় খেলা। অনেক পরিবারে দেখা যায় স্বামী যখন বাইরে মানুষের সাথে মেলামেশা করে হাস্যোজ্জ্বল থাকে। কিন্তু ঘরে ফিরেই চেহারা কালোমেঘে ছেয়ে যায়, স্ত্রীর সাথে রূঢ় আচরণ করে। রাসূলের শিক্ষা এর বিপরীত। হযরত আয়িশা রাযি. বলেন, 'একবার আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সফরে দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম এবং আমি আগে চলে গেলাম। কিছুদিন পর আরেক সফরে আমি তাঁর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম, তখন আমি মুটিয়ে যাওয়ায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার আগে চলে গেলেন এবং মজাক করে বললেন, এটা আগের বারের প্রতিশোধ। (সুনানে আবু দাউদ; হা.নং ২৫৭৮)
৫. দৌড় প্রতিযোগিতা :
দৌড় প্রতিযোগিতা ইসলামে পছন্দনীয় একটি খেলা। এতে শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক প্রফুল্লতা অর্জিত হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে আয়িশা রাযি. এর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছেন। সাহাবাদের থেকেও এরূপ কর্ম পাওয়া যায়।
বর্তমান সময়ের প্রসিদ্ধ কয়েকটি খেলা
এক. ক্রিকেট:
বর্তমানে বাংলাদেশে ক্রিকেট অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খেলা। সারা বিশ্বে ফুটবলের পরে এ খেলা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এ খেলায় সময় নষ্ট হয় সবচেয়ে বেশি। কিন্তু লাভের খাতা প্রায় শূন্য। ক্রিকেট ২২ জনের খেলা হলেও এতে মূল খেলোয়াড় বলতে গেলে দুই জনই থাকে। একজন ব্যাটসম্যান, অপরজন বোলার। অনেক খেলায় দেখা যায় এক ব্যাটসম্যানই দুই তিনদিন ধরে খেলতে থাকে, একটি ম্যাচই পাঁচদিন পর্যন্ত চলতে থাকে। ক্রিকেট খেলাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা এবং পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে এতে অংশগ্রহণ করা নাজায়েয। তবে কেউ কাজের অবসরে ব্যায়ামের উদ্দেশ্যে অল্প সময় খেললে তা নাজায়েয হবে না।
দুই. ফুটবল, হকি, ভলিবল, টেনিস ইত্যাদি:
এসব খেলায় যদিও অল্পতে অনেক ব্যায়াম হয়, কিন্তু সতর খোলা রেখে খেলা কিংবা সতর খোলা লোকদের খেলা দেখা দু'টোই হারাম। ব্যক্তিগত পরিসরে শরীয়তবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত হয়ে শারীরিক বা মানসিক প্রফুল্লতা অর্জনের জন্য কেউ এসব খেলায় লিপ্ত হলে শরীয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ হবে না।
তিন. ভিডিও গেমস
বর্তমানে খেলাটি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। খেলাটি যদি প্রাণীর ছবি বিশিষ্ট হয় তাহলে তো কোন অবস্থায়ই বৈধ হবে না। আর প্রাণীর ছবি না হয়ে গাড়ি, হেলিকপ্টার, বিমান, সামুদ্রিক জাহাজ ইত্যাদি চালানো কিংবা নিশানা করার খেলা হলে বা ছবির চোখ, কান এবং মুখ পরিষ্কার বোঝা না গেলে নিম্নোক্ত শর্তের সাথে মানসিক প্রফুল্লতার জন্য তা বৈধ হতে পারে।
(ক) জুয়াবাজি না থাকতে হবে। (খ) নামায কাযা না হতে হবে। (গ) বান্দার হক নষ্ট না হতে হবে। (ঘ) পড়ালেখা ও অন্যান্য জরুরী কাজে ব্যাঘাত না ঘটাতে হবে। (ঙ) সর্বোপরি এর প্রতি অস্বাভাবিক মনোযোগ না থাকতে হবে।
(সূত্র: খেলাধুলা ও বিনোদনের শরয়ী সীমারেখা)
নারী-পুরুষের খেলা
বর্তমানে নারীরা পুরুষদের সবকিছুতে অংশগ্রহণ না করলে নাকি সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা হয় না। কিন্তু ইসলাম বলে, সৃষ্টিগতভাবেই যখন দু'জনের মাঝে পার্থক্য রয়েছে তখন নারীর উপর পুরুষের কাজের বোঝা রেখে দেয়া নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা নয়; রীতিমত তার উপর যুলুম করা। সৃষ্টিগত পার্থক্যের কারণে ইসলামের দৃষ্টিতে উভয়ের খেলার মধ্যেও রয়েছে যৌক্তিক পার্থক্য। আর উভয়ের খেলাধুলা নির্ধারিত হবে তার ভবিষ্যত কর্মক্ষেত্রের প্রতি লক্ষ্য রেখে। পুরুষের কর্মক্ষেত্র হল- (১) রাষ্ট্র পরিচালনা, (২) সামাজিক কর্মকাণ্ড, (৩) যুদ্ধ, (৪) বীরত্ব ইত্যাদি। সে হিসেবে তার জন্য নির্ধারিত হয়েছে তীরন্দাযী, অশ্ব চালনা এবং আধুনিক অস্ত্র চালনার যোগ্যতা অর্জিত হয় এমন খেলা।
অপরদিকে নারীর মূল কর্তব্য যেহেতু ঘরের যাবতীয় বিষয় আঞ্জাম দেয়া, তাই তার জন্য উপযোগী খেলা হল, হাতে বানানো পুতুল খেলা, যাতে বাচ্চা লালন-পালনের যোগ্যতা হয়; চড়ুইভাতি, যাতে রান্না-বান্নার যোগ্যতা হয়, সেলাই শিক্ষা ইত্যাদি। হযরত আয়িশা রাযি. বলেন,
أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يسرب إلى صواحبي يلعبن باللعب البنات الصغار.
অর্থ : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আমার সাথীদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন পুতুল খেলার জন্য। (আল-আদাবুল মুফরাদ; হা.নং ১২৯৯)
তবে কোন নারী যদি বিশেষ কোন জ্ঞানে পারদর্শী হয় তাহলে শরয়ী বিধান এবং পর্দা রক্ষা করে তা করা দোষের কিছু নয়। হযরত আয়িশা রাযি. পর্দার বিধান রক্ষা করে হাদীস শিক্ষাদান করতেন।
ইসলামী ফিকহ একাডেমীর সিদ্ধান্ত
ভারতের ফিকহ একাডেমী তাদের বিশতম ফিকহী সেমিনারে বিজ্ঞ আলেম কর্তৃক পেশকৃত ২৯টি গবেষণাপত্র পর্যালোচনা করে যে সিদ্ধান্ত জারি করেছেন তা নিম্নে তুলে ধরা হল-
(ক) যে খেলা মানুষের জন্য ব্যাপক উপকারী, যার দ্বারা শক্তি অর্জিত হয়, উদ্যম এবং প্রফুল্লতা লাভ হয় তা বৈধ। শর্ত হল, তা শরীয়তে নিষিদ্ধ বিষয়াদি হতে মুক্ত হতে হবে, দীন ও দুনিয়াবী দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী হতে পারবে না এবং কারো কষ্টের কারণ হতে পারবে না।
(খ) সাধারণ অবস্থায় নারী-পুরুষের পর্দার যে বিধান রয়েছে খেলোয়াড়দের জন্যও তা রক্ষা করা আবশ্যক।
(গ) যে ধরনের খেলাধুলার ব্যাপারে হাদীসের উৎসাহ প্রদান পাওয়া যায় এমন খেলা মুস্তাহাব। এছাড়া প্রচলিত অন্যান্য খেলাধুলায় উল্লিখিত মূলনীতিগুলো অনুসরণ করা হলে সে সব খেলাও বৈধ হবে।
(ঘ) খেলার জয়-পরাজয়ে পুরষ্কারের অর্থ যদি এক পক্ষ থেকে হয় অথবা তৃতীয় কোন পক্ষ বিজয়ী দলের জন্য পুরষ্কারের ব্যবস্থা করে তাহলে এ পুরষ্কার শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ হবে। আর যদি উভয় পক্ষ থেকে হয় তাহলে বৈধ হবে না।
(ঙ) সময় মানব জীবনের অমূল্য সম্পদ। এ কারণে শরীয়তের দৃষ্টিতে এমন সব খেলা মাকরূহ যা খেলতে বা দেখতে গিয়ে যথেষ্ট পরিমাণ সময় নষ্ট হয়। যদিও সে খেলা পদ্ধতিগত এবং খেলোয়াড়দের লেবাস-পোশাকের বিচারে হারাম মুক্ত হয়।
(চ) যে ধরনের খেলা খেলতে শরীয়তে বাঁধা নেই তা দেখতে এবং দেখার জন্য টিকেট কিনলে নাজায়েয হবে না।
(ছ) যে ব্যক্তি খেলায় অংশগ্রহণ তো করেনি কিন্তু কোন পক্ষের জয়ী হওয়ার উপর অর্থের বিনিময়ে বাজি ধরল তাহলে এ অর্থ জুয়ার অন্তর্ভুক্ত এবং হারাম হবে।
(জ) সীমিত বিনোদনের জন্য খেলাধুলা জায়েয হলেও খেলাধুলাকে জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বানিয়ে নেয়া জায়েয নেই। তদ্রূপ শিক্ষা-দীক্ষা এবং অর্থ উপার্জনের বৈধ পন্থা ছেড়ে দিয়ে নিজেকে খেলাধুলার জন্য সীমাবদ্ধ করে ফেলা অনুচিত কাজ। (তাফরীহাত ও ওয়াসায়েল আওর উনসে মুতাআল্লিক শরয়ী আহকাম)
ধ্বংস্তুপে বিনোদনের ফুরসত কোথায়?
যুগশ্রেষ্ঠ মুসলিম দার্শনিক শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ. এর লেখায় পড়েছিলাম, কোন জাতির ধ্বংসের পিছনে সবচেয়ে বেশি যে কারণগুলো দায়ী তার মধ্যে একটি হল, জাতির অত্যধিক বিনোদনপ্রিয় হওয়া। মানুষ সীমাতিরিক্ত বিনোদনমুখী হলে তার পরকাল তো ধ্বংস হয়ই; পার্থিব উন্নতি অগ্রগতির ক্ষেত্রেও চরম অবনতির শিকার হয়। আজকের যুগে মুসলিম উম্মাহ হাজারো সমস্যায় জর্জরিত, নানামুখী ষড়যন্ত্রের অক্টোপাসে আবদ্ধ, তারা নিজের কর্তব্য নির্ধারণে দিশেহারা, তাদের কর্তিত মস্তক আর রক্ত অন্যের খেলার সামগ্রীতে পরিণত- সেই মুসলমান খেলা আর বিনোদনে উন্মাতাল হয়ে উঠে কীভাবে- বিবেকবান মানুষের কাছে আজ তা বড় প্রশ্ন। ঘরদোর পুড়ে ছারখার যার সে যখন বিনোদনের আফিম খেয়ে ব্যাট-বল আর ফুটবলের তামাশা নিয়ে উন্মাতাল, ধ্বংস তার অবধারিত।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
শরীয়তের আলোকে খেলাধূলা
...
বিশ্ব ভালোবাসা দিবস: অবৈধ রোম্যান্স চর্চার নোংরা দিবস
কায়রো কনফারেন্সের প্রোগ্রাম অব এ্যাকশন ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৯৪ ইং। জাতিসংঘের উদ্দেশ্যে কায়রোতে একটি আন্ত...